iDxJmGLYdGEv

সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোট গণনা হয়ে গেল। শহীদ সাহেবের দলের পাঁচজনই জিতলেন। আমি ফুলের মালা জোগাড় করেই রেখেছিলাম, আরও অনেকেই মালা জোগাড় করে রেখেছিল। আমি যখন শহীদ সাহেবের গলায় মালা দিলাম, শহীদ সাহেব আমাকে আদর করে বললেন, তুমি ঠিক বলেছিলে। লাল মিয়া সাহেবকে নিয়ে আমাদের ভয় ছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেককে অনুরোধ করেছিলাম, তাঁকে একটা ভোট দিতে। ফরিদপুর জেলার মাত্র সামান্য কয়েকটা ভোটই শহীদ সাহেবের দল পেয়েছিল। লাল মিয়া সাহেব, আমি ও আরও কয়েকজন ভোট দিয়েছি, আর সকল ভোটই তমিজুদ্দিন সাহেব, মোহন মিয়া ও সালাম সাহেবের নেতৃত্বে নাজিমুদ্দীন সাহেবের দল পেয়েছিল। লাল মিয়া সাহেবের জন্য দুই চারটা ভোট ফরিদপুর থেকে আমি জোগাড় করেছিলাম। লাল মিয়া সাহেব মোহন মিয়া সাহেবের সহোদর ভাই হলেও তিনি লাল মিয়ার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

অন্য কথায় যাওয়ার পূর্বে আর একটা কথা না বললে অন্যায় হবে। লাল মিয়া সাহেব পার্লামেন্টারি বোর্ডের মেম্বার হওয়ার পরে ফরিদপুরের সদস্য নমিনেশনের সময় ভাইয়ের পক্ষ অবলম্বন করেন। আমাদের দলের লোককে নমিনেশন দিতে রাজী হন নাই। ফরিদপুরের ছয়টা সিটের মধ্যে অনেক ঝগড়া করে মাত্র দুইটা সিট আমরা পেয়েছিলাম। একটা রাজবাড়ীর খান বাহাদুর ইউসুফ হোসেন চৌধুরীর সিট, আরেকটা মাদারীপুরের ইস্কান্দার আলী সাহেবের। মোহন মিয়া নির্বাচনে দত্তপাড়ার শামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী ওরফে বাদশা মিয়ার কাছে পরাজিত হন। বাদশা মিয়া ফল ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথেই ঘোষণা করলেন, আমার জয় মুসলিম লীগের জয় ও পাকিস্তানের জয়। লাল মিয়া ও মোহন মিয়া সকল সময়ই ভিন্ন দলে থাকতেন। প্রথমে লাল মিয়া সাহেব কংগ্রেস করতেন, মোহন মিয়া সাহেব মুসলিম লীগ করতেন। আবার মুসলিম লীগে যখন যোগদান করলেন, এক ভাই রইলেন শহীদ সাহেবের দলে, আরেক ভাই খাজা নাজিমুদ্দীনের দলে। আবার পাকিস্তান আমলে আইয়ুবের মার্শাল 'ল আসলে, এক ভাই আইয়ুব খান সাহেবের দলে, আর এক ভাই বিরোধী দলে। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তাদের ক্ষমতা ঠিকই থাকে। এই অপূর্ব খেলা আমরা দেখেছি জীবনভর! রাতেরবেলা দুই ভাই এক, নিজেদের স্বার্থের বেলায় মুহূর্তের মধ্যেই এক হয়ে যান।

এই সময় আমাদের উপর মুসলিম লীগ থেকে হুকুম হল, জেলায় জেলায় চলে গিয়ে ইলেকশন অফিসের ভার নিতে। প্রত্যেক জেলায় ও মহকুমায় ইলেকশন অফিস ও কর্মী শিবির খোলা হবে। জেলায় জেলায় ভাল কর্মীদের কর্মী শিবিরের চার্জ নিতে হবে। আমার কয়েকটা জেলার কথা মনে আছে। কামরুদ্দিন সাহেব ঢাকা জেলা, শামসুল হক সাহেব ময়মনসিংহ, খোন্দকার মোশতাক আহমদ কুমিল্লা, একরামুল হক খুলনা এবং আমাকে ফরিদপুর জেলার ভার দেওয়া হয়েছিল।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং- ৪৫ হতে ৪৬)

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ