একটা লেখায় বাসি বিয়ে নিয়ে একজন তার মতামত ব্যক্ত করেছে। সে নাকি আবার ভিডিওম্যানের কাজ করতো। বাসি বিয়ের পর বা বিয়ের পরদিন সকালে বর বউকে একসাথে স্নান করায় এইটা নাকি তারকাছে খুব অশ্লীল লেগেছে। কুতকুত করে হেসে হেসে এই কথা বলছে। ৫০ জনের সামনে নাকি স্নান করায় সবাই তাকায় তাকায় বউরে দেখে! এই বেটার কমেন্ট পড়ে অবাক হলাম! সে কাজ করতে যাইতো নাকি স্নান করার সময় বউকে কেমন দেখাবে তাই দেখতে যাইতো! আমি এতো এতো বিয়ে দেখলাম আমার চোখে এমন অশ্লীল কিছু পরলো না কেন! নাকি আমার চোখে ঠুসি পরা থাকে বুঝলাম না!

বাসি বিয়ের পরে স্নান করানো মোটেও অশালীন কিছু না। গ্রামে অহরহ মেয়েরা পুকুরে নলকূপে স্নান করে। আর এই সময় নরমালি বৌদি, পিসি দিদি ঠাকুমা এরাই থাকে। ফান করে। বাসি বিয়ের স্নানে বেটারা থাকে না নরমালি, থাকলেও বাচ্চারা। আর একসাথে স্নান করায় মানে তাদের নেংটা করে স্নান করায় তাতো না! ওই লোকের কথা শুনে তেমনি মনে হলো। নতুন শাড়ি পরিয়ে, নতুন গামছা গায়ে দিয়ে এরপর মাথায় জল দেয় দুজনের মাথা একসাথে ছুইয়ে, একজন আরেকজনের গালে হলুদ লাগিয়ে দেয়। তাও জলে ভিজিয়ে চুপচুপ করে দেয় এমনও না। এক দুই বালতি এরপর তারা নরমালি আলাদা আলাদা স্নান করে ফেলে বাথরুম পুকুর বা নলকূপ যে যেখানে নরমালি করে। মূলত বর বউকে একজন আরেকজনের সাথে ইজি করার জন্যই এইটা করে। বাসি বিয়ের বিভিন্ন স্ত্রী আচারও তাই। বিয়ে শেষ হবার পর বিয়ের রাতে যতোই সময় থাকুক বর বউ একা থাকে না। সব বোন বৌদি মিলে মজা করে। এইটারে বাসর জাগা বলে। এরপর দিন কালরাত, বলে, সেদিন সন্ধার পর থেকে তারা আলাদা। মূলত কাল রাত শব্দটা বলাই হয় তাদের আলাদা রাখতে। পরদিন নরমালি বৌ ভাত আর ফুলশয্যা। বৌভাত অনেকে বিয়ের পরদিনও দেয়। কিন্তু ফুলশয্যা দুদিন পরই হয়। তারমানে প্রায় তিনদিন সময় পায় তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলার। এখন না হয় মোবাইল হইছে পুরানদিনে তখন এই সময়টা কাজের ছিলো একটু হলেও। একেবারে দুইটা অপরিচিত মানুষ। বিয়ের একটু পরেই বর ঝাঁপায় পরবে এর থেকে তো ভাল। অবশ্য ফুলশয্যা জিনিসটা অশ্লীল লাগে আমার কাছে। ফুল টুল দিয়ে বৌদি অমুক তমুকের আশীর্বাদ ধান দুর্বা মাথায় দিয়ে শুইতে যাওয়া। আমি নিজেই কতো ফুলশয্যার রাতে জানালার পাশে গিয়ে “আজ মধুরাত আমার ফুলশয্যা”গান বাজাতাম। ছোটবেলায় কিঞ্চিৎ বান্দর ছিলাম।

যাই হোক বাসি বিয়ের সময় এই স্নান করানো হোক বা কড়ি খেলা বা আরও যা কিছু স্ত্রী আচার আমার কাছে মোটেও অশালীন লাগে না, বরং মজার আর দুইজনকে ইজি করার একটা ওয়ে। যে ভিডু করতে গিয়ে হা করে এইসব দেখে সমস্যা তার। কিছু মানুষ সবকিছুতে মেয়েদের কেমন দেখাচ্ছে তাই খুঁজে বেড়ায়।

পুষ্পিতা আনন্দিতা
নিউইয়র্ক।

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ