iDxJmGLYdGEv

নাজিমুদ্দীন সাহেব পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা ছিলেন, এমএলএ ও এমএলসিরা তাঁরই ভক্ত বেশি ছিল। শহীদ সাহেব ডেপুটি লিডার হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে প্রতিনিধি না করে নাজিমুদ্দীন সাহেব ফজলুর রহমান সাহেবকে পাঠালেন। শহীদ সাহেবকে বললেন, আপনাকে নির্বাচিত করে লাভ কি? আপনি তো কাউন্সিল থেকে ইলেকশন করে বোর্ডের মেম্বার হতে পারবেন। ফজলুর রহমান সাহেব পারবেন না, তাই তাঁকেই সদস্য করলাম। আপার হাউস মুসলিম লীগ গ্রুপ থেকে বোধহয় নূরুল আমিন সাহেবকে নিলেন। এইভাবে নয়জনের মধ্যে চারজন তাঁর দলেরই হয়ে গেল। যেভাবেই হোক আর একজনকে তিনি ইলেকশনের মাধ্যমে পার করে নিতে পারবেন। এতেই গোলমাল শুরু হয়ে গেল। আমরা প্রতিবাদ করলাম এবং বললাম, শহীদ সাহেবকে এমএলএদের পক্ষ থেকে কেন নেওয়া হবে না? তাঁকে অপমান করা হয়েছে। কারণ, তিনি ডেপুটি লিডার মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির। এটা একটা ষড়যন্ত্র! শহীদ সাহেব আমাদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন, "ঠিক আছে, এতে কি হবে!" আমরা বললাম, "আপনি আর উদারতা দেখাবেন না। নাজিমুদ্দীন সাহেবের মনে রাখা উচিত ছিল যে, তিনি আজ মুসলিম লীগ পার্টির নেতা এবং এমএলএ হয়েছেন একমাত্র আপনার জন্য। পটুয়াখালীতে শেরে বাংলা তাঁকে পরাজিত করে রাজনীতি থেকে বিদায় দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের কোন জেলা থেকেই তিনি হক সাহেবের সাথে ইলেকশন করে জিততে পারতেন না, যদি না আপনি তাঁকে আপনার একটা সিট থেকে পদত্যাগ করে পাস করিয়ে নিতেন। তাও আবার কলকাতা না হলে আপনিও পারতেন না।"

শহীদ সাহেব ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে কলকাতা থেকে দুইটা সিটে এমএলএ হন। নাজিমুদ্দীন সাহেব পটুয়াখালী থেকে পরাজিত হয়ে ফিরে আসলেন। তাঁর রাজনীতি থেকে সরে পড়া ছাড়া উপায় ছিল না। শহীদ সাহেব হক সাহেবকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললেন, আমি নাজিমুদ্দীন সাহেবকে কলকাতা থেকে বাই ইলেকশনে পাস করিয়ে নেব। যদি হক সাহেব পারেন, তাঁর প্রতিনিধি দিয়ে মোকাবেলা করতে পারেন। হক সাহেবও লোক দাঁড় করিয়েছিলেন নাজিমুদ্দীন সাহেবের বিরুদ্ধে। নাজিমুদ্দীন সাহেবই শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করলেন, শহীদ সাহেবের দয়ায়। সেই নাজিমুদ্দীন সাহেব শহীদ সাহেবকে অপমানই করলেন। যাহোক, আমাদের পক্ষ থেকে পাঁচজনই আমরা কাউন্সিলে দাঁড় করাব, নাজিমুদ্দীন সাহেবের দলের কাউকেও হতে দেব না। কারণ, আমাদের ভরসা ছিল কাউন্সিলে শহীদ সাহেব সংখ্যাগুরু।

মওলানা আকরম খাঁ সাহেব একটা আপোষ করার চেষ্টা করলেন। মওলানা সাহেবের বাড়িতে শহীদ সাহেব ও মওলানা সাহেবের আলোচনা হল। শহীদ সাহেব নরম হয়ে গেছেন দেখলাম। তিনি বললেন, "এখন পাকিস্তানের জন্য সংগ্রাম, গোলমাল করে কি হবে, একটা আপোস হওয়াই ভাল।" আমরা বললাম, চারজনের মধ্যে দুইজনই তো নাজিমুদ্দীন সাহেবের ছিলেন, তিনি নিজেও মওলানা সাহেব। কেন আর দুইজনের মধ্যে একজন আপনার গ্রুপ থেকে দিলেন না, আপনাকে না দিত। আমরা বললাম, কিছুতেই হবে না।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং- ৪১ ও ৪২)

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পর্ব-৩১)

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ