ভালোবাসি তোমায় (১৬তম খন্ড)

ইঞ্জা ৬ আগস্ট ২০১৬, শনিবার, ১২:০৯:২৯অপরাহ্ন গল্প ২৪ মন্তব্য

 

 

images (8)

জগিং শেষ করে অভি যখন জিম করতে প্রবেশ করলো তখন অনামিকা আসেনি জিম রুমে। অভি জিম শুরু করার একটু পরেই অনামিকা প্রবেশ করলো আর অভিকে দেখে হাই বললো, অভি জিম করতে করতে হাই বলে জবাব দিলো, অনামিকা কিছুক্ষন ফ্রি হ্যান্ড করলো এরপর ট্রেইডমিলের সুইচ অন করে দৌঁড়ানো শুরু করলো। ঘন্টা খানেক পর ঘাম মুছতে মুছতে অভির পাশে এসে দাঁড়াল তখন অভি ওয়েট লিফটিং করছিলো, বেবি আমি শাওয়ার নিতে যাচ্ছি তোমার কি দেরী হবে?
না আমার হয়ে এসেছে।
ওকে তাহলে অপেক্ষা করি।
না তুমি যাও, ব্রেকফাস্ট টেবিলে দেখা হবে।
ওকে দেখা হচ্ছে বলেই উবু হয়ে অভির ঠোঁটে হালকা চুমু খেল, অভি তখন ওয়েটটা ইচ্ছে করেই ধাম করে হ্যাংগারে রাখলো।
কি রাগ করেছো বুঝি, অনামিকা জিজ্ঞেস করলো।
দেখ অনামিকা আবার বলছি, এইটা আমেরিকা নয়।
তো কি হয়েছে, আমি কি তোমাকে চুমু খেতে পারিনা?
না পারোনা, বলেই উঠে দাঁড়ালো অভি।
অনামিকা অভির আরো কাছে এসে দাঁড়ালো, অভি তুমি কি আমাকে পছন্দ করোনা?
করি কিন্তু বন্ধু হিসাবে আর অন্য কোনো ভাবে নয়, এস্কিউজ মি বলেই অভি জিম রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো। অনামিকা অভির গমন পথের দিকে তাকিয়ে বড় করে এক নিশ্বাস ছাড়লো, অভি হয়ত তোমার মনে আগের সেই রাগ আছে আমার উপরে কিন্তু এরপরেও আমিই তোমার ভালোবাসা যা আমি আবার আদায় করবো তোমার কাছ থেকে, ভুলে যেওনা আমি অনামিকা, নিজে নিজে স্বগতোক্তি করলো।

ব্রেকফাস্ট টেবিলের উদ্দেশ্যে যখন অভি নেমে আসছে তখন খেয়াল করলো অনামিকা ড্রয়িংরুমে বসে অভির মা আর প্রিয়ন্তীর সাথে গল্প করছে, অভি মাকে সালাম দিয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসলো।
অভি আজ এইখানে নয়, বাগানের শেডে বসবো ব্রেকফাস্ট নিয়ে, অভির মা বলল।
ঠিক আছে মা, চলো তাহলে, অভি জবাব দিলো।
সবাই বাগানে চলে এলো, অভির মা শখ করে বাগান করেন, দেশ বিদেশ থেকে না ধরণের ফুলের বিঝ নিয়ে আসেন উনি আর দেশিয় ফুল আর ফল গাছতো আছেই, সাথে আছে প্রচুর নারিকেল গাছ, বাড়ীর পিছনে আছে ছোট সুইমিংপুল আর জাকুজি, এইসব অভির বাবা আর মা শখ করে প্ল্যান করেছিলেন। ব্রেকফাস্ট করার সময় অনামিকা কথা তুললো,
আন্টি অভিকে এখনো বিয়ে করাচ্ছেননা কেনো?
কি বলবো মা, ও তো রাজিই হচ্ছেনা এখন বিয়ে করতে, আগে নাকি প্রিয়ন্তীকে বিয়ে দেবে তারপর সে করবে।
অনামিকা ফিক করে হেসে বললো, ততদিনে তো ও বুড়ো হয়ে যাবে।
প্রিয়ন্তী আর অভির মাও হাসতে শুরু করলো, এরপর অভির মা অভিকে ধরলো।
অভি, অনামিকা ঠিকই বলেছে, প্রিয়ন্তীর এখনো চার বছর আছে পাশ করতে, তুই বাবা বিয়ে করে ফেল, যদি বলিস আমি মেয়ে দেখা শুরু করে দিই।
না মা আমার চিন্তা করে লাভ নেই, প্রিয়ন্তীর জন্যই বর দেখো যে প্রিয়ন্তীকে বিয়ের পর পড়াবেও।
আমার বিয়ে করতে বয়েই গেছে, আমি পাশ করার আগে বিয়ের প্রশ্নই আসেনা, ভেংচি কেটে প্রিয়ন্তী ভাইকে বললো।
দেখ অভি তুই আর না করিসনা বাবা আর যদি তোর কোনো পছন্দ থাকে আমাকে বলতে পারিস, আমি না করবোনা।
হটাৎ অভির মনে অবণীর ছবি ঘুরপাক খেতে লাগলো, কফির কাপে চিনি দিয়ে চামুচ নাড়াচাড়া করতে লাগলো।
কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি, তাহলে কি কাউকে পছন্দ করিস?
অনামিকার মনে তখন যেন কয়েকশো বাজি ফুটছে খুশিতে, ওর ধারণা অভি নাম নিলে ওর নামই নেবে আর তা মিথ্যে প্রমাণিত করে অভি কফিতে চুমুক দিয়ে বললো, মা আমাকে জোরাজুরি করে লাভ নেই, তুমি প্রিয়ন্তীকে নিয়ে দাও, তখন চিন্তা করবো।
অভির মা আর অনামিকা দীর্ঘশ্বাস ফেলল এক সাথে।

অভি চলোনা শপিংয়ে যায়, আজ তো বন্ধের দিন আছে, অনামিকা অভিকে অনুরোধ করলো।
অভি সিগারেটের ধুয়া ছেড়ে বলল, শপিং আমার একদম পোষায় না, তুমি প্রিয়ন্তীকে নিয়ে যাও আর ওখান থেকে ফিরে এলে হয়ত এক সাথে কোথাও লাঞ্চ করতে পারি বলতে বলতে অভি পিডিএফ নিয়ে বসে পড়লো নিজ রুমের সোফাতে, এস্ট্রেটা টেনে নিয়ে সিগারেটের এস ফেলল।
তাহলে ঠিক আছে, আমি প্রিয়ন্তীকে নিয়ে যাচ্ছি, ফিরার আগে তোমাকে কল দিলে কোথায় খাবো জানাবে, ঠিক আছে?
হুম যাও।
অনামিকা বেড়িয়ে গেলে অভি ফোনটা নিয়ে ডায়াল ঘুরালো অবণীর নাম্বারে, কয়েকবার রিং হওয়ার পরে কেউ একজন ধরে বললো, সালামালেকুম কে বলছেন?
অভি নিজের পরিচয় দিতেই অপর প্রান্ত থেকে বললো,
অভি ভাইয়া আমি ফাল্গুনী, কেমন আছেন?
হাঁ ভালো আছি, তোমরা সবাই ভালো?
জি ভাইয়া সবাই ভালো, আপুতো নেই।
নেই মানে কই গেছে?
আব্বু আর আপু কানাডিয়ান এম্বেসিতে গেছে।
কানাডিয়ান এম্বেসিতে কেন?
জি আপু নাকি দাদুকে দেখতে যাবে তাই ভিসার জন্য গিয়েছে।
অভি চিন্তিত হয়ে বললো তোমার আপু ফিরে এলে আমাকে কল দিতে বলবে।
জি ভাইয়া, সবাইকে আমার সালাম জানাবেন, রাখি, সালামালেকুম।
কি ব্যাপার অবণী কানাডা যাবে আর অফিসেই জানালোনা, অন্তত আমাকে তো জানাতে পারতো, অভি নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলো।

দুপুরের দিকে অনামিকা ফোন দিলে ওদের বনানীর ৯ নম্বরে তর্কাতে পোঁছাতে বললো আর নিজেও রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লো, রেস্টুরেন্টে পোঁছাতে পোঁছাতে তিনটা বেজে গেল, ভিতরে প্রবেশ করেই দেখলো প্রিয়ন্তী আর অনামিকা বসে আছে বাইরের টেবিল নিয়ে, অভি বসে প্রিয়ন্তীকে জিজ্ঞেস করলো, অর্ডার দিয়েছিস?
তুমি না এলে অর্ডার দিই কি করে আর আমরাও এসেছি মাত্র আর ভাইয়া ড্রাইভার ছেড়ে দিয়েছি তোমার সাথে যাবো বলে।
ঠিক আছে, "ওয়েটার"।
ওয়েটার এলে আলু পরটা, চিকেন টিক্কা, বিফ কড়াই, মাটন রেজালা আর শেষে আইস্ক্রিম ফালুদা দিতে বললো।
তা কি কি শপিং হলো শুনি, অনামিকাকে জিজ্ঞেস করলো?
এই টুকটাক কিনলাম আর কি, অনামিকা জবাবে বলল।
খাবার দিয়ে গেলে, খাবার খেতে শুরু করলো ওরা।
তা অনামিকা তোমার কাজের কি হলো?
কাজ শেষ হয়ে যাবে আগামীকাল।
তা তুমি তাহলে চলে যাচ্ছো?
তুমি রেখে দিলে যাবোনা, প্রিয়ন্তীর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলো।
আমি কি তোমাকে ধরে রেখেছি আর তোমার ওখানে চাকরি বাকরি আছে তাই জিজ্ঞেস করলাম আরকি।
দেখি, ইচ্ছে আছে ওখান থেকে এইখানে ট্রান্সফার নেবো, এইখানে তো তোমরা আছো, ওখানে তো আমার কেউ নেই।
অভি চুপ করে খাওয়ায় মন দিলো, অভির মাথায় আবার অবণীর বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি ঘুরপাক খেতে লাগল, যা ওদের বুঝতে দিলোনা।
খাওয়া শেষে বিল মিটিয়ে দিয়ে ওরা বেড়িয়ে এলো রেস্টুরেন্ট থেকে, অভি গাড়ীর রিমোট লক অন করার পর কিউয়ি শব্দ করে উঠে আনলক হলো দরজা গুলো, সবাই গাড়ীতে উঠে বসলে অভি স্টার্ট দিলো ইঞ্জিন, অভির পাশেই বসেছে অনামিকা আর প্রিয়ন্তী পিছনে।
তা প্রিয়ন্তী, তোমার ভাইয়ার জন্য কেমন মেয়ে পছন্দ, অনামিকা জিজ্ঞেস করলো।
যিনি আমার বান্ধবী হতে পারবেন।
আমার মতো, আমিও তো তোমার বান্ধবীর মত নাকি?
আহহা আবার শুরু করলে তোমরা, অভি বিরক্তির সাথে বললো।
আরে তুমি খেপো কেনো, আমরা বান্ধবী বান্ধবী কথা বলছি, অনামিকা বলল।
আপু আপনি হলেন ভাইয়ার বন্ধু আর আমি হলাম ছোট।
প্রিয়ন্তীর এই কথা অনামিকার আতে গা লাগলো, সে একদম চুপ মেরে গেল।

বাসায় পোঁছেই অভি চলে এলো নিজ রুমে আর এসেই অবণীর নাম্বারে কল দিলো, দুইটা রিং পড়তেই আবার ধরলো ফাল্গুনী, হ্যালো ভাইয়া আপু তো আসেনি এখনো।
এখনো আসেনি, এম্বেসি তো অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে আর অবণীর সেল ফোন তোমার কাছে কেন?
আপু ফোন ভুলে হয়ত নিয়ে যায়নি আর আব্বু ফোন দিয়ে বলেছেন উনারা আব্বুর এক বন্ধুর বাসায় যাচ্ছেন আসতে দেরী হবে।
ও আচ্ছা ঠিক আছে, পরে রিং দেবো।
মন খারাপ হয়ে গেলো অভির, কাপড় ছেড়ে পাঞ্জাবি পড়ে নিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো কিন্তু মন থেকে অবণীর বিদেশ যাওয়ার বিষয়টা ফেলতে পারছেনা, কোনো কথা নেই বার্তা নেই কেন অবণীর বিদেশ যাওয়ার চিন্তা, মাথায় আসছেনা অভির। দরজায় নক শুনে মুখ তুলে দেখলো অনামিকা দাঁড়িয়ে, আসবো, অনামিকা জিজ্ঞেস করলো।
তুমি আবার কবে থেকে জিজ্ঞেস করা শিখেছ?
না তোমাকে ল্যাপটপে কাজ করতে দেখে ভাবলাম বিজি কিনা?
না ঠিক আছে, আসো।
অনামিকা এসে সোফায় অভির পাশে বসে পড়লো।
তা কিছু বলবে, অভি জিজ্ঞেস করলো।
না আসলে রুমে একা ছিলাম তো তাই ভাবলাম তোমার কাছে এসে বসি, তা কি কাজ করছো?
কিছু মেইলের রিপ্লাই দিচ্ছি।
আচ্ছা করো আমি বসি।
অভি কাজ শেষ করে ল্যাপটপ বন্ধ করে একটা সিগারেট ধরালো, তারপর বলো কিছু বলবে?
অভি আমি ভাবছি আমি ঢাকায় ট্রান্সফার নেবো, তুমি কি বলো?
আমি কি বলবো বলো, তোমার সুবিধা অসুবিধা তুমিই বুঝবে।
দেখো তুমি আমার বন্ধু, তুমি বুদ্ধি না দিলে কে দিবে বলো?
অনামিকা, দেশে থাকাটা তোমার জন্য ভালো হবেনা কারণ তুমি এই দেশে হেবিচুয়েটেড না, তোমার জম্মটাও ওই দেশে আর এইখানে তোমার কেউ নেইও।
কিযে বলোনা, তুমি আছোনা আর আন্টি, প্রিয়ন্তী আছে।
তবুও আমরা হলাম পর, আমাদের ভরসায় তোমার আসাটা কি ঠিক হবে?
কে বলেছে তোমরা পর, আমাকে এইভাবে পর করে দিওনা অভি।
আচ্ছা তুমি এখন যাও, আমি একটু রেস্ট করবো।
ঠিক আছে, আমার কথাটি একবার ভেবে দেখো।

অনামিকা রুম থেকে বের হয়ে গেলে অভি উঠে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো, চোখ বন্ধ করে চিন্তা করতে লাগলো অবণীর কথা ভাবতে লাগলো। ফোনের রিং বেজে উঠলে ফোনটা তাড়াতাড়ি উঠিয়ে দেখে অবণী নয় ওর বন্ধু সোহেল ফোন দিয়েছে ইংল্যান্ড থেকে, হ্যালো কেমন আছিস তুই, অনেকদিন পর, আসতেছিস, ভালো আয়, আসলে দেখা হবে, ওকে বাই। ফোন রেখে উঠে নিচে চলে এলো, নিচে নেমে বাগানে হাটতে লাগলো, খুব অস্থির হয়ে আছে আজ কিন্তু কেনো, অবণী গেলে যাবে কিন্তু ওর অস্থিরতা কিসের, হয়ত গেলেও কিছুদিনের মধ্যে চলে আসবে, ওর তো চাকরি আছে নাকি, ও তো ছুটি নিতেই পারে, নিজেকে নিজে প্রবোধ দিলো অভি। মাকে আসতে দেখে অভি এগিয়ে গেল, মা তুমি কই ছিলে এতক্ষন?
এইতো সুইমিংপুলের ওখানে বসে ছিলাম, তুই এখানে কি করছিস?
এই এমনেই ঘুরে ঘুরে তোমার ফুলগুলো দেখছিলাম।
অভির মা হেসে বললেন, জানিস একটা নতুন জাতের অর্কিড ফুটেছে, দেখবি?
কই, কোথায় চলো দেখি।
ওর মা ওকে সাথে করে বাড়ীর পিছনে নিয়ে গেলেন যেখানে সুইমিংপুল আছে আর সুইমিংপুলের কাছেই লতানো এক গাছের পাশে নিয়ে গেলেন, এই দেখ কি সুন্দর অর্কিড।
অভি মুগ্ধ হয়ে দেখলো লতানো গাছটিতে লাল সাদা অর্কিড ফুটেছে অনেক গুলো, মা এই প্রথম দেখলাম এই ফুল, কি নাম এর?
লাভ অর্কিড, পাঁচ বছর পর পর ফুটে এই ফুল, কথিত আছে কারো মনে যদি ভালোবাসার ছোঁয়া লাগে তখন এই ফুল ফুটে, এ ফুল প্রেমের ফুল।

রাত ৮টা করে অবণীকে রিং দিলে অবণীই রিসিভ করলো, হ্যালো স্যার।
কেমন আছো তুমি?
জি ভালো।
তুমি কানাডা যাচ্ছো শুনলাম।
জি চেষ্টা করছি, ভিসা পেলে যাবো।
ওহ, তা হটাৎ কানাডা যাবার প্রোগ্রাম হলো কেন?
দাদীর কাছে যাবো।
তা কতোদিন থাকবে?
জানিনা।
কাল অফিসে আসবে তো?
দেখি।
দেখিনা এসো, তোমার সাথে আমার জরুরী কথা আছে।
স্যার আমি রাকবো এখন।
ওকে কাল দেখা হবে, ভালো থেকো।
জি।
অবণী ফোন রেখে দিলে অভি ভাবতে লাগলো, যে মেয়ে এতো উচ্ছল ছিলো আজ সে এমন কেনো হলো, তাহলে কি অবণী চাকরি ছেড়ে যাবে, কেনো, হঠাৎ এমন হলো কেন?
খেতে ডাকলে অভি তেমন কিছু খেতে পারলোনা, বুকে যেন কেমন শুন্যতা অনুভব করছে।

 

 

___________ চলবে।
ছবিঃ Google.

 

 

 

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ