মিশন দুর্জয় ( দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব )

ফ্রাঙ্কেনেস্টাইন ১৪ অক্টোবর ২০১৪, মঙ্গলবার, ০৮:৪১:১৬অপরাহ্ন গল্প ৬ মন্তব্য

আটঃ

" আচ্ছা আমরা এখনই অভিযানে যাচ্ছি না কেন ?? " গাড়িতে নারায়ণগঞ্জ যেতে যেতে তাশফিকের প্রশ্ন।
- আগেও বলেছি ওইখানে কেবল চুনোপুঁটিদেরই পাওয়া যাবে। রাঘব বোয়ালদের পাওয়া যাবে না।
- তাহলে রাঘব বোয়ালরা কি নারায়ণগঞ্জে যে আমরা ওইখানে যাচ্ছি ??
- না। আমরা যাচ্ছি রাঘব বোয়ালদের ধরার জন্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে।
- কেমন প্রমাণ ??
- জানি না তবে আশা করি কিছু না কিছু পাওয়া যাবেই।

সোনারগাঁও থেকে তীব্র সাইরেন বাজিয়ে রাস্তা ক্লিয়ার করে নারায়ণগঞ্জ যেতে প্রায় ৪০ মিনিট লেগে গেলো।
গিয়েই চলে গেলাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে।
যাওয়ার পরেই পরিচয় দিতেই আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হলো জেলা প্রশাসকের কক্ষে। জেলা প্রশাসক নাকি বাসায় চলে গেছে। খবর পেয়ে তিনি ছুটে এলেন অফিসে।

জানতে চাইলেন কেন তার অফিসে আমাদের আগমন।
জানালাম কিছু নির্দিষ্ট তথ্য চাই।
এই ওই ফাইল ঘেটে উনি আমাদের তথ্যগুলো দিয়ে দিলেন।

প্রথমেই যে তথ্যটা জানতে চেয়েছিলাম সেটা হচ্ছে, ওই রামগড় মহল বা রয় প্যালেস এর বর্তমান কোন মালিক আছে কিনা আর থাকলে তার পরিচয় কি।

শুনে অবাক হলাম ওই প্যালেসের বর্তমান মালিক মিঃ আশরাফ।
ওনার বাবা বিহারী ছিলেন। আর উনিই ছিয়াত্তর সালে ওই বাড়ি রায় পরিবারের জীবিত এক সদস্যের যে উত্তরাধিকার সূত্রে ওই সম্পত্তি লাভ করেছিল তার থেকে কিনে নেন।

তথ্যটা জেনেই ফোন দিলাম ঢাকায় কর্ণেল সুলতানের কাছে। ওনাকে বললাম যেন মিঃ আশরাফ আর সোলায়মানের উপরে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়। কোন অবস্থাতেই যেন ওনারা পালিয়ে যেতে না পারে। কারণ আমাদের দেবীনগর আর রামগড়ের অভিযানের খবর পেলেই ওনারা পালাতে পারে।

এরপরে ফোন দিলাম মিলিটারি ইনফরমেশন সেন্টারে। সেইখানে জানতে চাইলাম সোলায়মানের ব্যাকগ্রাউন্ড যেন ডিটেইলস প্রেরণ করা হয়। ১০ মিনিটের মধ্যে জেলা প্রশাসকের অফিসের ফ্যাক্স-ফোনে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।

সেইখানে যেটা দেখতে চেয়েছিলাম সেটাই দেখতে পেলাম। সোলায়মান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে নারায়ণগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ' স্থানীয় লোক ঐতিহ্য ও ইতিহাস ' বিষয়ে পড়াশোনা করেছে। তারমানে তার পক্ষে রামগড় আর দেবীনগরের ব্যাপারে জানা অসম্ভব কিছু না বরং না জানাটাই অসম্ভব।

" তাহলে মিঃ আশরাফ, সোলায়মান, মাওলানা রিয়াজ, আবুল এরাই অপরাধী। " তাশফিকের কন্ঠে উল্লাসের সুর।
- নাহ। রিয়াজের সাথে এই কেসে কোন সম্পর্ক নাই।
- মানে ?? তাহলে রিয়াজ গেলো কোথায় ??
- খুব সম্ভবত ওকে অপহরণ করা হয়েছে।
- কেন ??
- বলির পাঁঠা বানানোর জন্য।
- কি বলছো ??
- হুম ভেবে দেখো। ওদের মত লোক নিশ্চয়ই নিজের বাড়ির গ্যারেজে আর গ্রামের বাড়ির সামনে অস্ত্র লুকিয়ে রাখবে না। তাও আবার অচল অস্ত্র !!
- তাও ঠিক। এই ব্যাপারটা খটকা লেগেছিল।
- আর কেউ পালায়নি। রিয়াজ পালিয়ে গিয়ে একেবারে আমাদের জন্য যেন সন্দেহের তালিকাটা অনেক সহজ করে দিলো !!
- সেটাই তো।
- সবই হয়েছে আমাদের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর জন্য। আসলে এর পিছনে রয়েছে অন্য কেউ যে এখনো আমাদের সামনে আসেনি।
- মন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং মিঃ সিদ্দিকের ব্যাপারে কি বলবা ??
- মন্ত্রী ছাড়া বাকি দুই জনের সাথে এই কেসের কোন সম্পর্ক নাই।
- তাহলে এখন কি করবো ??
- অভিযানে যাবো। পার্থিব মেজর জেনারেল শাখাওয়াত স্যারের সাথে যোগাযোগ করে বলো আমাদের দুই ইউনিট কমান্ডো লাগবে। আর তাশফিক বিমান বাহিনীকে খবর দাও। ওদের হেলিকপ্টার যেন প্রস্তুত রাখে। যে কোন মূহুর্তে আমাদের দরকার হলেও হতে পারে।
- ওকে।

" আর ইয়াসির সেনাবাহিনীর ১১দশ পদাতিক ডিভিশনকে খবর দাও, কারণ নারায়ণগঞ্জ এরিয়া ওদের আন্ডারে। বলো আমাদের যেন চার প্লাটুন সৈন্য পাঠানো হয়। "
- আর্মি লাগবে ??!! বিজিবি দিয়ে হয় না ?? কমান্ডো তো আসছেই।
- ট্রেইনড জঙ্গি ওরা। আমি কোন ধরণের কমতি চাই না। কে আর্মিতে কি সমস্যা ??
- না এত আর্মি একসাথে মুভ করা যা তা কথা না। আর আজকালকার যে মিডিয়া !! পুরা দেশে তোলপাড় করে দিবে।
- যত যাই হোক আমার চার প্লাটুন সৈন্য চাই-ই চাই। দেশ তোলপাড় কেন দুনিয়া ধ্বংস হলে হোক কিন্তু আমি যা চাই সেটার ব্যবস্থা তুমি করো।
- ঠিক আছে। করতেছি। আর কিছু ??
- না আর কিছুর দরকার নেই আমাদের।

নয়ঃ

ডিসির অফিস থেকে বের হতেই মুখোমুখি হয়ে গেলাম একজনের। মাঝবয়সী এক লোক। ফোনে কি যেন কথা বলছিল। আমাদেরকে দেখেই ভূত দেখার মত চমকে উঠলো। আর হাত থেকে পড়ে ফোনটা ভেঙ্গে গেলো।
লোকটাকে গত কয়েক ঘন্টায় চেনা হয়ে গেছে। ডিসির সহকারি।

এখন আচরণ কেমন যেন চোরের মত লাগছে !! যাই হোক এখন এত কিছু ভাবার সময় পেলাম না।
পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাশফিক তাকে বললো, " এত চমকাইলে কি হয় !! মোবাইল টাই তো ভেঙ্গে ফেললেন !! "

একটু পরে আমরা এখন দেবীনগর আর রামগড়ের পথে। যাওয়ার সময় পথেই নারায়ণগঞ্জ নিশ্ববিদ্যালয় পরে। হটাতই ঠিক করলাম ওখানে যাবো। গিয়ে ওখানকার ' স্থানীয় লোক ঐতিহ্য ও ইতিহাস ' বিভাগের পরিচালকের সাথে কথা বললাম। রামগড় প্যালেসের কথা তুলতেই উনি একটা বই বের করে দিলেন। বললেন ওই বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়ের তৃতীয় পরিচ্চছেদে রামগড় প্যালেস সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। আর কাজ শেষ হলে বইটা ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন কারণ বইটা অত্যন্ত দূর্লভ। গোটা বাংলাদেশে এই বইয়ের দ্বিতীয় কপি কারো কাছে আছে কিনা এই ব্যাপারে তিনি সন্দিহান। ওনাকে কথা দিলাম যে কাজ শেষ হয়ে গেলে ওনার বই ওনাকে ফিরিয়ে দিয়ে যাবো।

আবার যাত্রা শুরু করলাম আমরা। যেতে যেতেই বইটা পড়া হয়ে গেলো। রামগড় প্যালেসের উপরে তেমন বেশি তথ্য দেওয়া নেই। ওখানকার জমিদারদের অবস্থা ও আশেপাশের মানুষের জীবনযাত্রার মান ইত্যাদি নিয়েই আলোচনা বেশি ছিল। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেটা পেলাম সেটা হচ্ছে মহলের গোপন পথটার ব্যাপারে। মহলের ভাঁড়ার ঘরের নিচ দিয়ে যাওয়া রাস্তাটা গিয়ে শেষ হয়েছে মাত্র সিকি কিলোমিটার দূরে শীতলক্ষ্যার তীরে গিয়ে। তথ্যটা পেতেই চট করে মাথায় আসলো আচ্ছা জঙ্গিরা যদি ওই রাস্তা দিয়ে নৌ-পথে পালিয়ে যায়। সাথে সাথেই ইয়াসিরকে বললাম যেন কোস্ট গার্ডকে বলা হয় ওই জায়গাতে দুটো গান বোট মোতায়েন করে।

কারণ জিজ্ঞেস করতেই ব্যাখ্যা করলাম। সবাই একমত হলো যে আসলেই কোস্ট গার্ডকে দরকার হতে পারে।

একটু পরেই পৌঁছে গেলাম সেই কাচা রাস্তার মুখে। দেখলাম বিজিবির দুই প্লাটুন সেনা সেখানে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। কমান্ডারের দায়িত্বে রয়েছে মেজর আরিফ। তাশফিককে বললাম, " তুমি ওইপাশের রাস্তা দিয়ে রামগড় প্যালেসে আসো। কুইক। আমরা এইদিক দিয়ে আগে দেবীনগর হয়ে পরে প্যালেসে যাবো। "
- আচ্ছা।

তাশফিকের সাথে মেজর নাজমুল আর লেফটেন্যান্টদেরও যেতে বললাম। " এখন কি করবে ?? " ইয়াসির জানতে চাইলো।
- আর্মিদের কি হলো ??
- এসে পড়েছে। ১০ মিনিটের মধ্যেই চলে আসবে। আর কমান্ডোরা চলে এসেছে।
- ওকে। তাহলে আমিও রেডি হয়ে নেই। আর্মিরা এসে পৌঁছালেই আমরা অভিযানে যাবো। আর হ্যা তাশফিকের সাথে দুই প্লাটুন আর্মি পাঠিয়ে দিও।
- আচ্ছা।

কমান্ডোর সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে এসেছিলাম, তাই দ্রুত রেডি হয়ে নিলাম। দুই ইউনিট কমান্ডোর নেতৃত্বে রয়েছে মেজর ইশতিয়াক।

১০ মিনিটের মধ্যেই আর্মি চলে আসলো। আমাদের সাথে যে দুই প্লাটুন যাবে তাদের কমান্ডিং এর দায়িত্বে রয়েছে মেজর রাফি। দ্রুত সবাইকে আমাদের পরিকল্পনা জানিয়ে দিলাম। একটু পরে দেবীনগরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো আমাদের গাড়ি বহর। বহরের সবার সামনে রয়েছে শক্তিশালী ৩টি এপিসি। তার পিছনে আমাদের গাড়িগুলো। আধা কিলো যাওয়ার আগেই হটাত করে সামনের এপিসিগুলো থেমে গেলো। রেডিও তে মেজর রাফি জানালো, তাদের এপিসি লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে। কমান্ডোদের গাড়ি থেকে নামার নির্দেশ দিলাম। ইয়াসিরকে পরবর্তী করণীয় বুঝিয়ে দিয়ে আমিও নেমে গেলাম।

গাড়ি থেকে নেমেই দ্রুত ক্রল করে চলে গেলাম পাশের ঝোপঝাড়ের আড়ালে। একে একে কমান্ডোরাও আমার আশেপাশে এসে অবস্থান নিলো। স্পেশাল বিনকিউলার দিয়ে দেখতে পেলাম একটা উঁচু জায়গা - বাঁশ দিয়ে তৈরি করা একটা লুক আউট টাওয়ার থেকে গুলি করা হচ্ছে। এক কমান্ডোকে নির্দেশ দিলাম স্নাইপার তাক করতে। একটু পরেই ওই টাওয়ারে থাকা লোকটি মাটিতে পড়ে গেলো। এইবার কমান্ডোদের দুই ভাগ হয়ে দুই পাশ দিয়ে এগিয়ে যেতে নির্দেশ দিলাম। ঝোপঝাড়ের জায়গাটা পেরিয়ে এসেই দেখলাম বেশ খোলা জায়গা। আগে এইখানে কেউ ক্যাম্প করেছিল তার চিহ্ন স্পষ্ট কিন্তু এখন কিছুই নেই। আশেপাশে কিছু মাটির বাড়ির ধ্বংসাবশেষও দেখতে পেলাম। অনুমান করলাম এইটাই হয়তো সেই দেবীনগর !! সামনে আগানোর চেষ্টা করেই তীব্র গুলির মুখে পড়লাম। বাধ্য হয়েই আড়ালে চলে যেতে হলো আমাদের। অনেকগুলো গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট হওয়ার শব্দ শুনতে পেলাম আমরা। অবাক হয়ে ভাবলাম ওরা খবর পেলো কি করে !! এত দ্রুত ক্যাম্প গুটিয়ে চলে যাচ্ছে। টাওয়ার গার্ডকে মারার পরে তো ওদের এত দ্রুত পালিয়ে যেতে পারার কথা নয় !! প্রস্তুত হতে সময় লাগার কথা। ওরা যেন আগে থেকে ইজানে আমরা আসবো !!

প্রচন্ড গোলাগুলিতে ভাবনায় ছেদ পড়লো। কিছু করার নেই বুঝেই রেডিও তে ইয়াসিরকে এগিয়ে আসার নির্দেশ দিলাম। একটু পরেই আর্মির এপিসি থেকে গুলি করতে করতে এগিয়ে এলো গাড়ি বহর। সৈন্যদের গাড়িগুলো এপিসির আড়ালে আড়ালে এগিয়ে আসছে যেন গুলি না লাগে। পরের দশ মিনিট তুমুল গোলাগুলির পরে ওপাশ থেকে গুলি বন্ধ হয়ে এলো। বুঝতে পারলাম হয় গুলি শেষ নয়তো যাদের চলে যাওয়ার তারা চলে গেছে। সতর্ক হয়ে সামনে এগিয়ে গেলো এপিসি গুলো। একটু পরে তারা রিপোর্ট করলো অনেক গুলো গাড়ি সামনের রাস্তা দিয়ে চলে গেছে। আর ৭জন জঙ্গিকে তারা অস্ত্রসহ আটক করেছে।

জিজ্ঞাসাবা করে জানতে পারলাম তাদেরকে সুইসাইডাল স্কোয়াডে রেখে আমাদেরকে আটকে রাখার দায়িত্ব দিয়ে বাকিরা চম্পট দিয়েছে। " ইয়াসির, কুইক, দূর্গে যাবে ওরা। " বলতে বলতেই গাড়িতে উঠে পড়লাম আমি। তীব্র গতিতে গাড়ি চলে দূর্গের সামনে পৌঁছে গেলো ১০ মিনিটের মধ্যেই। যাওয়ার পরে সবাইকে নামার নির্দেশ দিলাম। সবাই নিরাপদ পজিশনে যেতেই মেসেজ দিলাম তাশফিককে। জানালো ওরা ১০ মিনিট আগেই পৌঁছে গেছে। দূর্গের ওপাশে রয়েছে তারা। পুরা দূর্গ টাকে ঘিরে রেখেছে ঘন জঙ্গল। জঙ্গিরা সব দূর্গে আশ্রয় নিয়েছে। অবস্থা দেখে বুঝলাম কমান্ডো দল এখন পাঠানো যাবে না আর তাই আক্রমণের নির্দেশ দিলাম।

সঙ্গে সঙ্গেই গর্জে উঠলো সেনাবাহিনীর ভারী মেশিনগান। দূর্গের ভিতর থেকেও গর্জে উঠলো এসএমজি৩০। শুরু হলো আরেকদফা প্রচন্ড গোলাগুলি।

দশঃ

প্রায় চার ঘন্টা গোলাগুলির পরে একটু একটু স্তিমিত হয়ে এলো দূর্গের ভিতরটা। এখন গুলি করলেও তেমন জোরালো জবাব আসছেনা। আরো এক ঘণ্টা পরে কমান্ডোদের এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলাম। খুব সাবধানে দূর্গের ভিতর প্রবেশ করলো কমান্ডোরা। তাদের সাথে আমিও।

এখানে সেখানে অনেক লাশ পড়ে আছে। একটু অবাক হলাম। কারণ এত জঙ্গি যে এইখানে আছে ভাবতেও পারিনি। অনেকেই আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছে। কেউ কেউ দেখে গুলি করার চেষ্টা করেছে তবে কমান্ডোদের সাথে পেরে উঠেনি। আগেই তাদেরকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। অবাক হচ্ছি যে ওরা কি তাহলে গোপন সুড়ঙ্গের কথা জানে না !! যেখানে সুড়ঙ্গ থাকার কথা সেখানে গিয়ে দেখি সুড়ঙ্গ মুখ খুলে আছে।

বাইরে বের হয়ে কোস্ট গার্ড কি করেছে জানার জন্য রেডিওতে মেসেজ দিলাম। একটু পরে কোস্ট গার্ড জানালো, " সুড়ঙ্গ দিয়ে জঙ্গিদের ৬টা বোট বের হয়। প্রত্যেক বোটেই মেশিনগান ছিল। ওদের গুলিতে কোস্ট গার্ডের গান বোটের প্রচন্ড ক্ষতি হয়েছে। পরে হেলিকপটার দিয়ে তাড়া করে জঙ্গিদের আটক করা হয়। কেউ পালাতে পারেনি। আটক করা গেছে এখানকার জঙ্গি কমান্ডার আব্দুল হান্নানকে। তাকে ঢাকার ডিজিএফআই কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।

রেডিওতে মিঃ আশরাফ আর সোলায়মানকে গ্রেফতার করে ডিজিএফআই কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলাম।

এরপরে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের জন্য মেসেজ দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। এমন সময় সেখানে হাজির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা। তারা আমাদের অভিনন্দন জানালেন। একটু পরেই হেলিকপ্টার দিয়ে ঢাকার ডিজিএফআই কার্যালয়ে চলে আসলাম আমরা। এসেই জানলাম, মিঃ আশরাফকে গ্রেফতার করতে পারলেও সোলায়মান পালিয়ে গেছে।

" কি ?? কিভাবে ?? এখন কি হবে ?? " বিচলিত হয়ে উঠলো সবাই, বিশেষ করে তাশফিক।
- আরে চিন্তা করো না। ও পালিয়ে যাওয়াতে আমাদের জন্য বরং ভালোই হলো।
- কি ভালো ??
- এখন ওকে ধরে এনে কিছু প্রমাণ করতে পারতাম না আমরা আদালতে। ওর বিরুদ্ধে শক্ত কোন প্রমাণ নেই। পালিয়ে গিয়ে ও নিজেই নিজেকে জালে জড়িয়ে ফেলেছে।
- কিন্তু ওকে যদি ধরা না যায় ??
- আশা করি ওকে ধরা যাবে।
- কিভাবে ??
- দেখা যাক। মিঃ আশরাফ আর হান্নান কোন ক্লু দিতে পারে কি না !!

" এখন কি তাহলে মিঃ আশরাফের সাথে কথা বলবে ?? " প্রশ্ন ইয়াসিরের।
- না আগে হান্নানের সাথে কথা বলবো।
- চলো তাহলে, ওকে আন্ডারগ্রাউন্ড সেলে রাখা হয়েছে।

আন্ডারগ্রাউন্ড সেলে গিয়ে হান্নানকে দেখলাম। মধ্য বয়ষ্ক এক লোক। চেহারাতে এক ধরণের কাঠিন্য ভাব রয়েছে।
- আপনার নাম হান্নান ??
- জ্বি।
- আপনি কোন দেশের নাগরিক ??
- বাংলাদেশের।
- আপনারা দেবীনগর আর রামগড়ে কি করছিলেন ??
- আমি কিছু জানি না।
- জানেন না মানে আপনাকে বোট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে আর আপনি বলছেন জানেন না ??
- আমি উকিলের সাথে কথা না বলে কিছু বলবো না।
- উকিল !! হাসালেন হান্নান সাহেব আপনি আমাকে হাসালেন।
- কেন ??
- আপনি উকিলের সাথে কথা বলবেন কি করে ??
- মানে ??
- আমরা আপনাকে উকিলের সাথে কথা বলতে দিবো এটা ভাবলেন কি করে ??
- ওমা !! তাহলে আমাকে কি করবেন ??
- আপনি কোন তথ্য না দিলে আপনাকে মেরে ফেলা হবে।
- তাহলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আপনাদের গিলে খাবে ??
- হাহাহা আপনি জানেন দেবীনগর আর রামগড়ে আপনার কতজন সাথী নিহত হয়েছে ??
- না তো।
- আমরাও জানি না।
- তাতে কি আসে যায় ??
- আমরাও জানি না মানে কেউই জানেনা প্রকৃত সংখ্যা। সুতরাং ওই নিহতের তালিকাতে জীবিতদেরকেও অ্যাড করা যাবে।
- বুঝতে পারছি কি বলতে চান।
- আপনি অনেক বুদ্ধিমান দেখা যায় !! তাহলে আশা করি এখন ঠিকঠাক জবাব দিবেন।
- না মৃত্যুর ভয় করি না আমরা। মেরে ফেলেন আমাকে। কিছুই আসে যায় না আমার।
- ও আচ্ছা ঠিক আছে।

বাইরে চলে এলাম আমি। এইভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোন লাভ নাই। অন্য উপায় অবলম্বন করতে হবে। কি করা যায় ভাবছি। বনবন করে ঘুরছে আমার মগজের স্টিয়ারিং গুলো।

এগারোঃ

হটাৎ করেই মাথায় আসলো ব্যাপারটা। ইয়াসিরকে বললাম, " আচ্ছা আমরা যে দেবীনগর আর রামগড়ে অভিযানে গেলাম তোমার কি মনে হয়নি ওরা আগে থেকেই খবর পেয়ে গিয়েছিল ?? "
- হ্যা তাই তো মনে হয় কারণ তা না হলে এত দ্রুত একটা ক্যাম্প সরাতে পারতো না।

" আমারো তাই মনে হয়েছে। " যোগ করলো তাশফিক।
- তোমরা যখন অন্য রাস্তা দিয়ে রামগড়ে যাও তখন কি হয়েছিল ??
- তেমন কিছুই হয়নি। সামনে এপিসি ছিল। ওটা থেকে রিপোর্ট করা হয় যে টাওয়ারের মত জায়গা থেকে গুলি করা হচ্ছে। পরে অ্যাকশনে গিয়ে ওই টাওয়ারটা উড়িয়ে দেই।
- তারমানে ওরা জানতো যে আমরা ওই দুই রাস্তা দিয়ে আক্রমণ করবো। কিন্তু আবার কোস্ট গার্ডের লেফটেন্যান্ট রিপোর্ট করেছে যে ওরা যখন নদী দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে তখন নিতান্তই অপ্রস্তুত মনে হয়েছে ওদেরকে।
- মানে ?? ওরা আগে থেকে জানতো না এইটা বলতে চাও।
- হুম।
- কিভাবে সম্ভব ?? ওদের ইনফর্মার কে তাহলে ??
- একটু ভেবে দেখ। আমরা দুই রাস্তা দিয়ে গিয়ে অভিযান চালাবো এইটা কোথায় ঠিক করা হয়েছিল আর নদী পথে কোস্ট গার্ড মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত কোথায় নেওয়া হয়েছিল।
- অভিযানেরটা ডিসির অফিসে আর কোস্ট গার্ডকে বলা হয় গাড়িতে থাকতে।
- তাহলে কি দাঁড়ালো ??
- ডিসির অফিস থেকে তথ্য গেছে !!
- সেটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার।
- কিন্তু খবর দিলোটা কে ??
- আমরা যখন বের হয়ে আসি একটা ঘটনা ঘটেছিল। মনে আছে ??
- হুম। ডিসির পিয়ন ওর মোবাইল ভেঙ্গে ফেলে। আমাদেরকে দেখে চমকে উঠেছিল।
- ওই ব্যাটাই কালপ্রিট।
- অন্য কেউও হতে পারে !! হতে পারে আমাদের দেখে আসলেই ভড়কে গেছিলো। মিলিটারি দেখলে অনেকেরই অইরকম হয়।
- বোকার মত কথা বলো না। ডিসির অফিসের চাকুরে সে। আমাদের মত অফিসার ডেইলী দেখে ও।
- তাও তো ঠিক। তাহলে এখন কি করবে ??
- ওকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিবো।

বলতে বলতেই ফোন বের করে ফেলেছি আমি। নারায়ণগঞ্জের ডিসিকে ফোন দিয়ে জানালাম তার ওই পিয়নকে গ্রেফতার করে যেন ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর সাথে সাথে তার ফোন নাম্বারটাও চেয়ে নিলাম।

ফোন নাম্বারটা নিয়েই সেটা পাঠিয়ে দিলাম পার্থিবের মোবাইলে। বললাম, " মোবাইল কোম্পানিতে গিয়ে এই নাম্বারের কল লিস্ট নিয়ে আসো। "
- ইয়েস স্যার।

একটু পরে ডিসি ফোন করে জানালেন পিয়নকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার নাম আব্দুর রশীদ। তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যাবে।

আধা ঘণ্টার মধ্যেই কল লিস্ট নিয়ে পৌঁছে গেলো ক্যাপ্টেন পার্থিব। আমরা যেই সময়টায় নারায়ণগঞ্জ ডিসির অফিসে ছিলাম সেই সময় একটা নাম্বারেই ১৩ বার ফোন দিয়েছে রশীদ !! রেজিস্ট্রি করা এক মোবাইল ব্যবসায়ীর নামে। এই তথ্য দিয়ে কোন কাজ হবে না। তবে নাম্বারটা এখনও খোলা। আর তার শুরু থেলে সর্বশেষ লোকেশন চট্টগ্রামেই।

তাশফিককে বললাম, " পার্থিব, বাধন আর রাকিবকে চলে যাও চট্টগ্রামে। লোকেশন দেখে এই ব্যাটাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাও চট্টগ্রাম ডিজিএফআই কার্যালয়ে। আমরা এইদিকের কাজ শেষ করে নেই। "
- আচ্ছা ঠিক আছে।

ওরা বের হয়ে যেতেই হেডকোয়ার্টারে পৌঁছে গেলো রশীদকে নিয়ে আসা নারায়ণগঞ্জ ডিসির পাঠানো দলবল। আমাদের হাতে রশীদকে তুলে তারা চলে গেলো।

" কি করবে এখন ?? হান্নান তো কিছু বলে না !! মিঃ আশরাফও যে বলবে এমন গ্যারান্টি তো নাই !! " ইয়াসিরের জিজ্ঞাসা।
- রশীদকে জিজ্ঞেস করে দেখি।
- ওই খুব বেশি কিছু জানে নাকি ??
- দেখা যাক।

আগেই দেখেছিলাম আজও দেখছি বেশ সহজ সরল প্রকৃতির লোক হচ্ছে এই রশীদ। দেখলে তাকে অপরাধী ভাবা মুশকিল। তবে চেহারা দেখে কোন কারণে অধিক চিন্তাযুক্ত বলে মনে হচ্ছে তাকে !!

- একজন সরকারী কর্মচারী হয়ে এই কাজ কি করে করলেন আপনি ??
- স্যার বিশ্বাস করেন আমি ইচ্ছা করে করিনি।
- মানে ??
- আমাকে বাধ্য করা হয়েছে স্যার।
- কিভাবে ?? কে করেছে ??
- একমাস হয়েছে নারায়ণগঞ্জে পোস্টিং হয়েছে আমার। তার আগে চট্টগ্রামে ছিলাম। আমার পুরো পরিবার চট্টগ্রামেই থাকে এখনও। আমার বড় মেয়েকে ওরা অপহরণ করে রেখেছে। বলেছে সাহায্য না করলে মেরে ফেলবে।
- ওহ !! কে করেছে আপনাকে বাধ্য ??
- স্যার আমি নাম বলেছি ওরা জানতে পারলে আমার মেয়েকে জানে শেষ করে দিবে !!
- আমরা থাকতে আপনার মেয়ের কিছুই হবে না। আপনি নাম বলুন।
- সাইফ আহমেদ।
- ওনার সাথে আপনার পরিচয় কিভাবে ??
- আমার ছোট ছেলেকে উনি পড়াতো।
- ওহ !! উনি কোথায় চাকুরী করেন জানেন ??
- চট্টগ্রামের জামিয়াতুল ফালাহ মাদ্রাসাতে।

একটু চমকে উঠলাম কারণ এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষই ছিল মাওলানা রিয়াজ !!
তাহলে কি আমরা ভুল করেছি !!
মাওলানা রিয়াজ আসলেই জড়িত !!

- আচ্ছা ধন্যবাদ আপনাকে। আর আপনার কাজ কি ছিল ??
- নারায়ণগঞ্জের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিরকম হয় সেটা জানানো।
- সবসময় মোবাইলেই যোগাযোগ করতেন ??
- জ্বি।
- ও আচ্ছা যখন মোবাইলে কথা বলতেন তখন কোনদিন কোন সাইড টক বা আশেপাশের এমন কিছু শুনেছিলেন যেটা আপনার কাছে খটকা লেগেছে ??
- হ্যা। যেদিন আপনারা অভিযানে গিয়েছিলেন ওইদিন যখন বলছিলাম আপনাদের অভিযানের প্রস্তুতির কথা তখন তিনি কাকে যেন বলছিলেন, " হুজুর, আর্মির গোয়েন্দারা তো দেবীনগর আর রামগড় বের করে ফেলেছে !! "
- আর কিছু ??
- ওইদিন আপনারা বের হওয়ার পরে যখন কথা হচ্ছিল তখন কথার মাঝে শুনেছিলাম " আমি মোহনায় আছি বা আমি মোহনার সাথে আছি " এইরকম কিছু স্পষ্ট বলতে পারছি না আর " পুরোহিতের সাথে দেখা করতে যাবো একটু পরে। " আর সেই সময় চারপাশে ঢাক বাজার শব্দ পাচ্ছিলাম। ব্যস এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।
- অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

অনেক কিছুরই জট পাকিয়ে গেলো এই রশীদের সাথে কথা বলে। ভাবতে ভাবতে মোবাইলে কল দিয়ে তাশফিককে বললাম জামিয়াতুল ফালাহ তে গিয়ে যেন অভিযান চালানো হয় আর এই সাইফকে গ্রেফতার করা হয়।

বারঃ

" তাহলে কি মাওলানা রিয়াজই মূল অপরাধী ?? " জিজ্ঞাসা ইয়াসিরের।
- মনে হচ্ছে না।
- তাহলে ??
- আচ্ছা এই মাদ্রাসা রিয়াজের অনুপস্থিতিতে কে চালায় ??
- মাওলানা ইফতেখার আমিন, ভাইস প্রিন্সিপাল ওই মাদ্রাসার।
- হুম।
- এই অপহরণের ব্যাপারটা কেমন জানি !!
- মানে ??
- গত দুই মাসে সারা দেশ থেকে প্রায় ৫০জন স্কুল-কলেজ ছাত্র-ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে পুলিশ কোন হদিসই বের করতে পারেনি।
- হুম পড়েছিলাম পত্রিকাতে। এইটাও কি এদের কাজ নাকি আল্লাহই জানে !!
- কেন করবে ওরা ??
- হয়তো জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করতে চাইবে। যাই হোক আমাদের যা করার দ্রুত করতে হবে এখন। সময় খুব কম।
- আর এই মোহনাটা কে ??
- কে বা কি। সেটা সময় হলেই আমরা জানতে পারবো।

তাশফিককে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলাম এই মাওলানা আমিনের সাথে যেন দেখা করে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

প্রায় ২০মিনিট পরে ফোন দিয়ে জানালো মাওলানা আমিন পালিয়ে গেছে আর সাইফকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

" ইয়েস !! কালপ্রিট ফাউন্ড !! " উল্লাসের ধ্বনি বের হলো ইয়াসিরের মুখ থেকে। " কিন্তু ব্যাটা পালাতে গেলো কেন ?? "
- ভেবেছে কেউ যদি মুখ খুলে ওর নাম বলে দেয় !! তার আর রিস্ক নেয় নাই।
- এখন কি করবে ??
- সিউর হবো যে এই মেইন বদমাশ নাকি !!

আবার গেলাম হান্নানের সাথে কথা বলতে ...

- আচ্ছা আপনাদের এই মাওলানা আমিন কি বোকা নাকি ??

কথাটা শোনার পরে হান্নানের রি-অ্যাকশন ছিল দেখার মত। চোখ দুইটা বড় বড় হয়ে যেতে দেখেই বুঝলাম ঢিল জায়গা মত লেগেছে।
সময় লাগলো তার সামলে উঠতে !!

- কে এই মাওলান আমিন ?? আমি কখনো ওনার নাম শুনি নাই।
- ও আচ্ছা জামিয়াতুল ফালাহ মাদ্রাসার নাম শুনেছেন ??
- না তো।
- বলেন কি ?? আপনি ওই মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন আর নামই শুনেন নাই !! মজা পেলাম। তা আপনাদের মাদ্রাসাতে বোধহয় মিথ্যা কথা বলার ট্রেনিং দেওয়া হয় নাকি !! ইসলামের শিক্ষার নাম করে মিথ্যা !!
" কক্ষণো না " হটাতই চেঁচিয়ে উঠলো সে।
- তাহলে কি ?? সেই কখন থেকে মিথ্যার পর মিথ্যা বলেই যাচ্ছেন বলেই যাচ্ছেন।
- কারণ ছাড়া তো আর বলছি না।
- হাহাহা। আর কারণ দিয়ে কি করবেন !! আপনাদের খেল খতম।
- এত সহজ নয়।
- সেটা দেখা যাবে। আপনার চিন্তা করতে হবে না।

কথা বলে বাইরে বের হয়ে এসে ইয়াসিরকে বললাম, " যেটা অনুমান করেছি সেটাই। মাওলানা আমিনই মেইন কালপ্রিট। "
- হুম এখন কি করবে ??
- মিঃ আশরাফের সাথে কথা বলবো।

একটু পরে মিঃ আশরাফের সাথে গেলাম কথা বলতে ...
- মিঃ আশরাফ আপনি সম্মানিত একজন মানুষ হয়েও অসম্মানের কাজ কি করে করলেন ??
- মানে ?? কি করেছি আমি ?? আমি কিছুই করিনি।
- প্রমাণ আছে আমাদের কাছে। আচ্ছা এই মাওলানা আমিনটা আসলে কে ??

হান্নানের মত চমকে উঠলেন তিনিও। " কি বের করে ফেলেছেন ?? "
- জ্বি।
- তাহলে তো এইটাও জানেন এই হান্নানই এই দেশে আল-কায়েদার এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।
- আদৌ কি সে আল-কায়েদার এজেন্ট ??
- আসলে নামে মাত্র। আল-কায়েদা এখন পাকিস্তানে নিজেদের অবস্থান তৈরি নিয়ে ব্যস্ত। সবার নজর সরাতেই ওই ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেয়েছিল তারা।
- আপনি কেন জড়ালেন ??
- আমার লাভের জন্য। প্রচুর টাকা পাওয়া যেত।
- এই দেশের মানুষকে মেরে টাকা পেয়ে আপনার কি লাভ ??
- দেখুন আমি বিহারী। এই দেশের মানুষের জন্য আমার কোন দরদ নেই। এরা মরলো না বাচলো কিছুই আসে যায় না আমার।
- ও তাই বুঝি। ভুলে যাবেন না যে এই দেশই আপনাদের আশ্রয় দিয়েছে। একাত্তরের পরে আপনাদের প্রিয় জন্মভূমি আপনাদের নিজেদের নাগরিক বলে স্বীকৃতি দেয়নি। যে কারণে আপনারা এই দেশের আশ্রিত। আর এই দেশের সাথেই এমন গাদ্দারী !!
- ওই পুরান ইতিহাস আর কত শুনতে হবে !!
- ইতিহাস শুনতে হবেই মিঃ আশরাফ। ইতিহাস ইতিহাসই। যাই হোক সোলায়মান কোথায় গেছে জানেন ??
- চট্টগ্রামে।
- চট্টগ্রামের কোথায় ??
- এটা জানি না।
- আর কোন পুরোহিত এই কেসে আপনাদের সাথে জড়িত ??
- হ্যা তবে আমি জানি না তার পরিচয়।
- আচ্ছা আপনার কাজ কি ছিল ??
- অর্থের জোগান দেওয়া।
- ও আর সোলায়মান কি জঙ্গিদের ট্রেনিং দিত ??
- নাহ এই দেশে ট্রেনিং দেওয়ার জায়গা কোথায় !! এরা সব পাকিস্তান থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসতো।
- কিভাবে আসতো এই দেশে ??
- রোহিঙ্গা সেজে মিয়ানমার তারপরে শরনার্থীর বেশে এই দেশে। আর সমুদ্র পথেও মাঝে মধ্যে আসে।
- সামনে কবে আসবে ??
- এইবার প্রায় পাঁচ হাজার জঙ্গি আসবে। সমুদ্র দিয়ে। জাহাজ নিয়ে আসবে। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।
- কবে ??
- সেটাও জানি না।
- হুম।

তেরঃ

সব কিছু এখন চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছে। তাই দেরী না করে ইয়াসির আর বাকিদের নিয়ে চলে এলাম চট্টগ্রামে।

চট্টগ্রামের ডিজিএফআই কার্যালয়ে আমরা বসে আলোচনা করছি ...

" আচ্ছা এখন কি করে বের করবো সোলায়মান কোথায় ?? আর কি ক্রএই বা বের করবো জঙ্গিরা কবে আসবে ?? " জিজ্ঞাসা তাশফিকের।
- আপাতত পুরোহিতকে বের করতে হবে।
- পুরোহিত তো অনেক আছে।
- তা আছে তবে এই পুরোহিতের সাথে ওরা যোগাযোগ করতো কিভাবে ??
- রেডিওতে হবে। মিঃ আশরাফের বাসায় রেডিও আছে, রামগড় প্যালেসে রেডিও ছিল আর মাদ্রাসাটাতেও রেডিও পেয়েছি।
- হতে পারে আবার নাও হতে পারে। ফিফটি ফিফটি চান্স।
- কি করবে ??
- মাওলানা আমিন আর সাইফের কল লিস্ট চেক করো। দেখ কোন কালেও ওরা কোন পুরোহিতের সাথে কথা বলেছে নাকি।

প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা ঘাটাঘাটি করার পরে যখন আমরা হাল ছেড়ে দেবো ভাবছি তখনই সাইফের কল লিস্ট থেকে পাওয়া গেলো এক পুরোহিতের নাম্বার !!
প্রায় চার মাস আগে একটা ফোন কল করা হয়েছিল তাও ডিউরেশন ছিল মাত্র ১ মিনিট ৭ সেকেন্ড !!

যাই হোক কিছু একটা তো পাওয়া গেলো !! নাম্বারের সূত্র ধরে বের করতে খুব একটা সময় লাগলো না এই পুরোহিতকে।
নাম তপন চক্রবর্তী। চট্টগ্রাম শহরের উপকন্ঠের এক ছোট্ট মন্দিরের পুরোহিত।

মন্দিরে যেতেই পেয়ে গেলাম তাকে। পূজায় ব্যস্ত রয়েছেন। কালকেই দূর্গা পূজা। আজকে নবমী। ওনাকে আলাদা করে নিয়ে গিয়ে মাওলানা আমিন আর সাইফ সোলায়মানের কথা বলতেই ভড়কে গেলেন। বুঝতে পারলাম এই ব্যক্তিও জড়িত। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য যদি না দেয় !!

পূজা বন্ধ করে সবাইকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম সবাই বেরিয়ে গেলে পুরা মন্দির তল্লাশি করার নির্দেশ দিলাম। পুরোহিতের অফিসে পাওয়া গেলো আরেকটা শক্তিশালী রেডিও। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের অসাধারণ এক পন্থা !!

হটাতই ইয়াসিরের ডাক শুনে গেলাম মন্ডপের কাছে। মন্ডপের ঠিক পাশেই একটা ট্র্যাপ-ডোর রয়েছে। এই দরজা খুলে নিচে নামতেই আমরা অবাক। পুরা যেন একটা হোস্টেল !! মোট ৩টা ঘর রয়েছে এইখানে। এর মধ্যে একটা ঘর বেশ বড়। ওখান থেকে উদ্ধার করা গেলো ৮৬টি এসএমজি৩০ আর ৬৩টি গ্রেনেড।

এত বিপুল অস্ত্র দেখে সবাই হতবাক আমরা। এইবার পুরোহিতকে গিয়ে বললাম, " আপনার খেল খতম। দ্রুত বলুন সোলায়মান আর মাওলানা আমিন কোথায় গেছে। তারা একটু আগেও এইখানে ছিল, ঘরগুলোর অবস্থা দেখলেই বুঝা যায়। অতএব মিথ্যা বলবেন না দয়া করে। "
- তারা কোথায় গেছে আমি সত্যিই জানি না। তবে আজ রাতে নাকি অনেক মেহমান আসবে !!
- মোহনা নামে কাউকে চিনেন ??
- নাহ। তবে যাওয়ার সময় তারা মোহনা মোহনা বলছিল।
- আপনার কি স্বার্থ ছিল এখানে ??
- টাকা জনাব।
- হায়রে !! জানেন তারা কি করছিল এই দেশের বিরুদ্ধে ??
- না তো তারা আমাকে বলেছে এইসব অস্ত্র রোহিঙ্গাদের দেওয়া হবে যেন বার্মিজ আর্মির অত্যাচারের জবাব দিতে পারে তারা।
- যাই হোক অপরাধ করেছেন আপনি। আপনার অবশ্যই শাস্তি হবে।

" এই মোহনার ব্যাপারটা আমার ভালো লাগছে না। " তাশফিকের বিরক্তিসূচক অভিমত।
" আসলেই মেহমান আসছে মানে জঙ্গিরা আসছে। এখন এই মোহনাকে কি করে বের করবে ?? "

- ভেবে দেখ কেউই কিন্তু সিউর না যে মোহনা আসলে মানুষ নাকি কোন জায়গা।
- জায়গা কি করে হবে ?? মোহনা কোন জায়গার নাম কি করে হয় ??
- হয়। মোহনা খালি মানুষের নাম এইটা কে বললো।
- আরে দুই নদীর মিলনস্থলকে মোহনা বলে। কিন্তু এই চট্টগ্রাম শহরে দুই নদী কই ??
- আরেকটা জায়গাকে মোহনা বলে।
- কোন জায়গা ??
- নদী আর সাগরের মিলনস্থলকে। আর চট্টগ্রাম শহরে দুই নদী নাই কিন্তু এক নদী আর এক সাগর তো আছে !!
- তাই তো।
- আবার হৃদ আর সাগরের মিলনস্থলকেও মোহনা বলে।
- তাহলে বলতে চাও মোহনা কোন মেয়ে নয় একটা জায়গা ??
- সম্ভবত। ভেবে দেখ মিঃ আশরাফ কি বলেছিলেন। উনি বলেছিলেন অনেক জঙ্গি প্রায় পাঁচ হাজার আসবে জাহাজ নিয়ে। ওরা আসলে নিশ্চয়ই সাগর দিয়ে আসতে হবে। এতজন মায়ানমারের রোহিঙ্গা সেজে আসতে পারবেনা।
- কিন্তু নেভি তো সাগরে টহল দেয় ??
- হুম। দেয় কিন্তু মোহনার দিকে অত কঠোর প্রহরা থাকে না। ফাঁকি দেওয়া খুব কঠিন কাজ না।
- কিন্তু কোন মোহনায় ওরা থাকবে ??
- সেটা আমারো প্রশ্ন। একটু ভাবতে হচ্ছে আমার।

ভাবতে ভাবতেই হটাত মাথায় আসলো ব্যাপারটা। " বুঝে গেছি কোথায় গেছে ওরা। "
- কোথায় ??
- দিয়াবাড়ি।
- দিয়াবাড়ি !!
- হ্যা, ওইখানে একটা মোহনা আছে। কর্ণফুলী নদী আর বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থল। আর একটা মন্দির আছে।
- মন্দিরের সাথে কি সম্পর্ক ??
- রশীদের কথা মনে আছে ?? ঢাক বাজার শব্দ আসছিল। ওইদিন ষষ্ঠী পূজার দিন ছিল।
- ও তাই তো। অসাধারণ তাহলে চলো দিয়াবাড়িতে।
- যাবো। তবে এখন নয়।
- রাত হোক। একেবারে প্রস্তুত হয়ে তবেই যাবো।

চৌদ্দঃ

সন্ধ্যার সময়েই আমরা পৌঁছে গেলাম দিয়াবাড়ি। আমাদের সাথে এসেছে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তিন প্লাটুন সৈন্য। পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‍্যাব আর পুরো এক ব্যাটালিয়ন বিজিবি। এত মহাসমারোহ দেখলে ওরা সাবধান হয়ে যেতে পারে তাই নিরাপত্তা বাহিনীকে কয়েকভাগে ভাগ করে এমন দূরুত্বে রাখা হয়েছে যেন কেউ সন্দেহ না করতে পারে। দিয়াবাড়ি মন্দিরের পিছনের এই জায়গাটা খুব নীরব হয়ে যায় রাতে। সাধারণ মানুষ থাকেই না। এইখানে একটা অস্থায়ী ঘাট দেখে আমাদের অনুমান যে সত্য সেটা বুঝতে পারলাম।

সাড়ে বারোটা থেকেই এই জায়গাটাতে প্রায় জনা পঞ্চাশেক অস্ত্রধারী লোক দেখতে পাচ্ছি। অনুমান করছি যে এদের মধ্যেই সোলায়মান আর মাওলানা আমিন আছে।

নৌপথে আসবে ওরা। তাই নৌবাহিনীকে সতর্কে করে দেওয়া হয়েছে। টহল জাহাজ সবাই সতর্ক। এছাড়াও বিএনএস ইশা খা ঘাটে প্রস্তুত আছে বিএনএস বঙ্গবন্ধু ও বিএনএস বিজয়। রাত প্রায় দেড়টা। এমন সময় বিএনএস দুর্জয় থেকে মেসেজ আসলো একের পর এক প্রায় ১৭টা মাছ ধরার ট্রলার তাদেরকে অতিক্রম করে গেছে। সবই নাকি স্থানীয় জেলেদের। এইটা জেনে কেউ খুব একটা গুরুত্ব দিলাম না।

প্রায় দুইটার দিকে দিয়াবাড়ির পিছনে এসে নোঙ্গর ফেলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ট্রলারগুলো।
বুঝে গেলাম এরাই সেই জঙ্গি। কিন্তু হতবাক হলাম যে ট্রলারে করে এসেছে ওরা।

যাই হোক এত সময় নেই। অবাক হলেও দ্রুত সামলে নিলাম।

এইদিকে ঘাটের লোকগুলো উল্লসিত হয়ে উঠলো। রেডিও বের করে আক্রমণের নির্দেশ দিলাম।

সাথে সাথেই গর্জে উঠলো বাংলাদেশ আর্মির ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১৭তম ব্যাটালিয়নের কমান্ডারের গলা।

শুরু হয়ে গেলো গোলাগুলি। অবস্থা আচ করতে পেরে ট্রলার গুলো মুখ ঘুরিয়ে রওনা দিল সাগরের দিকে।

রেডিওতে সতর্ক করে দিলা বিএনএস দুর্জয়ের কমান্ডারকে।

কিছুদূর যেতেই তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ালো বিএনএস দুর্জয়। তীব্র গলায় রেডিওতে থামার নির্দেশ দিল কমান্ডার নাহলে গোলা মেরে ট্রলার উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিলো। একটু পরে বিএনএস দুর্জয়ের সাথে যোগ দিলো বিএনএস সমুদ্র জয় ও বিএনএস বিজয়। পরাজয় না মেনে কিছুই করার নেই তাদের।

মিশন দুর্জয় সফল করতে অনন্য ভূমিকা রাখলো বিএনএস দুর্জয় !!

এইদিকে ঘাটের লোকদের অবস্থাও করুণ। চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে তাদেরকে।

অবস্থা বেগতিক দেখে ঘাটের অস্ত্রধারী জঙ্গিরাও সবাই অস্ত্র ফেলে হাত উঁচু করে আত্বসমর্পণ করেছে। দের মধ্যে থেকে গ্রেফতার করা হলো সোলায়মানকে।

তার দেওয়া তথ্য অনুসারে গ্রেফতার করা হলো মাওলানা আমিন ও অন্যান্য সহযোগীদের আর উদ্ধার করা হয় গত দুই মাস যাবৎ অপহৃত মোট ৫৫জনকে। উদ্ধার করা হয় মাওলানা রিয়াজকেও।

পরদিন সকালে অর্থাৎ দূর্গা পূজার দিন চট্টগ্রাম ডিজিএফআই কার্যালয়ে সোলায়মান আর মাওলানা আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে নিয়ে ঢাকার ডিজিএফআই কার্যালয়ে চলে আসলাম আমরা।

মামলা নথিভুক্ত করে আর তদন্ত রিপোর্ট ও অন্যান্য প্রমাণগুলো এক করে তাদেরকে তুলে দেওয়া হয় ঢাকা মেট্রপলিটন পুলিশের জঙ্গি দমন ইউনিটের কাছে। পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিবে তারা। এইসব কাজ করতে করতে দিন শেষ হয়ে গেলো।

শেষ হলো আমাদের আরেকটি সফল মিশন।

পনেরোঃ

পরেরদিন সকাল ১০টায় ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টারে মেজর জেনারেল শাখাওয়াতের রুমে পুরো কেসের বর্ণনা দিতে গেলাম। সেখানে কর্ণেল সুলতানও ছিলেন।

পুরো রিপোর্ট পড়ে শাখাওয়াত স্যার বললেন, " কয়েকটা প্রশ্ন আছে। "
- বলেন স্যার।
- সোলায়মানই তাহলে দেবীনগর আর রামগড়ের নাম ঠিক করেছিল ??
- জ্বি স্যার। কোড নেম হিসেবে ব্যবহার করেছে।
- অন্য নাম কেন দিলো না ??
- ওরা ভাবতেও পারেনি যে আমরা ওদের গতিপথ এইভাবে অনুমান করে চলে যাবো।
- সজীবকে হত্যার কারণ কি ??
- সজীবের সন্দেহ হয়েছিল দেবীনগর আর রামগড়ের নামগুলো, সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও খোঁজ নিয়েছিল। তবে ওইখানে কিছুই নেই বলে বুঝতে পারেনি। আমরা তো ভাগ্যের জোরে পেয়ে গেছি।
- হুম। জানলো কি করে যে সজীব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিতে গেছিল ??
- আসাদ।
- ওহ !! ঘরের শত্রু বিভীষণ।
- জ্বি স্যার।
- আচ্ছা ওরা নিজেদের মধ্যে যখন যোগাযোগের জন্য রেডিওই ব্যবহার করতো তাহলে পুরোহিতকে ফোন দিয়েছিল কেন সাইফ ??
- কারণ স্যার ওই সময় পুরোহিতের রেডিও নষ্ট ছিল তাই ফোন দিতে বাধ্য হয়েছিল। আর রশীদ যেহেতু সাধারণ ইনফর্মার ছিল সেহেতু ওর সাথে ফোনেই যোগাযোগ করতো।
- রেডিওতে ওদের মেসেজ রিসিভ করা তো কোন ব্যাপারই ছিল না। একই ফ্রিকোয়েন্সিতে যদি কেউ টিইন করতো তাহলেই তো ওদের মেসেজ শুনতে পেত !!
- পেত। তবে ওদের মেসেজ দিত সাংকেতিক ভাষাতে তাই খুব একটা লাভ হতো না।
- আচ্ছা মাওলানা রিয়াজ যদি অপরাধী না হয় তাহলে ওর মোবাইল থেকে কি করে দেবীনগর আর রামগড়ের নাম এলো ??
- তাকে ফাঁসানোর জন্য মাওলানা আমিন এই কাজ করেছে। মাওলানা রিয়াজের আড়ালে থেকে সে এতদিন সব কুকীর্তি করেছে। এখন মাওলানা রিয়াজের সন্দেহ হওয়াতে তাকে অপহরণ করে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে। ওরা কল্পনাও করতে পারেনি আমরা দেবীনগর আর রামগড় কোথায় সেটা বের করতে পারবো তাই আমাদেরকে নামগুলা জানাতে দ্বিধা করেনি। আসলে আমাদের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর উদ্দেশ্য ছিল ওদের।
- সেটা তো বুঝাই যায়। আচ্ছা সোলায়মান তাহলে কি করতো যদি জঙ্গিদের টেনিং না দিত ??
- ওদের অপারেশনের সব পরিকল্পনা করতো সোলায়মান। কোথায় ক্যাম্প করবে কিভাবে মিশন চালাবে সব কিছু ওর নির্দেশে চলতো।
- ওর কি স্বার্থ ছিল ?? টাকা ??
- না ওর ছিল জেদ। অন্যায়ভাবে ওকে বহিষ্কার করার জেদ। দেশের উপর রাগ ছিল ওর।
- আর জঙ্গিরা যেই ট্রলারে করে এসেছে ওইগুলো স্থানীয় জেলেদের কেমনে ??
- স্থানীয় মহাজনেরা টাকার বিনিময়ে দিয়েছিল যেন নেভির চোখ ফাঁকি দিতে পারে। ওই ব্যাটাদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে।
- দিয়ে তো দিয়েছিলই যদি তোমরা অনুমান করতে না পারতে মোহনার ব্যাপারটা।
- প্রথমদিকে সবাই মেয়ে ভাবলেও আমার মনে হচ্ছিল জায়গাই।
- আচ্ছা মাওলানা আমিনকে কিভাবে গ্রেফতার করা হয় ??
- সোলায়মানকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানায় মাওলানা আমিন ওখান থেকে আধা কিলো দূরে পাহাড়ের মধ্যে এক জায়গাতে ঘাটি গেড়েছে। দিয়াবাড়ি মন্দিরের পাশ দিয়ে যাওয়া একটা খাল দিয়ে কিছুদূর গিয়ে একটা সুড়ঙ্গ দিয়ে যেতে হয় ওইখানে। ওইখানে যাওয়ার পরে নিতান্ত অসতর্ক অবস্থায় তাদের পাওয়া যায়। তারা প্রস্তুত ছিল তাদের মেহমানদের স্বাগতম জানানোর জন্য কিন্তু আমরা গিয়ে হাজির হই আরকি।
- ওখান থেকে অপহৃতদের উদ্ধার করা হয় ??
- জ্বি। রশীদের বড় মেয়েকেও উদ্ধার করা হয়েছে। ওখান থেকেই মাওলানা রিয়াজকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওদের ইচ্ছা ছিল বিপদে পড়লে এদের জিম্মি করবে।
- আচ্ছা এত জঙ্গি দিয়ে ওদের পরিকল্পনা কি ছিল ??
- বোমাবাজি আর অতর্কিত হামলা করে সাধারণ মানুষ হত্যা করা। দূর্গা পূজার দিন যখন প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় সেই সময়টা টার্গেট করেছিল ওরা। আর ঈদুল আযহার জামাতের সময়টা।
- অনেক মানুষ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেলো তোমাদের জন্য।
- আমাদের ডিউটি মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো, স্যার।
- মন্ত্রীর ব্যাপারটা কি ??
- উনি জড়িত ছিলেন। তবে ওনাকে জানানো হয়েছিল কেবল অস্ত্রের কথা। আর অস্ত্র নাকি ভারতে পাচার করার জন্য এই তথ্য দেওয়া হয়েছিল ওনাকে। উনি আবার একটু ভারত বিদ্বেষী তাই রাজি হয়েছেন সাহায্য করতে। তাকে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুমতি স্বাপেক্ষে গ্রেফতার করেছি। ওনার বিরুদ্ধেও মামলা হবে।
- হুম। সোলায়মান পালিয়েছিল কি করে ??
- বাংলাদেশ আর্মির ট্রেইনড অফিসার। খুব কঠিন ছিল না কাজটা ওর জন্য।
- ও কি চট্টগ্রাম গিয়ে ওই পুরোহিত তপনের মন্দিরে গিয়ে ছিল ??
- জ্বি, নিচের বাঙ্কারে ছিল সে। এমনকি মিঃ আশরাফ ধরা পড়ার পরে মাওলানা আমিনও ওইখানে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। আমরা যেদিন ওইখানে যাই যদি এক ঘন্টা আগে যেতাম তাহলেই ওদের পেয়ে যেতাম।
- ও যাই হোক সব কিছু ভালোয় ভালোয় শেষ হয়েছে এইটাই বেশি। কালকে তো ঈদ। তোমাদের ঈদ মাটি হলো না যে এইটাই বেশি।
- জ্বি স্যার। কালকের দিনটা শান্তিতে কাটাতে পারবো আশা করি।
- হুম। ওয়েল ডান কমান্ডার। গড ব্লেস ইউ।
- থ্যাঙ্কু স্যার। আসি তাহলে ??
- ওকে আসো।

স্যারের রুম থেকে বের হয়েই গেলাম ইয়াসিরের রুমে। সেখানে ইয়াসির আর তাশফিক ছাড়া কেউ নেই। সবাই ঈদের জন্য ব্যস্ত।
" ভাগ্য ভালো ঈদের আগের দিন কেসটা শেষ হয়েছে নইলে যে কি হতো !! " ইসারিরের কন্ঠে স্বস্তির ভাবটা স্পষ্ট।
- আসলেই।

" উফ !! গতকয়েকদিন অনেক দৌড়াদৌড়ি গেছে। এখন একটু ঘুম দরকার। মনে হয় কতদিন যেন ঘুমাই না। " তাশফিকের ঘুমানোর চিন্তা।
- তুমি ঘুমাও। কালকে ঈদ। বহুত কাজ করতে হবে তোমার।

" তুমি কি করবা ?? " জানতে চাইলো ইয়াসির।

জবাব দিতে পারলাম না। কি করবো ভেবে বের করতে পারছি না যে !!

( সমাপ্ত )

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ