এই সময় বড়লাট লর্ড মাউন্টব্যাটেন তলে তলে কংগ্রেসকে সাহায্য করছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল তিনি ভারত ও পাকিস্তানের গভর্নর জেলারেল একসাথেই থাকবেন। জিন্নাহ রাজি হলেন না, নিজেই পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হয়ে বসলেন। মাউন্টব্যাটেন সম্বন্ধে বোধহয় তাঁর ধারণা ভাল ছিল না। মাউন্টব্যাটেন ক্ষেপে গিয়ে পাকিস্তানের সর্বনাশ করার চেষ্টা করলেন। যদিও র্যাডক্লিফকে ভার দেওয়া হল সীমানা নির্ধারণ করতে, তথাপি তিনি নিজেই গোপনে কংগ্রেসের সাথে পরামর্শ করে একটা ম্যাপ রেখা তৈরি করছিলেন বলে অনেকের ধারণা। জিন্নাহ গভর্নর জেনারেল হোক, এটা আমরা যুবকরা মোটেও চাই নাই। তিনি প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হবেন, পরে প্রেসিডেন্ট হবেন, এটাই আমরা আশা করেছিলাম। লর্ড মাউন্টব্যাটেন পাকিস্তানের বড়লাট থাকলে এতখানি অন্যায় করতে পারতেন কি না সন্দেহ ছিল! এটা আমার ব্যক্তিগত মত। জিন্নাহ অনেক বুদ্ধিমান ছিলেন আমাদের চেয়ে, কি উদ্দেশ্যে নিজেই গভর্নর হয়েছিলেন তা তিনিই জানতেন।
পাকিস্তান হওয়ার সাথে সাথেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। বিশেষ করে জনাব সোহরাওয়ার্দীর বিরুদ্ধে দিল্লিতে এক ষড়যন্ত্র শুরু হয়। কারণ, বাংলাদেশ ভাগ হলেও যতটুকু আমরা পাই, তাতেই সিন্ধু, পাঞ্জাব, সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানের মিলিতভাবে লোকসংখ্যার চেয়ে পূর্ব পাকিস্তানের লোকসংখ্যা বেশি। ব্যক্তিত্ব, অসাধারণ রাজনৈতিক জ্ঞান, বিচক্ষণতা ও কর্মক্ষমতা অনেককেই বিচলিত করে তুলেছিল। কারণ, ভবিষ্যতে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চাইবেন এবং বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কারও থাকবে না। জিন্নাহ সোহরাওয়ার্দীকে ভালবাসতেন। তাই তাঁকে প্রথমেই আঘাত করতে হবে। এদিকে সাম্প্রদায়িক গোলমাল লেগেই আছে কলকাতায়। অন্যদিকে পার্টিশন কাউন্সিলের সভা। কংগ্রেস কলকাতায় ছায়া মন্ত্রীসভা গঠন করেছে। আর অন্যদিকে গোপনে শহীদ সাহেবকে নেতৃত্ব থেকে নামিয়ে নাজিমুদ্দিনকে বসাবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে কলকাতা ও দিল্লিতে। পাঞ্জাব ভাগ হল, সেখানে নির্বাচনের প্রশ্ন আসল না। নবাব মামদোত পূর্ব পাঞ্জাবের লোক হয়েও পশ্চিম পাঞ্জাবের প্রধানমন্ত্রী হলেন। লিয়াকত আলী খান ভারতবর্ষের লোক হয়েও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলেন। আর সোহরাওয়ার্দী পশ্চিমবঙ্গের লোক হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে হলে আবার তাঁকে নির্বাচন করতে হবে বলা হল। যেখানে সমগ্র বাংলাদেশের মুসলিম লীগ এমএলএরা সর্বসম্মতিক্রমে শহীদ সাহেবকে নেতা বানিয়েছিলেন এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী আছেন---এই অবস্থার মধ্য থেকে দিল্লি থেকে হুকুম আসল আবার নেতা নির্বাচন হবে।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং-৭৪ ও ৭৫)
৪টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়াচ্ছে দেখে যাচ্ছি।
রুবা’পু লিখে চলো। আছি পাশে। -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ নীলা’দি। ভালো থেকো।
নীহারিকা
ষড়যন্ত্রকারীরা যুগে যুগে কালে কালে ষড়যন্ত্র করে এসেছে।
শুধু তাদের রূপ আর কৌশল পাল্টেছে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ঠিক। কৌশল পাল্টেছে কেবল!