news_image_2012-12-14_20126

 

 

বিষয়টা খুবই চিন্তাজনক যা আমাদের নিজ পায়ে কুড়াল মারার শামিল। আজকাল যায় হচ্ছে তা '৭১ এর মতাদর্শ বিরোধী, বঙ্গবন্ধুর চিন্তা চেতনা বিরোধী, এখন যা হচ্ছে তা সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাভাবনারই রুপ ও গণতন্ত্রী বিরোধী আর এতে আজ মানবতাই নিষ্পেষিত, সব কিছুতেই যখন বাণিজ্য এসে যায় তখন সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস হয়, আসুন আলোচনা করি কিভাবে বাণিজ্যিক স্বার কিভাবে সাধারণ মানুষকে দলিত করে মানবতাকে বিপন্ন করছে।

গত কয়েকদিন আগেই আদালত কতৃক দুই ড্রাইভারকে দোষী সাব্যস্ত করার কারণে পুরা দেশ পরিবহণ মালিক শ্রমিকদের টান্ডবে অসহায় হয়ে পড়েছিল, এতে সকল ধরণের পরিবহণ ব্যবসা থপ হয়ে পড়েছিলো, খাদ্যদ্রব্য, সবজি, জরুরী ঔষধ, তেল, পানি সহ সকল ধরণের পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আর অবস্থা এমন এক পর্যায় ছিলো আমাদের বাঘা বাঘা কয়েক মন্ত্রীরা হন্তদন্ত হয়ে কয়েক দফা মিটিং করতে বাধ্য হয়েছিলেন পরিবহণ মালিক আর শ্রমিকগংয়ের সাথে, জানিনা তাদের কি বলে শান্ত করেছিলেন মন্ত্রী মহোদয়গণ, জানিনা কে দিয়েছিলো নাকে খত কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের টান্ডব বন্ধ হয়েছিলো বেশ কয়েক গাড়ী ভাংচুর, আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া আর একজনের মৃত্যু দিয়ে। শুনেছি অনেকের নামে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছেন কিন্তু তাদের মধ্যে পালের গোধা নাকি একটাও নেয়, বুঝুন এরেই কয় রাজনীতি।
এদের সাথে সাথে রিক্সা, সিএনজির মালিক ড্রাইভার যেন গোঁদের উপর বিষ ফোঁড়া।

আরেকটি ঘটনাবলি যা উপরে উল্লেখিত ঘটনার মতোই ভয়াবহ, চট্টগ্রামের এক ডাক্তার দম্পতির ভুল চিকিৎসার কারণে কেইস হয় আর আদালত উনাদের জেলে প্রেরণ করেন আর তাতেই নরক গুলজার, সকল ডাক্তার, নার্স, হাসপাতালের বয় সহ সংশ্লিষ্ট সকলে বিগড়ে যান, শুরু করেন কাজ থেকে বিরত থাকা, এতে মানুষ মরছে, সাধারণ অসুস্থ মানুষ সিরিয়াস রুগীতে পরিণত হচ্ছে কিন্তু উনাদের কোন রা নেই, অবস্থা বেগতিক দেখে উনাদের দ্রুত জামিন দেওয়া হয় যেন সংশ্লিষ্ট সকলে কাজে যোগদান করেন, করেছেনও।
শুধু এইটিই নয়, সারাদেশের হাসপাতাল গুলোতে প্রায় দেখা যায় ডাক্তার, ইন্টার্ন ডাক্তার, নার্স, বয়, মেথর, ডোম সহ সকলেই প্রায় স্ট্রাইক করে বসেন, উনাদের কথা হলো ভুল চিকিৎসা হতেই পারে, মানুষ মরতেই পারে, এতে দোষের কি, বাহ কি আবদার আর আমরা আর আমাদের সরকারের আর কি করার আছে নাকে খত দেওয়া ছাড়া।
ঔষধ কোম্পানি গুলো আরেক কাটি বাড়া, গুটি কয়েক ঔষধ কোম্পানি ছাড়া বাকিরা আছে গোজামিলে, আমার সন্দেহ আছে তাদের ঔষধে ভেজাল ছাড়া আর কিছু আছে কিনা। কয়েক বছর আগের কথা, প্যারাসিটামল জাতিয় ঔষধ খেয়ে বেশ কিছু বাচ্চা মারা যায় আর ততকালিন সরকার ভেজাল ও বিষযুক্ত ঔষধ কোম্পানি গুলোকে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কিন্তু যারা মরেছে তারা বিচার পাইনি সাথে হত্যাকারী ঔষধ কোম্পানির সংশ্লিষ্ট মালিক বা তাদের কারো বিচার হয়েছে কিনা আমার জানা নেই, যদি হতো তাহলে নিশ্চয় গোটা এক দুই ডজনকে লটকিয়েছে বলে জানা যেত, কি তাজ্জব কান্ড না?
সম্প্রতি বেশ অনেক গুলা ঔষধ কোম্পানিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এন্টিভায়োটিক ও ক্যান্সারের ঔষধে ভেজাল পাওয়াই, বুঝুন ঠ্যালা ওরা কিভাবে ওরা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে মানুষ মারছে।

আসুন অন্য পথে হেঁটে দেখি, আমাদের দেশে চাল উৎপাদন যথেষ্ট হলেও চালের দাম নিয়ে ভোজবাজি চলে, ২০/২২ টাকার চাল এখন ৪০/৪৫/৫০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, পিয়াজ, রসুন, আধার দাম তো লিফটে চড়ে কখনো আকাশে কখনো মাটি হতে একশো হাত দূরে থাকে।
গরু ছাগলের মাংস গাবতলিতে বেশি চাঁদা নিচ্ছে এই কারণে দিলো বিক্রি বন্ধ, এক সপ্তাহ পর যাও বিক্রি শুরু করলো তাও বাড়তি দামে, সামনে রমজান আর ঈদের নামে আরো বাড়বে তা অবশ্যই অনুমেয়।
পথে ঘাটে চাঁদাবাজির কারণে শাক সবজির নাক সব সময় উঁচু থাকে, সবজির দাম জিজ্ঞেস করলেই শুনবেন নাকি সুরে বলবে বাড়তি দামের কথা।
রান্নার তেলের দাম তো লাফিয়েই বেড়ায়, আটা ময়দা দুধের দাম তথৈবচ।
ঈদ পরবে তো সব কিছুর দাম বাড়ার যেন দৌড় লেগে যায় আর এতে সাধারণ মানুষের কেনার সামর্থ্য হয়না কিন্তু বিভিন্ন মুসলিম দেশ চলে আমাদের উল্টো, ঈদ পরবে ওরা যত পারে সব কিছুর দাম কমিয়ে দেয় কারণ মানুষ রোজা রাখবে, নামাজ পড়বে, ঈদ করবে আর বিক্রেতা সোয়াব পাবে কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের তো সোয়াবের দরকার নেই, দরকার হলো কাড়ি কাড়ি টাকার।

আসি ঘর ভাড়ার কথায়, এরা তো সব বদের হাড্ডি, এরা কথায় ঘর ভাড়া বাড়িয়ে দেয়, অনেকে তো বছরে তিন চারবারও ঘর ভাড়া বাড়ায় আর এদের সরকার দমানোর চিন্তা ভাবনাও করেনা।

সরকার তো এখন আর জনগণের নেই বলে মনে হচ্ছে, উনারা এমন এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যার কারণে জনগণ ভয়েই তথেষ্ট, সরকার গত কয়েক বছর ধরে সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে এবং বারবার বাড়াচ্ছে, যেমন ধরুণ জ্বালানি তেলে যথেষ্ট লাভবান হওয়ার পরও তেলের দাম কমাচ্ছেন না, কারণ কি আল্লাহ্‌ আর উনারা ছাড়া কেউ জানেনা।
বিদ্যুত আর গ্যাসের দাম আকাশে উঠেছে এবং আরো উঠবে বলে শুনা যাচ্ছে।
এইসব দাম বাড়িয়ে সরকার তার বেতন ভুক কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়েছেন কিন্তু সাধারণ বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন সেই হারে বাড়ছেনা আর এতে সাধারণ মানুষ আজ বিপদগ্রস্ত, যা পায় তা দিয়ে ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সহ বিভিন্ন খাতে দিয়ে অনেকের খাওয়া দাওয়াই আজ হচ্ছেনা, ঐদিকে সরকারি চাকুরিজীবিরা বেশি বেতন পেলেও ঘুষ বাণিজ্যে আরো বেশি এগিয়ে গেছেন, এ কথায় জনগণের মরণ ছাড়া আর কিছু নেই।

এই ডিজিটাল সরকারের সময়ে দেশে কোথায় বাণিজ্য নেই বলুন, আপনার কাজ আমি করে দেবো কত কমিশন দেবেন বলুন?
অমুক ডিপার্টমেন্টে টেন্ডার হবে, তমুক ডিপার্টমেন্টে টেন্ডার হবে, সেইখানে সরকারের ছাত্র নামধারী মাস্তানদের টেন্ডারবাজি হবেই, তাদের ঠেকায় কে?
পরিবহণ জগতের চাঁদাবাজি সর্বজনবিদিত।
রাস্তা ঘাটে সবজি, চাল, ডাল, গরু, ছাগল সহ যায় আনেন না কেন মাস্তান আর পুলিশের চাঁদাবাজি, তাও সর্বজনবিদিত।

আমার কথাঃ
আমাদের দেশ আজ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে চিন্তা করতে পারেন?
সব সরকার বলে, বলছে দেশ এগুচ্ছে কিন্তু আমি বলি কোথায় এগুচ্ছে আমাদের দেখান,দেশের ধনি শ্রেণি ধনি হচ্ছে আর গরীব আরো দরিদ্র হচ্ছে, মধ্যবিত্তদেরও আপনারা গরীব করে দিচ্ছেন দিন দিন সব কিছুর দাম বাড়িয়ে।
দেশের জিডিপি ৭% কোনদিক দিয়ে হলো বলুন, যেখানে সরকারী বেসরকারি ব্যাংকগুলো যদি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে, জিডিপি বেড়েছে কোথায় যদি সোনালী, রুপালি, পুবালি, বেসিক ব্যাংক সহ বিভিন্ন ব্যাংককে চালিয়ে রাখার জন্য আমাদের টাকায় দেওয়া হয় আবার চোর চ্যাঁচোরদের খাওয়ানোর জন্য।
দেশ কিভাবে এগুচ্ছে যেখানে নতুন নতুন শিল্পায়ন না হয়?
দেশ কিভাবে এগুচ্ছে যদি নতুন নতুন চাকরী ক্ষেত্র না হয়?
আমার মতে দেশ আজ দুর্বৃত্তদের দখলে, পরিবহন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তায়ন হয়ে রয়েছে আর সরকার বারবার সেইসব দুর্বৃত্তদের কাছে মাথা নত করছেন কিন্তু কেন তাদের কাছে মাথা নত করা, সরকার চাইলে এইসব দুর্বৃত্তদের কঠোর ভাবে দমন করতে পারেন, বন্ধ করতে পারেন অযথা পণ্যের দাম বৃদ্ধি করা, বন্ধ রাখতে পারেন গ্যাস, বিদ্যুত, পানি সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের দাম বৃদ্ধি করা আর তাহলেই বাঁচবে জনগণ বাঁচবে দেশ, বন্ধ হবে বাণিজ্যিক স্বার্থে মানবতাকে বৃদ্ধ আঙ্গুলি দেখানো তাহলেই দেশ ও তার জনগণ বাঁচবে, দেশ এগুবে।

0 Shares

৩৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ