দুনিয়ায় অল্প কিছু খেলা আছে যেসব খেলায় মৃত্যুর চোখে চোখ রেখে বলতে হয় ,ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান। লিস্টের প্রথমেই আছে বুল ফাইটিং। স্পেনের জাতীয় খেলা। যদিও কাতালান আদালত এক নিষেধাজ্ঞায় ২০১১ তে কাতালান অঞ্চলে বুলফাইট নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে। কিন্ত বলা হয় স্পেনিয়ারড দের বুলফাইট থেকে আর জাপানীদের তিমি খাওয়া থেকে বিরত করা যাবেনা।

গ্রীকরা বুল ফাইটিং এর উদ্ভাবক,এবং স্পেনে তার পরিপূর্ণতা। রোডস দ্বীপ বা ক্রিট দ্বীপ থেকে আগত ষাঁড়ের বংশধরেরাই আজকের দিনের এরেনা কাপানো আন্দালুসিয়ান দানব। যাদের রোঁণ ষাড় বলা হয় । প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নিখুত জাতের ব্রিডিং এ যেসব ষাড়েদের তৈরি করা হয় কিলিং মেশিন হিসেবে। যে কেবলমাত্র খুন হতে বা করতেই জানে। ষাড় পালনের র‍্যাঞ্চ কে স্প্যানিশ ভাষায় হাসিয়েন্দা বলা হয়। অভিজাত স্প্যানিয়ারড দের হাসিয়েন্দা তাদের গর্বের ধন।

স্প্যানিশরা বুল ফাইটিং এর মতো এক নিখাদ জান্তব খেলাকে পরিনত করেছে শিল্পে। মৃত্যুতে মহিমাম্বিত এক শিল্প। যে কেউ একজন কে শেষ বিকেলের আলোতে মরতেই হবে, হয় ম্যাটাডর বা তরো। তরো স্প্যানিশ এই শব্দটির আভিধানিক অর্থ ষাঁড় ,কিন্ত ফাইটিং এর (প্রায়োগিক) ক্ষেত্রে কেবল মাত্র শেষতক লড়ে যাওয়ার মতো সাহসী ষাড়টিকেই তরো বলে ডাকা হয়। টেস্টিং গ্রাউন্ডে নির্ধারিত হয় শিশু দানবগুলির ভাগ্যে কিও জুটবে , শিল্পীর তলোয়ারে গর্বিত মৃত্যু নাকি কসাইয়ের ছোরায়। সাহসী ষাড়টিকে ডাকা হয় এভাবে হাআআআআআ তরো...... আ তরো। একটি শিশু দানবের তরো হওয়ার টেস্টিং এর দিনটি প্রত্যেকটি হাসিয়েন্দায় উৎসবের দিন। পালের প্রত্যেক টি তরুন ষাড়কেই এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। সবচে অভিজ্ঞ ম্যাটাডর নেন এই পরীক্ষা।

সাধারনত সম্ভাব্য ক্রেতার উপস্থিতিতেই এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। টেস্টিং গ্রাউন্ডে দেখা হয়, শিশু দানবটি পা দিয়ে মাটি খুরছে কিনা, হাক দিচ্ছে কিনা। নাকি পিকাডরের তারা খেয়ে অভুক্ত অবস্থায় এরেনায় ঢুকেই সোজা শিং বাগিয়ে তেড়ে যাচ্ছে মেলে ধরা কেপের দিকে। যদি সরাসরি আক্রমণ করে , তবে সে আক্রমন থামানো হয় কাধে বল্লম বিঁধিয়ে। এবং হাআআআআ তরো বলে হাক দেয় ম্যাটাডর। এটাই স্প্যানিশ রীতি। তবে খেয়াল রাখা হয় তরুন ষাড়ের টেসটিকল যাতে কোনভাবেই আঘাতপ্রাপ্ত না হয়, কেননা খুন হয়ে যাবার আগে তাকে আরো খুনে বংশধর রেখে যেতে হবে।

আর শিশু দানব টি যদি এরেনায় ঢুকে যায়গায় দাড়িয়ে পা দিয়ে মাটি খুড়ে, যদি হাক দেয়, যদি শিং নেড়ে ভয় দেখায় তবে ম্যাটাডর নীরবে সরে যান সামনে থেকে, তার দায়িত্ব নিয়ে নেয় অপেক্ষমান কশাইয়েরা। কেননা সাহসী ষাড় কখনোই ধোঁকা দেয় না। কার মৃত্যু কিভাবে হবে এটার সঙ্কেত দেয়া হয় বুড়ো আঙ্গুল উপরে তুলে বা নীচে নামিয়ে ।

পশু প্রেমীদের হাজারো আপত্তি উপেক্ষা করেই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে বুলফাইট। খুনের উৎসব। পুরনো নিয়মে শেষ বিকেলেই আয়োজন করা হয়ে থাকে ফাইটের।

খুন করা বা হয়ে যাবার আগে ম্যাটাডর মেতে ওঠে একটুকরো কাপড় তথা কেপ দিয়ে দানবীয় শক্তিকে নিয়ন্ত্রণের খেলায়। যদিও দানবটি তখন প্রচন্ড খেপা থাকে। কারন ফাইটে নামানোর আগে এদের অনাহারে রাখা হয়, এবং পিকাডরেরা ফাইটে নামার আগে এদের খুচিয়ে খুচিয়ে যথেষ্ট পরিমানে উত্যক্ত করেই এরেনাতে ঢোকায়। এবং খেলার শেষ পর্যায়ে ম্যাটাডর দানবটির জুভেনাইল ভেইনে তলোয়ার (মুঁলেতা) ঢুকিয়ে দানবটিকে খুন করার মাধ্যমে খেলার ইতি হয়। তাই স্পেনের গ্রামাঞ্চলে বুল ফাইটিংএর ডাকনাম শেষ বিকেলে মৃত্যু।

 

অবশ্য অনেক ম্যাটাডরের ক্ষেত্রে উলটোটাও ঘটে, ম্যাটাডরকে শিঙে ঝুলিয়ে বিজয়ী ভঙ্গীতে এরেনা ছাড়ে তরো, এল তরো।

 

অনেক ম্যাটাডর চাপ সামলাতে না পেরে খেলা ছেরে পালায়। তাদের দ্রুত সবাই ভুলে যায়, পলাতকের জীবন মৃতের জীবন।

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ