ভারতে এবার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসবে এবং প্রধানমন্ত্রী হবেন বর্তমানে গুজরাটের প্রধানমন্ত্রী জনাব নরেন্দ্র মোদী, এরকম একটা জোয়ার অনেকদিন আগে থেকেই সৃষ্টি হয়ে গেছে । গত দুই টার্ম লোকসভা নির্বাচনে জিতে ভারতে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল । প্রথমবারে ক্ষমতায় এসে কংগ্রেস ভালই চালিয়েছিল দেশ, দেশের মানুষ সন্তুষ্ট ছিল দলটির উপর । কিন্তু ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারে ক্ষমতায় এসে দলটির জণপ্রিয়তার পারদ ক্রমেই নিম্নমূখী হতে থাকে । এরই মধ্যে ২০১১ সালে প্রথম বাবা রামদেবের এবং পরে আন্না হাজারের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন দলটিকে একরকম বিপর্যস্ত করে তোলে । আন্না হাজারের দুর্নীতিবিরোধী অনশণ আন্দোলন কংগ্রেসকে এতটাই ধাক্কা দিয়ে যায় যে, সেই ধাক্কা সামাল দিতে আর সক্ষম হয়না কংগ্রেস । মানুষের মনে ধারনা তৈরী হয় যে, দল হিসেবে কংগ্রেস আসলে দুর্নীতিরই সহায়ক ।

দু’দফায় প্রায় ২০/২২ দিন অনশণ করেও আন্না হাজারে তাঁর মতো করে জণলোকপাল বিল পাশ করাতে ব্যর্থ হয়ে আন্দোলন থেকে সরে আসেন । প্রশ্ন উঠতে পারে, আন্না হাজারের আন্দোলন কী একেবারে ব্যর্থ হয়েছে ?

প্রথম দফায় আন্না হাজারে যখন জণলোকপাল বিল পাশ করাতে অনশণে বসেন, তখন তাঁকে গ্রেপ্তার করে ভারতের সর্ববৃহৎ জেলখানা তিহার জেলে রাখা হয়েছিল । কিন্তু প্রচন্ড গণবিক্ষোভের প্রেক্ষিতে সরকার তাঁকে ২০ ঘন্টার বেশী রাখতে পারেনি, মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল এবং যথারীতি তিনি দু’দফায় পরের ২০/২২ দিন অনশল চালিয়ে গেছেন । এই আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারের সাথে বিভিন্নসময় আন্নার পক্ষে তথা আন্দোলনের পক্ষে বিভিন্নধরনের নেগোসিয়েশনের কাজে জড়িত ছিলেন যাঁরা, অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন তাঁদের মধ্যে প্রধান ব্যক্তি ।

অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন ভারতের আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা । চারিদিকে দুর্নীতি দেখে চাকরী ছেড়ে দেন তিনি, বিভিন্ন সামাজিক কাজে তিনি জড়িত হয়ে পড়েন এবং এনজিও-র সাথেও সংশ্লিষ্ট হন । সামাজিক কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ ২০০৬ সালে তিনি ম্যাগসেইসেই পুরষ্কারে ভূষিত হন । ২০১১ সালে আন্না হাজারের আন্দোলনেও যখন তাঁর পছন্দমত জণলোকপাল বিল তঁদের সংসদ, লোকসভায় অনুমোদন করানো সম্ভব হলনা, অরবিন্দ কেজরিওয়াল মনে করলেন, না, এভাবে হবেনা । গঠন করলেন দল, আম আদমি পার্টি । সম্ভবত: তিনি মনে করলেন, দল গঠন করে ক্ষমতায় গিয়েই দুর্নীতির প্রতিরোধ সম্ভব ।

এর পরের ইতিহাস, গত বছরের রাজ্যসভা নির্বাচনে ৭২টি আসনের মধ্যে তাঁর দল ২৮টি আসন লাভ করে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল নিজে দিল্লী আসনে কংগ্রেসের অত্যন্ত প্রভাবশালী মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে পরাজিত করেন । প্রথমে সরকার গঠন করতে না চাইলেও পরিস্থিতির কারনে সরকার গঠন করেন এবং দিল্লীর মূখ্যমন্ত্রী হন । মূখ্যমন্ত্রী হয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লীর দরিদ্র মানুষের দৈনিক পানি-প্রাপ্তি এবং কমমূল্যে বিদ্যুৎ-প্রাপ্তি নিশ্চিত করেন । বিশেষত: বিদ্যুৎ বিষয়টির সাথে বিভিন্ন সংস্থা জড়িত থাকায় এবং এসকল সংস্থার উপর বড় দলগুলির প্রভাব থাকায় সমন্বয় সাধন কার্যক্রমটি সুখকর তো মোটেই হয়নি, বরং ক্ষেত্রবিশেষে চাপও প্রয়োগ করতে হয়েছে তাঁকে । তবুও পিছপা না হয়ে কাজ করে এগিয়েই গেছেন তিনি । শেষে পুলিশের সাথে পেরে উঠেননি । সর্বভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন কিছু দোষী পুলিশের শাস্তির বিধান করতে না পেরে, প্রধানমন্ত্রী হয়েও এ-বিষয়ক আন্দোলন শুরু করেন এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন ।

আমআদমি পার্টি আজ ভারতে লোকসভা নির্বাচনে বিরাট একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে । এই শক্তির মূল শক্তি হচ্ছে সততা আর তারুন্য । অনেকদুর যাবে দলটি আগামীতে । বর্তমান লোকসভা নির্বাচনে দলটি যেভাবে আগাচ্ছে, তাতে ক্ষমতার স্বপ্ন দেখা বিজেপির স্বপ্ন ওলোট-পালোট করেও দিতে পরে দলটি । গত দশ বছরের ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের দিক থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, তাদের বিরাট একটা অংশ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির দিকে ঝুঁকে পড়ছেন বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ।

আসলে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দেশকে বদলে দেওয়ার বিরাট এক স্বপ্ন আছে, তারুন্যের বিরাট এক শক্তিও আছে তাঁর সাথে । আর এজন্যই নরেন্দ্র মোদীর বারানসি আসনে তাঁর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গেছেন তিনি, রাজ্যসভা নির্বাচনে যেমন দাঁড়িয়েছিলেন প্রভাবশালী শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে । আসলে দিল্লীর মূখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করাটা তাঁর ঠিক হয়নি এবং তিনি নিজে তা স্বীকারও করেছেন । তবে তরুন সমাজের হিসাব-নিকাশ যদি সত্য ও ন্যায়ের পথে হয় এবং সেটাই আশা করা যায়, তবে ক্ষমতার স্বপ্ন দেখা bjp নেতা-নেত্রীদের স্বপ্ন ধুলিসাৎ হতে সময় লাগবেনা ।

এবারে হয়তো হবেনা, তবে দৃঢ়ভাবে বলা যায়, বর্তমানের নীতি-আদর্শ যদি ঠিক থাকে আম আদমি পার্টির, তবে আগামী লোকসভা নির্বাচনে অরবিন্দ কেজরিওয়ালই হবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ।

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ