প্ল্যানচ্যাট vs মুন্নার আত্মা

শাওন এরিক ২৫ আগস্ট ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ১১:৩৩:৫৫পূর্বাহ্ন গল্প, রম্য ১৯ মন্তব্য

hqdefault (2)
প্ল্যান চ্যাট‬ করে আত্মা আনা যায় কিনা জানিনা, কিন্তু আমাদের বেলায় সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা জিনিস এসেছিল। সেটা হল হাসি। 😀

কয়েক বছর আগের কথা। আমি, আমার বোন সেতু, আমার কাজিন প্রিন্স এবং প্রিয়াঙ্কা প্ল্যান চ্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলাম। (এরা সবাই আমার ছোট, তবে প্রিন্স খুব ছোট নয়)

অবশ্য আমার এত শখ ছিলোনা, শুধু ওদের মন রক্ষা করার জন্য রাজি হলাম। আত্মা না ঘোড়ার আণ্ডা আসবে। তবে আমাকে প্ল্যান চ্যাটের মাঝখানে এমন একটিং করতে হবে যে আত্মা আমার উপর এসে ভর করেছে। এমন ভয় দেখাতে হবে যেন পিলে চমকে যায় সবার।

__ আমরা মরার মতো ঘুমের ভান করে জেগে রইলাম যেন কেউ সন্দেহ না করে। সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ল, শুরু হল আত্মা ডাকার কলাকৌশল।

সাদা কাপড়, পাক পবিত্র থাকা , আগরবাতি টাইপ ধোঁওয়া সৃষ্টিকারী বস্তু, আরো কত কি লাগে, আমাদের একেবারে কিচ্ছু নাই। তো কি হইছে, আত্মা-তো আসাই লাগবে। আসার কি আছে, এসেতো আগেই বসে আছে, আমি (লেওড়া আত্মা)

__অভিনয় করার আগে সবার মনে আগেই একটা ভয় পয়দা করা লাগবে। সবাই গোল হয়ে বসলাম, একে অপরের হাত ধরে, চোখ বন্ধ থাকবে এটা কঠিন ভাবে বলে দেয়া আছে।

মোম বাতি পাওয়া যায় নাই। নিরুপায় হয়ে একটা টর্চ জ্বালায়ে খাড়া করে রাখা হল মাঝখানে। কপাল।

তারপর শুরু হল তন্ত্র মন্ত্র। গলা মোটা করে খুব গম্ভীর হয়ে ভয়ঙ্কর ভঙ্গিতে মন্ত্র পড়তে লাগলাম। সবাই খুব চুপ, মজা পাচ্ছিলাম, কাজ হচ্ছে, কাজ হচ্ছে! 😀

কিছুক্ষন চলার পর দেখলাম দুইপাশের দুইজন এক সাথে হাই তুলল। মনে হল, থাবড়াই ধরে দুটাকে। একসাথে হাই তোলা নিয়ে দুই বোন খিলখিল করে হাসলো কিছুক্ষন।

যাই হোক, মন্ত্রতো আর থামানো যাবেনা, ডোজ বাড়ানো দরকার, একটিং আরো পরে। সেতু আর প্রিয়াঙ্কা আমার হাত ধরে কাপাতে লাগলো। _লেহহ! ওভার এক্টিং!!

__ এরপর শুরু হল বিখ্যাত মুন্না মরার কাহিনী। কিভাবে মুন্না মারা গেলো, তার ধড় কিভাবে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো ট্রেনের আঘাতে সেই কাহিনী।... সে কিন্তু প্রিন্সের বন্ধু ছিল। তাই সেই গল্প বলল প্রিন্স নিজে, যাতে সত্যি ভয় পয়দা করা যায়। ( বলে রাখি, ও নিজেও ষড়যন্ত্রের অংশ)

গল্পের অনেকটাই সত্য, ভয় তৈরি হচ্ছিল, কিন্তু ও উত্তেজিত হয়ে এমন কিছু বর্ণনা দিল যে আমরা মাটিতে ধপ করে পড়ে মাটি কামড়ে কামড়ে হাসতে হাসতে আমরাই মরে ভূত হয়ে গেলাম।...

প্রিন্সের ভাষায়,
" মুন্না ট্রেনের লাইনের উপর দিয়ে হাটছিল, কানে হেডফোন লাগানো। লক্ষ্য করেনাই পিছন থেকে ট্রেন আসছে। হালকা করে ট্রেনের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলো, ও ভেবেছিলো পাশের কোনো লাইন ধরে ট্রেন আসছে কিন্তু তা...... "

মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে আমার বোন সেতু প্রশ্ন করে বসল, " ও তো তার একটু পরেই মারা গিয়েছিলো, তাহলে তুমি কেমনে জানলা ও কি ভাবছে, কি ভাবছে না? ও কি তোমাকে মরার পর এসব বলেছে? "

প্রিন্স "এ্যা??" বলে চুপ হয়ে গেলো। কি উত্তর দেবে কিছুই খুঁজে পেলোনা। চারিদিকে হাসির রোল পড়ে গেলো। ওর অপ্রস্তুত অবস্থা দেখে আরো বেশি হাসতে লাগলো ছোট বোন দুটি। যা হোক, কোনভাবে অবস্থা সামাল দেয়া হল। গল্প আবার শুরু হল...

" তারপর পিছন থেকে ট্রেন আসতে আসতে একদম কাছে চলে এলো মুন্নার। মুন্না হঠাৎ করে ঘুরে তাকালো পিছনে।.... আর সাথে সাথে ট্রেনটা ওর মাথায় সজোরে আঘাত করে বসলো। সাথে সাথে মুন্নার মাথা ছিটকে প্রায় উড়ে গিয়ে পনেরো ষোল মিটার দূরে গিয়ে পড়ল। এক সেকেন্ডে ঠিক কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝে উঠার সময় পায়নাই মুন্না। মুন্না মাথায় হাত দিয়ে দেখে- মাথা নাই... হায় হায়, তারপর সঙ্গে সঙ্গে ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো !"

আমি কাহিনী শুনে সাথে সাথে চটকে উঠলাম, " হোয়াট রাবিশ!!! মাথায় হাত দিয়ে দেখে- মাথা নাই?? বা*র কাহিনী? আর মাথা না পেয়ে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে??"

এই পর্যন্ত বলতেই উপস্থিত সবাই আছাড় খেয়ে পড়ে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। আর কি! প্ল্যান চ্যাটে আত্তা ডাকা চুলোয় গেলো, হ্যা, আমরা কিন্তু একেবারে নির্মল আনন্দ পেয়েছিলাম! তবে প্রিন্স আর কোনদিন নিজে থেকে গল্প বলার চেষ্টা পর্যন্ত করে নাই। তার যথেষ্ট অপমান হয়েছে। আর না!! প্রতিবার দেখা হলেই আমরা ঐ গল্প নিয়ে টিটকারি মারতাম! 😀

ও আচ্ছা একটা কাহিনী অবশ্য বলেছিল অনেকদিন পর, ওটাও খুব মজার ছিল, পরের পার্টে বলবো ওটা! একদম বাকোয়াজ গল্প একটা! 😀 😀

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ