বুঝি গো রাত পোহাল- পর্ব-১

রেহানা বীথি ৯ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০৮:৫৫:২৪অপরাহ্ন গল্প ২৬ মন্তব্য

এক.

শালা!!! এই ঠকঠকে ঠাণ্ডায় বিড়িটাও নিভে গেল। বিড়ি না নিভে সে নিজে নিভে গেলেই তো বেশ হতো। প্যান্টের পকেট থেকে দেশলাই বের করে ধরাতেও ইচ্ছে করছে না।  যতদূর চোখ যায় শুধু ঘন আঁধার। কুয়াশায় সে আঁধার আরও বেশি জমাট ধরেছে। মাঠের ভেতরের ঝাঁকড়া গাছগুলোও যেন বিশাল বিশাল দৈত্যের মতো মিশকালো দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্থির হয়ে।  পায়ের নিচের খটখটে শক্ত মাটি আর হাড়হিম করা শীতে একেবারে জমে যাওয়ার জোগাড়। গায়ের খদ্দরের চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে জোরে হাঁটা দিলো কাঁদু। 

কী এক বিচ্ছিরি নাম! 

জন্মেই শুরু করেছিল যে কান্না, টানা পাঁচ বছর নাকি সহজে থামতো না তা। সেকারণেই নাম তার কাঁদু। মা-বাপ নাম রেখেছিল আব্দুল কাদের। কান্নার বাড়াবাড়ির কারণে কাঁদুই জনপ্রিয়তা পেয়ে গেল। জনপ্রিয়তার সাথে সাথে নামটি যে তার যথার্থতা বোঝাতেই থাকবে সারাটিজীবন, কে জানতো? অবশ্য না জানারও কিছু নেই। অকালে পঙ্গু হয়ে বিছানাগত বাপ আর প্রায় দেড়গণ্ডা ভাইবোনের সংসারে কাঁদু নামের যথার্থতা না থাকাটাই যেন ব্যর্থতা। কাঁদু, ফাঁদু, টেপি, পুঁটি এসব নামের ছেলেপুলে আর অভাবে ভরে থাকবে অমন সংসার, তবেই না সার্থকতা! ছেলেপুলেদের পরনে চিমটিতে ময়লা ওঠা জামাকাপড়, নাকে সবসময় সর্দি, সবসময় খাইখাই ভাব, এসবও সার্থকতার অংশ। না থাকলে মানাবে কেন? এমন সংসারে অবশ্য লেখাপড়ার চর্চা চলে। সারাদিন কাদামাটিতে ঘুরে ফিরে সন্ধ্যেবেলায় ঠেলাঠেলি করে বই নিয়ে পড়তে বসে ওরা। কাঁদুর ভাইবোনেরাও বসেছে। একসময় এক একজন হাল ছেড়ে দিয়ে বসে আছে। দুটো গায়েগতরে বেড়ে ওঠা বোন আছে, অবিবাহিতা। এক পয়সা খরচের মুরোদ না থাকলে বিয়ে হবে কেমন করে? হয়ওনি। ওরা এর মাঝেও চেষ্টা করে নিজেদের সুন্দর রাখতে। যদি কোনদিন কারও নজরে পড়ে! তাদের আবার লেখাপড়ার দিকে তেমন মনোযোগ নেই। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে নিজেদের রূপ-লাবণ্য ঠিক রাখতেই ব্যস্ত তারা। মায়ের সাথে যেটুকু কাজ না করলেই চলে না,  তারা শুধু সেটুকুই করে। তার বাইরে করতে গেলে যদি তাদের রূপ-লাবণ্যে টান পড়ে? যদি রোদের তাপে ঝলসে যায় গায়ের চামড়া, বিয়ে হবে? টাকা নেই, রূপ তো থাকা লাগে, নাকি? 

মা-ও বুঝে গেছে,  ওদেরকে তেমন ঘাঁটায় না। ডাল-ভর্তা-ভাত,  মাঝে মধ্যে টুকটাক মাছটাছ, দেড় দু'মাসে একটা মুরগি এই তার রান্না। তারপর পুরোটা সময় সে পাড়া পড়শীদের বায়না নেয়া জামাকাপড় আর কাঁথা সেলাই করে কাটায়।  বাড়তি কিছু টাকা আসে ঘরে। স্বামীর ওষুধের খরচ, মেয়ে দুটোর জন্য কিছু সঞ্চয়ও তো করা লাগে! তারও বয়স হয়েছে যথেষ্ট, আগের মতো আর শক্ত থাকতে পারে না, এটাসেটা লেগেই থাকে।  তারও আজকাল একটু আধটু ওষুধের প্রয়োজন পড়ে বৈকি! 

প্রয়োজন একটা চাকরি।  কিন্তু কাঁদু কি চাকরির মুখ দেখবে না জীবনে?  জীবনে কি একটু সুখের মুখ দেখার অধিকার ওর নেই?    

চলবে......                           

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ