সম্পর্ক ও আদিম রীতি।

রিতু জাহান ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ০৬:৩৩:৫৯অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি, সমসাময়িক ১৫ মন্তব্য

বাংলাদেশের হাস্যকর সামাজিক প্রেক্ষাপটে আজ পরকিয়া নামক এক অস্বস্তিকর একটা শব্দের বিচার হচ্ছে। আর তারই জের ধরে এক সাইকো লোকের আত্মহত্যা করা নিয়ে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ড নিয়েছে একজন মানুষের। পুরো বাংলাদেশ তার বিচার চাচ্ছে। কিন্তু মিতু কি তার সাইকো স্বামীর মৃত্যুর জন্য আসলেই দায়ী। যদি দায়ীই থাকে তবে কতোটুকু দায়ী?

মনের উপর কখনো কারো জোর নেই। পরকিয়া নামক যে শব্দটির সাথে আজ আমরা পরিচিত তা একটি অস্বস্তিকর শব্দে পরিণত হয়েছে আমাদের কাছে।

মানুষ সব সময়ই একটা আদিম রীতি ধরে রাখে। প্রতিটা মানুষের মাঝে সেই আদিম রীতির বসবাস। আদিম রীতি মানে সামাজিক নিয়মের বাইরের আচরন গুলোর কথাই আমি বলতে চাচ্ছি। আর আদিম রীতির আর এক উদাহারণ যদি ধরি তা আমরা প্রতিটা ধর্ম, একমাত্র হয়তো বৌদ্ধ ধর্ম ও খৃষ্টান ধর্ম বাদে সব ধর্মেই এমন পরকিয়া নামক বহু বিয়ের জলজ্যান্ত ইতিহাস দেখে পড়ে শিখে বড় হয়েছি। এসবের ব্যাখ্যা একেকজনের কাছে একেকরকম। তাই পরকিয়ার বিচার করতে গেলে আগে ধর্মের বিচার করা উচিৎ।

বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে একজন ছেলে সন্তানের মা মনে করে তার ছেলের বউ ঠিক তার মতো করেই ঘর সংসার করবে। কিন্তু বিষয়টা আসলে ঠিক সে রকম নয়। হয়ও না। আর তাই ভাবাও ঠিক না। আর ঠিক এ কারনে বাংলাদেশের প্রতিটা সংসারে খুটিনাটি ঝামেলা লেগেই থাকে।

বর্তমানে এই শব্দটা নিয়ে কিছু ঘটনা সামনে আসার কারনে, দেখতে সুশ্রী একজন নারীর অবস্থা এমন যে তাকে ঘিরেই সবার ভ্রু কুচকে যায় নানান প্রশ্নে!!

প্রতিটা মানুষ তার নিজস্ব ভাবনা সেই মানুষটার উপর চাপিয়ে দেয়। স্বামী পুরুষটি যদি বয়সে অনেক বড় হয় তখন প্রশ্ন "কেমনে কি!!!!" বাড়ির সে বউ তখন এমন যে বাইরে কারো সাথে কথা বলতে গেলে হাজার বার চিন্তা করে।

আসলে, আমাদের এ সমাজ ব্যাবস্থার মতো বাজে সমাজ ব্যাবস্থা হয়তো আর কোনো দেশে নেই। কতো কতো প্রশ্ন!

মেয়ের বয়স হয়েছে, এখনো কেনো বিয়ে হচ্ছে না? নিশ্চয়ই এমন ছেলের সঙ্গে প্রেম করছে যে বেকার! নতুবা প্রেমে ছ্যাকা খেয়েছে! নতুবা চরিত্রে দোষ আছে। তখন এমন অবস্থা হয় যে সে মেয়েটি বেচারি কারো সাথে কথা বলতেই আড়ষ্ট বোধ করে। বাইরে বের হতেই বিরক্ত বোধ করে। কোনো অনুষ্ঠান সামনে আসলে মনে করে, যাবে কি যাবে না।

আমাদের সমাজ ব্যাবস্থায় রক্ষনশীল পরিবারে আমরা ছোটোবেলায় পারিবারিক ভাবে শিখে বড় হই যে, সন্ধ্যার পর বাইরে একদমই থাকা যাবে না। ঘন ঘন বাইরে বের হওয়া যাবে না। যে বাসায় পুরুষ মানুষ আছে সে বাসায় যাওয়া যাবে না। বাসায় পুরুষ কেউ এলে তাদের সামনে যাওয়া যাবে না। এমনকি জোরে হাসা যাবে না। হাজার বিধিনিষেধ এর বেড়ি আমরা পরে বড় হই।

একসময় বিয়ে হয়। সেখানেও ঠিক আরো বেশি কড়াকড়ি। স্বামীর আগে কখনোই খাওয়া যাবে না। স্বামী নামক প্রাণীটি বিয়ের প্রথম রাতেই বউকে শাসিয়ে বলবে, তার মা যেনো কখনো কষ্ট না পায়, যেদিন মা কষ্ট পাবে সেদিন কপালে দুঃখ আছে। যতো রকম মাইর আছে একটাও মাটিতে পড়বে না। এমনকি মায়ের সমান বড় বোনও যদি কোনো নালিশ করে কোনো যাচাই বাছাই হবে না। ডাইরেক এ্যাকশান মাইর। মেরে একটা শরীরকে বসে আনা যায়। কিন্তু মনকে কি যায়?

যখন কোনো পুরুষ বিয়ের রাতেই এমন হুমকি ধামকি দিবে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলব, কোনো নারী আর ঐ লোককে ভালবাসতে পারবে না। স্বামী পুরুষটি সেই প্রথম ভালবাসা হারালে আর কি তা ফিরে পায়? পায় না। কারণ, সব মেয়েই যে একই চিন্তা ধারা নিয়ে বড় হয় তা ভাবা বোকামি। কারন, স্বামী ও শশুরবাড়ি মানুষের কাছে কোনো মেয়ে শুধুমাত্র কাজের মানুষ আর একজন দায়িত্বশীল বউ হয়েই থাকতে পছন্দ করে না। কারণ, তারও ইচ্ছে হয় আল্হাদ করে কিছু আবদার করতে, নিজের পিঠেও কখনো কখনো এক রঙ্গিন প্রজাপতির ডানা জড়াতে ইচ্ছে করে।

মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোয় বাড়ির বউকে বাইরে যেতে হলে হাজারবার শাশুড়ির সামনে গিয়ে মাথা নত করতে হয়। শাশুড়ি তো মুখের উপর বলেই দেয়,"তোমাদের যে কিসের এতো বাইরে যাওয়া, আমরা সংসারের কাজ করে তো সময়ই বের করতে পারতাম না।" ব্যাস! বউ বেচারি তখন সংসারে কাজ না থাকা কাজগুলোও করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। আর এ বিষয়ে হাজার মন খারাপ থাক স্বামী পুরুষটি বাড়িতে আসলে মুখে একটা মেকি হাসি তাকে হাসতেই হবে। কারণ, বাড়িতে তো সে দেনমোহর দিয়ে একজন বার্বিডল কিনে এনেছে। মনোরঞ্জণের এক দামি সামাজিক পুতুল।

কিন্তু যদি সে বউ বিদ্রোহি হয় তখন হয় চরমতম অশান্তি। বউ শাশুড়ির যুদ্ধ। কর্তা বাড়িতে আসলে একদিকে মায়ের নালিশ অন্যদিকে বউ এর নালিশ। ননদ থাকলে তো কথাই নেই। ব্যাস! পুরুষ তখন বাইরের সুখে মশগুল। শুধু সকল ত্যাগ করে শান্ত থাকলেই সংসারে কল্যাণ। কিন্তু সব সময় এই বউই কেনো ত্যাগ করবে? সব সময়ের শান্ত থাকা এ বউ একসময় বিদ্রোহি হয়েই ওঠে এটা চরম সত্য। একটা পুরুষ যেমন ঘরে অশান্তি হোক বা না হোক বাইরে শান্তি খোঁজে কিন্তু একটা নারী ঘরে বসে বালিশ ভেজায়। আমি কিন্তু এ সমাজের নব্বইভাগ পরিবারের কথা বলছি। হ্যাঁ এখন, সমাজের পরিবর্তন হয়েছে আর তাই মিতুদের আমরা আবিষ্কার করতে পারছি। যদি মিতুুুুরই বিচার হয় তবে যারা ব্রেকাআপ নামক শব্দটা ব্যবহার করে তাদেরও বিচার হওয়া উচিৎ। ব্রেকআপ মানেই তো মন নিয়ে খেলা করা। তো সে মন নিয়ে খেলা করার সময় যে মন ভাঙবে তারই বিচার হওয়া উচিৎ। তাই নয় কি? তবে সে ক্ষেত্রে শুধু মিতু একা কেনো। হ্যাঁ, মিতুর কিছু পারিবারিক দোষ থাকতে পারে। আমি কিন্তু শুধুমাত্র 'মিতু' নামটাই মিন করছি না। আমি একটা নারী চরিত্র বিশ্লেষণ করছি। তাই মিতুর মতো সকলেরই বিচার হওয়া উচিৎ। তাই নয় কি? তা নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে।

আমি বলছি না নারীকে ব্যাভিচারি হতে হবে। ব্যাভিচারি শব্দটা তাইলে আগে ভাঙতে হবে। কিছু স্বামী আছে, কোনো কারো সাথেই সে তার বউ এর মেলামেশা দেখতে পারে না। মিশলেই সে ব্্যভিচারি!

ব্যাভিচার মানেই কি শরীর নিয়ে লুকোচুরি খেলা? এটা এক ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। যা নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে হতে পারে। আর অধীকাংশ মানুষ মাত্রই তার নিজস্ব অভ্যাসের দাস। কোনো মানুষ যদি এই অভ্যাসের দাস হয় তবে তাকে ছেড়ে দিয়ে নিজে বাঁচা উচিৎ।

অনেক স্বামী আছে, দীর্ঘদিন এক সাথে বেড়ে ওঠা সেই ছোট্টবেলার খেলার সাথীদের সাথেও দেখা যায় কথা বলা দেখলে স্বামী পুরুষটি সন্দেহের চোখে দেখে। শরীরের সাথে শরীর ঘেষলেই কি সব হয়? উত্তেজনা কাজ করে? আমার তো তা মনে হয় না। প্রেম না থাকলে শারীরিক সম্পর্ক অসম্ভব বলে মনে হয় আমার কাছে। ভালবাসা ও শরীর যাকে তাকে বিলানোর জিনিস নয়।

আমাদের সমাজে আমরা বাড়ির বউকে যতোটা পঁচানোর চেষ্টা করি অন্য কোনো দেশে তা হয় কিনা আমার সন্দেহ। বর্তমানে আমরা দো-টানা সংস্কৃতিতে বাস করছি আর তাই যতো ঝামেলার সৃষ্টি।

একটা গল্প দিয়ে শেষ করি

নীলা এক অন্যরাম চিন্তার মানুষ। খুব হুট করেই পরিবার থেকে মোটামুটি আগে থেকে পছন্দ করা নিজের থেকে বেশি বয়সি ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যায়। স্কুল কলেজ জীবনে উড়ন্ত এক প্রজাতির হঠাৎ ডানা ছাটার মতো প্রতিটা ডানা পুড়িয়ে দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রচন্ড চুপচাপ শান্ত নীলা বিয়ের দিনই স্বামী পুরুষটির সকল নির্দেশ চুপ করে বাধ্য বালিকার মতো শুনতে শুনতে বউ হওয়ার কাজকর্ম সেরে ঘুমিয়ে পড়ে। যে নীলা স্বামী পুরুষটির কথা চিন্তা করলেই প্রেম উঠে আসবে এমন ভাবনায় জীবন সঙ্গী ভাবতো সে এসব র্নির্দেশে চুপসে গেলো। মনে হলো, হঠাৎ করে বড় হয়ে যাওয়া এক বড় কর্তব্যপরায়ন মানুষে রুপান্তরিত হলো। নিজের থেকে বয়সি বড় দেবর ননদ, ননদের মেয়েদের মানুষ করতে হবে। তাদের পড়াশুনা, খাওয়া দাওয়া সবকিছু দেখেশুনে রাখতে হবে। অপরদিকে রক্ষণশীল পরিবারের বউ হিসেবে অসুস্থ শশুর শাশুড়ির সেবা ও সকল ধর্মনীতি মেনে চলতে হবে। বোরখা ছাড়া বাড়ির বাইরে এক পাও যাওয়া যাবে না। মৌলবী মানুষের বাড়ির বউ বলে কথা!! একে একে ইচ্ছেগুলো মারতে মারতে কখন যে একটা মরা মানুষে নীলা পরিনত হলো নীলা তা টেরই পেলো না।

এবার নীলা আরো একবার মরলো, বিদ্রোহ করে ওঠার পর। হুজুর পরিবারের প্রতিটা মানুষের মুখোশের অত্যাচারে নিজে সকল ধর্মনীতির বেড়াজাল খুলে ফেলে দিলো। সংসারের যে সকল জটিল বিষয়গুলো নীলাকে অসহায় করে দিতো সে সকল বিষয়গুলোতে নীলার পাগল হয়ে যাবার মতো অবস্থা।

সামান্য কিছু সম্পদের কারনে, বাড়ির এতোদিনের কর্তব্যপরায়ণ বউ হয়ে গেলো একেবারে ছন্নছাড়া। স্বামী পুরুষটির কর্মস্থলে আজ এ নালিশ কাল সে নালিশ। আর স্বামী পুরুষটিও সেই বিয়ের প্রথম দিনের কথা একেবারে মান্য করে চলতো। দুই চার মাস পর বাড়ি এসে তার শোধ তুলতো। বড় বোন, বড় ভই, মা নালিশ করেছে মানে নীলাকে শাস্তি পেতেই হবে। সন্তানদের সামনে মুখের কথা থেকে হাতের কথায় কোনো কিছুতেই শাসনের কমতি হতো না। এখানে গল্পটা মর্মান্তিক হতে পারতো যদি নীলা আত্মহত্যা করতো।

কিন্তু, সবকিছুরই শেষ আছে। নীলা বাঁচতে জানে। বেঁচে আছে। সবকিছু ছুঁড়ে ফেলে বেঁচে আছে। কিন্তু এ সমাজে নীলার মতো মানুষের আত্মসন্মান নিয়ে বেঁচে থাকাটাও মুশকিল। মাঝে মাঝে নীলা ভাবে, তার মুখে বড় রকম এক দাগ সৃষ্টি করে রাখতে। যেনো অন্তত নির্ভিগ্নে সবার সাথে মিশতে পারে। কোথাও যেতে যেনো আর নীলার বাঁধা না থাকে। মুখে দাগ থাকলে কুদৃষ্টি যেমন তেমন অন্তত কু কথা থেকে নীলা মুক্তি পেতো।

কিন্তু, নীলা যদি কখনো নিজের জন্য একটু বাঁচতে চায়? এ সমাজ তা কখনোই মেনে নিবে না। কারণ, সমাজ জানে নিয়ম বেঁধে দিতে। সে নিয়মের মান রক্ষা করতে সমাজের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।

কাউকে প্রচন্ড শাসণ করে কখনোই ভালবাসা ও প্রেম জাগানো যায় না। শুধুমাত্র সংসার করা যায়।

ভালবাসা প্রেম ঠিক স্বর্গীয়। অপলোক তাকিয়ে থাকার মতো। সকল ভালো লাগায় যে মুখটি ভেসে ওঠে তাই ভালবাসা, তাই প্রেম। সকল বাঁঁধা পেরিয়ে একটিবার সে মুখটি দেখার নামই ভালবাসা।

@রিতু। কুড়িগ্রাম।

 

 

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

  • তৌহিদ

    অস্বাভাবিক প্রেম সামাজিক বন্ধনে বাধার সৃষ্টকারী। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এর থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। আমি একটি সম্পর্ক রেখে অন্য আরেকটিতে জড়াতে পারিনা। প্রতিটি সম্পর্কেই মিনিমাম কমিটমেন্ট থাকা উচিত। কে দোষী কে অন্যায় করলো এসব ভাবার আগে কেন অন্য সম্পর্কে জড়াচ্ছে মানুষ সেটাই ভাবতে হবে। সম্পর্কের টানাপোড়ন নিয়ে সংসার না করে আলাদা থাকাই উত্তম। এ কুলও ধরে থাকবো আবার ঐ কুলের ফসল খাবো এমন মানসিকতার মানুষ হচ্ছে ভন্ড প্রতারক।

  • সাবিনা ইয়াসমিন

    আত্মহত্যাকারী ঐ সাইকোটার দলে যারা কথা বলছে তারা কি আসলেই দোষীর বিচার চায় না একটি সম্মানিত নারীকে বিপর্যস্ত করে তাকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে সে ব্যপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এরা যুক্তি–তর্ক বুঝে না, এরা চাইছে মেয়েটিকে নিজেরাই মেরে ফেলতে। কারন সে একজন শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত নারী। তাকে অসম্মান করার মধ্যে একটা অন্যরকম আনন্দ আছে।

    পরকিয়া আর ব্যভিচার কি এক ? অথবা বহুগামিতা।
    প্রত্যেকটি বাক্যের আলাদা আলাদা অর্থ আছে। বন্ধুত্ব কি সব সময়ে একই অর্থ বহন করে ? স্বামী– স্ত্রীর মাঝে বন্ধুত্ব, সম্পর্ক ভালো না থাকলেও সংসার টিকে আছে এমন প্রমান যেমন অজস্র আছে তেমনি প্রেমের বিয়ে প্রতিনিয়ত ভেংগে যাচ্ছে এমনো অনেক দেখি। সব ক্ষেত্রেই কি পরকিয়া দায়ী ?

    আসলে সময় হয়েছে ভুল ধারনা গুলো থেকে বেরিয়ে আসার। নীলার মতো এই সমাজে অনেক মেয়ে আছে যারা সমস্ত প্রতিকূল মুহূর্ত হতে বেরিয়ে আসে। দরকার শুধু সামাজিক দৃষ্টিভংগী বদলাবার। একটি মেয়ে ডিভোর্সি বা বিধবা যাই হোক তার মানে এই নয় সে খারাপ। তার চরিত্র নিয়ে কথা বলতে হবে। একাকী মেয়েদের প্রতি সমাজ যতদিন সহনশীল না হবে ততদিন পর্যন্ত মেয়েরা মানুষকে মানুষ ভাবার আগে চিন্তা করবে।

    ভালোবাসা জয় করতে হয় ভালোবাসা দিয়ে। জোর করে পাওয়া যায়না আর চাপিয়েও দেয়া যায়না। এখানে সহমত।

    অনেক সুন্দর, বিস্তারিত লেখা। অনেক ভালো লেগেছে আপু। ভালোবাসা নিরন্তর ❤❤❤❤

  • নাজমুল আহসান

    কী দিয়ে কী বুঝালেন, বুঝতে পারিনি। শাক দিয়ে মাছ ঢাকলেন কিনা, সেটাও নিশ্চিত হতে পারলাম না।

    “ঘরের” বউদের নিয়ে যে সামাজিক এবং পারিবারিক ব্যাপারগুলোর উল্লেখ করেছেন, সেগুলো অস্বীকার করার জো নেই। এরকম একটা নৈমত্তিক সমস্যার সাথে পরকীয়ার উল্লেখ কেন করলেন? আপনার পয়েন্টটা কী? আপনি কি এসব বলে পরকীয়াকে বৈধ করার চেষ্টা করছেন?

    • রিতু জাহান

      পরকিয়া শব্দের মধ্যেই একটা বিপত্তি ও আপত্তি দুটোই আছে। আমার পোষ্ট আপনি হয়ত বুঝতে পারেন নাই। আবার পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।
      একটা সমাজ কতোটা একটা মেয়েকে পঁচাতে পারে তা এখানে বলতে চেয়েছি।
      আর পঁচানোর প্রথম হাতিয়ার পরকিয়া নামক বস্তু। পরিকিয়া শব্দের বিচার করতে হলে তো আগে ধর্মেরই বিচার করতে হয়।
      পরকিয়াকে আমি কেনো বৈধতা দিব। শাঁখ দিয়ে মাছ ঢাকার মতো ইচ্ছে আমার নেই।

      • নাজমুল আহসান

        ১)
        আপনার পুরো লেখাটাই একপেশে আর আক্রমনাত্মক।
        আপনি তো বললেন না, আমিই পয়েন্টগুলো বলি-
        – একজন মৃত মানুষকে সাইকো উপাধি দিয়ে শুরু করেছেন।
        – যিনি মারা গেছেন, তাঁকে বলেছেন “সাইকো লোক”; আর পরকীয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত যিনি, তাঁকে বলেছেন “মানুষ”!
        – বউদের উপর সমাজ অত্যাচার করে দাবি ক’রে এর মধ্যে পরকীয়ার প্রসঙ্গ এনে দোষ ঢাকার চেষ্টা করেছেন।
        – এবং স্পষ্টতই পরকীয়াকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করার চেষ্টা করছেন।

        ২)
        পরকীয়া শব্দটা “পচানোর” হাতিয়ার এটা আপনাকে কে বলল? কেউ পরকীয়ায় সংশ্লিষ্ট না হলে তাঁকে মানুষ অযথা দোষ দেবে কেন? আপনাকে নিশ্চয়ই পরিবারের বা সমাজের লোকজন পচায়; কেউ তো আপনার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেনি! এটা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

        ৩)
        একটা উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম। আপনি যেমন যা ইচ্ছা লিখতে পারেন, আমিও যা ইচ্ছা কমেন্ট করতে পারি।
        এতো দুর্বল মানসিকতা আর পলকা সাহস নিয়ে ব্লগিং করেন কেন? তাও এরকম একটা সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে লিখেন!

    • রিতু জাহান

      বর্তমানে সকল কিছু এই শব্দটাকেই ঘিরে। কেনো সমাজ ব্যাবস্থা ভেঙ্গে পড়তেছে? এর কারণ এই সংসার নীতি। একজন প্রবীণ শাশুড়ি যখন তারই চিন্তা ধারায় সংসারের নিয়ম বাঁধবে আর তা সে ছেলে ও ছেলের বউ এর উপর চাপাবে তখন সে সংসারে এ শব্দটারই উৎপত্তি হয়। তা হয় কখনো নারী কখনো পুরুষের ক্ষেত্রেই।
      মানুষ শান্তি খুঁজতে গিয়ে আর এক অশান্তিতে জড়িয়ে পড়ে।
      আমি সুস্থ মস্তিষ্কের একজন মানুষ হয়ে যখন জানব যে অমুক মানুষটি একেবারে খারাপ তখন তাকে জোর করে ধরে রাখব কেনো? কেনোই বা তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করব? ছেড়ে দিব। আর অধিকাংশ সাইকো স্বামীরাই হয়। মিথ্যে সন্দেহে মেরে রক্তাক্ত করে তার ঘরের বউকে। যদি উ তার প্রতিবাদ করে তখন সে চরিত্রহীনা। এই হচ্ছে আপনার মতো মানুষের সমাজ ব্যাবস্থা।

  • জিসান শা ইকরাম

    নারীরা সর্বকালে সর্বযুগে অত্যাচারিত হয়েছে, এটিই যেন নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে। একই অপরাধের সামাজিক শাস্তি নারী পুরুষের জন্য আলাদা।
    মিতুকে টর্চার করে ভিডিওতে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে তা ভিডিওতেই স্পস্ট বুঝা যায়। মিতুর মত যদি অন্য কোনো পুরুষ এমন অন্যায় করতো, তবে কিন্তু এই সমাজের চোখে এত খারাপ লাগতো না। পুরুষের এমন একটু আধটু দোষ থাকে, তা এমন কিছু না – এই হচ্ছে আমাদের সমাজের অবস্থান। মিতুকে গ্রেফতার করে রিমাইন্ডে নেয়া হয়েছে, অথচ এক জানোয়ার পিতা তার কন্যাকে ধর্ষনের কারনে গ্রেফতারই হলো না। নারী পুরুষের পার্থক্য এভাবেই করি আমরা।

    নারীকে প্রতি পদক্ষেপ হিসেব করে নিতে হয়, নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত সহজ, কারন পুরো সমাজটাই নারীর বিরুদ্ধে। নারী কিছুটা প্রতিবাদি হলেই ” পরকীয়া ” সহ আরো অনেক শব্দাশ্র তার বিরুদ্ধে ব্যাবহার করা হয়।

    নারীর ভালোবাসা পেতে হলে তাকে যথাযথ সন্মান এবং যত্ন নিতে হবে।

    লেখা ভালো হয়েছে খুব।

  • মোঃ মজিবর রহমান

    প্রথমেই বলি, আসল কোম্পানিও লেখে নকল হইতে সাবধান, নকল কোম্পানিও লেখে নকল হইতে সাবধান।
    ঠীক আসামী তাঁর দোষ যদি সহজেই বা অকপটে স্বীকার করত হয়তো পুলিশ বা কোন দল বা কাউকে বলতকার করত না। মিতু সঠিক কিনা মিতুই ভাল জানে। বহির আবরনে মানুষ জেনা যায়না।
    কর্তা বাড়িতে আসলে একদিকে মায়ের নালিশ অন্যদিকে বউ এর নালিশ। ননদ থাকলে তো কথাই নেই। এখানেও কি শুধু পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থা ধরবেন। – আপু।
    আপনার গল্পের প্রথম পেরাই নীলা শ্বশুর শাশুড়ীর সেবা করা না করা নিয়ে আমার মত। সেবা করা মানুষ করা যদি অন্যায় বা অযৌক্তিক হয় তবে বলার কিছু নায়, সেক্ষত্রে মুরুবিদের বৃদ্ধাশ্রমই উত্তম স্থান। তবে হ্যাঁ পরিবারের সকল কাজ সবাই মিলেমিশে করে নিলে কেউই ঝামেলায় পরবেনা। সবাই চাপমুক্ত থাকবে।
    আপনার গল্প আর আমার বাস্তব একটি উদাহরন দেব, কিন্তু প্রমান দিতে পারব না। কারন এটি দেশের একজন এক্স সেনা কর্মকর্তার কাহিনী। তিনি সেনাবাহিনীর উচ্চশ্রেণীর একজন সদস্য। তাঁর বোন একটি এন জি ও নির্বাহী প্রধান। তাঁর বোনের কাছে সে, মাঝে মাঝে প্রশ্ন করত আপা, মেয়েদের নির্যাতন নিয়ে আপনারা আন্দোলন করেন, ছেলেরা যে পরিবারে নির্যাতন হয় তাঁর বিচার বা কথা কেউ বলেন না কেন? বেশ কিছু দিন পরে তাঁর বোন জানতে পারে তাঁর ভাই বউ কর্তৃক নিরজাতিত হয় কিন্তু কাউকে লজ্জায় বলতে পারে। ঐ নারী ড্রাইভার, কাজের মেয়েকেও নির্যাতন করত।
    এই হচ্ছে আমাদের সমাজের করুন কাহিনী। হয়তো আপনি বলবেন এর সংখ্যা খুব কম। হইতো তাই।
    আর ভালবাসা!!! ভালোবাসা যতক্ষন আছে, ততক্ষন স্বাদ আঁশ নিন, শেষ হলেই নিদারুণ অশ্রুহীন কান্না আসবে।
    লেখায় এপাশ ঐ পাশ থাকবেই।
    আর দুনিয়াটা শক্টির দুর্বলের নয়।

  • মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)

    লেখাটা পড়ি নাই। আমাদের প্রিয় নাজমুল ভাইয়ের কমেন্টসগুলো চোখে পড়ল তখনি লেখাটি কয়েবার পড়তে হল।লেখাটিকে আমি একশতে একশ সঠিক এবং বাস্তধর্মী বলবো।তবে সংসার টিকিয়ে রাখতে নারীকেও বুঝতে হবে স্বামীর মনোভাব আর সামাজিক রীতিনীতি।সমাজকে বাদ দিয়ে নারী যেমন অচল তেমনি পুরুষও।নারীর প্রতি পুরুষদের এমন আচরন তা আদি কাল হতেই আমাদের সমাজ ব্যাবস্থায় হয়ে আসছে।ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীকে তার ব্যাক্তি স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে যা এখন কিছুটা কমলেও রেহাই পায়নি পুরুষদের কুচোখ বা কুভাবনা হতে।এটা আসলে আমি বলবো বেশ অন্যায়।এ ধরনীর বুকে আমরা সবাই যদি নিজেকে মানুষ ভাবি তবে এ সমস্যা থাকে না।
    খুব ভাল লিখেছেন।

  • অপার্থিব

    কিছু বিষয়ে একমত হলেও লেখাটা খুবই অগোছালো । প্রথমত, পরকীয়া কোন অপরাধ নয়। অধিকাংশ মানুষ জেনেটিকালি বহুগামী অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষ নির্দিষ্ট একজনের প্রতি সারা জীবন আকর্ষণ অনুভব করে না। বিয়ে মানুষের জীবনে নেয়া অনেক সিদ্ধান্তগুলোর একটা, কোন একটা সিদ্ধান্ত ভুল হতেই পারে, সিদ্ধান্ত ভুল হলে সেটাকে আকড়ে ধরে সারা জীবন বসে থাকার কোন মানে নেই। এক্ষেত্রে যেটা করা উচিত তাহল যে পরকীয়ায় জড়িয়েছে তারই উচিত যত দ্রুত সম্ভব আগের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা।

    যারা আত্নহত্যা করে তারা সবাই এক ধরনের মানসিক রোগী কিন্ত সাইকো শব্দটা আরো বেশি নেগেটিভ। একজন মৃত মানুষকে প্রমাণ ছাড়াই সাইকো বলাটা ভাল লাগেনি।

  • ছাইরাছ হেলাল

    খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০/৮০০ বছরে মহাকবি হোমার ইলিয়াড রচনা করেন, কিন্তু যে কাহিনীটি তিনি বর্ণনা করেন
    সেটি আরও ৪০০/৫০০ বছরের পুরনো।
    মানবীয় এই সম্পর্কের ধরণটি এমন-ই পুরনো এবং অমীমাংসিত।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ