শেষ বিকালের আলো (শেষ পর্ব)

সঞ্জয় কুমার ১৭ অক্টোবর ২০১৪, শুক্রবার, ১১:২৫:১৭পূর্বাহ্ন গল্প ১ মন্তব্য

কবির সাহেব হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে একটা চায়ের দোকানে বসলেন ।

রতন :
স্যার কাল আপনি খুব ব্যাস্ত ছিলেন তাই দিতে পারিনি , আপামনির টেবিলের উপর একটা ডায়েরি ছিল এর মধ্যে একটা চিরকুট পেয়েছি ।

হুম খুবই ভাল রতন , তুমি আমার সাথে খুব ভাল কাজের দক্ষতা দেখিয়েছ । বলতে গেলে তোমার জন্যই তিশাকে হয়ত বাঁচানো সম্ভব হবে । তোমার একটা ভাল চাকুরী পাওনা হয়ে গেছে ।

কবির সাহেব চিরকুট টা খুললেন । ।

আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় ।
আমি আর আমার সন্তান সেচ্ছায় তোমাদের কাছ থেকে চলে গেলাম । কারও প্রতি আমার কোন রাগ বা ক্ষোভ নেই । শুধু দুইটা মানুষের জন্য একটু কষ্ট লাগছে । একজন হল আমার অনাগত সন্তান , যে পৃথিবীর আলো দেখার আগেই আমার সাথে চলে যাচ্ছে । আর একজন হল আমার প্রথম স্বামী তারমত একজন ভালো মানুষকে আমি ঠকিয়েছি । আমি জানি আমার মৃত্যুর পর তিনি আমাকে অবশ্যই ক্ষমা করবেন ।

ডায়েরির ভিতর আর একটা ছোট চিরকুট ।
হাতের লেখা কিছুটা পুরুষালী ধাচের ।

সরি তিশা , তোমাকে আমি ভালবাসতাম । আমি ভেবেছিলাম বিয়ের পর হয়ত তুমি আর ফিরে আসবে না । কিন্তু তুমি তোমার স্বামীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে আমার কাছে চলে আসলে । যে নিজের স্বামীর সাথে প্রতারণা করতে পারে সে আমার সাথে প্রতারণা করবে না এর নিশ্চয়তা কি ? আমার অনেক টাকার দরকার ছিল তাই বাড়ির দলিলটা সাথে নিয়ে গেলাম । ও তোমাকে কে বলা হয়নি গ্রামের বাড়িতে মা আমার জন্য পাত্রী দেখেছেন আগামী শুক্রবার আমাদের বিয়ে । ভাল থেক ।

বোঝাই যাচ্ছে এটা তিশার প্রেমিকের চিঠি ।

রতন:
স্যার আপামনির জ্ঞান ফিরেছে । ডাক্তার সাহেব আপনাকে দেখা করতে বলেছেন ।

ডাক্তারের চেম্বার
আসুন কবির সাহেব বসুন । আপনার জন্য সু সংবাদ হল বাচ্চা এবং মা দুই জনই এখন বিপদ মুক্ত । আপনি চাইলে আগামী কালই বাসায় নিয়ে যেতে পারেন ।

তিশা মনেহয় ঘুমাচ্ছে । ওর অপূর্ব মায়াবী চোখের নিচে গাড় কাল দাগ মনে হয় অনেকদিন ঠিকমত রাতে ঘুমায় নি । এজন্যই হয়তো ঘুমের ঔষধ খেয়ে আজীবন ঘুমানোর ব্যাবস্থা করেছিল । কবির সাহেব আলতো করে করে তিশার কপালে একটা চুমু দিলেন । এরপর উঠে চলে যাচ্ছেন এমন সময় পিছনথেকে জামায় টান পড়ল ।

কোথায় যাচ্ছেন আমাকে একা রেখে ?

ইয়ে মানে সরি তুমি জেগে ছিলে ? আমি তো ভেবেছিলাম ঘুমাচ্ছ ।

কাছে আসুন , এবার বলুন আমাকে কেন বাঁচালেন ? এ পৃথিবীতে আমার বাঁচার আর কোন অবলম্বন নেই । এখানে বেঁচে থাকা আমার জন্য মৃত্যুর চেয়েও বেশী যন্ত্রণাদায়ক ।

এবার তুমি বলতো এমন পাগালামী তুমি কেন করলে ? একবারও কি নিজের নিষ্পাপ সন্তানটার কথা ভাবলে না । অন্তত আমার সাথে তো যোগাযোগ করতে পারতে আমার দরজা তোমার জন্য সবসময়ই খোলা ।

আপনার সামনে দাঁড়ানোর চেয়ে মৃত্যুর সামনে দাঁড়ানো আমার চেয়ে বেশী সহজ । কোন মুখে আপনার সামনে যাব ? আমি সব হারিয়েছি এমনকি আপনার দেয়া উপহার বাড়িটাও । সন্তানের কথা বলছেন ? ও কার পরিচয়ে বড় হবে ? বড় হয়ে যখন ও ওর বাবা কে জানতে চাইবে তখন কি উত্তর দেব আমি ?

কেন ওর বাবা কি মারা গেছে । তুমি আমার স্ত্রী আমাদের এখনো ডিভোর্স হয়নি সেই হিসাবে ও আমার সন্তান । আর বাড়িটা এখনো তোমারই আছে । আমি থানায় একটা জিডি করে রেখেছি আমার ঐ দলিল টা হারিয়ে গেছে । এখন কেউ ওটার মালিকানা দাবি করতে গেলে পুলিশ উল্টে তাকেই গেপ্তার করবে । তোমাকে তো বলিনি আমি আসলে একজন সরকারি গোয়েন্দা স্পেশাল ব্রাঞ্চ । সেই হিসাবে আইনের সব ফাঁক ফোকর সব আমার জানা আছে ।

হঠাৎ ফোন
স্যার আপনার দলিল টা পাওয়া গেছে । দলিলের মালিকানা দাবিকারী কে আমরা আটকে রাখছি । আমরা কি উনাকে ছেড়ে দেব ?

না রাখুন । আমি থানায় আসছি ।

কোথায় যাচ্ছেন ?

থানায় ।

দাঁড়ান আমি যাব ।

কারাগারে আটক আছে তিশার অকৃঞ্জ প্রেমিক ।

তিশা:
উনাকে বের করে আনুন ।

সেন্ট্রি তালা খুলে উনাকে নিয়ে আসুন ।

তিশা তুমি এতবড় প্রতারণা আমার সাথে করতে পারলে ?

আমি তোর সাথে প্রতারণা করেছি ! আর তুই খুব ভাল মানুষ তাই না ? ঠা...স ।
এটাই হল তোর শাস্তি যা তোর মত অকৃজ্ঞকে আমি শেষ বারের মত ক্ষমা করলাম ।

এরপরের কাহিনী অনেক সুন্দর ।
আটমাস পর তিশার একটা মেয়ে সন্তান হয়েছে । তিশা কবির দম্পতি এখন খুব সুখে আছেন । কবির সাহেব সব সময় মেয়েকে নিয়েই পড়ে থাকেন । কবির সাহেবের মায়ের দেয়া বড় বাড়িটা আবার শিশুর কান্না হাসিতে মুখরিত । কবির সাহেব মেয়ের নাম দিয়েছেন তিন্নি , মায়ের নামের সাথে মিল করে । রতন কবির সাহেবের পারসোনাল সিকিউরিটি অফিসার পদে চাকরি করেন ।
কবির সাহেবের নিসঙ্গ জীবনের শেষ বিকালে ভোরের আলো এসে পড়েছে । তিশা আর তিন্নির হাসির আলোয় মুছে গেছে সব অন্ধকার ।

0 Shares

একটি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ