শীতকাল বরাবরই আমার পছন্দের সময়। সেটা অবশ্য এমন না, এবার শীতের কেমন আগ্রাসী ভাব। আগের শীত ছিল নরম-নরম, প্রেম-প্রেম, মিষ্টি-মিষ্টি। আমাদের সাবিনা ইয়াসমিন আপুর মত। লেখা আছে, ব্লগ আছে, আমরা সবাই আছি কিন্তু তিনি ছাড়া ব্লগ আগ্রাসী শীতের মত প্রেমহীন!
কমে যাবার ঢং করে- করেও আগ্রাসী শীত যেন কমছেই না। বাসা থেকে বের হতে মন চায় না। কিন্তু ব্যাংকে যাওয়া জরুরি। দুদিন থেকে যাই যাই করেও যাইনি এটা নিয়ে গৃহকর্তা আধাঘন্টা কান ঝালাপালা করলেন। আমি খালি হুঁ আর হ্যাঁ। কারণ এই শীতে তিনিও নদীতে আছেন। তাই হজম করে গেলাম।😢😢
৫ ডিগ্রী বা তারও কম তাপমাত্রা চলল কদিন। ব্যাংকে ঢোকামাত্র একজন ভুল করে আমাকে ‘ভাই‘ ডেকে ফেললেন। কারন অবশ্য ছিল; লম্বা কালো কোট, তার টুপিতে মাথা কপাল অব্দি ঢাকা। মুখে মাস্ক, চোখে চশমা, পড়নে জিন্স, পায়ে জুতা। তাকে ধন্যবাদ দেবার পর তিনি বুঝতে পারলেন আমি আসলে মেয়ে। অতঃপর কাজ শেষ করে যখন ফিরছি রীতিমত ঠান্ডায় পা-কাঁপুনি।
তোশক বানানো দরকার,গৃহকর্তাকে জানিয়ে কোন লাভ নেই। সংসারের সমস্ত কাজ করার পরও শুনতে হয় আমি কিছুই করি না। মাসে মাসে তার টাকা কেনাকাটা, বাজেখরচে হজম করি। নেমে পড়লাম তোশক বানাতে। শিমুল তুলার ডাবল দাম শীতের কারনে। তারপরও টানাটানি করে একটা অবস্থায় এনে বানাতেই দিলাম। চাচামিয়া বিশ্বাসী মানুষ ঠকাবেন না তাই বাকি কাজ সেরে নিয়ে এলাম। বাসায় নিয়ে আসার পর মামীমা নেড়েচেড়ে বললেন,"তুমি বিরাট ঠকা ঠকেছ। তুলার সাথে শিমুলের বিচি দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে। বেশি আরাম ও নরম হবে না"।
পেটে কথা রাখতে না পেরে গৃহকর্তাকে বললাম। তিনি যা শোনালেন তার শানে নুজুল এমন,"এই শীতে নদীতে ঘুরে ঘুরে পয়সা কামানো অনেক কষ্টের। তুমি আর আমার কষ্ট বুঝবা কি? পয়সা খরচ করতেই জানো। কামাই কর একআনা খরচ কর চারআনা।" মেজাজ যারপর নাই খারাপ তারপর সারাদিন বাতাসে কোমর ব্যাথায় টনটন। ফোন কানে নিয়ে মাত্র দুটো গ্লাস ধপাধপ মেঝেতে ফেললাম। শব্দ নিশ্চয়ই সুন্দর হয়েছিল তাই গৃহকর্তা হঠাৎ স্বর নামিয়ে বললেন," আচ্ছা তো নিজের যত্ন নাও, পরে কথা হবে।বাই!"
সকাল সকাল শিমুল তুলার নরম তোশক আর ফোমের বালিশে ঘুমাবো এই উত্তেজনা মনে মনে। অনেক কাজ করেছি খুব ঘুমাতে হবে। মা ইতিমধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছেন এবং গভীর ঘুমে স্বপ্নে তার প্রিয় বোনরা চলে এসেছেন। তিনি আমাকে তাদের খাবার দিতে জো হুকুম করছেন। আমি কম্বলের আরও তলায় ঢুকে খু খু করে হাসছি। আমেনা বুয়াও ঘুমে কালীর পেছনে দৌড়াচ্ছে।🤪🤪
পাশের ইউনিটের গৃহকর্তা আজ শীতের বাহানায় কাজ কাম ফেলে তারাতারি বাসায় চলে এসেছেন। তার চোখ প্রেমের মাদকতায় ঢুলুঢুলু ভাব। আড়চোখে সুন্দরী বউয়ের দিকে চাইছেন। মনে মনে ইচ্ছরা বাজছে " আজ কিছু হতে চলেছে, আজ কিছু হতে চলেছে, সে আমায়,,,,,,।" তার বছর খানেকের ছেলে প্লান করেছেন তিনি আজ কিছুতেই ঘুমাবেন না। এই মধ্যরাতে লোশনের ছিপি খুলে লোশন বের করে ফেলছেন। তাকে সেটাতে বাঁধা দেয়া হয়েছে বলে তিনি কেঁদেই চলেছেন। আমি ভাবলাম নিজের লোশনটা দিয়ে আসি " নে বাপ সব শান্তি করে ফেল, আমি ঘুমাই।" এমন সময় বিধি বাম পুত্রের বাবা ধপাস করে এক কিল বসিয়ে দিলেন। পুত্র থামার বদলে বুঝতেই পারছেন, হোয়া হোয়া চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
আমি কম্বলের আরও গভীরে ঢুকে গেলাম। কানে তুলা গুজে দিলাম। শুরু হলো তৃতীয় রাউন্ড তার মায়ের," তুমি কেন বাবুকে মারলে, সে প্রতিদিন আমাকে এভাবেই জ্বালায়, কই আমি তো মারি না"। বেচারা মহা বিপদে। যা বাবা "যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর"। শেষ রাউন্ড বডই ভয়াবহ। চরম অবস্থায় উভয়েই ঝগড়ায় জিতেই ছাড়বে। আমি তখন ভাবছি, "কেউ আমারে মরুভূমিতে রেখে আস আমি ঘুমাতে চাই"।
তুমুল ঝগড়া চলছে। হঠাৎ বউ তার স্বামীকে "রাজাকার" বলে গালি দিল। সেও রেগে গিয়ে তাকে ‘ডাইনি‘ বলল। এবার কি রক্ষা আছে। পাশের ঘরে গিয়ে শোয়ার নির্দেশ হয়ে গেল। বালিশ বুকে নিয়ে বেচারা করুন চোখে আজকের রাত ভিক্ষে চেয়েও কোন লাভ হলনা। অতঃপর বেচারা শীতের ওম, ঢুলুঢুলু প্রেম, কিছু কাঙ্ক্ষিত ‘চুমু‘ বিসর্জন দিয়ে বালিশ বুকে চলে গেল।🤪🤪
নতুন বিয়ে ঠিক হওয়া মেয়েটি গ্যারেজের বারান্দায় এসে এই শীতে ফিসির ফিসির করছে। এই শীতে সব কথা শেষ করে ফেললে বিয়ের রাতে কি বলবে ! তোতলা মদন আর তার বউয়ের গল্পটাই না হয় করে নেবে। মদন ফুলশয্যায় বউকে বলছে, "মুই যখন তনতনে ( হনহন করে) আইসোং, তুই তখন কনটাই"
বউ, "মুই তখন তক্তাত"( মানে পিঁড়িতে গোসল করাচ্ছে)
মদন, "তাপে (কাঁপে) নাই তোল গাও"।
বউ, "নাই কাঁপে মোর গাও"
মদন, " থাব্বাত (সাব্বাস) মোল মাও"।🤪🤪
আমার মনটা কেমন সিক্ত হয়ে গেল। সাথে ঘুমও উধাও। আমার প্রিয় অলিখিত একজন; যার কাছেই চলে আমার মনের দাবী, প্রাণের দাবী। যে কথা কাউকে বলা যায় না অথচ তাকেই বলি। হয়ত তিনি শুধু শোনেন তেমন কিছুই বলেন না। তারপরও মনে হয় সব উগরে দিয়ে খালি হলাম।একরাশ প্রশান্তি নিয়ে ফিরে আসি। পরের সব কিছুই ভালো লাগে। আবার বাঁচতে ইচ্ছে করে। ফোন দিলাম সব তাকে উগরে দেব বলে কিন্তু তিনি এত রাতেও ওয়েটিং। চোখের কোণে কি পানি আসা উচিত? অপেক্ষা করছি ফোনের, তিনি মাত্র দুঘন্টা পরে কল ব্যাক করে মোলায়েম গলায় বললেন, "সিরিয়াল মেইনটেন করে ফোন ব্যাক দিচ্ছিলাম। আজ কেন যে এত ফোন এসেছিল? সারাদিন খুব ব্যস্ত ফোন ধরা হয়নি"।
জানতে চাইলাম, "আর ক‘জন বাকি আছে"।
" না তুমিও শেষ ছিলে"
আচ্ছা, আমি সবার শেষের সিরিয়ালে? রাগ হল ভীষন। এত হিসেব কি জীবন সইতে পারে। আর কিইবা হত একটু সিরিয়াল ব্রেক করলে!
মনে মনে আশা নিয়ে বললাম, " পরে কথা হবে না হয়"
সাথে সাথেই," আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমিয়ে পর, অনেক রাত হয়েছে, কাল কনফারেন্স এর পর ফোন দেব।"
ঘুমাবো তো বটেই! কিন্তু রাগ সে তো আমারই থাকলো, বুঝলোই না। মন যে চাচ্ছিল একটু কথা বলতে। কষ্টে আর ঠান্ডা নেই। তাপমাত্রা ৪৫ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু করব কি? রইলাম আকাশের আধখানা চাঁদের অপেক্ষায়! যদি সে কিছু প্রেম দেয়!🌹🌹
ছবি- নেট থেকে।
২৫টি মন্তব্য
বোরহানুল ইসলাম লিটন
গল্পটা রম্য হিসাবে আখ্যা দিলেও শেষে কিন্তু রম্য নেই।
হৃদয় গহীনের এক অব্যক্ত বেদনা ফুটে উঠেছে।
অসাধারণ রচনা কৌশলে হৃদয়গ্রাহী নিবেদন।
আন্তরিক শুভেচ্ছা জানবেন সতত।
রোকসানা খন্দকার রুকু
রম্যরচনা ও বেদনার হয়। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল। ভালো থাকবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
🤣🤣😂😂🤣🤣😆😆😁😁😀😃😊☺️😊🤪😜🙂🙂 মোটামুটি সব হাসি দিয়ে অভিনন্দন জানালাম।ভেটকানো হাসি, মুখ চ্যাপকানো হাসি, দাঁত ক্যালাইনা হাসি, প্রেম প্রেম হাসি, দাঁত চাবানো হাসি আর নাম মনে নেই। হাসির কয়েকটি নাম লিখে চিঠি দিয়েন। শেষপর্যন্ত রাগে যে শীতটা গ্রীষ্মকালে নিলেন এটা কষ্ট লাগলো । শীতযে আমার ও প্রিয় সাবিনা আপুর মতো শীত। হাসি, কান্না নিয়েই জীবন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। রম্য শুভ সকাল
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা। সকল প্রকার হাসি একসেপ্টেড। নাম মনে করে অবশ্যই চিঠি লিখব. আপনার অনুপ্রেরণা সবসময় লিখতে সাহায্য করে॥🥰🥰🥰
পপি তালুকদার
বেশ ভালো লাগলো।সত্যিই প্রেম নেই কোথাও। সময়ের স্রোতে ভেসে গেছে সব।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন😍😍
বন্যা লিপি
খুব হাসলাম, নদীতে কাজ করা বিষয়টা বুঝিনি যদিও। কর্তা তো তাহলে আপনার থেকে শীতকাতর হওয়ার কথা সবচে বেশি।আহারে!!! সিরিয়াল মেনটেইন!!! গেলো বলে চলে শীত, আসিতেছে ফাল্গুন। বসন্ত তো এসেই যাচ্ছে বলা যায়…..তাপমাত্রা এবার ঊর্ধ্ব ধাবমান হবে😜
রোকসানা খন্দকার রুকু
কর্তা হলেন BIWTA তে ডিডি। তাই সার্ভের কাজে সারাবছর নদীতে থাকেন আর সময় সুযোগ পেলেই আমারে ঝাড়ি মারেন।
হা হা হা হা। তাপমাত্রা উর্ধ্বে ধাবমান,,,, আপনার মন্তব্যে মজা পেলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।🥰🥰
ফয়জুল মহী
খুব সুন্দর অনবদ্য কাব্য নির্মাণ,
ভীষণ ভালো লাগলো পাঠে।
শুভ কামনা অবিরাম।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকবেন সবসময়।🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
শীত কাল আমার সবচেয়ে প্রিয়, তবে যদি শীত বেশি থাকে তবে কিছুটা সমস্যা হয়।
গ্লাস ভাঙলে রাগ কমে যায়, হুমায়ুন আহমদের একটি নাটকে জেনেছিলাম। অবশ্য এই পোষ্টের গ্লাস ভাঙা একটি বিপদ সংকেত ছিলো।
পাসের ইউনিটে কি হয় তার উপস্থাপনায় মজা পেলাম খুবই। কান খোলা থাকলে শব্দ চলেই আসে, কিছু করার নেই। মনের দুঃখ বালিশ চাপা দিয়ে রাখলো গৃহকর্তা, আহারে।
শীতে মনের কথা শোনাতে গিয়েও সিরিয়াল! লাগবে না তারে আর। হিসেবের শেষ সিরিয়ালে রাখতে হবে তাঁকে।
রম্য অনেক ভালো লেগেছে। মন্তব্যে পড়েও রম্যের হাসি হাসলাম। এই পোষ্ট একটি কাব্য 🙂
ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা। জাষ্ট পোস্ট মর্টেম করে ফেলেছেন লেখার দেখছি। অসাধারণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকবেন ভাইয়া🥰🥰
তৌহিদ
লেখা পড়ে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরলো। যে ব্যাটা ভাই ডেকেছে আপনিও তারে আপু অথবা খালাম্ম বলে ডাকলে তার মুখের অবস্থা কেমন হতো ভাবছি।
শীতের ঠান্ডায় মানুষের মেজাজ ঠান্ডা হয় আর আপনার হচ্ছে গরম! গ্লাস ভেঙ্গে কি লাভ হলো! সেইতো আবার কিনতে গিয়ে পয়সা খরচ!!
আজকাল মনের কথা শোনাতেই সিরিয়াল দিতে হচ্ছে! কি একটা অবস্থা!
রম্য ভালো লিখেন আপনি। এটা চালু রাখুন আপু। শুভকামনা জানবেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমরা অনেক ব্যস্ত।কেউ টাকা কেউ কক্যারিয়ার। ভালোবাসা ও চাওয়া পাওয়ার কিংবা কারও মনের কাছাকাছি হবার সময় নেই॥ সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
আরজু মুক্তা
আপনার চোখ নাক কান সব খোলা। আমি তো বিছানায় গেলে স্বপ্ন কি জিনিস তাও জানিনা। সলিড ঘুম।
রম্য না হৃদয়ের কোঠরের বিলাপ। তাও চালহ থাকুক।
রম্য গুলোতে সাধারণত মেসেজ দিয়ে দেয়া হয়। এটা খেয়াল রাখবেন।
শুভকামনা সবসময়
রোকসানা খন্দকার রুকু
আচ্ছা মনে রাখব। পরামর্শের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা রইল😍😍
সঞ্জয় মালাকার
লেখা পড়ে অনেক আনন্দ পেলা, ভালোবাসা ও ভালোলাগা , আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ সকাল।
ছাইরাছ হেলাল
পাশের ইউনিটের গৃহকর্তার টেম্পারেচার মাপার বিষয়টি সুন্দর ছিল!!
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা টেম্পারেচার।
ধন্যবাদ ভাইয়া॥ ভালো থাকবেন সবসময়।🥰🥰
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
সত্যি
খুব ভালো লাগল পড়ে।
শুভকামনা রইল
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার জন্যও শুভকামনা রইলো।
ভালো থাকবেন।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
চমৎকার লেখা — রইলাম আকাশের আধখানা চাঁদের অপেক্ষায়! যদি সে কিছু প্রেম দেয়!🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকবেন সবসময়।
রেজওয়ানা কবির
রম্যে রমরমাকার অবস্থা। পাশের বাড়ির
বেঁচারা কত ধরনের নামকরা চুমু যে মিস করল🤪🤪🤪।আর তোশক কেনার সময় আমিও ছিলাম আমাকে বাদ দিলে কেন বুঝলাম না😂।মনে হচ্ছে আমার রোগে তুমিও আক্রান্ত হয়েছো।এরকম অলিখিত মানুষ কি আর মনের সব কথা বোঝে???সব অভিমান বোঝার জন্য লিখিত মানুষ দরকার। শুভকামনা।