অনেকক্ষণ ধরেই কাদের কিসের যেন একটি হিসেব করছে। ঠিক ধরতে পারছি না কিসের হিসেব। ওর পড়ার টেবিলটি আমার টেবিলের ঠিক উল্টো পাশে। আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালাম ওর দিকে। চেয়ারে বসে টেবিলের দিকে ঝুঁকে আছে সে। কিছুক্ষণ পর মাথাটি উঁচু করে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে রইল। এবার কি কি যেন বলল বিড়বিড় করে। পিছন থেকে আমি তাকিয়ে তাকিয়ে ওর কাণ্ড দেখছি। বিড়বিড় শেষে ঠিক আগের মতই মাথাটি নিচু করে টেবিলের দিকে ঝুঁকে রইল। এবার লক্ষ্য করলাম না সূচক মাথা নাড়ছে। ওর এমন কাণ্ডকারখানা দেখে আমি কিছুটা ভড়কে গেলাম। পাগল টাগল হয়ে যাচ্ছে নাতো! সকাল থেকেই কেমন যেন চিন্তিত দেখাচ্ছিল ওকে।
আমি চেয়ার ছেড়ে নিঃশব্দে উঠে দাঁড়ালাম। ধীরেধীরে এগিয়ে ঠিক ওর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। এমুহূর্তের আমার অবস্থানটি ও মোটেও টের পেল না। মনে হচ্ছে খুব জটিল কোনও হিসেবে মগ্ন। সংখ্যাবাচক তথা অঙ্কবাচক কিছু লেখা দেখলাম ওর খাতায়। এর মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় কাটাকাটিও করেছে দেখছি। সরল অংক করছে নাকি সুদকষা করছে নাকি চূড়ান্ত হিসেব করছে, কিছুই বুঝা গেল না। আমি সরবে কৃত্রিম একটি কাশি দিলাম। উচ্চস্বরে আকস্মিক এমন কাশির শব্দে ও চমকে উঠলো। ঘুরে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল। ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও ওর এই হাসির সাথে আমি মোটেও পরিচিত না।
আমরা দুজন এই রুমে আছি প্রায় দুবছর ধরে। মুচকি হাসিরও যে প্রকারভেদ আছে তা ওর হাসি না দেখলে বুঝতে পারতাম না। আমি কিছু বলার আগেই ও বলল, “দোস্ত খুব জটিল একটা হিসাব করতেছি রে, কিন্তু হিসাব আর মিলে না। চিন্তা করি একটা আর খাতায় লেখি আরেকটা। এদিকে বাস্তবে হয় আরেকটা”। কৌতূহলী হয়ে আমি আমার চেয়ারটি টেনে নিয়ে ওর পাশে বসলাম। ভ্রু কুঁচকে হতাশা কণ্ঠে বললাম, “কি কইলি পাগলের মত কিছুই বুঝলাম না”। কাদের আমার কথায় সামান্য একটু আহত হল বলে মনে হল। বিরক্ত আর চিন্তিত মিশ্রিত একটি ভাব নিয়ে বলল, “আমি বহুত চেষ্টা করতেছি সিগারেট খাওয়া কমাইতে অথবা ছাড়তে। কোনটাই করতে পারতেছি না। প্রতিদিন ভাবি আজকে দুইটা সিগারেট কম খামু। কিন্তু একদিন কম খাইলে পরেরদিন একটা বেশি খাই। ভাবছিলাম আস্তে আস্তে কমাইয়া তারপর ফাইনালি ছাইড়া দিমু আর টাকা সাশ্রয় করমু। গত মাসে অনেক কম খাইসিলাম। কিন্তু এইমাসে একটু বেশি খাইছি। চিন্তা করতাছি সামনের মাসে প্রতিদিন দুইটা কইরা খামু তারপর তার পরের মাস থেকে একদম বন্ধ। সন্ধ্যা থেকে এগুলা চিন্তা করতে করতে মাথা পুরা আউলাইয়া গেছে রে”।
কথাগুলো বলতে বলতেই প্যাকেট থেকে একটি সিগারেট বের করে নিজের ঠোঁটে গুঁজে দিল। টেবিল হাতড়ে ম্যাচ খুঁজতে লাগলো। আমি ওর বিচলিত অবস্থা দেখে ওর দিকে ব্যথিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। মনে মনে ভাবছি এহেন অভ্যাস মানুষকে কতটা অস্থির করে তোলে।
১৮টি মন্তব্য
নৃ মাসুদ রানা
সিগারেট…
রুমন আশরাফ
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বন্যা লিপি
মানুষ কোনো বদঅভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে গেলে অভ্যস্ততা কাটাবার যুক্তি আর মনে ধরে না। যেমন আমার পান খাওয়া।
কত চেষ্টা করলাম। সরল,যৌগিক,ভগ্নাংশ, যোগবিয়োগ, কোনো হিসেবই মেলানো হয়না।
রুমন আশরাফ
এক সময় আমিও পান খেতাম। তবে নেশা ছিল না। পাল্লায় পড়ে খেয়েছি। তবে কখনও নিজের ইচ্ছাতেও অনেক ধরণের কড়া জর্দা দিয়ে খেয়েছি। চার বছর হল বাদ দিয়েছি পান খাওয়া।
জিসান শা ইকরাম
হা হা হা , সিগারেট হঠাৎ করেই ছেড়ে দিতে হয়। ধীরে ধীরে কমালে আর সিগারেট খাওয়া বাদ দেয়া যায় না।
রুমন আশরাফ
অনেকেই এই কথা বলেন যে হঠাৎ করেই নাকি ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু আমি………
সুরাইয়া পারভিন
মানুষের কেন গেটের কড়ি খরচ করে সিগারেট খায়, সিগারেট পুড়ে ধোয়া উড়ায় আমার মাথায় আসে না। কতটা তৃপ্তি আসে এতে কে জানে? আরে বাবা টাকা নষ্ট করে খাবি তো খা ভালো কিছু খা। সিগারেটই কেনো খেতে হবে?
রুমন আশরাফ
কি ভুল যে জীবনে করলাম। এখন পস্তাই।
সুরাইয়া পারভিন
হা হা হা হা
ভুলটা কিসের?
সিগারেট খেয়ে নাকি না খেয়ে
রুমন আশরাফ
হা হা হা। খেয়ে।
ছাইরাছ হেলাল
নেশা বলে কথা, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!
তবে সব ই সম্ভব কেই তা চাইলে মনে প্রাণে।
রুমন আশরাফ
হ্যাঁ অচিরেই ছেড়ে দেয়া উচিত এই বদভ্যাসকে।
শিরিন হক
নেশা ভালোবাসার চেয়েও শক্তিশালী একবার কাউকে ধরলে আর যেতে চায়না। নিজের মানুষিক শক্তি বাড়ান সিদ্ধান্তো নিন আজই আজই ছাড়ুন কালেকের জন্য অপেক্ষা না করে। নইলে আর হবেনা এজীবনে।
রুমন আশরাফ
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর উপদেশের জন্য।
এস.জেড বাবু
ইচ্ছে করলেই যে সব কিছু ছেড়ে থাকা যায়না তার মধ্যে অন্যতম- সিগারেট।
তবে ছাড়তে হবে হটাৎ করেই। ধীরে ধীরে ছাড়ার যুক্তি অকার্যকরই থাকে।
শুভকামনা
রুমন আশরাফ
তাইতো দেখছি। হঠাৎ করেই ছাড়তে হবে।
এস.জেড বাবু
এটাই একমাত্র পথ- যেখানে ছাড়ার ইচ্ছেটা হতে হবে আত্মঘাতী প্রায়।
রুমন আশরাফ
আত্মঘাতী! ঠিক তাই।