পাঁচঃ

কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে আবার ইউনিটের প্রধান ডিআইজি ওয়াহিদুর রহমানের কেবিনে গেলাম। ভিডিও ফুটেজগুলো দেখে উনিও আমার সাথে একমত হলেন যে এই কাজে বুলবুলের জড়িত থাকার সম্ভাবনা বেশি। তবে আমাদের জন্য সবচেয়ে পজিটিভ দিক হচ্ছে এতদিন পর বুলবুলের খোঁজ পাওয়া। লোকটা এতদিন বাতাসে মিলিয়ে ছিল যেন!
“ বুলবুল এই হত্যাচেষ্টার সাথে জড়িত তার কোন প্রমাণ হাতে নেই কিন্তু আমাদের দরকার হচ্ছে বুলবুলকে যেভাবেই হোক গ্রেফতার করা। এই লোকটা যদি একবার আমাদের হাতে আসে তাহলে পুরা ঢাকার ড্রাগ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। আর সেটা হলে পুরো ড্রাগ মাফিয়ার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যাবে। ”
ডিআইজি স্যারের কথার সাথে আমিও একমত হলাম।
- তাহলে স্যার, এখন আপনার নির্দেশের অপেক্ষা।

“ নির্দেশ আর কি! পুরো শক্তি লাগিয়ে দাও এই বুলবুলের পিছনে। যেভাবেই হোক, প্রয়োজনে মাটি খুঁড়ে ওকে তুলে আনো। কিন্তু সাবধান! এই লোক বড়ই ভয়ংকর। আবেগের বশে জীবনটা হারিয়ে ফেলো না। ”
- ইয়েস স্যার।
“ অল দা বেস্ট। ”

যদিও পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই তারপরেও মোটামুটি নিশ্চিত যে বুলবুলই এই ঘটনার মূল হোতা। নিশ্চিত হবে যখন বাকি সন্দেহভাজনদের কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারব। মতিঝিল থানা পুলিশ কাজ করছে তাদের নিয়ে। দেখা যাক কি হয়!

ভাবতে ভাবতেই এসআই শহীদুলের ফোন আসলো ...
“ হ্যালো। ”
- আসসালামু আলাইকুম, স্যার।
“ ওয়ালাইকুম আসসালাম। ”
- স্যার, যে ৪ জন সন্দেহভাজন ছিল একমাত্র বুলবুল বাদে বাকি সবাইকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা গেছে।
“ তাই নাকি? কি মনে হয়? ”
- স্যার, দুইজনকে মনে হচ্ছে খুবই সাধারণ লোক। আর একজন চোর ছ্যাচোড় টাইপের, এত বড় কাজ মনে হয় না করতে পারবে। অবশ্য ওদের উপর নজরদারি করব।
“ তারমানে বলতে চাচ্ছেন, বুলবুলই আসল হোতা? ”
- মন তাই বলছে।
“ ঠিক আছে। ”
- আর স্যার, একটা কথা।
“ জ্বি বলেন। ”
- জরুরী বিভাগের গত রাতের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেছিলাম নিছক আগ্রহের বশে। রাতে আপনার খটকা লেগেছিল দেখে।
“ তারপর ? ”
স্পষ্ট টের পাচ্ছি যে আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে।
- তারপর স্যার, বুলবুল মশাইকে সেখানেও দেখলাম।
“ অনেক অনেক ধন্যবাদ। কাজের কাজ করেছেন একটা। ”
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।

তিথীকে কেন হত্যা করার চেষ্টা হয়েছে সেটা বের করার দায়িত্ব মতিঝিল থানা পুলিশের, তারাই এই কাজ করুক।
আপাতত বুলবুলকে কিভাবে ধরা যায় সেটাই ভাবতে লাগলাম, যেহেতু বুঝাই যাচ্ছে তিথীকে হত্যার চেষ্টা সেই করেছে তাহলে তাকে ধরতে পারলেই জানা যাবে। তাকে ধরতে পারলে আমার এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। কিন্তু ধরব কিভাবে? এতদিন ধরে লোকটা পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে এসেছে, এতই সহজ হবে তাকে ধরা!
“ স্যার! ” দরজায় এসআই সালাম, আমার সহকারী।
- কি?
“ যে ফাইলটা চেয়েছিলেন সেটা নিয়ে এসেছি। ”
পুলিশের ডাটাবেজে বুলবুল সম্পর্কে যা আছে সেটার ফাইল চেয়ে পাঠিয়েছিলাম। নিয়ে এসেছে।

রেকর্ড বলছে বুলবুলের আসল নাম, মোঃ একরামুল হক। প্রায় ৮ বছর আগে ছিনতাইয়ের মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপরে তাকে জামিনে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর থেকেই সে ড্রাগ মাফিয়ায় ঢুকে পড়ে এবং একের পর এক দূর্ধর্ষ কাজ করে এত উঁচু অবস্থানে চলে এসেছে। ড্রাগ মাফিয়ায় সে এক আইডল হিসেবে পরিচিত।
বছর দেড়েক আগে তার পিছনে মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের এজেন্টরা গরুখোঁজা করেছে। একটা অস্ত্র পাচার মামলার জন্য। সে সময় তাকে প্রায় ধরে ফেলেছিল কিন্তু একজন এজেন্টকে হত্যা করে সে পালিয়ে যায় এবং তারপর মোটামুটি উধাও হয়ে যায়। প্রায় ছয় মাস চেষ্টার পর ব্যর্থ হয়ে মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স এ কেস বন্ধ করে দেয়।

কিভাবে কাজ শুরু করব সেটা বুঝতে পারছি না। কি মনে করে মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সে ফোন করলাম। বুলবুলের কেসের ইনচার্জ ছিল মেজর আকবর। তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হল না। তবে ওনার সহকারীর সাথে যোগাযোগ করতে পারলাম। অনুরোধ করলাম যেন বুলবুলের কেস ফাইলটা আমালে ইমেইল করে পাঠিয়ে দেন।
সহকারী আধঘণ্টার মধ্যেই ফাইলটা পাঠিয়ে দিলেন। সেখান থেকে আপাতদৃষ্টিতে কাজের কোন তথ্য পেলাম বলে মনে হল না। তবে একটা ব্যাপার চোখে পড়ল সেটা হচ্ছে, বুলবুলের নারীপ্রীতির কথা।

যাই হোক, কাজ শুরু করার জন্য একবার ঘটনাস্থল ঘুরে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার পুরানো এলাকা। ওখানে গেলেই অন্যরকম একটা অনুভূতি হয় আমার। তিথীকে যে জায়গাটায় গুলি করা হয়েছে সেখানে দাগ দেওয়া আছে। আচ্ছা, বুলবুল গুলি করে দৌড় দিয়ে কলোনিতে যায়। কলোনী থেকে সে বের হয় আরামবাগ মোড়ে। তারমানে সে ১২ নাম্বার বিল্ডিং এর সামনে দিয়ে গেছে। আরামবাগ মোড় থেকে সে কোথায় যেতে পারে ! ডানদিক দিয়ে গলির মত রাস্তাটা দিয়ে গেলে সে আরামবাগে যাবে, সামনের দিকে গেলে মতিঝিল, পিছন দিকে ফকিরাপুল, বাম দিকে কমলাপুর। একজন অপরাধী অপরাধ করে সেই জায়গা থেকে যতটা সম্ভব দূরে যেতে চাইবে। সে হিসেবে বাম দিক আর পিছনের দিক হিসাব থেকে বাদ দেওয়া যায়। তাহলে বাকি থাকে সামনের দিক আর ডান দিক। মানে মতিঝিল আর আরামবাগ। কিন্তু এটা নিশ্চিত হব কি করে !

“ স্যার! ” এসআই শহীদুলের ডাকে ফিরে তাকালাম।
- বলেন।
“ বুলবুল মনে হয় আরামবাগে আছে! ”
- মনে হয় মানে ?
“ একটা ইনফর্মার বলল। ”
- ইনফর্মার?
“ মানে স্যার, ৮ বছরের বাচ্চা ছেলে। ”
- সঠিক বলেছে যে সেটা নিশ্চিত?
“ বাচ্চা মানুষের কথা কি স্যার নিশ্চিত হওয়া যায়? ”
- তাহলে বলছেন যে! আর বাচ্চাটাকে কোথায় পেলেন?
“ বাচ্চাটা আরামবাগের একটা চায়ের দোকানে কাজ করে, স্যার। নটরডেম কলেজের পাশে ফ্লেক্সিলোডের দোকানে মালিকের টাকা বিকাশ করতে এসেছিল। সেখানে দোকানদারের সাথে এক কনস্টেবল বুলবুলকে নিয়ে আলোচনা করছিল। তখন সে বুলবুলের ছবি দেখে বলে যে তার দোকানের দুই বিল্ডিং সামনের বিল্ডিং এ এরকম একটা লোক উঠেছে গত মাসে। তার খেয়াল আছে কারণ বিভিন্ন সময় নাকি অনেক মেয়েলোক আসা যাওয়া করে ওখানে। ”

বিদ্যুতের ঝলকের মত মনে পড়ল মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের রিপোর্টটার কথা। 'নারীপ্রীতি!' তাহলে কি বাচ্চাটার কথা সঠিক!
সেটা তো অভিযানে না গেলে বুঝা যাবে না।
“ এসআই শহীদুল, ইমিডিয়েটলি পুরা আরামবাগ এলাকা সাদা পোষাকের পুলিশ দিয়ে ঘেরাও করতে বলেন। প্রয়োজনে রাজারবাগ থেকে রিজার্ভ ফোর্স নিয়ে আসেন। এলাকা থেকে প্রতিটা এক্সিট পয়েন্টে পাহারা বসান। কোনভাবেই যেন কোন ব্যক্তি পুলিশের চোখ এড়িয়ে বের হতে না পারে! আর বাচ্চাটার কাছ থেকে বিল্ডিং টার অবস্থান ভালভাবে জেনে নিন। ”
- ইয়েস স্যার।
বলেই, ওয়াকিটকি বের করে প্রয়োজনীয় মেসেজ দিতে শুরু করল সে।

আমি ফোন দিলাম ডিআইজি ওয়াহিদ স্যারকে। পুরো ঘটনা জানিয়ে ইউনিটের অপারেশনাল ফোর্স কে পাঠানোর অনুরোধ করলাম। আমাদের এই ফোর্স অনেকটা সোয়াটের মত বিশেষ অপারেশনের জন্য প্রশিক্ষিত। উনি জানালেন, আগামী ২০ মিনিটের মধ্যেই ৩০ সদস্যের ফোর্স মুভ করবে।

আপাতত অপেক্ষা করতে হবে। ভাগ্য অনেক ভাল বলতে হবে। কোন সূত্রই ছিল না। সেখানে হুট করে এভাবে যে এতকিছু বের হয়ে আসবে কে জানত। এখন দেখা যাক, আদৌ কি বুলবুল আছে সেখানে! আর থাকলেও কি তাকে ধরা যাবে! নাকি আবারও চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যেতে পারবে!

ছয়ঃ

ঠিক আধাঘণ্টার মাথাতেই অপারেশনাল ফোর্স চলে আসলো। তার ঠিক পনেরো মিনিটের মাথায় ব্রিফ শেষ করে ফোর্সের প্রথম দলটা মুভ করলো। পাঁচ মিনিট পরে মুভ করলো দ্বিতীয় দলটা। তারা প্রবেশ করবে অন্যপাশ থেকে। পুরো অপারেশনের দায়িত্বে আছে সিনিয়র এএসপি কামরুল। আমরা অবস্থান নিলাম সেই চায়ের দোকানটার সামনের বিল্ডিং টায়। এলাকা দিয়ে ঢোকার সময়েই কে যেন মাইকে জোরে গান বাজানো শুরু করেছে! যাই হোক অপারেশনাল ফোর্স তাদের কাজ শুরু করলো।
মিনিট বিশেক পরেই ওয়াকিটকিতে কামরুলের মেসেজ পেলাম।
“ অল ক্লিয়ার! সিচুয়েশন আন্ডার কন্ট্রোল। ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ”
- বুলবুলকে পেয়েছেন?

“ নেগেটিভ। মনে হয় পালিয়ে গেছে! ”

কি!! আবারো পালিয়ে গেলো! কিন্তু কিভাবে?
পুরো এলাকা তো ঘিরে রাখা হয়েছিল। তাহলে পালালো কি করে !
নাহ! মানতেই হচ্ছে, লোকটার পালানোর ক্ষমতা আসলেই অসাধারণ। কিভাবে সবার চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গেলো। এখন আবার তাকে কোথায় পাওয়া যাবে কে জানে !

সেই ফ্ল্যাটটার ভেতর গেলাম। প্রায় ৩০ কেজি বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাথমিকভাবে কথা বলেই বুঝতে পারলাম বুলবুলের পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এরা কোন তথ্য দিতে পারবে না। এরা সাধারণ ড্রাগ সাপ্লাইয়ার। এখান থেকে ড্রাগস নিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে এজেন্টদের কাছে তুলে দেওয়া এদের কাজ। আপাতত ইউনিটের হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলাম।

পুরা ফ্ল্যাট ভাল করে তল্লাশি চালালাম। কোন সূত্র মিলে কিনা!
কিন্তু কিছুই পাওয়া গেলো না। বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলেও কিছু জানা গেলো না। জাল পরিচয়পত্র দিয়ে বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছে, সেটা মালিকের কাছে থাকা কপি দেখেই বুঝলাম।
আপাতত সারা শহরে সতর্কতা জারি করার নির্দেশ দিলাম। কিন্তু যে লোক চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যায় তাকে কি এভাবে ধরা যাবে!

মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ভাবলাম তিথীকে গিয়ে দেখে আসি। পুরনো স্বভাব। মন খারাপ হলে তিথীর সাথে কথা বলতাম। মেয়েটা কিভাবে যেন বুঝে যেত! থার্ড ইয়ারে পড়ার সময় টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার জন্য গ্রামে চাচাতো বোনের বিয়েতে যেতে পারিনি। সেটা নিয়ে প্রচণ্ড মন খারাপ ছিল। সেদিন আমার কষ্ট জেনে তিথী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিল।
“ তুমি তো তাও আফসোস করতে পার, আমার তো সেটা করারও উপায় নেই! ”

তার কথাটা সেদিন স্বাভাবিক মনে হলেও আজকে মনে হচ্ছে না। মা-বাবা কোনদিকেই আত্মীয়স্বজন না থাকাটা কেমন অস্বাভাবিক লাগে। আর এই মূহুর্তে তার সে কথাটা কেন জানি অনেক অর্থবহ মনে হচ্ছে! আচ্ছা, তার বাবা তো ডাক্তার ছিল! ভদ্রলোকের সাথে কথা হয়েছিল দুই-তিনবার। গর্ব করে একদিন বলেছিলেন যে ডাক্তারি করেন প্রায় ৩০ বছর ধরে! অভিজ্ঞতা এতই বেশি যে টেস্ট না করেই অনেক রোগীর রোগ বলতে পারবেন।
তিথী বলত তার বাবা পাশ করেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে। এখন ২০১৭, তারমানে আজ থেকে ৩০ বছর আগে হলে দাঁড়ায় ১৯৮৭! তারমানে মোটামুটি ১৯৮৩/১৯৮৪ থেকে ৯০ পর্যন্ত পাশ করা ছাত্রদের লিস্ট চেক করলে হয়তো কোন তথ্য পাওয়া গেলেও যেতে পারে!
আশ্চর্য! এ ব্যাপারটা আগে তো মাথায় আসেনি। তিথীর বাবার নামটা স্পষ্ট মনে আছে, আমজাদ রহমান।

নিজেই ফোন করলাম রাজশাহী মেট্রোপুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার তাশফিককে, আমার স্কুলফ্রেন্ড। জানালো ১৯৮০-৯০ পর্যন্ত যত আমজাদ রহমান পাশ করেছে সবার তথ্য বের করে ফ্যাক্স করে পাঠিয়ে দিবে। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রেখে দিলাম। আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া কিছু নেই। ঘণ্টাখানেকের মত সময় তো লাগবেই কমপক্ষে!

হাসপাতালে বসে থেকে কাজ নেই। চলে আসলাম অফিসে। ফ্যাক্সটা ওখানেই আসবে। কেবিলে যেতেই টেবিলের উপর রাখা ফাইলটা চোখে পড়লো। টেকনিক্যাল ল্যাব থেকে দিয়ে গেছে। পাতাটা উল্টাতেই থমকে গেলাম। তিথীর কাছ থেকে যে মোবাইলটা পাওয়া গিয়েছিল এর আগে সেটাতে বিভিন্ন সময় মোট ৮ টা নাম্বার অপারেট করা হয়েছিল। প্রতিটা নাম্বার চালু হওয়ার ২-৩ দিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। ধারণা করতে পারি এগুলো দিয়ে কোন অপরাধের জন্য ব্যবহার করে আবার বন্ধ করে ফেলা হয়েছে যাতে কোনভাবে ট্রেস করা না যায়। মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের রিপোর্টে বুলবুলের যে ৫ টা নাম্বার দেওয়া হয়েছে সেগুলোও আছে এখানে। তারমানে ধরে নেওয়া যায় ৮ টা নাম্বারই বুলবুলের। আরও সহজভাবে বললে মোবাইলটা একসময় বুলবুলের ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তিথী এমন একটা মোবাইল কিভাবে পেলো!

বুলবুলের ৮ টা নাম্বারের ডিটেইলস বের করে রাখা হয়েছে। খুব বেশি কিছু পাওয়া গেলো না। কিন্তু একটা ব্যাপার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। প্রতিটা নাম্বারই শেষ অপারেট হয়েছে খুলনা বা তার আশপাশের অঞ্চলে গিয়ে। মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স এজন্য খুলনা ও তার আশপাশের এলাকা চষে ফেলেছিল কিন্তু বুলবুলের কোন হদীসই পায়নি।

“ স্যার! রাজশাহী থেকে ফ্যাক্স এসেছে। ” এসআই মইনুলের কথায় কিছুটা আশার আলো দেখলাম। হয়তো তিথীর পরিবারের ব্যাপারে কিছু জানা যাবে।
মোট ৩ জন ছাত্র পাওয়া গেছে আমজাদ রহমান নামে। তাদের মধ্যে একজন রাজশাহীতেই আছেন, আর একজন দেশের বাইরে। আর একজনের ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ছবি দেখে বুঝলাম এই লোকই তিথীর বাবা। রেকর্ড বলছে, নামঃ আমজাদ রহমান, বাবার নামঃ আমিনুর রহমান, গ্রামঃ বড়ইতলা, থানাঃ চারঘাট, জেলাঃ রাজশাহী।

যাক তাহলে একটা ঠিকানা পাওয়া গেলো! একবার ভাবলাম লোক পাঠাব, পরে কি ভেবে নিজেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। তিথীর ব্যাপারটা সরেজমিনে না জানতে পারলে শান্তি পাব না। আর বুলবুল যে ঢাকায় নেই এ ব্যাপারটা নিশ্চিত ধরা নেওয়া যায়। লোকটা প্রতিবার দ্রুত ঢাকা থেকে পালিয়ে যায় বলেই তাকে ধরা মুশকিল হয়। ঢাকায় থাকলে ধরতে পারা সহজ হত। ঢাকায় তো পদে পদে ব্যর্থ হয়েছি, দেখা যাক রাজশাহীতে কি হয়!

(চলবে)

0 Shares

১৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ