মানস চোখে বাংলাদেশ

রিমি রুম্মান ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, বুধবার, ০৮:৫২:৩০পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২২ মন্তব্য

সপ্তাহ শেষে ছুটির সকাল গুলোতে ছেলেকে নিয়ে কোচিং এ ছুটতে হয়। তুষারপাত কিংবা অঝোর বৃষ্টির দিনে গাড়ী নেই না। বাড়ীর পাশেই বাসস্টপ। টুপ করে উঠে পরি। ছেলেকে নামিয়ে দিয়েই ফিরতি বাসে উঠে বসি। নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে যায় বাস। ছুটির সকাল, বিধায় যাত্রী কম। কখনো তিন চারজন। কখনো আমি একা। কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে গান শুন্‌তে শুন্‌তে বাইরের দৃশ্য দেখি। কখনো তুষারপাত, কখনো অবিরত ঝরে পরা বৃষ্টি। একমাত্র যাত্রী নিয়ে বিশালাকৃতির বাসটি ছুটে চলে হাইওয়ে ধরে। পথে কখনো দুই চারজন উঠে। শীতে হিটার, গরমে এসি__ এতো সুবিধা বাসগুলোয় ! তবুও মন পরে রয় দেশে। মানস চোখে ভেসে উঠে, কতদিন টেকনিক্যালের মোড়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি সকালের ক্লাস ধরবো বলে। কিন্তু, লোকজনে ঠাসা বাসগুলোতে উঠবার সাহস হয়নি। কেবলই মনে হতো, পরের বাসে নিশ্চয়ই ঠাই হবে। অসহায় দৃষ্টিতে পরপর কয়েকটি বাস চলে যেতে দেখি। কেউ কেউ নারী যাত্রী নিতে চায় না। বলে সিট খালি নেই। শেষে নিরুপায় হয়ে কোন একটিতে ঠেলাঠেলি করে উঠি।

দৃশ্যপট বদলায়। ভেসে উঠে, শ্রদ্ধা আর সন্মানের একটি মুখ। আমার বিয়ের এ্যালবামে যার হাস্যোজ্বল, গল্পে মশগুল অনেক ছবি। সেই তিনি সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধুরী। তিনি বাস থেকে নামার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তার আগেই বাস ছেড়ে যায়। নামতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পরে যান। প্রতিদিনের ব্যস্ত মানুষটি চলে যান সকল চাওয়া-পাওয়ার বাইরে, ব্যস্ততাবিহীন এক জগতে। রাস্তায় পরে রয় তাঁর নিথর দেহখানা।

কত সীমাবদ্ধতা নিয়ে টিকে আছে আমার জনবহুল জন্মভূমি ! তার মাঝেই আবার কেউ কেউ ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠে। কিছু ভালো মানুষের চেষ্টায় কিছুদূর এগিয়ে যায় দেশটা। আবার কিছু খারাপ মানুষের কারনে পিছিয়ে যায় বহুদূর, অনেক দূর। কেমন করে উন্নতি হবে এই অভাগা দেশের ! অজান্তেই বুকের গহীন থেকে করুন সুর হয়ে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। ততক্ষনে লাউড স্পীকারে বাস ড্রাইভারের এনাউন্স মনে করিয়ে দেয়, আমার যে নামার সময় হলো। দেশ ছেড়ে দূরে আছে যারা, প্রতিনিয়ত এমন করে তারা দেশকে বুকে ধারন করে চলে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়...

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ