আমি কোন লেখক না। যোগ্য পাঠকও না। পড়ি মনের টানে এবং কম বেশি জানার আগ্রহ থেকে। সবার ভাল লাগতেও পারে নাও পারে। এই বইটি বা স্বারক গ্রন্থটি অনলাইন থেকেই সংগ্রহ। এখান থেকে আমার ভাল লাগা কলাম কিছু কলাম আপনাদের সহিত শেয়ার করব।

প্রথমেই এর মুখবন্ধ শেয়ার করব আপনাদের সাথে। হয়ত অনেকের পড়া তারপরও লিখলাম।

                                                                            মুখবন্ধ

পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের আবির্ভাব কোনও বিস্ময়কর ঘটনা নয়, বরং এটি একটি স্বাভাবিক সত্যের প্রতিষ্ঠা। যে ভৌগলিক, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক অবাস্তবতার মধ্যে পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিম পাকিস্তান একত্রিত ছিল , বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ফলে সেই অবাস্তবতা চিরকালের জন্য তিরোহিত হলো। এই অঞ্চলের সামাজিক পরিমণ্ডল, ঐতিহাসিক স্মৃতি, তত্ত্বগত অতীত, ভাষা এবং আকাঙ্ক্ষা পাকিস্তান থেকে ভিন্ন ছিল।  কিন্তু  তৎসত্ত্বেও  ধর্মের নামে একটি অস্বাভাবিক বন্ধন নির্মাণ করা হয়েছিল, যে বন্ধন পঁচিশ বছর পর্যন্ত আমাদের পীড়া দিয়েছে, নির্যাতিত করেছে এবং লাঞ্চিত করেছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির ফলে এই অঞ্চলের জন্য একটি ভৌগলিক স্বাভাবিকতা নির্মিত হয়েছে, ঐতিহাসিক ক্রমধারা অব্যাহত রয়েছে এবং সামাজিক দিগ্বলয় থেকে অপরিছন্নতা দূর হয়েছে।

পৃথিবীর ইতিহাসে দেখেছি যে, ধর্মকে রাজনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ডে অতীতে বহুবার ব্যাবহার করা হয়েছে। করা হয়েছে শুধুমাত্র বিশেষ গোত্রের শাসন ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য। পাকিস্তানি আমলে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী ধর্মকে তাঁদের শোষণের অস্ত্র রুপে ব্যাবহার করেছিলেন। মানুষে মানুষে মানুষ হিসেবে যে ঐক্য বন্ধন, যে ঐক্য বন্ধন ক্ষুধা তৃষ্ণা আকাঙ্ক্ষার সমতার মধ্যদিয়ে গড়ে উঠে সে ঐক্য বন্ধনকে পাকিস্তানি শাসকরা ভয় করতেন। তাই তাঁরা গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন নেতিবাচক ব্যাবধানে উপর,  যার ফলে একটি বিরোধকে চিরস্থায়ী মুল্য দেবার চেষ্টা করা হয়েছিল এবং সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে দুই বিরোধী আদর্শের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য শাসনযন্ত্র নির্মাণ করা হয়েছিল। বাঙ্গালির পক্ষে আবেগ ভুলে গিয়ে, অনুভূতিকে হারিয়ে এবং আপন অস্তিত্বের শেষ লিপি মুছে দিয়ে শুধু একটি অবধারিত ধর্মীয় নিয়মে পাকিস্তান সচল থাকা সম্ভবপর হয়নি। তাঁরা প্রতিবাদ করেছে, ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, কখনও -প্রত্যাশায় অপেক্ষা করেছে, কিন্তু আপন দাবী পরিত্যাগ করেনি।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা বাঙ্গালির চিন্তায় ও কর্ম জগতে একত্রিত হলাম এবং বাংলাদেশের প্রকৃতি, ঘটনা, ইতিহাস এবং মানুষের সংগে সম্পর্কিত হয়ে বাস করবার অধিকার দাবী করলাম। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদের নিষ্ঠুর শাসন-নিষ্ঠায়, বিকৃত স্বার্থপরতায় আমাদের দিকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়েছিল, যার ফলে জীবনের যথা তথ্যকে অস্বীকার করে তাঁরা এক অস্বাভাবিক জীবন নির্মাণ করতে চেয়েছিল, যেখানে জীবনের অঙ্গীকার ছিলনা।

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত্তিও গঠিত হয়েছে। আমরা গনতন্ত্র, ধর্মণিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে আমাদের স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্রকে গড়ে তুলবার সুযোগ পেয়েছি। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের দেশ শত্রু-কবল মুক্ত হোল, আমরা একটি বিশেষ মুহূর্তকে আবিস্কার করেছি, যে মুহূর্তে আমরা পুরনো বন্দিদশা থেকে নতুন সূর্যোদয়ে উপস্থিত হয়েছি, যখন একটি যুগ শেষ হচ্ছে এবং বহুদিন পর্যন্ত রুদ্ধবাক একটি জাতির আত্মা আপন কণ্ঠস্বর খুজে পেয়েছে। আজকের দিনে আমরা দুর্ভাগ্যের সময়সীমা অতিক্রম করে নিজেকে আবিস্কার করব। আজকের উৎসব নতুন পদক্ষেপের উৎসব, নতুন সুযোগের উম্মোচনের উৎসব এবং অপেক্ষামান ভবিষ্যতের জয়ের উৎসব।

কিছু বানান অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল হয়েছে।

সভাপতি

সৈয়দ আলী আহসান।

 

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ