বড়দিনের ভালোবাসা

ফ্রাঙ্কেনেস্টাইন ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪, বৃহস্পতিবার, ১১:২৯:৪১অপরাহ্ন গল্প ৪ মন্তব্য

সকালে মোবাইলের এলার্মে ঘুম ভাঙলো পঞ্চগড়ের এএসপি এবি ডি রোজারিওর। আজকে বড়দিন ! মেজাজ ভালো হওয়ার কারণ থাকলেও তার মেজাজ খারাপ। আজকের দিনেও তার মেজাজ খারাপ কারণ ছুটি ম্যানেজ করতে না পারা। গতবারেই বিসিএস দিয়ে পুলিশে জয়েন করেছে ... পোস্টিং হয়েছে পঞ্চগড়। সারাজীবন ঢাকাতে বড় হওয়া ছেলেকে এখন যেতে হয়েছে দেশের উত্তরবঙ্গের একেবারে সীমান্তবর্তী জেলাতে ! প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হলেও ম্যানেজ করে নিতে পেরেছে সে। কিন্তু তাই বলে বড়দিনটা তাকে এখানে একা একা কাটাতে হবে ভাবতে পারেনি। ঈদের সময় ছুটি নিয়ে গিয়েছিল ঢাকাতে। সে সময় আরেকজন এএসপি দায়িত্ব পালন করেছিল। এখন অবশ্য সে ছুটিতে গেছে তাই তার কোন উপায়ই নেই।

নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করতে করতে ফ্রেশ হয়ে নিলো সে। ইউনিফর্ম পড়েই গেলো চার্চে। প্রার্থনার সময়তে মনে মনে চাচ্ছে " ইশ্বর ! তুমি আমাকে একটা প্রকৃত ভালোবাসার সন্ধান দাও। " গত কয়েকদিন ধরে তার জন্য মেয়ে খুজছে তার মা। সেইজন্যই এমন প্রার্থনা তার।

প্রার্থনা শেষে চার্চ থেকে বের হয়েই দেখলো তার গাড়ির ড্রাইভার এক রিকশাওয়ালার সাথে ঝগড়া লাগিয়েছে ! কারণ ঠিকমত না খেয়াল করে সে ড্রাইভারের গায়ে ধাক্কা লাগিয়ে দিয়েছে। পুলিশের ড্রাইভার সে, তাই যথেষ্ট হাবভাবে থাকে সে। এক পর্যায়ে ড্রাইভারকে মারতে উদ্যত হলো সে। তখনই কোথা থেকে এক মেয়ে এসে মিষ্টি সুরে বললো, " আজকের এই পবিত্র দিনে কেন এই হানাহানি করছেন আপনি ? "

খুব নরম সুর কিন্তু কথাগুলোর মধ্যে এতটা সম্মোহনের একটা সুর ছিল যে ড্রাইভারের হাত থেমে গেলো আর এএসপি এবিও মেয়েটার দিকে নজর ফেরাতে বাধ্য হলো। ড্রাইভার বলছে মেয়েটাকে, " আরে আপা দেখেন না সে কি করেছে ? "
- ভুল তো মানুষই করে তাই না ?
- কিন্তু ......
- কি কিন্তু ? ক্ষমা করতে কি এতই কষ্ট লাগে !
- নাহ কিন্তু ...
- আবার কিন্তু !! আরে দেননা তাকে ক্ষমা করে, ইশ্বর খুশি হবেন।
- আচ্ছা ... ঠিক আছে।
অনেকটা হতচকিত হয়ে গেছে ড্রাইভার।

" ইশ্বর আপনার মঙ্গল করুন 🙂 " চলে গেলো মেয়েটা।

মেয়েটার চেহারা মনের মধ্যে গেঁথে গেলো এএসপি এবির। খুব যে সুন্দরী তা নয়। শ্যামলা বর্ণের চেহারাতে একটা মিষ্টি মিষ্টি ভাব রয়েছে, গলার স্বরটা কোকিলের মত, খুব বেশি চিকনও না আবার মোটাও না এমন একটা গড়ন শরীরের। মোট কথা শরীরের গড়ণ আর দশটা সাধারণ বাঙালী মেয়ের মতই।

সারাটা দিন বিভিন্ন কাজে কেটে গেলো এবির। তাও মাঝেমাঝেই মেয়েটার কথা মনে হয়েছে তার। এত ভালো লাগলো কেন মেয়েটাকে ! কি এমন আছে তার মধ্যে ! উত্তর খুঁজে এবি কিন্তু কোন জবাব নেই।

আসলে মানুষের ভালোলাগা যে কোন যুক্তি মানে না। কাউকে ভালো লাগার পিছনে যদি কোন কারণ থাকে তাহলে সে ভালো লাগা কারো প্রকৃত ভালোলাগা হতে পারেই না। ভালোলাগা হতে হবে সম্পূর্ণ যুক্তিহীন।

সেইদিন রাতে পুরো খ্রিষ্টান পল্লীর নিরাপত্তা দেখতে বের হয়েছে এএসপি এবি। পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসের সামনে নীরব নিস্তব্ধ রাতের আকাশে তীক্ষ্ণ শব্দে শোনা গেলো চিৎকার ! ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললো সে। নেমে দেখে এক রিকশাকে ঘিরে রেখেছে দুটি বাইক। ছুরি আর পিস্তল বের করে জোর করে কেড়ে নিচ্ছে সব। অন্ধকারে বাইকাররা খেয়াল করেনি তাকে। তাদের চেহারাও বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু অন্ধকারে চকচক করছে অস্ত্রগুলো।

খাপ থেকে পিস্তল বের করলো সে। নিয়ম অনুযায়ী শূন্যে গুলি করলো সে। চিৎকার করে অস্ত্র ফেলে দিয়ে আত্বসমর্পণের নির্দেশ দিল।

কিন্তু অনুমিতভাবেই তারা পাল্টা আক্রমণ চালালো। আড়ালে চলে গেল সে। ইচ্ছা হলে তাদেরকে টার্গেট করে গুলি করতে পারতো কিন্তু এতে রিকশার যাত্রীদের আহত হবার সম্ভাবনা থাকে বিধায় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লো।

ভয় পেয়ে ছিনতাইকারীরা সবাই চলে গেলো। এবার সে বের হয়ে সাবধানে গেল রিকশার কাছে। দেখে একটু চমকে গেলো। সেই মেয়েটা। ভয়ার্ত চোখে চেয়ে রয়েছে তার দিকে। পুলিশের ইউনিফর্ম দেখে একটু স্বাভাবিক হলো। কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো, " ধন্যবাদ আপনাকে। "

নিজের চাকরিটাকে এত স্বার্থক আর কখনো মনে হয়নি এবির। সেইদিনই সে মেয়েটার পরিচয় পেলো, লতা স্ট্যানলি !

এক বছর পর ......

পঞ্চগড় চার্চে সস্ত্রীক প্রার্থনা করতে গেছে এএসপি এবি ডি রোজারিও। আজ ইশ্বরের সামনে দাঁড়িয়ে গত বছরের প্রার্থনার কথা মনে হচ্ছে এবির।

লতার সাথে তার বিয়ে হয়েছে তিন মাস। এর মাঝের ৯ মাস তাদের কেটেছে প্রণয়ে। ওইদিনের ঘটনার পরে পঞ্চগপড় মহিলা কলেজের ছাত্রী লতাকে নিজের ভালো লাগার কথা জানাতে এক মাস সময় নিয়েছিল সে। এক বাক্যে রাজি হয়ে যায় লতা। এরপরের সময়টা লতার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার অপেক্ষায় ছিল দুজনে।

ইশ্বরের কাছে এবির এখন একটাই প্রার্থনা, " তাদের ভালোবাসা যেন টিকে থাকে আমরণ। "

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ