প্রিয় প্রতিচ্ছবি

রিতু জাহান ২৪ আগস্ট ২০২১, মঙ্গলবার, ১২:৩৭:৪৯পূর্বাহ্ন চিঠি ১০ মন্তব্য

 

প্রিয় প্রতিচ্ছবি,

এখন গোধূলি। আনন্দ পূর্ণিত রক্তিম গোধূলি ঢলে পড়েছে দীর্ঘ রাতের ইচ্ছার পূর্তিতে আবির মাখা দিগন্তের বুক চিরে। দিন দিবসের জীবন খাতার তর্জন গর্জন কাৎস্য কণ্ঠের বিষ নিয়ে মিশে গেলো মুহূর্তে মস্ত রবি। সকল কাৎস্য কণ্ঠের বিষ গিলে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্নিগ্ধ সলজ্জ হেসে ওঠে এক ফালি চাঁদ সূর্যেরই কিরণ মেখে।

চাঁদ হাসে সঙ্গ দেয় সন্ধ্যাতারা শুকতারা অরুন্ধতী। শত কোলাহল তখন আকাশ জুঁইকে আমার চোখের সামনেই প্রতিদিন সন্ধ্যা নামে ধীরে দিগন্তের কোণে এমন করে। অথচ! আমি সরে আসি। জানলা বন্ধ করি, সন্ধ্যা মৃৎ প্রদীপ জ্বালি। কারণ, এই রাত্রি দিনের মিলনে নিজের বিরহ ব্যাথা নাড়া দেয় প্রচন্ড ভাবে। দুমড়ে মুচড়ে আমি যে আকাঙ্ক্ষার দ্বীপালি কবর দিয়েছি অন্ধ কুটিরে। এ আমার ভীষণ একার এক নির্জন বারান্দার নির্জন কারাবাস।

ঔষধি গাছগুলোও সুপ্তিতে আত্মগোপন করে আছে এমন ভাব। ধোয়া ওঠা চায়ের কাপে ওদেরই শেষকৃত্যের সুবাস। হাতের পেষণে আমি যত্নে ঠোঁটে ছুঁয়ে নিয়েছি তাদের। আমাকে আহত বিমোহিত করে যা কিছু তা এই আমার নিজস্ব একার সময়।

এখন সন্ধ্যার আগে আগে এমন গোধূলিতে আমি শোকে ডুবে যাই। এমনকি গোধূলির রক্তিম দেখেও। অথচ নজরেই পড়েনা ও গোধূলির। এমন সব সময়ে আমি তোমায় এক পলক দেখে নিতাম কতো কতো বাহানা মেখে। বুকের ভিতরটা জ্বলে যায় বড্ড ইদানিং। ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুরে বালিয়াড়ি মুখ গোজা কচ্ছপের মতো মুখ গুজে ফেলি ভরা বালতিতে। কচ্ছপের খোলস তো পরেছি কিন্তু বালিয়াড়ি পাব কোথায়! আমি যে সমুদ্র দেখিনি। সমুদ্রের অকারণ গর্জন অকারণ ফুসে ওঠাতে বড্ড ভয় আমার কিন্তু আমি সমুদ্রের মেয়ে।

দূর দিগন্ত বুকে নিয়ে পাহাড়ে অস্ত যায় যে সূর্য সেখানে নবাঙ্কুর হয় নতুন দিনের। তাই আমার পাহাড় পছন্দ। মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে উঠে যাওয়া চূড়ায় ছুঁয়ে আসা যায় এক নীল আকাশ। স্পর্শ করা যায় মেঘ নেমে আসা হিম হিম এক মুঠো সন্ধ্যা। কি এক কেমন যেনো বিষণ্নতা পেয়ে বসে আমাকে। অথচ এমন তো কথা ছিলো না! প্রচন্ড আনন্দে মেতে থাকা চির সবুজ ভাবা আমি  আমার বর্তমানে আজ হলুদের আস্তরণ। টুপ করে খসে পড়ে আমার নিথর ভাবনার সায়রে ৷ ঢেউ তোলে উথাল পাথাল। ফেলেই বা কি লাভ!

তোমাতে কোনো প্রাচীন সভ্যতার মূর্তির মৌনতা হতে আসিনি বলে মৌনতা নামের বিসর্জন দিয়েছিলাম তারই কথায়। অথচ, সময়ের বিরহী যক্ষ এসে আঁকড়ে ধরলো আমায় আষ্টেপৃষ্টে। শ্যাওলা পড়া পিচ্ছিল পথে আমি পিছলে পড়ে গেছি বারে বারে। কী এমন হারিয়েছি আমি! এমন অংক বসিয়ে দিয়েছি অনেক অনেক বার মনের খাতায়। মন আমার এ অংক কষতে কষতে হেরে গেছে।

অথচ! কোলাহল মুখর জলে ডুব দিয়ে সবুজের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘন বর্ষায় নাইতে নাইতে ম্রিয়মাণ দুঃসময়কে খুনও করতে পারি আমি। তবে কেন এতো বিষণ্ণতা তোমার এ গোধূলি জুড়ে? খুব ইচ্ছে হয় জানো? পুরোনো মন্দিরের ভেজালহীন ঘ্রাণ তুলে খুলে দেখি আমাকে আবারো, তুমিই তো বলো, শরীরের গন্ধ সে যেমনই হোক বড় প্রেম ছড়ায় তাতে! সে গন্ধে নাকি তোমার নেশা হয়। পারফিউম মুভিটার কথা মনে আছে? কেমন টেনে নেয় আত্মার ভিতর থেকে গন্ধ! জানো? খুব ইচ্ছে করে এক একটি প্রেমের রাত তোমায় উপহার দেই। সে সব রাতের প্রতিটা প্রহরে হৃদয়ের শরীরের প্রচ্ছদ ফুটে উঠবে সে সব একেকটি নির্ঘুম রাতজুড়ে। তাতে থাকবে তোমার ঠোঁটের আবিরের চিহ্ন। পিঠজুড়ে তোমার আঙ্গুলের আঁকি উঁকি হায়ারোগ্লিফিক্স লিপি। তোমায় দেখে দেখে দিনের মানচিত্র কেমন করে আকার-আকৃতি বদলায় সব দেখাবো একদিন।

আচ্ছা! সন্ধ্যাতারা ডুবে গিয়ে ধ্রুবতারা হয়ে যায় দেখেছো? কেবল দিক বদলায় বলেই বদল হয় তার নাম। প্রকৃতির মায়াময় ভুবনে এতোসব দেখেও তবে কেনো এভাবে আত্মমগ্নতায় ডুবে থাকো? দুঃখ বিলাসী তো তুমি নও! ঐ দেখো, সন্ধ্যার পাখিরা কেঁদে ওঠে নীড়ে ফেরার তাগিদে। ভোরের পাখিরা জেগে যায় ভোরের মায়ালোক ছেড়ে। তুমিও কি এই দুঃখ বিলাসী ই হতে চাও? যদি এই-ই চাওয়া থাকে, দিয়ে যাবো আমার চলে যাওয়া পদচিহ্ন রেখে দিও সেই অজানা ঠিকানা, কোনো একদিন যদি আবারো প্রয়োজনে পড়ে আওয়াজ তুলো না নিঃশব্দে খুঁজে নিও। আবারো ঘাষবুকে এলাব শিশিরের টুপটাপে মধ্যমা, তর্জনীর প্রেমে এঁকে নিব আবারো সেই পৌরাণিক প্রেম।

যে লাইব্রেরী রুমে বসে আমি আমাকে রাতের পর রাত এমন সাজিয়েছি, সে ঘরটায় এখন অনেক নিঃসঙ্গ একটি যায়গা লাগে আমার। একদম বসি না আর জানো? ইদানিং বড় রাগ হয় জানো আর সব রাগ তুলে দেই সাদা কাগজে। ঘচাঘচ করে দাগ কাটতে থাকি। বই এর পাতায় তুলে রাখি শুকনো গোলাপ পাপড়ি।  সব অভিমান আমার না ভেঙ্গেই চলে যায় সময়। বেশ-ই হয় এতে। এখন শত চেষ্টা করেও এক বুক নিঃশ্বাস নিতে পারি না।

শোনো প্রতিচ্ছবি, তোমাকে নিয়ে শত শতাব্দীর কবিতা লিখব কতোবার ভেবেছি। লেখা ঠিক হয় না আসলে। এই এক শব্দ ছিলো আমার। সে শব্দেরা এখন আর বসে না ঠিকঠাক সাদা কাগজের বুকে৷ আমার ভালবাসা নামক শব্দের বিনয়টুকু ছাড়া আর কিছু নেই তোমাকে দেবার৷

নাহ, এখানে ভালো লাগার আর কোনো উপাদান উপকরণ নেই, ভাল্লাগছেনা যেনো কিছু। বলেছিলাম, আমি ক্লান্ত হয়ে গেলে, একদিন এসো আমার কাছে। রাতের কৃত্রিম ঘরবাতিগুলো বন্ধ করে দিয়ে বারান্দায় আঁচল বিছিয়ে দিব, সেখানে জোনাক দলের মেলা বসাব। তুমি এ আলো পোড়ো, পোড়ো আমার কিছু অন্ধকারও। আমাকে দেখো না হয় অপলক। জোনাক আলোয় ভর করে সোনালী দীপ্তি ছড়াব পুরো মুখ জুড়ে।

তখন ভাল না বাসলে মুখ ফিরিয়ে নিও। যেমন ভালো না লাগলে লেখা চিঠি ছুঁড়ে দেয় বা ফেলে রাখে সেই না পড়া চিঠির মতো লোহার কেচিগেটে। কেউ বা শব্দেরা ঠিকঠাক বসলো না বলে ডায়রির পাতা ছিড়ে নেয় তুমি পাশে না থাকলে বা আয়নায় তোমার অবয়ব ঠিকঠাক স্পষ্ট উঁকি না দিলে পৃথিবীর সব সুন্দর ঐ নক্ষত্রের মতো খসে খসে পড়ে, নক্ষত্রের মতো মিলিয়ে যায় লোক চক্ষুর অন্তরালে। শত ভিড়েও আমি বড় একা থাকি। বাদ্য যন্ত্রের বাজনাতেও বিষাদ এর সুর ছড়ায়। সপ্তর্ষির সাত ঋষিও ঘুমিয়ে যায়। আমিও চোখ বন্ধ করি ঘুমের তোড়জোড়ে।

,,,ইতি,,,

শ্রাবণের ময়ুরক্ষী।

,,রিতু জাহান,,

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ