জানা মতে বিশ্বের শহরগুলোতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে এমন ২০টি শহরের মধ্যে রাজধানীর ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়।বৈজ্ঞানিক ব্যাখা অনুযায়ী,বড় মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে আর বেশি দেরি নেই।আগামী ২০১৮ সালের পরে বা বর্তমানে যে কোনো সময় বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে বলে মনে করেন বিশেজ্ঞরা।এ বছর অথবা আগামী বছর আমাদের দেশে কয়েক দফা বড় বড় ভূমিকম্প দেখতে হতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন বৈজ্ঞানিক বিলহাম।পৃথিবীর ধীর গতির ফলে বিষুব রেখা এর ব্যাস সঙ্কুচিত করে ফেলে।বাংলাদেশ বিষুব রেখা টেকটনিক প্লেটের কাছে অবস্থিত হওয়ায় এই প্লেটের ধাক্কায় বড় ধরণের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা অনেকটা নিশ্চিত বলে বিবিসি রেডিও’র এক অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছিলেন যুক্ত রাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রজার বিলহাম।তিনি আরো বলেছিলেন,হিমালয়ের পাদদেশে মেইন বাউন্ডারি ট্রাস্ট (এমবিটি) রয়েছে,যা বাংলাদেশ থেকে ৪০০ কিলোমিটার উত্তরে।এখানে ইউরেশিয়া প্লেটের নিচে ভারতের যে প্লেটটি তলিয়ে যাচ্ছে,সেটি লক হয়ে আছে। এই লকটি খুলে গেলেই বাংলাদেশ,ভুটান ও নেপালে ৮ মাত্রার অধিক ভূমিকম্প হবে।
তা ছাড়া বৈজ্ঞানিকদের ব্যাখা অনুযায়ী,একটি বড় মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে যাওয়ার ১০০ বছর পর ফের বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে থাকে।এ ক্ষেত্রে একশ’ বছর পূর্ণ হওয়ার ২০ বছর আগে হলে পূর্বের মাত্রার চাইতে কম মাত্রার ভূ-কম্পন অনুভূত হয়,আর ২০ বছর পরে হলে তার মাত্রা আগের চেয়ে বেশি হয়।এ বছর ২০১৮ সালে সেই একশ’ বছর পূর্ণ হল,তাই যে কোনো সময় বড় মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।যেমনটি এর আগে ১৯১৮ সালে বাংলাদেশে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিলো।

আমাদের বাংলাদেশে অতীতে যে ভূমিকম্পগুলো হয়েছে তা ৭ মাত্রার বেশি ছিলো।ডাউকি ফল্টে ১৮৯৭ সালে ৮.৪ মাত্রার এবং মধুপুর ফল্টে ১৮৮৫ সালে ৭ মাত্রার ওপরে ভূমিকম্প হয়।এছাড়া ১৭৬২ সালে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয় সীতাকু--মিয়ানমার ফল্টে।আসাম-সিলেট ফল্টে শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছিলো প্রায় ৪০০ বছর আগে।অর্থাৎ এসব ফল্টে গড়ে ১০০ বছর পূর্বে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছিলো।এখন বড় ধরনের ভূমিকম্পের জন্য যে পরিমাণ শক্তি প্রয়োজন, তা এসব ফল্টে সঞ্চিত আছে। ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে বাংলাদেশে।
লেখাটির শুরুতে বলেছিলাম ভুমিকম্পে ঝুকির মধ্যে রাজধানী ঢাকা রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে।যদি ঢাকাতে ভুমি কম্প ঘটে তাহলে বেশ কিছু কারনে এর ক্ষয় ক্ষতির পরিমান হবে ভয়াবহ।
(y) ঢাকা শহরে অনুমোদনহীন ভবনের সংখ্যা অনেক বেশি যা বিশ্বে অন্য কোন দেশে এমনটি দেখা যায় না তাছাড়া ভবন গুলো অপরিকল্পিত ও নিয়মহীন রড় সিমেন্ট দিয়ে তৈরী।অনেক ক্ষেত্রে পাইলিং বা ফাউন্ডেশনহীন বিল্ডিং আকাশ ছুইঁ ছুইঁ অবস্থা ।তাই ভূমিকম্প হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটির ওপর আরেকটি গিয়ে পড়বে, এতে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে।
(y)  আমাদের প্রিয় ঢাকা শহরের ৭৬ শতাংশ রাস্তা সরু হওয়ায় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানো কঠিন হয়ে যাবে।রাস্তা গুলো যেমন সরু,তেমনি ২৪ শতাংশ রাস্তা নরম মাটি দিয়ে তৈরি।ফলে ভুমিকম্প হলে ফ্লাইওভার ব্রিজ ভেঙে পড়বে,বিদ্যুৎ-গ্যাস লাইনে আগুন ধরে যাবে,পানির লাইন ফেটে যাবে।এমন পরিস্থিতিতে উদ্ধার কার্যক্রম চালানো কঠিন।মনে রাখতে হবে ঢাকা এদেশের প্রান কেন্দ্র এর ধ্বংস মানে পুরো বিশ্বের সাথে আমাদের অর্থনৈতিক লেন দেনের উপর হুমকি আসবে তৎক্ষনাত।
(y)  ভুমিকম্প হলে শহরের ড্রেনেজ পানির সাথে পাতলের পানির প্রবাহ বাড়বে তাই হতে পারে তাৎক্ষনিক বন্যা।বন্যার জলের উপর ভেঙ্গে পড়তে পারে বৈদিৎতিক খুটি যা পুরো জলেই বিদৎুত প্রবাহিত হবে তা হতে আমাদের সাবধান থাকতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এবং ইউএনডিপি-র দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এ কে এম মাকসুদ কামাল ডয়চে ভেলেকে এক সাক্ষাতে বলেছিলেন ‘‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই ১২টি ভূমিকম্প ফাটল আছে৷এ সব জায়গায় ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা আছে আর ঢাকার অদূরে যে মধুপুর তার ফাটল খুব বিপজ্জনক৷প্রতি ১০০ বছর পর পর ফাটল থেকে বড় আকারের ভূমিকম্প হয় আর তাই ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হয়েছলো৷তাই আরেকটি বড় ভূমিকম্পের দ্বার প্রান্তে আছি আমরা এখন আছি৷
৪৫০ বছরের ভূমিকম্পের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, ঢাকা অঞ্চলে তিনটি প্লেট সক্রিয় রয়েছে যা ইন্ডিয়ান বা ভারতীয় পে্লট,ইউরোশিয়া পে্লট ও মিয়ানমার মাইক্রোপে্লট।এর মধ্যে ভারতীয় ও ইউরোশিয়া পে্লট প্রতি বছর পরস্পরের দিকে ২ ইঞ্চি করে এগিয়ে আসছে।আর মিয়ানমার মাইক্রো পে্লটটি দেশটির উত্তর পূর্বে ১ ইঞ্চির কম করে এগিয়ে যাচ্ছে।মিয়ানমারের এই প্লেটটির কারণে ভারতের আসামের সিলংয়ে একটি ফল্ট বা ফাটল হয়েছে যা ৩০০/৪০০ কিলোমিটার উত্তর দক্ষিণে দীর্ঘ সিলেটের সুরমা বেসিনে এসে পৌছেছে।আর মিয়ানমারের মাইক্রো প্লেটটির আরেকটি দিক বাংলাদেশের দক্ষিণের চট্রগ্রাম থেকে সুমাত্রার দিকে যাচ্ছে।এই প্লেটটির কারণে মিয়ানমারে ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৯.৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিলো।সুতরাং যদিও সরাসরি ভুমিকম্পের হুমকিতে বাংলাদেশ না থাকলেও আসে পাশের দেশগুলোতে বড় ধরনের ভুমিকম্পের জন্য বাংলাদেশও ধ্বংসাত্বক ভুমিকম্পের হুমকিতে রয়েছে।

ভুমিকম্পের সময় করণীয়গুলো:
(y) পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে এক সঙ্গে বসে এ ধরনের জরুরী অবস্থায় কি করতে হবে,কোথায় আশ্রয় নিতে হবে,মোভম্যান্ট কি হবে, ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে ট্র্রায়াল করানো কারন ভূমিকম্পের সময় হাতে খুব সামান্যই সময় পাওয়া যাবে। এ সময় কী করবেন তা সবাইকে নিয়ে আগেই ঠিক করে রাখুন তাতে নিজ নিরাপত্তায় কিছুটা হলেও নিশ্চিত হওয়া যাবে।
(y) ভূমিকম্প হলে সর্ব প্রথম যে কাজটি করতে হয় তা হলো নিজের মাথাটাকে ঠান্ডা রাখা বা স্থির থাকা অথবা উত্তেজিত না হওয়া।নিজেকে কন্ট্রোল করা জরুরী এই জন্য যে,উত্তেজিত হলে করণীয় বিষয়ে হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়।ভয় এসে দ্রুত মনে বাসা বাধে যা বিপদের মূহূর্তে এক জনের সামান্য কথা বা কাজ দ্রুত অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে প্যানিকের মতন পরিস্থিতি সৃস্টি করে।
(y) ভুমিকম্পের অনুমান বা আন্দাজ পেলেই প্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হল প্রথম ভূমিকম্পের পর পরই ইউটিলিটি লাইনগুলো গ্যাস,বিদ্যুত, ইত্যাদি একনজর দেখে নিন।কোথাও কোন লিক বা ড্যামেজ দেখলে মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন।তবে সবচেয়ে উত্তম সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া।
(y)  দ্রুত বাসা থেকে বের হওয়ার চেস্টা না করে বরং দ্রুত ডাইনিং টেবিল,পড়ার টেবিল অথবা শক্ত খাটেল নিচে আশ্রয় নিতে হবে অথবা এমন এক জায়গায় অবস্থান করবেন যেখানে বুক শেলফ,আসবা পত্র ইত্যাদি কাত হয়ে না পড়তে পারে আপনার গায়ে।
(y) জানালার কাচঁ,ঘরের আয়না বা এই জাতীয় জিনিস থেকে দূরে থাকার চেস্টা করুন কেননা সে সময় এগুলো ভেঙ্গে ছিটকে এসে আপনার দেহকে রক্তাক্ত করতে পারে।আর এ সবের আঘাত হতে বাচতে আপনার মুখ,মাথাকে দেহকে রক্ষা করার জন্য পারলে বালিশ,কম্বল,পত্রিকা,ছোট বাক্স দিয়ে মুখ মন্ডলকে আড়াল রক্ষা করুন।
(y) ফ্লাট বাসাতে সিড়ি দিয়ে কখনোই তাড়া হুড়ো করে  বের হতে যাবেন না কারন সিড়িঁও বিধস্ত হতে পারে।
(y)  কখনোই লিফট ব্যবহার করবেন না কেননা বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে লিফট বন্ধ হয়ে আপনি সেখানে আটকা পড়তে পারেন।
(y) আর আপনি যদি বাহিরে অবস্থান করেন,তবে দ্রুত ফাকাঁ স্থান দেখে সেখানে অবস্থান করুন যত ক্ষন না কম্পন না থামে।
(y) আপনি যদি গাড়ি চালানো অবস্থায় থাকেন, তবে সাবধানতার সাথে গাড়ি থামিয়ে দ্রুত ফাকাঁ স্থান দেখে গাড়িতেই অবস্থান করুন।চেস্টা করুন বিল্ডিং,বড় বড় গাছ পালা,বিদ্যুৎ এর খুটিঁ,লাইট পোস্ট হতে দূরে থাকতে।
(y) বিছানার পাশে সব সময় মোবাইল, টর্চ লাইট,ব্যাটারি,হুইসেল বাশি,শক্ত সাইজ করা কাঠের প্লেট,ম্যাচ লাইট এবং জুতো রাখুন।যখন কম্পন অনুভুত হবে তখন এ সব অনেক উপকারে আসবে।
(y) ‘মেইন শক’ বা মূল ভূমিকম্পের আগে এবং পরে মৃদু থেকে মাঝারি আরও কিছু ভূমি কম্প হয়ে থাকে যেগুলোকে ‘ফোর শক’ এবং ‘আফটার শক’ নামে পরিচিত।তাই প্রথম অবস্থাতেই আপনাকে সচেতন থাকতে হবে।
যদি ধ্বংসস্তুপের ভিতরে থাকেন তখন কি করবেন
(y) কখনোই ম্যাচ বা দিয়াশলাই জ্বালাবেন না কারন গ্যাস লিক হওয়া আগুন ছড়িয়ে যেতে পারে।
(y) ধুলাবালি ইটের গুড়া হতে বাঁচার জন্য আগেই সঙ্গে রুমাল বা তোয়ালে বা চাদরের ব্যবস্থা করে রাখুন।
(y)  চিৎকার করে ডাকা ডাকি করুন তবে সাধানে যাতে চিৎকারের সময় মুখে ক্ষতি কারক কোন ধুলাবালি ঢুকে যেতে না পারে।সঙ্গে থাকা বাশি,মোবাইলে কন্টাক,টর্চ লাইটের আলোতে অথবা মুখে শিস বাজিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে পারেন।

"সতর্ক থাকার বিকল্প নাই
অকালে প্রান দিতে নাই"

ছবি ও তথ্য বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ