প্রথম ভেলেন্টাইন

শিরিন হক ২৬ অক্টোবর ২০১৯, শনিবার, ১০:২৭:২২অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩৪ মন্তব্য

প্রথম যখন প্রেম এসেছিল তখন ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ি। প্রতিদিনের মত অফ পিরিয়ডে কমনরুমে বসে টেবিল টেনিস খেলছিলাম। হঠাৎ কলেজের পিয়ন এসে বললো ম্যাডাম আপনাকে রুমে ডাকছেন।
দরজার সামনে গিয়ে সালাম দিলাম রুমে বসে থাকা চুল অর্ধ পাকা সাদা ছাপার শাড়িতে চেয়ারে বসে থাকা ম্যাডাম কে। কখনো কথা হয়নি তাঁর সাথে আমার, আজ প্রথম দেখা। ডেকে পাঠাতেই বুকের ভেতর ভয় লাগছে। শুনেছি উনি কলেজের সবচেয়ে প্রবীণ টিচার। শিক্ষকতা দিয়ে রিটায়ার্ড করলেও ক্রীড়া ডিপার্টমেন্ট এ ওনাকে রেখে দিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সালাম দিতেই বললেন ভেতরে এসো। পিয়নকে চা বিস্কুট দিতে বলে বাহিরে পাঠিয়ে দিলেন।

নিজেই রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললেন বসো। ভয়, উৎকণ্ঠায় ভাবছি কি অপরাধে ডাকলেন, কি বলবেন ? তবুও হাসি মুখে জানতে চাইলাম 'ম্যাডাম আমাকে কেনো ডাকলেন?' বললেন 'বসো বলছি, চা খাও।' একে একে আমার পরিচয়,বাবার নাম, ভাইবোন সবার কথা জানতে চাইলেন। তার পর... বুড়ি আপা (মুরসিদা আপা) সবাই বুড়ি আপা বলে ডাকত, তিনি বললেন... তোমাকে রোজ দেখি, তোমার হাটাচলা তোমার কথা বলা, অনুষ্ঠানে তোমার আবৃত্তি, উপস্থাপনা শুনেছি আমি । তোমাকে আজ কিছু বলবো। খুব ধিরে থেমে থেমে কথা গুলো বলছিলেন ম্যাডাম। তুমি জানো? আমার এক বান্ধবী ছিলো তার নামও শিরিন? স্কুল জীবন থেকে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে একসাথে পড়েছি। ও হঠাৎ করে ক্যানসারে মারা যায়। বাঁচাতে পাড়িনি। তোমাকে দেখে আমার বান্ধবী শিরিনকে মনে পড়ে যায়। তুমি ঠিক ওর মতো বলেই কেঁদে দিলেন।

আমি হতবাক বিস্মিত! চোখে পানি আটকে রাখতে পাড়িনি তখন। কিছু বলার ভাষা ছিলনা আমার। কিছুক্ষণ পর ড্রয়ার থেকে একটা প্যাকেট হাতে দিয়ে বললেন- এটা তোমার ভেলেন্টাইন উপহার। আজ ভেলেন্টাইন ডে। সেদিন প্রথম জেনেছি ভেলেন্টাইন ডে বলে কিছু আছে। প্রথম উপলব্ধি করেছি ভালোবাসার সুখ। প্যাকেটের ভেতরে একটা ডায়রি, একটা কার্ড, একটা কলম ছিলো। বলেছিলেন- তুমি আমার সেই বান্ধবী আবার আমার কাছে ফিরে এসেছো পুনঃজন্ম নিয়ে।

বুড়ি আপা আর পৃথিবীতে নেই। আমার কাছে তাঁর ভলোবাসা সেই উপহার গচ্ছিত থাকবে আজীবন। ভেবেছিলাম কোনো ভ্যালেন্টাইনে একটা শাড়ি কিনে দেবো, নিজ হাতে রান্না করে নিয়ে যাবো ওনার বাসায় আর দেওয়া হয়নি শাড়ি। খাওয়ানো হয়নি আমার হাতের রান্না খাবার। ওইদিনের কিছু দিন পর ট্রান্সফার হয়ে চলে যাই অন্য কলেজে আব্বার বদলি জনিত কারনে। বলে আসতে পারিনি আপাকে। তারপর অনেকটা সময় বছর চলে গেছে জীবন থেকে। যখন ওনার কথা মনে পড়লো এই শহরে এসে খোঁজ নেই আমি। দেখা করবো কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস বড় দেরি করে ফেলেছি আমি কারণ তিনি চিরতরে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। আর দেখা হলোনা।
এখন শুধু তাঁর দেয়া স্মৃতিচিহ্ন ই আছে আমার কাছে।এটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে গচ্ছিত থাকবে।
ভালোবাসা রইলো শুধু আপা। যেখানে আছেন যেনো শান্তিতে থাকেন।

0 Shares

৩৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ