বোধ

রুম্পা রুমানা ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বুধবার, ০৭:০৫:০৮পূর্বাহ্ন গল্প ১৬ মন্তব্য

বৃষ্টির দিন। কাল থেকে আকাশ বিরামহীন ঝরছেই। একবার নিলয় ভাবলো আকাশকে ডেকে জিজ্ঞেস করে বহুমুত্র রোগে পেয়েছে কিনা !
.
পরীক্ষা চলমান। ফাঁকি দেয়ারও উপায় নেই। পরীক্ষা দিতেই হবে। বাসা থেকে বের হয়ে ছাতা মেলে ধরলো নিলয়। রিক্সার অপেক্ষায় মিনিট বিশেক কেটে গেছে। কিন্তু চোখে হারিকেন জ্বালিয়েও কোন রিক্সার হদিস মিললো না। অগত্যা বিরক্তি নিয়ে হেঁটেই দূরত্ব কমানোর জন্য পা বাড়ালো।
-বাবা ,যাইবেন ?
পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে কিছু না ভেবেই সে বললো,
- যাবো ।আফতাব নগর । কত নেবেন ?
- পঞ্চাশ টেকা দিয়েন।
এই রিক্সা সে কিছুতেই হাতছাড়া করবে না। বৃষ্টির দিনে পঞ্চাশ টাকা ভাড়া বেশিও না।ভেজার ভয়ে রিক্সায় উঠেই পলিথিনে নিজেকে প্যাকেট করে ফেললো সে।
কিছুক্ষণ পর
রিক্সার ধীর গতি দেখে একবার ধমকও দিলো চালককে । তাতেও কাজ না হওয়ায় আবার ধমক দিলো।
- সাথে তো প্রেমিকা নাই। এতো ধীরে চালাচ্ছেন কেন ?
- জ্বর, বাবা।শইলডা দূর্বল । পোলাপাইনের মায়ের অসুখ। রিক্সা না চালাইলে অসুধ কিনুম ক্যামনে ? এই জন্যি জ্বর লইয়া বৃষ্টির মইধ্যে বাইর হইছি।
- ছেলেরা দেখে না আপনাদের?
- অহনকার পোলারা অতো কি আর দেহে ? হেগোরও সংসার আছে।
কথা বাড়ায় না নিলয়। হঠাৎ 'ই তার চোখ পড়ে চালকের হাতের দিকে। ডান হাত নেই । বয়স আন্দাজ করে । ষাটের উপর হবে।
.
ষাটোর্ধ্ব কারও রিক্সায় চড়ে বসতে নিলয় কখনও আপত্তি
তুলেছে বলে মনে পড়ে না। গন্তব্যে পৌঁছানোই হলো কথা। আর এমন তো না যে ভাড়া মেটায় না। মায়ার দিক থেকে বরাবরই কিছুটা উদাসীন সে। মানে অতো মায়া-মমতা ওর ভেতর বাসা বাঁধে নি। জীনগত কারণেও হতে পারে। বাবা-মায়ের ভেতর এগুলো খুব একটা নেই। মানুষের প্রতি দরদ , উদারতা নিয়ে ভাবেও না সে।
ইউনিভার্সিটির সামনে পৌঁছে রিক্সা থামালো। বৃষ্টি ঝরছে তখনও। গতি কম যদিও। ছাতা মেলে রিক্সা থেকে নেমে ওয়ালেট বের করলো। কিছু ভাবলো এবার। একটা একশো টাকার নোট এগিয়ে দিলো চালকের দিকে।
- রেখে দেন। ফেরত দিতে হবে না।
- না বাবা। যা ভাড়া তাই দেন।
- পঞ্চাশ টাকা এমনিতেই দিলাম। রাখেন ।
- বাবা , মুক্তিযুদ্ধ কইরা এক হাত হারাইছি। তাও ভিক্ষা করি নাই। অহন আপনের কাছ থেইকা ক্যামনে নেই অন্যায্যা ভাড়া ? দেন। পঞ্চাশ টেকাই দেন। যাইগা। জ্বর বাড়তাছে।
নিলয় আর কথা বাড়ানোর সাহস পায় না। কোন মতে ভাড়া মিটিয়ে সে নিজেকে পৃথিবীর অন্ধকারতম স্থানে লুকিয়ে ফেলার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে।
একজন মুক্তিযোদ্ধার দৃঢ় ব্যক্তিত্বের কাছে অসহায় লাগে নিজেকে।
বুকের ভেতর তীব্র হাহাকার উঠে। মায়াহীন নিলয়ের চোখ তখন ঝাপসা হয়ে উঠছে থেকে থেকেই!
সেদিনই সে প্রতিজ্ঞা করে , যাদের জীবন এবং বহু ত্যাগের বিনিময়ে একটা দেশ পেয়েছে সে , সেই দেশ বিরোধী কোন অন্যায় কখনোই করবে না...

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ