ভালোবাসি তোমায় (৬ষ্ঠ খন্ড)

ইঞ্জা ২২ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার, ০৯:১৭:৩৫অপরাহ্ন গল্প ২৪ মন্তব্য

ভালোবাসি তোমায় (৬ষ্ট খন্ড)

অবণী বাসায় এসে সবাইকে জানালো এই খুশীর খবর যে আজ থেকে ওকে আইটি ডিপার্টমেন্টের হেড করা হয়েছে। অভিদের আইটি ডিপার্টমেন্ট থেকে সমুদ্রে থাকা সকল শীপের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হয় সেটেলাইটের মাধ্যমে আর এইখান থেকেই শীপে কোনো ধরণের সমস্যা হলে তার সমাধান যদি শীপের ক্যাপ্টেন, ইঞ্জিনিয়ার বা অন্য কেউ দিতে না পারে তখন তাদের সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা ও সমাধান দেওয়া হয় আর এইখান থেকেই শীপের গতিবিধি দেখা হয়। অবণীর বাবা তো মহা খুশী কারণ এক সময় উনি এইসব দেখেছেন আর জানেন এই ডিপার্টমেন্টের হেড হওয়া অনেক বড় বিষয়। অবণী আসার সময় সেরাটন থেকে পেস্ট্রি নিয়ে এসেছে তাই সবাই মিলে খেলো।

অভি বাসায় যখন এলো তখন বেশ জ্বর উঠেছে ওর, ওর মা ওকে তাড়াতাড়ি রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো, ডাক্তার কে ফোন দিয়ে অভির মা ছেলেকে জলপটি দিতে লাগলো আর সুরা পড়ে সারা শরীরে ফুঁ দিয়ে দিতে লাগলো। ডাক্তার এসে কিছু চেকআপ করতে দিলো আর আপাতত নাপা দিলো। অভির মা অভিকে অল্প কিছু খাইয়ে দিয়ে ঔষধ দিলো, অভি ওগুলো খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লো, প্রিয়ন্তী ভাইয়ের পাশে বসে থাকলো। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর অভি রেডি হয়ে অফিসে যাওয়ার উদ্ধত হলে অভির মা এসে ওকে অফিসে যেতে না করলে অভি বলল, মা তুমি চিন্তা করোনা, দেখ এখন কোনো জ্বর নেই আর আমি আজ তাড়াতাড়িই চলে আসবো অফিস থেকে।
তাহলে তুই যাওয়ার পথে তোর চেকআপ গুলোতো দিয়ে যা।
না মা যখন ঠিক হয়ে গেছি আর চেকআপের কি দরকার, লাগবেনা।
মার মন উশখুশ করলেও ছেলে সম্পর্কে জানে যে ছেলে জেদি। অভি অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল।

অফিসে এসেই অভি জিএমকে ডেকে পাঠালে জিএম অভির রুমে এলো।
জিএম সাহেব, আমাদের যে চায়না আর ভিয়েতনাম যেতে হবে।
অভি স্যার কোনো সমস্যা?
অভি জিএমের সামনে ইমেইলের কপি ধরিয়ে দিলো, ইমেইলটা পড়েই জিএমের মন খারাপ হয়ে গেলো।
অভি স্যার এরা এইটা কেমন কাজ করলো, আমরা তো আশ্বস্ত করেছি তাদের যে নতুন শীপ আসতেছে আর কোনো সমস্যা হবেনা এরপরেও? জিএম অভির দিকে তাকালো।
হুম তাই বলছিলাম তাদের মেইল করে দেন আমরা আসছি, ওদের সাথে আমরা বসতে চাই, অভি জবাবে বললো।
আমরা মানে আমি আর আপনি?
জি।
অভি স্যার আমি যদি যায় তাহলে এলসি গুলো যাবে কিভাবে?
হুম তাও ঠিক বলেছেন, তাহলে কি করা বলুন তো?
স্যার অবণী ম্যাডামকে নিয়ে যান, উনার কিছুটা হলেও এই বিষয়ে আইডিয়া আছে আর আপনি তো আছেনই, তাহলে সমস্যা আর হয়না আর আমি ম্যাডামকে ব্রিফ করে দেবো।
না না উনি নতুন জয়েন করেছেন আর উনাকে আইটিরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, উপরন্তু উনি মেয়ে এইটা ঠিক হবেনা।
অভি স্যার আপনি ভুলে যাচ্ছেন কেনো উনি আপনার পারসোনাল সেক্রেটারি আর এইটাই উনার দায়িত্ব।
ওকে ওয়েট, ইন্টারকমে অবণীকে বলল, অবণী আপনি একটু আমার রুমে আসবেন?
অবণী এলে ওকে বসতে বললো অভি। এখন আপনিই আলাপ করুন উনার সাথে, জিএমকে বললো।
জিএম অবণীকে সব বুঝিয়ে বললো আর এও বলল যে তাদের কালই যেতে হবে, অবণী দুই মিনিট সময় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে আর ওর বাবাকে ফোন দিয়ে সব বলে চুপ করে থাকলো, ওর বাবা বললো, তোর কোনো সমস্যা আছে?
না বাবা ত্যমি কি বলো?
আরে বোকা আমার পারমিশন লাগে নাকি, আমি লোক দিয়ে তোর পাসপোর্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি, বাকি কথা তুই ফিরলে হবে।
অবণী অভির চেম্বারে নক করে ঢুকে জিএমকে বলল যে সে যাবে।

পরদিন অভি আর অবণী দুইজনই চেপে বসলো চায়না সাউদার্নের ফ্লাইটে, উদ্দেশ্য সাংহাই। দুজনের ভিসা ও টিকেটের ব্যবস্থা জিএমই করে দিয়েছে। ফ্লাইটে অভি ল্যাপটপ খুলে কিছু ডাটা শেয়ার করলো অবণীকে, অবণী সেগুলো মন দিয়ে পড়তে লাগলো। পড়া শেষ হলে অবণী বলল, এরা তো ব্লাকমেইলিং করছে আমাদের।
বলতে পারেন কিন্তু এদের ছাড়া আমাদের এই মূহুর্তে চলবেনা, নতুন এজেন্ট সৃষ্টি করতে হলে আমাদের এইসময় খুব সমস্যা হবে।
হবেনা অভি স্যার, আমার মনে হয় এরাই আপনাকে ছেড়ে যাবেনা, যতদূর মনে হচ্ছে এরা আরো কিছু কমিশন বেশি চাইবে।
তাতেও আমাদের আপত্তি নেই।
এই ক্ষেত্রে আপনি ওদের কমিশন না বাড়িয়ে আগে ধমক দিয়েই দেখুননা।
So clever, I like it.
অবণী মিষ্টি হেসে বলল, আমার একটি কথা ছিলো আপনার সাথে, যদি মাইন্ড না করেন তাহলে বলতে পারি।
সিউর, প্লিজ।
আমি আপনার বয়সে ছোট আর এছাড়াও অফিসের সব জুনিয়রদের আপনি তুমি করেই বলেন, তাহলে আমাকে কেন আপনি করে বলেন?
জানিনা, ওদের সাথেও আপনি করেই বলতাম কখন থেকে যে তুমি হয়ে গেলো জানতেই পারিনি।
তাহলে আজ থেকে আপনিও আমাকে তুমি করেই বলবেন, আপনি শুনলে কেমন যেন লাগে।
হুম দেখা যাক, অভি বললো।
দেখা যাক নয়, আজ কেন, এখন থেকেই তুমি বলবেন প্লিজ।
ওকে ওকে নো প্রবলেম, অভি হেসে বললো।
অবণীও সাথে সাথে হেসে দিলো।

ওরা গুয়াংজুতে নেমে অপেক্ষা করতে লাগলো, অভি অবণীকে নিয়ে রিপোর্টিং গেইটের সামনেই বসে আছে, কিছুক্ষণ পরেই এনাউন্স হলো প্রচন্ড কুয়াশার কারণে ফ্লাইট আপাতত দুই ঘন্টা ডিলে করা হচ্ছে। অভি উঠে দাঁড়ালো আর অবণীকে বলল, চলুন, সরি চলো হাল্কা কিছু খেয়ে নিই, খিদে লেগেছে নিশ্চয়?
অবণী কিছু না বলে উঠে দাঁড়ালো, আর অভির সাথে হাঁটতে লাগলো। ওরা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে খাবার অর্ডার দিলো, অভি খাবার শেষে উঠে দাঁড়ায়ে বললো, তুমি বসো, আমি আসছি।
অবণী মাথা নেড়ে কফি খেতে লাগলো, অল্প সময় পরে অভি এলে জিজ্ঞেস করলো, আপনি স্মোক করেন জানতামনা। অভি হেসে বলল, চল গেইটে গিয়ে বসি।
সাংহাই যখন পোঁছালো তখন রাত প্রায় ১১টা, খুব ঠান্ডা পড়ছে এইখানে যা অবণীর জানা ছিলো, অবণী শাড়ী দিয়ে নিজেকে ঢেকে নিলো আর তা দেখে অভি এগিয়ে এসে নিজের স্যুটের কোট খুলে অবণীর গায়ে চড়িয়ে দিলো। অবণী জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকালো অভির দিকে, অভি বলল, আমার তো ওয়েস্ট কোট পড়া আছে আর গাড়ীতে উঠলেই তো হিটারের গরম। তুমি দাঁড়াও আমি একটা ট্যাক্সি ক্যাব ধরি।

যখন ট্যাক্সি ক্যাবে উঠছে তখন আলতো করে অভির হাতে হাত লাগলো অবণীর, অবণী চমকে উঠলো।
গাড়ী ছুটছে হোটেল রিটজের উদ্দেশ্যে, অবণী আবার ইচ্ছে করেই ওর হাত রাখলো অভির হাতে এবং তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নিলো যেন ইচ্ছে করে হাত রাখেনি ও তারপর জিজ্ঞেস করলো, আপনার কখন থেকে জ্বর?
অভি চমকে উঠে বলল, তুমি কি ভাবে বুঝলে আমার জ্বর, ওহা হাত লেগেছিলো বলেই বুঝতে পেরেছো?
অবণী হাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
গত পরশু একবার উঠেছিলো, প্লেইনে থাকতেই খারাপ লাগছিলো আর এখন দেখি জ্বর উঠে গিয়েছে।
অবণী চুপ করে রইলো, হোটেলে পোঁছেই ওদের জন্য নির্ধারিত দুইটা রুমের চাবি বুঝে নিয়ে ওরা রুমে চলে এলো। পাশাপাশি দুইটা রুম, অভি একটা চাবি অবণীকে দিয়ে বলল, তুমি ফ্রেস হয়ে নাও আমি খাবার অর্ডার করছি, আজ রুমেই খায়, শরীর ভালো লাগছেনা। অবণী চাবি নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

এক ঘন্টা পরে অভি রিং দিয়ে অবণীকে বলল, আপনার খাবার কি আপনার রুমে পাঠিয়ে দেবো নাকি আমার রুমে আমার সাথে খাবেন?
না না আমি আসছি অভি স্যার।
অবণী অভির রুমে নক করলো, অভি জবাব দিলো ভিতরে যেতে। দুজনের রুমই সুইট রুমের মতোই, আলাদা একটা রুমে সোফা, টেবিল, টেলিভিশন আছে। অভি স্লিপিং ড্রেস পড়েছে, অবণীকে বসতে বললো। দুজনে খেতে আরম্ভ করলো, অভি খুবই অল্প খেলো খেতে ইচ্ছে করছেনা বলে, সাথে একি অবস্থা অবণীরো একি অবস্থা, অভি উঠে গিয়ে কয়েকটা ট্যাবলেট এনে পানি নিয়ে খেলো।
অভি স্যার জ্বর কতো দেখেছেন? অবণী জিজ্ঞেস করলো।
না আমার কাছে থার্মোমিটার নেই।
আমার কাছে আছে এখনি নিয়ে আসছি বলে অবণী উঠে গেলো।
থার্মোমিটারটা এনে ওয়াসরুমে ঢুকে পরিষ্কার করে নিয়ে অভিকে দিলো। তুমি কফি যদি খেতে চাও তাহলে আমার জন্যও নিয়ে এসো এক কাপ, ব্লাক কফি উইতাউট সুগার, অভি বললো।
অবণী কফি করে নিয়ে এসে দেখে অভি থার্মোমিটারটা টেবিলে রেখেছে, কফির কাপ অভিকে দিয়ে নিজে থার্মোমিটারটা তুলে দেখতে লাগলো অবণী, ১০২ জ্বর দেখছি আপনার, আপনি শুয়ে পড়ুন যদি লাগে আমাকে কল দিয়েন। কফি শেষ করে অবণী বিদায় নিয়ে নিজ রুমে চলে এলো।

______________ চলবে।

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ