রাগ কমানোর এপিঠ ওপিঠ

তৌহিদুল ইসলাম ৩ এপ্রিল ২০১৯, বুধবার, ১২:১২:৩৭পূর্বাহ্ন গল্প ৪১ মন্তব্য

মন নিয়ন্ত্রনে মেডিটেশন নিয়ে এর আগে লিখেছিলাম, আজ রাগ নিয়ন্ত্রন নিয়ে বলি। মনে রাখবেন সবাই হাসতে পছন্দ করে। রাগ করাও মানবিক আচরণের মধ্যে পরে। তবে রাগ যদি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় তবে তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আসুন জেনে নিই কিভাবে এই রাগ নিয়ন্ত্রন করতে পারেন।

১) সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল উল্টো গোনা (countdown)। ১০,৯,৮,৭,৬,৫,৪,৩….. গুনতে থাকুন। এতে রাগ অনেকটাই কমে যায়।

২) বড় করে নিশ্বাস নিন। অক্সিজেন ব্রেইনে প্রবেশ করলেই চিন্তা ভাবনা করার ক্ষমতা বেড়ে যাবে।

৩) রাগ এর উৎস থেকে কিছুক্ষণের জন্য দূরে সরে আসুন।

৪) রাগ প্রকাশ করতে না পারলে সেটা আবার ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াতে পারে। চেষ্টা করুন অন্যভাবে রাগ প্রকাশ করতে। যেমন, বালিশকে মারতে পারেন, অথবা বাথরুম বা অন্য কোথাও একলা চিৎকার করে মনের ঝাল মিটিয়ে গালি দিন (!)। এতে মন অনেকটা হালকা হয়ে যায়।

৫) রেগে গিয়ে না চাইতেও আমরা উল্টাপাল্টা অনেক কিছুই বলে ফেলি যা পরবর্তীতে আমাদের ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়ায়। তাই কিছু বলার আগেই সেটা কাগজে লিখে ফেলুন। তারপর চিন্তা করে দেখুন কথাটা বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত।

৬) অযথা রেগে না গিয়ে চিন্তা করুন কিভাবে সমস্যাটাকে সমাধান করা যায়।

৭) যদি পারেন তাকে ক্ষমা করে দিন। এটা আপনার এবং তার দুজনের জন্যেই ভাল ফল নিয়ে আসবে।

৮) রাগ কমানোর ভাল একটি উপায় হল – যদি আপনি দাঁড়িয়ে থাকেন তবে বসে পড়ুন, আর বসে থাকলে শুয়ে পড়ুন। এর ফলে আমাদের ব্রেইন চিন্তা ভাবনা করার সময়টুকু পায়।

৯) যুক্তি দিয়ে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে রেগে গেলে শুধু নিজেরই ক্ষতি হবে , তার কোন ক্ষতি হবেনা। এতে আপনাআপনি রাগ কমে আসে।

১০) আরেকটি দারুণ উপায় হল – যখনি আপনি রেগে যাবেন চিন্তা করতে থাকুন আপনার প্রিয়জনদের কথা। তাদের সাথে কাটানো প্রিয় সময়গুলোর কথা। এর ফলে রাগ গলে পানি হয়ে যেতে বাধ্য।

১১) চেষ্টা করুন প্রতিদিন যোগব্যায়াম করতে। এর ফলে আমাদের সহ্যক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়।

তবে মজার কথা হল বেশিরভাগ সময় আমরা রেগে গেলেও প্রকাশ করিনা। এর ফলে নিজে তো ক্ষতিগ্রস্ত হই , আশেপাশে থাকা মানুষগুলির মধ্যেও এর প্রভাব পড়ে। তাই সুস্থ ভাবে রাগ প্রকাশের পদ্ধতিও জানতে হবে।

(তথ্যসূত্রঃ মনোবিজ্ঞানী আসাদুজ্জামান স্যার)

এবার আমার গল্প শুনুনঃ

মন মেজাজ খারাপ থাকলে আমি সচরাচর ফেসবুকে আসিনা। তবে অন্যের লেখা গল্প পড়ি আর মাইন্ড ডাইভার্টের চেষ্টা করি। ফেসবুকে লগইন না করার কারন হলো, যারা আমাকে ভালোবাসে পছন্দ করে আমার মন খারাপে তাদেরও খারাপ লাগে, তাদের মুডও অফ হয়ে যায় অনেক সময়। আর অন্যটি হলো নিউজ ফিডে উল্টাপাল্টা কমেন্ট বা ছবি দেখলে চোদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে তাদের ব্লক করি, ফলে একজন বন্ধুকেও হারাই যা কাম্য নয়।

মাঝেমধ্যে টেলিভিশনে নিদ্রাকুসুম জাতীয় তেলের বিজ্ঞাপন দেখে মনে হয়, যেহেতু আমার মাথাটা একটু বেশীই গরম থাকে সবসময় হয়তো কাজের চাপ বেশি থাকে বলে ; তাই এই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু চোখ বন্ধ করে নিজের তেল চুপচুপে চুলের ছবি মনে ভাসতেই দমে যাই। আদতে কোনদিনই এই তেল ব্যাবহার করিনি আমি।

তবে আমার যারা খুব কাছের তারা জানে, আমি রেগে গিয়ে মুখের উপরে অনেক কথা বললেও আমি একজন সাদা মনের মানুষ। মনে কোন প্যাঁচ নাই আমার।

গত দু’বছর ধরে মেডিটেশন প্রাকটিস করছি। সত্যি দারুন কাজে দিচ্ছে। নিজের মনের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা শিখছি। কিন্তু আজ এসবের একটাও কাজে দেয়নি।

মাথাটা ঢিপ ঢিপ করছে। জোরে চিৎকার করে রাগটাকে ঠান্ডা করা যায়, এই বাসনায় বাসার পাশের নিরিবিলি খেলার মাঠে গিয়ে দেখি পাড়ার আন্টিরা সন্ধ্যাভ্রমন করছে। এ বাবা! এখন চিৎকার করে উঠলে নির্ঘাত লজ্জায় পরতাম।

বিফল মনোরথে পুকুর ঘাটে গিয়ে বসার ইচ্ছে নিয়ে রওনা হবো তো সামনে পড়লো পাড়ার সবচেয়ে বাঁচাল ছেলে নওশাদ। সামনাসামনি পরে গিয়েছি তাই আধাঘণ্টা তার সংসারের পান থেকে লবনের কেচ্ছা কাহিনী আর বকর বকর শুনে মাথাটা আরো ভারী হয়ে আসলো।

ভাবলাম যাই, পুকুরের পানিতে মাথা চুবিয়ে থাকি। যেই পুকুরঘাটে গিয়েছি আবছামতন কাকে যেন পানির পাশে বসে পানি নাড়ানাড়ি করতে দেখলাম। নির্ঘাত কেউ শৌচ পরবর্তী কার্য সম্পাদন করছে।
আমিও কম যাইনা, ব্যাটা দাঁড়া! পুকুরের পানিতে এসব! এদের জন্যই পরিবেশটা নোংরা থেকে যাচ্ছে।

খুক খুক করে কাঁশি দিতেই মানুষটা তড়াত করে উঠে দাঁড়ালো। এ যে ঠসা চাচা! যাকে বহুমুত্র রোগে পেয়েছে। বুড়ো মানুষটাকে কিছু বলতে মায়া লাগলো কিন্তু এই পানিতে আর কিছুতেই মাথা ভেজানো যাবেনা। তাহলে উপায়?

কিছুদুর এগোতেই সামনে বিশাল বটগাছ, ভাবলাম তার সাথেই চিৎকার করে মনের কথা বলে রাগ থামাই। এখন অন্ধকারে কেউ দেখতে পাবেনা। কথা বলা শুরু করবো গাছের পিছনে দুটো কালো কুকুর বিকট ঘেউ ঘেউ চিৎকার করে ডেকে উঠলো। একেতো সন্ধ্যা নেমেছে তার উপর কালো কুকুর। সেদিন কোথায় যেন পড়লাম কালো কুকুরের বেশে জ্বীনেরা ঘোরাঘুরি করে। আত্মারাম খিঁচে দিলাম দৌড়।

আজ আর রাগ ঠান্ডা করা হবেনা মনে হচ্ছে। এক দৌড়ে পাকা রাস্তায় উঠে হেঁটে হেঁটে বাসায় ঢোকামাত্রই গেটের সামনে চিৎপটাং! আজকের বৃষ্টিতে সব কাঁদা কাঁদা হয়ে আছে।

আমার শরীরের এ অবস্থা দেখে আম্মা আর গিন্নী নিজেরাই চিৎকার চেঁচামিচি শুরু করে দিলো তৎক্ষণাৎ। হলো এবার ষোলকলা পূর্ণ! আজ আর রাগ ঠান্ডা করা হবেনা আমার।

গোসল করে বিছানায় বসে আছি, ভাবলাম রাগ ঝাড়তে বালিশগুলোকে আছাড় মারলেওতো পারি। মনোবিজ্ঞানী স্যারের উপদেশে এটাওতো আছে। কিন্তু সমস্যা হলো গিন্নী; ও দেখলে আজ আর বিছানায় থাকা লাগবেনা। ধুর! কি হয় হবে, আগে রাগ ঠান্ডা করি। বিছানা ঝাড়া ঝাড়ু হাতে নিয়ে বালিশগুলোকে মারতে শুরু করে দিলাম তৎক্ষণাৎ।

ফটাস ফটাস করে শব্দের আওয়াজ পেতেই গিন্নী পিছনে হাজির। বলে হাপাচ্ছ কেন?
বললাম কিছুনা, বালিশে খুব ধুলো লেগেছে; সেগুলোই ঝাড়ছি। ও আচ্ছা। কিন্তু একটু আগেই যে আমি ঝেড়ে দিলাম বিছানা?

আহ! কি বুদ্ধি আমার!

রাগ কিছুটা কমেছে, এখন বসে মোবাইল চালাচ্ছি আর পা নাচাচ্ছি। হঠাৎ গিন্নী বলে উঠলো- বালিশের উপর রাগটা না ঝাড়লেই কি হতোনা?

আমি কিছু বললাম না, হতবাক হয়ে শুধু তার দিকে চেয়ে রইলাম। তারা যে কেন বুঝেও অনেক কিছু না বোঝার ভান করে থাকে!

(ছবিঃ সংগৃহীত)

0 Shares

৪১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ