শিখালে তোতাও কথা বলে।

শামীম চৌধুরী ১ নভেম্বর ২০২০, রবিবার, ০৮:১০:৪৮অপরাহ্ন পরিবেশ ১৯ মন্তব্য
আমাদের দেশে সবচেয়ে পরিচিত ও সবুজ রঙের পাখিদের মধ্যে সবুজ টিয়া সকলের পছন্দনীয় একটি Ps ittaculidaeপরিবারের অন্তর্গত সুদর্শন পাখি। বাংলাদেশের সকল অঞ্চলের শহরে ও গ্রামে এদের অবাধ বিচরন চোখে পড়ার মতন। শিশুদের কাছে সবুজ টিয়া অত্যন্ত লোভনীয় একটি পাখি। যারা খাঁচায় পাখি পালন করে তাদের কাছে এই টিয়ার বিকল্প নেই। যদিও আমরা যারা পাখি বিশারদ ও গবেষক হয়ে কাজ করি তারা সবসময় যে কোন পাখিকে খাঁচায় আবদ্ধ রেখে লালন পালনে নিরুৎসাহিত করে আসছি। তার মূল কারন এরা বনের পাখি। বন হচ্ছে এদের আবাসস্থল। প্রকৃতি থেকে যে খাবার তারা নিজেরা সারভাইভ করে খেতে পারে তা খাঁচায় কারো পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। যার ফলে পাখিগুলি ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে পড়ে ও এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তাছাড়াও খাঁচায় এদের প্রজনন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে পাখিগুলি তাদের বংশ বিস্তারে দূর্বল হয়ে পড়ে। এভাবে যদি সবাই পাখিদের খাঁচায় বন্দী করে রাখে তবে এক সময় এরা আমাদের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে। যা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বাঁধাগ্রস্ত হবে।
সবুজ টিয়া কলাপাতা-সবুজ রঙের দীর্ঘ সুদর্শন পাখি। এদেরে দৈর্ঘ্য ৪২সেঃমিঃ, ওজন ১৩০-১৫০ গ্রাম (আকার ভেদে), ডানা ১৮ সেঃমিঃ, ঠোঁট ২.৫ সেঃমিঃ, পা ১.৭ সেঃমিঃ ও লেজ ২৭ সেঃমিঃ লম্বা হয়। দেহের কিছু অংশ ছাড়া পুরা শরীর সবুজ। দীর্ঘ ও সরু সবুজ লেজে নীলের আমেজ দেখা পাওয়া যায়। লাল ঠোঁট নীচের দিকে বড়শীর মতন বাঁকানো। চোখ হলদে সাদা ও পা সবুজাভ স্লেট রঙের। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারায় ভিন্নতা আছে। ছেলে পাখির গলায় কালো-লাল রঙের মালা থাকে। মেয়ে পাখির গলা মালাহীন। গলার মালা দিয়ে ছেলে ও মেয়ে পাখিকে চেনা যায়। সারা বিশ্বে এদের চারটি উপপ্রজাতি রয়েছে। আমাদের দেশে একটি উপপ্রজাতি Psittacula krameri পাওয়া যায় বা দেখা যায়।
 
সবুজ টিয়া খোল বনভূমি, পাতাঝরা বন, অপ্রধান বন, আবাদি জমি, বাগান, লোকালয়ে বিচরন করে। এরা সচারচর ছোট ছোট দলে থাকে। ফুলজ ও ফলদ গাছে, ঘেরা ফলের বাগানে এবং শস্যক্ষেতে খাবার খায়। এদের খাবার তালিকায় রয়েছে পত্রগুচ্ছ ফুল, ফল, লতা-পাতা, বীজ বা শস্যদানা ও ফুলের মিষ্টি রস। গ্রামে ও শহরে বড় গাছে এরা অন্য পাখিদের সঙ্গে রাত কাটায়। চলাফেরা করার সময় আংশিক লেজ উঠায়। এরা উচ্চ ও তীব্র স্বরে ডাকে। তবে খাঁচায় বন্দী করে অনেকে এদের কথা বলাতে পারে। আঞ্চল ভেদে এদের তোতা পাখি নামেও ডাকে। তাই এদের আঞ্চলিক নাম তোতা পাখি।
জানুয়ারী থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত এদেরে প্রজননকাল। প্রজনন মৌসুমে এরা গাছে কোটরে বা বসন্ত বৌরির বাসায়, পরিত্যাক্ত খোঁড়লে, শহরের উঁচু দালানের ফোঁকরে নিজেরা বাসায় বানায়। গাছের ছোট ছোট ডাল-পালা ও ছন দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম দেয়। মেয়ে পাখি ৪-৬টা ডিম পাড়ে। ছেলে ও মেয়ে উভয়ে ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুঁটায়। ২১ দিনে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়। তখন মা ও বাবা দুজনে মিলে ছানাদের খাবারের যোগান দিয়ে থাকে। অসাধু পাখি বিক্রেতাদের চোখ সবসময় এদের দিকে থাকে। বাচ্চা ফুঁটার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাসা থেকে বাচ্চা নামিয়ে নেয়। পরবর্তীতে খাঁচায় রেখে একটু বড় হলে বিক্রির জন্য ফেরী করে বেড়ায়। যা বণ্যপ্রানী সংরক্ষন আইনে আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ। এই অসাধু ব্যবসায়ীদের কবল থেকে আমরা সচেতন না হয়ে এদের যদি রক্ষা না করি তবে ধীরে ধীরে এরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
 
সবুজ টিয়া বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। দেশের সব জেলায় ও লোকালয়ে পাওয়া যায়। ইহা ছাড়াও আফ্রিকা, আফগানিস্তান,ভারত দক্ষিণ-পূর্ব চীন ও মায়ানমারে এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। বাংলাদেশে বণ্যপ্রাণী আইনে এই পাখি সংরক্ষিত।
বাংলা নামঃ সবুজ টিয়া
ইংরেজী নামঃ Rose-ringed parakeet
বৈজ্ঞানিক নামঃ Psittacula krameri
 
ছবিগুলি ঢাকার কার্জন হলের বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে তোলা।
0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ