রঙধনু আকাশ (৩য় পর্ব)

ইঞ্জা ৩০ জুন ২০২০, মঙ্গলবার, ০৮:৫৯:০৫অপরাহ্ন গল্প ২৭ মন্তব্য

রুদ্র সেলফোনটা তুলে নিয়ে বাসায় কল দিলো, ছোটোবোন ফোন রিসিভ করলে বললো, রুমি মম কই?

এইতো পাশেই আছে, দিচ্ছি।

ও পাশে রুদ্রর মা ফোন ধরে হ্যালো বললে রুদ্র বললো, মম তুমি আর ভাবী একটু অফিসে আসো তো, জরুরী একটা মিটিং করতে হবে।

হটাৎ কি এমন জরুরী বিষয় রুদ্র? 

মম এখন তো ড্যাড নেই, তুমিই কোম্পানির কো-চেয়ারপার্সন আর ভাবী ভাইয়ার স্থলে আসবে।

আচ্ছা আসছি, বলেই রুদ্রর মা ফোন কেটে দিলো। 

রুদ্র সবার দিকে ফিরে বললো, আমার মা আর ভাবী আসুক তারপর এইসব সিদ্ধান্ত নেবো, হুদা সাহেব আপনি ব্যাংকে এখন ফোন দিয়েন না, ওরা যদি কল করে বলবেন আমরাই উনাদের কল দিয়ে আসতে বলবো।

ওকে স্যার। 

জিএম সাহেব আপনি সব রেডি করুন, আমরা মিটিং করেই ডিসিশন নেবো, আপনারা তিনজন এবং আমরা তিনজন মিটিংয়ে থাকবো, আপাতত আমাদের সবার জন্য হাল্কা কিছু খাবারের ব্যবস্থা করুন, বলেই রুদ্র ডানহিল লাইট একটা নিয়ে ধরালো।

ইন্টারকম বেজে উঠলে রুদ্র রিসিভ করতেই রিসেপশনিস্ট বললো, স্যার মিস শেলি এবং উনার বাবা মিস্টার সফি এসেছেন।

রুদ্র কিছুক্ষণ ভেবে বললো, ওকে উনাদেরকে কেবিনে পাঠিয়ে দাও।

ওকে স্যার। 

 

রুমের দরজা খুলে রুদ্রর হবু শ্বশুর ও শেলি প্রবেশ করলো।

কেমন আছো রুদ্র, সরি ওদিন আমাদের একটা প্রোগ্রাম ছিলো, এছাড়া শেলির শরীরটাও ভালো ছিলোনা বলেই তাড়াতাড়ি চলে এসেছিলাম।

নেভার মাইন্ড আংকেল, বসুন।

শেলি আর শেলির বাবা বসলে রুদ্র জিজ্ঞেস করলো, কি খাবেন বলুন, কফি চলবে?

প্রিমিয়াম গোল্ড হলে চলবে।

রুদ্র কিঞ্চিৎ কটমট করে তাকালো, এরপর রিসেপশনিস্টকে কল দিয়ে কফি দিতে বললো।

তা তোমাদের কি অবস্থা, এখন তো তুমিই সব?

কেন এই কথা বলছেন?

মানে তোমার আব্বা নেই, নীল তো পাগল হয়ে গেছে।

কথাটা বুঝে শুনেই বলছেন তো আংকেল, নীল ভাই অসুস্থ, পাগল হয়ে যায়নি।

ঔদ্ধত্য দেখিয়ে সফি সাহেব বললেন, ঐ একি কথা আর কি, বলেই হে হে হে করে হাসলেন।

রুদ্রর ইচ্ছে করছে উঠে কানের নিচে কষে চটকানা দেয়, এ সময় পিয়ন এসে কফি দিয়ে গেলো।

আদুরে গলায় শেলি বললো, রুদ্র তুমি ভালো আছো তো বেবি, লিপস্টিক বের করে ঠোঁটে মাখলো।

রুদ্র জবাব না দিয়ে শেলির তামশা দেখতে লাগলো।

 

রুদ্রর মা আর ভাবীকে কেবিনে ঢুকতে দেখে সফি সাহেব বলে উঠলো, এই যে বেয়াইন আসছেন দেখছি, আসুন আসুন।

ভাই সাহেব কেমন আছেন, মা শেলি তুমিও আসছো দেখছি বলেই রুদ্রর দিকে প্রশ্নবোধক ভাবে তাকালেন। 

রুদ্র দুই কাঁদ তুলে শ্রাগ করলো।

তা বেয়াইন সাহেব আপনারা নিশ্চয় কোনো বিষয়ে এসেছেন?

আমাদের একটা জরুরী মিটিং আছে, তা আসতে হয়েছে।

ওহ তাহলে তো অসময়েই এসে পড়েছি, তাহলে আমরা উঠি?

এসেই যখন পড়েছেন তাহলে আমাদের মিটিং এটেন্ড করুন আংকেল।

সফি সাহেব বসে পড়লেন, মনে মনে বললেন ভালোই হলো, সম্পত্তির ব্যাপারে অনেক কিছু জানা যাবে। 

রুদ্র ইন্টারকমে জিএম সাহেবকে ফোন দিয়ে বললো, আমার রুমে পাঁচটা লাঞ্চ দিন, আপনাদের জন্য এক্সট্রা দুইটা আনিয়ে নিন প্লিজ।

ওকে স্যার।

রুদ্র ইন্টারকম ডিস্কানেক্ট করে ওর ভাবীকে জিজ্ঞেস করলো, ভাইয়া আর রুহি কি করে? 

রুহি নীলের সাথে খেলছে, রিয়া আছে ওদের সাথে।

রিয়া কে, প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন সফি সাহেব।

আনকেল ও আমার ছোটবোন। 

ওহ আচ্ছা আচ্ছা, যেন উনি আশ্বস্ত হলেন এমন ভাব দেখালেন।

 

লাঞ্চের পর সবাই কনফারেন্স রুমে বসেছে মিটিং করতে, রুদ্র ফিন্যান্স ডিরেক্টরকে বললো সমস্যা গুলো বুঝিয়ে বলতে।

ফিন্যান্স ডিরেক্টর সব খুলে বলতে লাগলো একে একে, মাঝে মাঝে রুদ্রর মা এইটা সেটা নিয়ে প্রশ্ন করে যাচ্ছেন, এক সময় ফিন্যান্স ডিরেক্টরকে নীলের বউ রেনু জিজ্ঞেস করলো, তাহলে এখন উপায় কি? 

উপায় দুইটা আছে ম্যাম।

সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকালো ফিন্যান্স ডিরেক্টরের দিকে।

জিএম সাহেব বললো, উপায়ের একটি হলো কোম্পানিকে দেউলিয়া ঘোষণা করা।

এতো রাস্তায় নামতে হবে, সফি সাহেব বললেন।

না স্যার, আমাদের কাছে এই মুহূর্তে দেড়শো কোটি টাকা আছে যা আমরা মিসেসে নীলের একাউন্টে ট্রান্সফার করে দেবো, এতে যত ফ্যাক্টরি আছে এবং বাড়ি সহ সবই নিলামে চলে যাবে কিন্তু দেড়শো কোটি টাকায় রুদ্র স্যার ভালো ভাবেই সামনে এগুতে পারবে।

আর দ্বিতীয় অপশন, রুদ্রর মা জিজ্ঞেস করলেন। 

দ্বিতীয়টিও প্রায় সেইম, ভদ্রলোকের মতো সব কিছুই ব্যাংক নিয়ে যাবে,,শুধু থাকবে চেয়ারম্যান স্যারের চারশো কোটি টাকার শেয়ার, যা এখন পঞ্চাশ কোটিরও  কম এবং দিন দিন দাম কমছে।

 

তাহলে তো দেখছি দুটোই এক, যা আছে ব্যাংক নিয়ে যাবে, রেনু বললো।

নাহ রেনু, দেউলিয়া ঘোষণা করা হলে তোমার শ্বশুরের বদনাম হয়ে যাবে।

মা আমি তা হতে দেবোনা, রুদ্র বললো।

আমিও চাইনা রুদ্র।

তাহলে এখন সব সম্পত্তি ব্যাংকে দিয়ে দেবেন, সফি সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,ওদিকে শেলির কোনো ভাবান্তর নেই, যেন সে এখানে নেই। 

জ্বি ভাই সাহেব, জবাব দিলেন রুদ্রর মা।

রুদ্র বললো না, আমরা সব ব্যাংকে দেবোনা, দরকার হলে আমাদের রানিং ব্যবসা গুলো বিক্রি করবো আর ব্যাংকে দেবো।

সেটা ব্যাংক মানবেনা স্যার।

সেটা আমি ব্যাংকের সাথে কথা বলবো, দেখি কি করা যায়।

আসলে এইভাবে ফকির হয়ে গেলে কেমনে চলবে রুদ্র, সফি সাহেব হতাশ হয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

তাহলে কি করা যায় বলুন?

সফি সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, না না তাহলে আমি এখানেই তোমাদের এনগেজমেন্ট ভেঙ্গে দিচ্ছি, চলো শেলি।

শেলি আর কারো দিকে তাকালোনা, উঠে দাঁড়িয়ে এনগেজমেন্ট রিংটা খুলে রুদ্রর সামনে রেখে বাপের পিছু নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। 

সবাই হতভম্ব হয়ে ওদের চলে যাওয়া দেখলেও রুদ্রর ভাবান্তর হলোনা। 

 

শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো, রুদ্র ব্যাংকের সাথে কথা বলে সময় নিবে, যথাসম্ভব চেষ্টা করবে কোম্পানি বাঁচানোর।

রুদ্র ঘড়ি দেখলো, চারটা বাজছে, রুদ্র মাকে বললো, আপনারা বাসায় যান, আমি ব্যাংক গুলোর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি।

স্যার আজকে আর সম্ভব হবেনা, আপনি আগামীকাল সকালে যান।

হাঁ তাও ঠিক, মম ভাবী চলো আজ বাসায় যায়।

চল বাবা, বলে উঠে দাঁড়ালের রুদ্রর মা আর ভাবী।

তিনজনই নিচে নেমে এসে দাঁড়ালে রুদ্র বললো, তোমরা আমার সাথে চলো, তোমাদের গাড়ীটা ড্রাইভার নিয়ে আসবে, সামনেই ড্রাইভার দাঁড়িয়ে ছিলো, ওকে গাড়ি নিয়ে চলে যেতে বলে রুদ্র সবাইকে নিয়ে নিজের গাড়িতে রওনা হলো। 

পথেই রুদ্রর মা কথা পাড়লেন, শেলি আর তা বাবা এমন করবে আমি চিন্তায় করতে পারিনি, কোথায় উনি এই সময়ে আমাদের পাশে দাঁড়াবেন, তা না করে উনি সরে পড়লেন।

মম আমি আগে থেকেই জানতাম।

কি, কি জানতি তুই?

উনি স্বার্থপর তা আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম, কিন্তু বাবার সম্মানের জন্যই বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম, এখন আমাদের এই বিপদে স্বাভাবিক ভাবেই ওরা সরে পড়েছে। 

কষ্ট লাগছে তোর বিয়েটা ভেঙ্গে গেলো, বড় করে এক নিশ্বাস ফেললেন রুদ্রর মা। 

 

....... চলবে। 

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ