সুশাসনের সন্ধানে (শেষ পর্ব)

আজিজুল ইসলাম ৩০ এপ্রিল ২০১৪, বুধবার, ০৮:০১:০০অপরাহ্ন বিবিধ ৭ মন্তব্য

 

দেশের  শিক্ষিত  প্রকৌশলীরা  বিশেষ  করে যারা সরকারী  চাকরী করে, অধিকাংশই দূর্নীতিতে আকুন্ঠ নিমজ্জিত । সেজন্য কোন রাস্তা বা  ব্রীজ নির্মান করলে সেটা টেকেনা, রাস্তায় মানহীন মালামাল ব্যাবহার করতে বাধা দেয়না, অনেকে  আবার  উৎসাহ  দেয় ।  সব সরকারের আমলেই এরকম হয় । এ-জন্য সব সরকারের আমলেই নির্মিত প্রায় অধিকাংশ অবকাঠামো নির্মানের পর খুব কম সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় । যত দিন যাচ্ছে , অতীতের সরকারের তূলনায় চলমান সরকারের অদক্ষতা, অনায্যতা, দূর্নীতি করার  মানসিকতা  বেড়েই চলছে । এ-রকমভাবে চলতে পারেনা, চলতে  দেওয়া  উচিৎ হবেনা, আমাদেরকে সঠিক পথ আবশ্য অবশ্য-ই বের করতে হবে ; নতুবা  ভবিতব্যের কাছে আমরা দায়ী থাকবো ।

সরকারকে  বাধ্য করার পথ অত্যন্ত  কঠিন । বিভিন্ন  সময়  বিভিন্ন  ঘটনার প্রেক্ষিতে বাধ্য করার পথ-ও ভিন্ন হবে । তবে মূল কিন্তু একটাই , জনসমর্থন  এবং জনগনকে সম্পৃক্তকরন । জনসমর্থন আসবে  দাবী  যদি যথার্থ হয় এবং জনগনকে  সম্পৃক্তকরন সম্ভব হবে  নের্তৃত্বের গতিশীলতার কারনে । তবে  সব কিছুই সম্ভব হবে জনগনের কাছে এই সংগঠনের নেতৃত্ব ও সদস্যগনের ব্যক্তিগত গ্রহনযোগ্যতার উপর । এ সংগঠনের নেতা এবং সদস্যগন যদি ব্যক্তিগতভাবে মানূষের কাছে  গ্রহনযোগ্য না হন , তবে কখনই নেতাদের ডাকে মানূষ এগিয়ে আসবেন না । জনগন বলতে  প্রধানতঃ  এ-দেশের  ছাত্র ও যুব সমাজকে বোঝানো হচ্ছে ।

এ-দেশে ছাত্রলীগ আছে, আছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং যুব সংগঠনসমূহ । এদের কর্মকান্ড দেশের মানূষের কাছে অজানা নয় । সংগঠনগুলি নিজ নিজ মূল দলের সিদ্ধান্ত  মোতাবেক  চলে এবং মূল দলের সাথে একীভূত হয়ে কাজ করে । মূল দলের শক্তির উৎস-ই এই ছাত্র-যুব  সংগঠনগুলো । এই ছাত্র-যুব  সংগঠন সমূহ ছাড়াও বিশাল ছাত্র, যুব সমাজ এদেশে রয়েছে, যারা কেউ রাজনীতিতে নেই ; কিন্তু দেশ-সমাজ  নিয়ে  বিভিন্ন  স্তরের চিন্তা-ভাবনা  তাদের  মধ্যে রয়েছে । এরা দেশের শাসনকর্তাদের উপর বিরক্ত, বিক্ষুব্ধ । এরা দীর্ঘদিন পরিবারের অভিভাবকগনের অভাব, দুঃখ-দুর্দশা প্রত্যক্ষ করে এসেছে, চারপাশের  মানুষজনের জীবন-যাপন প্রত্যক্ষ করে এসেছে ;  অন্যদিকে সমাজের জনপ্রতিনিধি , সরকারী কর্মকর্তাসহ  অন্যান্য  দুর্নীতিবাজদের কর্মকান্ড  প্রত্যক্ষ করে আসছে । এরা রাষ্ট্রের অন্যায়-অবিচারের শিকার । ত্যাগী কিছু ভালোমানূষ রাষ্ট্র হতে সকল অন্যায়, অবিচার দূর করার কাজে তাদেরকে সহযোগিতার  হাত বাড়িয়ে দিতে, সংযূক্ত হতে আহ্বান জানালে নিশ্চিতভাবে তারা এগিয়ে আসবে । এই ছাত্র-যুবা গোষ্টিকে কখন-ই ডাকা হয়নি সেভাবে । অন্যায় রোখার  জন্য উদাত্ত আহবান এদের কখনোই করা হয়নি । তাদের কখনোই বলা হয়নি যে, দেশের কাছে তাদের কিছু ঋন আছে এবং এই ঋন তার শোধ করা উচিত । এই ঋন তাকে শোধ করতে হবে  দেশের জন্য কাজ করে ।

আমাদের জনপ্রশাসনকে নির্জীব করে অর্থাৎ সরকারের আজ্ঞাবহ করে রাখা হয়েছে । আসলে  জনপ্রশাসন তো সরকারী আইন-কানুন মোতাবেক-ই চলবে । জনপ্রশাসন বলতে এখানে পুলিশ , মন্ত্রনালয়সহ সকল সরকারী  প্রতিষ্ঠানসমূহকে বোঝনো হচ্ছে । সরকারের নীতি-নির্ধারনী মহল আইন পাশ করবে এবং সেই সমস্ত আইনের বাস্তবায়ন  ঘটাবে  জনপ্রশাসন । এই জনপ্রশাসনকে  প্রতিটি  সরকার এমনভাবে কুক্ষিগত করে রাখে যে, সেখান  থেকে কর্মকর্তাদের বের হয়ে আসার কোন উপায় থাকেনা যদি কেউ চাকরী করতে চায় । জ্যেষ্ঠতা ভেঙ্গে দলীয় কর্মকর্তাদের অবৈধভাবে পদোন্নতি দিয়ে, লোভনীয় ও ক্ষমতাপুর্ন পদে বসিয়ে, বিরোধী-মনোভাবাপন্ন কর্মকর্তাদের দলন করে  প্রতিটি  সরকার-ই  জনপ্রশাসনকে আজ্ঞাবহ এবং কুক্ষিগত করে রাখে । অনেক কর্মকর্তা আবার সরকারের এরকম নীতির সুযোগে বিভিন্ন রকম অবৈধ  সুবিধা নেয় । এভাবেই সরকারের সাথে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটা নেয়া-দেয়ার সম্পর্ক তৈরী হয়, যেখানে সম্পর্কটা হওয়া উচিত নির্দেশ প্রদান এবং পালনের ।

এর মধ্যেও  প্রতি সার্ভিসেই  মানবিক  কিছু  কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন , যারা এই নেয়া-দেয়ার সম্পর্কের বিরোধী  এবং  এটা  তারা মেনেও নিতে পারেন না । কিন্তু চাকুরিতে থেকে তাদের কিছু  আসলে  করার  থাকেনা । তাই তারা মনে বড় ব্যাথা নিয়ে সব কিছু সহ্য করে কোনমতে কাজ করে যান । পুলিশ বাহিনীতে কিছু কর্মকর্তা আছেন , যাঁরা  চান  না  থানা রাজনৈতিক ক্যাডার কর্তৃক পরিবেষ্ঠিত হয়ে থাকুক ও তাদের কথামত চলুক । কিন্তু চাকুরী হারানোর ভয়ে  কিছু না বলে তারা চুপ-চাপ থাকেন । ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেও অনেকে আছেন , যারা  টেন্ডারবাজি চাননা  এবং হলে তার আশু সমাধান এবং  প্রযোজ্যক্ষেত্রে  দোষীদের সাজা চান । কিন্তু তারাও অসহায় হয়ে থাকেন । কারন সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করলে বিভাগীয়  মামলার ঝামেলায় পড়তে হয়, ক্ষেত্র বিশেষে চাকুরীও  চলে যায় । তাই তারা প্রতিবাদী না হয়ে গোবেচারা হয়ে দিন যাপন করেন । দেশে অনায্যতার বিরুদ্ধে সারাদেশব্যাপী  প্রতিবাদী কার্য্যক্রম শুরু হলে জনপ্রশাসনের এ-সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীগন  নিশ্চুপ বসে থাকবেন, মনে হয়না । প্রকাশ্যে না হলেও কিছু ভূমিকা  অবশ্য-ই রাখবেন যার যার অবস্থান থেকে, সাধ্যমত ।

দেশে সম্প্রতি  যে ঘটনাগুলো  ঘটলো, বিশেষ করে  সাঈদীর  রায়ের পর যে তান্ডবগুলি চললো সারা দেশব্যপী, তাতে মানূষ  জান-মালের  নিরাপত্তা পেয়েছে, বললে  সঠিক  বলা হবেনা । জামাত-শিবির  কর্তৃক মানুষের উপর  অনেক অত্যাচার হয়েছে, তাদের অনেক ক্ষতি করা হয়েছে ; সরকার তাদের  জান-মালের  নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে । কিন্তু কেন, কেন সরকার জান-মালের নিরাপত্তা  দিতে পারবেনা ?  কি নেই সরকারের !  সরকার সেনাবাহিনী  ডাকতে  পারতো । না পারার  কিছু  ছিলনা । সরকারপ্রধান  যে কোন সময় যে কোন প্রতিষ্ঠানকে যে কোন বৈধ নির্দেশ দিতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানটি উক্ত বৈধ নির্দেশ পালন করতে বাধ্য । আসলে বিগত চার বছরের কর্মকান্ডের ফলে হয়তো সরকার  সেনাবাহিনী  ডাকার নৈতিক  সমর্থন হারিয়ে ফেলেছে । নতুবা  জামাত-শিবিরের  এতো  সাহস  হয়  তান্ডব  চালানোর ? আসলে  নিজেদের  অঙ্গ  সংগঠনগুলোকে অবৈধ সূযোগ-সুবিধা ভোগ করতে দিয়ে সরকার মিত্রহীন হয়ে পড়েছে । এর-ই  প্রতিফলন সেনাবাহিনী  ডাকতে না পারা ।

এ-দেশে  আইনের শাসন, সকল ক্ষেত্রে নায্যতা  প্রতিষ্ঠার  একমাত্র  উপায়  সরকারগুলোকে  তা  করতে বাধ্য করার একটি শক্তিশালী  প্রেশারগ্রুপ অথবা অন্য কোন নামীয় এ-ধরনের একটি সংগঠন কার্য্যকর থাকা, যে সংগঠন  ক্ষমতার জন্য  কোনসময়  কোন  ধরনের  চেষ্টা  করবেনা । এ-রকম সংগঠন সার্থকতা লাভ করতে  পারে  কেবলমাত্র  প্রচন্ড জনসমর্থনের  ভিত্তিতে এবং সেই ভিত রচিত হতে পারে দূঃশাসনের প্রত্যক্ষ শিকার ঐ ছাত্র-যুবকদের দ্বারা, আগে বলা হয়েছে যাদের কথা।

সত্যি  বড়ই  অবাক লাগে যখন সরকারী , আধা-সরকারী যেকোন নিয়োগ আসে, দেখা যায় শুধু তদবির পার্টি আর অবৈধ অর্থের ছড়াছড়ি । এতোটাই অদক্ষ এই সরকারগুলো যে একটা নিয়োগ যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে  পারেনা । বাংলাদেশে  এই  সরকারগুলোকে চ্যালেঞ্জহীনভাবে আর ছেড়ে দেয়া যায়না, ছেড়ে দেয়া উচিত হবেনা । কত অত্যাচার  করতে  চায়, কত রক্ত চায় দলগুলো সুশাসন, নায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য, তা দেশের বঞ্চিত, অবহেলিত ছাত্র-যুবক-জনতাকে বলে যেতে হবে। দিন এসে যেতে হবে, আর নয় ।

সন্দেহাতীতভাবে সৎ আর বলিষ্ট কিছু মানুষ এখনও আছেন এদেশে, যাঁরা এ-ডাক ডাকতে পারবেন ডাকার মতো করে এবং তাঁদের ডাক নিশ্চিতভাবে  শুনবে এই  ছাত্র-যূবকেরা। আমাদের সকলের সন্মিলিত উদ্যোগই পারে শুধু সকল শ্রেনী-পেশার মানূষকে একীভূত করে এরকম একটি বিরাট-বিশাল প্রেশারগ্রুপ জাতীয় সংগঠন সৃষ্টি করতে এবং দেশ থেকে সকল অনায্যতা , অসততা , অদক্ষতা দূর করে একে একটি মানবতাবাদী, উদারনৈতিক এবং কল্যানকর রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে । (সমাপ্ত)

 

 

 

 

 

0 Shares

৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ