গেরস্ত বাড়িতে বেড়ে উঠা আমার ছেলেবেলা। তিন ভাইয়ের এক বোন হওয়ায় বেশ আহ্লাদী আর আদুরেও। খুব বড় না হলেও নেহাতই ছোট ছিল না আমাদের পরিবার। বাবা-মা আর আমরা চার ভাইবোন মিলে ছ'জন মানুষের পরিবার আমাদের। আমি পরিবারের প্রাণকেন্দ্র। আমি প্রচন্ড চঞ্চল আর দুরন্ত ছিলাম আর আমার ভাইয়েরা একদম শান্ত সুস্থির ছিলো। আমি একাই পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখতাম। তাই তো আমাকে ছাড়া কেউ থাকতে পারতো না। এক মুহূর্ত চোখের আড়াল হলেই সবাই অস্থির হতো।

আমি খুব ছোট থেকেই নামাজ, রোজা, কুরআন শরীফ পড়া শিখে নিয়েছি। ঠিক কতবছর বয়স থেকে রোজা রাখা শুরু করেছি তা মনে না থাকলেও ছোট থেকেই রাখছি এটা বেশ বলতে পারি। আমরা অনেকেই এক সাথে নামাজ আদায় করতাম তখন। সারারাত জেগে শবে বরাতের নামাজ, তারাবীহ নামাজ, শবে কদরের নামাজ পড়তাম সবাই এক সাথে।  আর এই নামাজ পড়তে গিয়ে কত কাণ্ডই না হতো। শবে বরাত ও শবে কদরের নামাজ কে তো বেশি পড়তে পারে তাই নিয়ে চলতো বাদাবাদি। এটা করতে গিয়ে কেউ ঢকাঢক সিজদা দিতো, কেউ দোয়া পড়তো ফুসফুসিয়ে। কেউ এতো দ্রুত পড়তো।  এই নিয়ে দিনের বেলা বেশ হাসাহাসি করত। আমার মা একা একা ঘরে নামাজ পড়েন কেননা সবার সাথে পড়তে মনোনিবেশ করতে পারেন না নামাজে। রোজার সময় সবাই একসাথে উঠে গরম গরম ভাত খাওয়া, একই গামলায় ছোলা,মুড়ি, বুন্দিয়া মেখে মজা করে ইফতার করা  সত্যিই দারুণ ছিলো সেই মুহূর্তগুলো।

পরিবারের একমাত্র কন্যা সন্তান হওয়ায় সব কিছু থাকতো আমার জন্য বেশি। খাবার থেকে শুরু করে পোশাক সহ প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র  অনেক বেশি পেতাম আমি। ভাইদের যদি একটা জামা দিতো আমাকে দিতো দুটো। ওদের দুটো থাকলে আমার থাকতো চারটা। তাই তো ভাইয়েরা বলে বাবা মা আমাকেই বেশি ভালোবাসে। এখনও বলে এটা। ঈদের দিন সকালে সবার আছে উঠে গোসল করে সাজুগুজু করে বেড়িয়ে পড়তাম সালামী সংগ্ৰহে।

সেবারের ঈদ আমাদের জন্য আনন্দের বদলে দুঃখ হয়ে এলো। প্রিয়জন বিয়োগে কান্নার রোল পড়লো আমাদের বাড়িতে।  ঈদের দিনে আমরা আমাদের নানাভাইকে হারালাম। তারপর থেকে আর কোনো ঈদেই আমরা আনন্দ করতে পারিনি। ঈদের দিনটি আমাদের কাছে নানার মৃত্যু বার্ষিকী হয়েই ফিরে আসে প্রতিবছর।

 

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ