বাবলু এই ঢাকা শহরেই বড় হয়েছে,জম্মের পর পরই বাবা মা ওকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে লঞ্চে করে, বাবা রিক্সা চালাতো আর মা ঘরে ঘরে ছুটা বুয়ার কাজ করতো, বাবলুর একটা বোন আছে যে এখন ক্লাস নাইনে পড়ে আর বাবলু মেট্রিক পরীক্ষায় ফেল করার পর আর পড়ালেখার মুখই দেখেনি বরঞ্চ এলাকার ছেলে পেলের সাথে ঘুরাঘুরিতেই তার ইচ্ছে ছিলো বেশি আর এতে ভালো কিছুর চাইতে খারাপটাই হয়েছে বেশি, সিগারেট, গাঞ্জা তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিলো আর ইয়াবা তো পেলেই জমে যেতো আসর আর এই করে করে সন্ত্রাস জগতে প্রবেশ করতে সময় লাগেনি বাবুলের, চাঁদাবাজী, না দিলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুন যেন তার আর তার বন্ধুদের কাছে ছিলো যেন মজার খেলা, এইভাবে আসতে আসতে সে দিনকে দিন আরো হিংস্র হয়ে উঠতে লাগলো, এ পর্যন্ত দুইবার জেলে গিয়েছে আবার স্থানীয় নেতার আনুকূল্যে বেড়িয়েও এসেছে, বাবুলের লিডেই ওই নেতার যাবতীয় কুকাজ গুলোই তারা করে আর এইসবের কারণে বাবলুর পাড়ার মানুষরা ওকে এড়িয়েই চলে এতে ওর কোন অসুবিধা নেই, সে আছে আর তার গ্যাং আছে আর এতেই সে অনেক কিছু।
নতুন বছরকে বরণ করার প্রস্তুতি চলছে পাড়া মহল্লায়, সবার মনে নতুন বছরের আগমন উপলক্ষে মন প্রফুল্ল হয়ে আছে। রাত আটটায় বাবলু বাসায় এসে ডাক দিলো মাকে, মা কই তুমি খিদা লাগছে, ভাত দেও।
ভিতর ঘর থেকে মা দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, কিরে বাজান তোর আইজ তাড়াতাড়ি খিদা লেগে গেল, সারাদিন কিছু খাইসনি বুঝি?
ধুরর মা এতো প্যাচ প্যাচ করো কেনে, ভাত দিবার কইছি ভাত দেও, ভাত হইনি নাকি এহনো?
এই হইয়ে আইসলো তুই মুখ হাত ধুইয়েনে আমি ভাত বাড়বার লাইগালাম।
বাবলু গোসল খানায় গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে নিয়ে বেড়িয়ে এলো গামছা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে আর ঠিক সেই মুহুর্তে ঘরের দরজার সামনে থেকে ডাক দিলো কেউ ওস্তাদ বলে।
বাবলু ঘরের দরজার ফাঁক দিয়ে বাইরে তাকালো তারপর দরজা ঠেলে বেড়িয়ে এলো বাইরে, বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখে ওখানে গিয়ে দাঁড়ালো আর বললো, বল কি খবর?
আজকে খুব ভালো প্রোগ্রাম হবে সাইদুল কইয়ে পাঠালো, আপনারে রাইত এগারোটায় ক্লাবে আইয়া পড়তে কইছে।
তা কি মাল আনছে সে, আঁইজ কাল দেশিটা আর ভালো লাগেনা।
ওস্তাদ বিদেশি মাল আনছে লগে ড্যান্স ম্যান্স চইলবো, আমি যাইগা, আফনে আইয়া পড়বেন, সালাম।
যা আমুনে।
রাতে বাবলু রুবিনা মানে বাবলুর গার্লফ্রেন্ডকে হাতির ঝিলের অন্ধকারে বসে গল্পসল্প করলো, চুমুও খেলো এরপর রুবিনাকে তার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে ক্লাবের দিকে রওনা হলো রিক্সা নিয়ে, ক্লাব থেকে একটু দূরে রিক্সা থেকে নেমে পড়লো ও একটা সিগারেটের দোকানে গিয়ে সিগারেট ধরালো আর এক প্যাকেট বেনসন লাইট নিয়ে ক্লাবের দিকে হাঁটা দিলো, ক্লাবের কাছাকাছি এসে অন্ধকার দেখে একটা জায়গায় দাঁড়ালো এর আগেই সিগারেটটা নিভিয়ে দিয়েছিলো, প্রায় ঘন্টার উপরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আসে পাশের অবস্থা দেখলো, কাউকে কোথাও না দেখে একটা শিষ দিলো আর পর মূহুর্তেই ওর বয়সি একটা ছেলে বের হয়ে এলো ক্লাব ঘর থেকে, এইদিক সেইদিক তাকিয়ে একটা শিষ দিয়ে ভিতরে চলে গেল দরজা খোলা রেখে আর বাবলুও এইদিক সেইদিক দেখে সাঁ করে ভিতরে প্রবেশ করলো, এই ক্লাবটা শুধু বাবলুদের জন্য যেখানকার কথা প্রায় কেউ যানেনা শুধু বাবলু আর তার গ্যাংয়ের মানুষ ছাড়া, নিজেদের সেইফটির জন্যই ওরা এই বাসাটাতে আসার আগে চারিদিক সম্পর্কে জেনে বুঝেই তারপর প্রবেশ করে।
ভিতরে প্রবেশ করে বাবলু ভিতরের সিঁড়ি দিয়ে উপরের তলায় চলে এলো আর চোখ ভুলিয়ে দেখলো, ওর ডান হাত সাইদুল সহ বাকি সবাই আগেই এসে গেছে।
সবাই উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো, সাইদুল বললো, ভাই আফনে এতো দেরি করলে কেম্নে কি হইবো, এই ভাইয়ের স্পেশাল বোতল খুল, ভাই আফনের জন্যে আজ ব্ল্যাক লেভেন লইয়া আইছি।
বাবলু বসে পড়লো একটা চেয়ারে আর বললো, আঁইজ কি তাস টাস খেইলবা নাকি শুধু মালই খাওয়াইবা?
আরে কন কি ভাই, খেলুমনা এইডা কি হয় নাকি, আগে লন চিয়ার্স করি বলেই সাইদুল মদের গ্লাস তুলে ধরলো সাথে বাবলু সহ বাকিরা গ্লাস তুলে বললো একযোগে, চিয়ার্স।
সবাই একসাথে গ্লাসে চুমুক দিতে লাগলো, আরেকজন এসে টেবিলে তাস এনে দিলে সাইদুল পেকেট খুলে ফেটতে লাগলো, এরপর পাশের জন থেকে কাট করে বেটে দিতে লাগলো।
ধুমছে চলতে লাগলো তাস খেলা সাথে মদের আসর, এর মাঝে সাইদুল বাবলুর কানে কানে বললো, ভাই আরেকটা জিনিষ আনছি।
কি আনছস?
মাল, মাল।
কোন দেশি?
আরেহ না ভাই যেইসেই মাল না, আঙ্গুল দিয়ে বিকৃত ভাবে দেখালো তার মালটা কি মাল।
বাবলু হাসলো একটু।
রাত দুইটার দিকে যখন সবাই মাতাল হয়ে এইদিক সেইদিক পড়ে আছে তখন সাইদুল বললো, বস ওই পাশের রুমে আছে মাইয়াটা, আগে আফনে যান, পরে আমরা যাবো।
বাবলু বড় একটা নিশ্বাস ফেলে বললো, সাইদুইল্লা আজ ভালা লাগতাছেনা, আমি যামুনা, তুই যা আমি যামুনা।
কি কন ভাই, এতো কষ্ট কইরা মাইয়াডারে গার্মেন্টসের গেইট থেইক্কা উডায় আনলাম আঁইজ হগলে মিইল্লা মৌজ করুম আর আফনে যাইতেন না?
না তুই যা।
বড় একটা নিশ্বাস ফেলে সাইদুল বললো, ঠিক আছে ভাই আমি গেলাম আফনে থাইকেন।
যা যা আমি আছি।
সাইদুল চলে গেলে বাবলু খালি গ্লাসে মদ ঢেলে নিয়ে চুমুক দিতে লাগলো হঠাৎ একটা চিৎকার শুনে কান খাড়া করলো, ভিতরের রুম থেকে আওয়াজ আসছে, মেয়েটা বলছে, আমারে ছাইড়া দেন, আমারে যাইতে দেন, আফনের ঠ্যাং ধইরা আমি মাফ ছাই, আমার এই সর্বনাশ কইরেন না।
সাইদুলের আওয়াজ ভেসে এলো সে বলছে, ধুর শালি এতো প্যাচ প্যাচ করিসনা, তাড়াতাড়ি কাপড় খুল তোর।
ভাই ভাই আমারে ছাঈড়া দ্যান ভাই আমি খারাপ মাইয়া না, আমারে যাইতে দ্যান।
ভিতর থেকে দুই তিনটা চড় থাপড়ের শব্দ এলো এরপর এলো একটা গোঁগানির শব্দ এরপর আবার চড় মারার শব্দ, আবার গোঁগানির শব্দ তারপর একটা চিৎকার, ভাইজান ও ভাইজান আমারে বাঁচাও আর এই শব্দ শুনে বাবলু টলে উঠলো, এইদিক ওদিক তাকালো তারপর টলতে টলতে উঠে দাঁড়ালো নিজ পায়ে আর এগিয়ে গেলো রুমটার দিকে, দরজায় এক লাথি মেরে খুলে ফেললে ভিতরে প্রবেশ করে বললো, সাইদুল তুই মাইয়াটারে ছাইড়া দে।
মেয়েটাকে খাঠের উপর ফেলে ততক্ষণে সাইদুল মেয়েটার উপর চড়ে বসেছিলো, ওই অবস্থা থেকে সাইদুল বললো, ভাই আফনে যানগা, এই হান থেহে যান।
সাইদুল ছাইড়া দে কইলাম।
সাইদুল ত ধস্তাধস্তিতে ব্যস্ত, গোঁগাতে গোঁগাতে বললো, ভাই কইলাম আফনে যান নইলে কিন্তু অসুবিধা হইবো বলেই পাশের পিস্তলের দিকে হাত বাড়াতে গেল আর তা দেখে বাবলু পিস্তল বের করে গুলি চালালো সাইদুলের মাথায় আর সাইদুল ওইদিকেই মেয়েটার গায়ে ঢলে পড়ে গেল, মেয়েটা চিৎকার করে উঠে মৃত সাইদুলকে নিজ গায়ের উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ঝটকা দিয়ে উঠে পড়লো আর দৌড়ে গিয়ে বাবলুর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপতে লাগলো টকটক করে।
ইতিমধ্যে বাকি সবাই টলতে টলতে হুড়মুর করে এসে দরজার সামনে এসে ভিড় করলো আর কেউ কেউ বললো, ভাই ভাই কি হয়েছে, কি হয়েছে?
সাইদুলরে মাইরালাইছি, ওরে লইয়া টেরেন লাইনে ফালাই দিয়া আয় আর এই মাইয়া আমারে ভাই ডাকছে, আঁইজ থাইক্কা এই মাইয়ার দিকে কেউ চাইয়া দেখলেও মুই তার চোখ তুইল্লা নিমু, বলেই মেয়েটার গায়ে নিজের জ্যাকেট খুলে পড়িয়ে দিয়ে বললো, চলো তোমারে তোমার ঘরে দিয়া আসি।
মেয়েটাকে নিয়ে বেড়িয়ে এলো বাবলু ক্লাব থেকে, একটু সামনে এগিয়ে গেলে একটা রিক্সা পেলো ওরা, ওইটাতে উঠে পড়লো দুজন, তখন নতুন বছরের নতুন ভোরের আলো, মেয়েটা বাবলুর কাঁদে মাথা রেখে বললো, "ভাইজান"।।
সমাপ্ত।
প্রিয় সোনেলার সোনাদের আগমনী নতুন বছরের জন্য জানাই আগাম শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
হ্যাপি নিউ ইয়ার।
১৭টি মন্তব্য
আবু খায়ের আনিছ
নতুন বছরের শুভেচ্ছা ভাই।
ইঞ্জা
শুভকামনা নিরন্তর
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাই ভাইজানেরা বুঝি এমনই হয়! ভালো লিখেছেন।
Happy New Year 2017 -{@
ইঞ্জা
ভাইরা সবাই বোনদের রক্ষক হওয়া উচিত আপু আর আমার মতে ভাইজানরা এমনই হওয়া উচিত।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়ের আদর-শাসনের মধ্যে বাবার স্পর্শ পাওয়া যায় যে!
ইঞ্জা
ঠিক বলেছেন আপু।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
শুভেচ্ছা আপনাকেও -{@ গতানুগতিক গল্পটি যা সমাজের একটি অপরাধ জগতের চিত্র।নেশাখোর মাস্তান কেউ কেউ এমনি হয়।মেয়েদের ওরা মায়ের সন্মান দেয়। -{@
ইঞ্জা
আহা সব পুরুষ সে হোক মাস্তান, বকাটে সে যেই হোক মেয়েদের যদি সম্মান দিয়ে চলতো তাহলে আজ দেশটাতে ধর্ষন, ইভ টিজিং বলে কিছুই থাকতো না, ধন্যবাদ ভাই।
জিসান শা ইকরাম
নতুন বছরটা খুন খারাবী দিয়া শুরু হইল? !!
খারাপ না, এমন বাবলুই তো চাই 🙂
শুভ নববর্ষ ভাই,
২০১৭ ভাল কাটুক আপনার ও আপনার পরিবারের।
ইঞ্জা
খুন খারাবির বিষয় নয় ভাইজান বিষয়টি হলো বোন ভক্তি যা আজ আমাদের সমাজে খুবই কম।
ছাইরাছ হেলাল
অনেক অনেক শুভেচ্ছা,
আপনার বই এর অপেক্ষায় আছি, বই মেলা এত্ত দেরি করে ক্যা?
গল্পও আপনি ভালই লিখবেন। আশা করি।
ইঞ্জা
এই মারছে, ভাইজান আমাকে তো দেখেছিলেন, কি মনে হয় আমি বই ছাপাবো, আমি লিখি শখে আর আপনাদের ভালো লেগেছে তাতেই আমি আনন্দিত, আপনারা দোয়া করবেন শুধু।
ধন্যবাদ
মোঃ মজিবর রহমান
ভালই লিখেছেন ভাইয়া।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই -{@
মৌনতা রিতু
ওরে বাপরে! মাতাল বাবুল উঠতে পারছিল বলে। যাক এমন ভাইজানরেই তো দরকার এমন সব মেয়েদের জন্য।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা ভাই।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য, পৃথিবীতে এমন ভাইরা এখনো আছে আমার বিশ্বাস।
নীরা সাদীয়া
এমন ভাই যদি ঘরে ঘরে থাকত। প্রত্যেকটি মেয়েই কারো না কারো মা, বোন। তাদের নিয়ে এসব নোংড়ামো বন্ধ হোক।