আজ বাজারে যাব, যেতে হয়, প্রায়-ই যাই। কিন্তু এখন ইচ্ছে করছে না, ছিট-ছিটে বৃষ্টি হচ্ছে, ট্রাউজার গুটিয়ে/ফুটিয়ে গেলেও ছিট-কাদা থেকে রক্ষা নেই। নিজের স্যান্ডেল-ও বসে থাকে না, চান্স নেয়, চান্স পেলে। সেবারে স্যান্ডেল-বেইজ্জতির পর ছুঁড়ে ফেলে খালি পায়ে ফিরছিলাম। তাতে যে কেলেঙ্কারি ঘটেছিল তাতে মনে হয়েছে এর থেকে স্যান্ডেল-ছিট বহুগুণ ভালো ছিল। ঝকঝকে ব্যাঁকা হাসিতে করুণা করতে ইচ্ছে জেগেছিল, দায়সারাভাবে-ও করিনি; আজ আমি কোথাও যাব-না, যাচ্ছি-না।
দারুণ ভোক্তা নই, অন্তর্গত অন্তরঙ্গতা ছিল, আছে-ও; থাকে তা; উৎপাত-জোরাজুরি ছিল, গা করিনি, করি-না। অস্বস্তি নিয়েও যাই, যেতে ভালোলাগে। চোখের সামনে আলাদীনের চেরাগ-বাতি-স্পর্শে কী থেকে কী হয়ে গেল!! ফুলে ফলে একাকার, দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে ভাল লাগে। আজ বাজারে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব।
এই বাদলা-দিনে দোকানিরা এসেছে!! পসরা সাজাতে পেরেছে!! গিয়ে আবার ফিরতে হবে না-তো!! জল-কাদা মেখে আপাদমস্তক। যাব এবার।
সেবারে এক দোকানি তার ক্রেতাকে বলছিল, চোখ নিচু রেখে পলকা হাসি দিয়ে, আফা নেন নেন, .........ভাল হবে,
মজা পাবেন। ক্রেতা চাপা হাসিতে দ্রব্যাদি পরীক্ষা/পরখ করছে, শেষ দেখার জন্য দাঁড়াইনি। দাঁড়ালে মজা নিতে পারতাম কী-না কে জানে। তবে ময়রার দোকানটি যেমন ছিল, তেমন-ই আছে, মৃদঙ্গটি-ও।
অস্বাভাবিক-স্বাভাবিক কারণতা ছাড়াই নড়ানো/ছড়ানো/জড়ানো জীবন-বাজার-কে খুঁড়ে/খুঁজে তুলে আনতে চাইনি/চাইনা। কেঁচো/সাপ/ফুল নিতান্ত-ই আগ্রহে নেই। একটাই জীবন।
বেচা-বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে বলেছিল/বলে, আপনাকে ঠকাবো-না, পরীক্ষা নেইনি/করিনি, ঠকিয়েছে/ঠকেছি ভাবতে চাই-না, পারি-ও-নি; তবে একদিন হাউমাউ করে বাজারের মধ্যেই কেঁদেছিল, কেন, জানিনা, জিজ্ঞেস করিনি, দাঁড়িয়েছিলাম শেষের কান্না পর্যন্ত।
আত্মবিশ্বাস বিধ্বস্ত হয়নি, বিশ্বাসের মর্মে ধস লাগেনি, বিষণ্ণতা ছুঁয়েছে শুধু। আজ আর যাব না বাজারে।
জীবনযাপনের ক্রম অনুষঙ্গের বাড়তি আনাগোনা ছিল/আছে, অনির্বচনীয় সীমারেখা মানি-নি/থাকে-ও-নি।
নাহ্, বাদল-দিনে একদম-ই বাজারে যেতে ইচ্ছে করছে না।
আচমকা অবগুণ্ঠন ফেলে বাজার এসে সামনে দাঁড়ায়, কী চাই???
২৭টি মন্তব্য
প্রহেলিকা
বৃষ্টি ঝরছেই!
ছাইরাছ হেলাল
ঝরবে আরও;
প্রহেলিকা
ঘোরের লেখা, প্রথম দিকে একটু স্বাভাবিক মনে হলেও ধীরে ধীরে জট লাগতে শুরু করেছে। একবার বাজারে যেতে ইচ্ছে করছে আবার পরে একদমই ইচ্ছে করছে না। ঘাপলা আছে বুঝাই যাচ্ছে। লেখকের মনে কী আছে আল্লাহ জানে।
“অস্বাভাবিক-স্বাভাবিক কারণতা ছাড়াই নড়ানো/ছড়ানো/জড়ানো জীবন-বাজার-কে খুঁড়ে/খুঁজে তুলে আনতে চাইনি/চাইনা। কেঁচো/সাপ/ফুল নিতান্ত-ই আগ্রহে নেই। একটাই জীবন।” কথাগুলো সহজ শব্দে হলেও ভাবায় খুব। তেমনি আরও দুটো লাইন আছে,
“জীবনযাপনের ক্রম অনুষঙ্গের বাড়তি আনাগোনা ছিল/আছে, অনির্বচনীয় সীমারেখা মানি-নি/থাকেও-নি।”
খুব সুন্দর করেই বলেছেন। যাইহোক, যে মানুষগুলো বিশ্বাস করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে যায় তারা আসলেই ভাবে না কে কখন কবে ঠকিয়েছে। প্রতিনিয়ত যদি ঠকিয়েও থাকে তবুও তারা তাদের আত্মবিশ্বাসের উপরই স্থির থাকে। ঠিকই বলেছেন হয়তো কিছুটা বিষন্নতায়ই ঘিরে ধরে।
এই বাজার যে কোন বাজার এতক্ষণে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছি। লেখক পারেও বটে!
ছাইরাছ হেলাল
কাল কথা হবে, বহুত ত্যাল গেছে!!
প্রহেলিকা
২৪*৭ ই আছি, আসেন সময় করে। চা নাস্তা খাওয়ামুনে।
ছাইরাছ হেলাল
আইচ্ছা, মনে থাকলেই হবে!! কবিদের কথা বিশ্বাস করা ঠিক হবে কী না ভাবতেই আছি, ভাবতেই আছি।
ছাইরাছ হেলাল
লেখাটির চরিত্র স্পিনিং হুইলের মত। সে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ঘুরছে এবং ঘুরছে।
ছুটে যেতে চায় কিন্তু যাচ্ছে না, মনে হবে এই যেন গল্পে প্রবেশ করছে, কিন্তু করছে না।
এখানে লেখায় তিনটি লেয়ার, বাজার, বহিরাবরণ মাত্র, তাকে কেন্দ্রে রেখে জীবনকে দেখা, দ্বিতীয়,
শেষ মুমিনের চূড়ান্ত আধ্যাত্মিকতা।
বাজারের তরকারি বিক্রেতার সংলাপ সত্যি, এটি ব্যবহার হয়েছে বাজারের আচরণের মত,
আর জীবনে নির্মল আনন্দের সন্তরণ। অন্যটি বাজারে নির্ভর করার মত দোকানি থাকে,আমরা তার উপর নির্ভর করেই কেনাকাটা করি। জীবনে হিসেব হীন কিছু জায়গা আমাদের থাকে, আত্ম সমর্পণ কারী চাওয়া পাওয়ার হিসেব করে না।
ময়রা মিষ্টি তৈরি করে নির্ভেজাল, জীবনের মাটি সংলগ্নতা, মৃদঙ্গ বাজিয়ে সে একাকী নিজেকে গান শোনায়। বিধাতার কাছে একাকীর প্রার্থনা।
এই তো, শেষে প্রাপ্তি, যা সে আশা করে-না, করে-নি।
বিধাতার কাছে মুমিনের আত্মসমর্পণ গৃহীত হয়।
তৌহিদ
বাদলা দিনে বাজারে যাওয়ার কি দরকার? পেটে ক্ষুধা আর ঘরে বাজার না থাকলে বাজারে যেতে বাধ্য।
তবুও কি এক অজানা কারনে বাজারে যেতে ইচ্ছে হয়না ভিজে ভিজে। স্যান্ডেল ছেঁড়ার গল্প যেন আমার গল্প।
বাজার নিজে সামনে এসে এভাবে বললে কি ভালো হত? তবে বৃষ্টিতে ভিজে বাজার করার একটা মজাও আছে কিন্তু।
ছাইরাছ হেলাল
বাজারে আমাদের যেতেই হয়, ঝড়-বাদল উপেক্ষা করেই।
ফেরিওয়ালা প্রায় সব নিত্তের পসরা নিয়ে আসে তো।
ধন্যবাদ, আর একটু যদি এগিয়ে বলি, অন্যদের মন্তব্য ও তার উত্তর অনেক সময় আনন্দের হয়,আনন্দ দেয়-ও
অবশ্য সময় পেলে।
এটি কোন সহজ লেখা নয়।
তৌহিদ
সহজ লেখা নয় বলেই তিনবার চারবার করে পড়তে হয় আপনার লেখা ভাই। চেষ্টা করি বোঝার। যেদিন বুঝতে পারবোনা সেদিন মন্তব্য থেকে বিরত থাকবো নিশ্চিত।
ছাইরাছ হেলাল
এগুলো এমন কিছুই না। পড়েন, এটিই অনেক।
নিতাই বাবু
ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও যেতে হয় দাদা। আর ঠক তো আমাদের কপালের লিখন! জিতা হলো ভাগ্যফল। তবুও যেতেই হচ্ছে।
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা।
ছাইরাছ হেলাল
অবশ্যই আমরা বাজারে যাব, যেতে যে হয়ই।
অনেকদিন পর আপনাকে দেখে ভালো লাগল।
নীলাঞ্জনা নীলা
জীবন-মৃত্যুর কথা বলছেন নাকি? “যেতে নাহি দিবো, তবু যেতে দিতে হয়”—এমন? চাওয়া-পাওয়ার হিসেব এবং না-পাওয়ার কথা কি বলতে চেয়েছেন লেখক? জীবনে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কথা কিছুটা বুঝেছি বলে মনে হয়।
জীবনদর্শনের দর্শক আমরা। আর কিছুই নই। যা পড়ি, তার অল্প বুঝি নিজের মতো করে। আর যা দেখি, তা-ও অদেখার মধ্যেই থেকে যায়। জানার কথা তো বাদ ই দিলাম। কতোটুকুই বা জানি!
ছাইরাছ হেলাল
আগে বলুন বাজার-আজার করেন!!
ময়রার দুকানে যান!! যদি যান তাহলে কথা ভিন্ন। ময়রাদের দোকানে মৃদঙ্গ ঝুলতে দেখেছেন!!
তার বাদ্য শুনেছেন!! শুনলে কথা ভিন্ন।
আর দেখা লাগবে না, অনেক দেখেছেন, এবার ক্ষ্যামা দেন!!
নীলাঞ্জনা নীলা
ময়রা পাবো কই এখানে? বাজার তো করতেই হয়। কেউ তো নাই যে করে দেবে।
আচ্ছা যান ক্ষ্যামা দিলাম।
এত্তো বড়ো অপমান করলেন আমারে? দেইখ্যা লমু।
ছাইরাছ হেলাল
আপনে হুমকি দেলে যামু কৈ
মাহমুদ আল মেহেদী
জীবন- বাজার। সবাইকেই করতে হয়। কবি যাই লিখুক নিজ মনের মাধুরীকে খুঁজে পেলেই হল।
ছাইরাছ হেলাল
ছন্দ তাল লয় নিজেকেই খুঁজে নিতে হয়।
মাহমুদ আল মেহেদী
খোঁজার চেষ্টায়।
ছাইরাছ হেলাল
খুঁজুন ভাল করে।
শুন্য শুন্যালয়
ফুলে কী ক্ষতি করলো. যে আগ্রহ নেই? জীবন বাঁচাতে ফুল থেকে দূরে থাকা লাগবে?
বাজার অবগুন্ঠন ফেলে সামনে দাঁড়ালো বলেই না লিখলেন এমন লেখা!
কী লিখেছেন আমি কিছু বুঝিনি। স্যান্ডেল বাদ দিয়ে রেইনবুট কিনেন নেক্সট টাইম বাজারে যাবার সময়, ছিটেও লাগবেনা, ছিড়বেও না, রাবারের হলে ভালো হয়। আর বৃষ্টিতে অতি অবশ্যই বাজারে যাবেন, বৃষ্টির মৃদু পানি মাথায় লাগালে মাথা আউলানো সেরে যায়।
ছাইরাছ হেলাল
ফুল খুব প্রিয় অনুষঙ্গ জীবনের, কিন্তু কেউ তো দেয়নি/দেয় না!!
আউলা মাথা ঠিক করার জন্য তাবিজটি এবার পাল্টিয়ে দিলে পারতেন!!
চুপটি মেরে না বুঝে থাকার ভান/ভনিতাটুকু দেখতে মন্দ লাগে না।
বাজারে তো আমাদের যেতেই হবে, রোজ রোজ তো দরজা ধাক্কা দেবে না!!
সামলে/সামনে না এলে কী করে লিখি আপনিই বলুন!
জিসান শা ইকরাম
বাজারই যদি সামনে এসে যায়, তবে বাজারে যেতে হবে কেন?
ছাইরাছ হেলাল
সেটাই ঘটনা!! রোজ আসবে কী না তা তো জানা হায়নি।
সাবিনা ইয়াসমিন
এই না হলে আলাদীনের চেরাগ !! হাহাহাহা, মহারাজ, আপনার চেরাগ মনে হয় ডিজিটাল। ঘষা মাজা ছাড়া, আচমকা দৈত্য এসে ভয় না দেখিয়ে বাজার চোখের সামনে এনে রাখে!! স্যান্ডেলের বান্ডিল নিয়ে ঘুরতে হয়নি, বাজার–ফেরত ছাতা শুকানোর ঝামেলা নেই অথচ বাজারের ক্রেতা–বিক্রেতার চোখা–চোখি মুড়িভর্তার সাথে মজা করেই খেয়ে ফেলেছন!! কপাল, একেই বলেই চেরাগি কপাল 😁😁😁😁
ছাইরাছ হেলাল
আমার চাইতে বাজার-আজার আপনি ই দেখি ভাল ভাবে করতে পারেন মনে হচ্ছে।
যাক চেরাগি কপাল দেখতে পাচ্ছেন সেটাই অনেক, আমাদের কপাল ঠসা!!
স্যান্ডেলের বান্ডিল লাগপে না, রাবারেরে বুটের খবর দিয়েছেন, সেটি এস্তেমাল করতে পারলে ভাল।।
লেখা তো পাচ্ছে না পাঠক।