প্রজম্মের ঋণ শোধ ১৩তম পর্ব

মনির হোসেন মমি ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪, রবিবার, ০৮:০০:৪৮অপরাহ্ন গল্প, মুক্তিযুদ্ধ ২১ মন্তব্য

যে কোন রাষ্ট্রের জন্য সাম্প্রদায়িক শক্তি একটি বড় অশনি সংকেত।এ শক্তি গণতন্ত্রের জন্য ভয়ংকর।বাংলাদেশ যদিও নাইটি পারসেন্স মুসলিম প্রধান দেশ তবুও এ দেশে অসাম্প্রদায়িকতা বজায় রেখেছিল এ দেশের মুক্তিকামী গণতন্ত্র মনা সাধারন জনগণ।হঠাৎ হেফাজত ইসলামী নামে কিছু চুল দাড়ি আর টুপি ওয়ালা ইসলাম গেলো...ইসলাম গেলো বলে ডাক তুলে মনে হয়েছিল ইসলামকে রক্ষার দায়ীত্ত্ব শুধুই তাদের। অগণিত মাদ্রাসার কোমল মনের মাদ্রাসার ছাত্রদের পুজি করে ১৩ দফার আন্দোলনের ডাক দিয়ে ৫ই মে মতিঝিল বানিজ্যিক এরিয়ায় লং মার্চ করে মহা সমাবেশের ডাক দেন।এ দেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম যেখানে লক্ষ লোকের সমাবেশ ঘটে ছিল।সে সমাবেশকে ঘিরে সে দিন ছিল টান টান উত্তেজনা।

গণজাগরণ মঞ্চে সে দিন তেমন কোন লোক ছিল না।গুটি কয়েকজন ছিলেন তারাও অবাক হয়ে যায়।এরই মাঝে চলতে থাকে ভাংচুড় আগুন আর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার রাজপথের।সব চেয়ে অবাক করা বিষয় হলো কোরান-হাদিসের প্রায় ৮২টি দোকান পুড়া হয় সাথে পবিত্র কোরান শরীফও পুড়ে অথচ আমাদের মাঝে কোন রক্ষকই ছিল না বন্ধ করার রাজনিতীর কালো বিষাক্ত ছোবলেঁ সব আঙ্গার হয়ে যায়।সারাটা দিন চলে হেফাজতি আর রাষ্ট্রীয় তান্ডব।মঞ্চে এক দিকে চলে বক্তিতা অন্য দিকে চলে গাড়ী দোকান পাট আট ঘন্টার জ্বালাও পোড়া কাহিনী।

সেখানেই গণজাগরণ মঞ্চে বসেছিল সূর্য্য আর তার বন্ধুরা।সন্ধ্যায় হেফাজতি সভা শেষে এক সময় হেফাজতিরা গণজাগরণ মঞ্চের দিকে মোড় নেন।ঐ দিকে ওরাও প্রস্তুত ছিল পুলিশের প্রবল আক্রমনে শেষ পর্যন্ত হেফাজতিরা পিছু নেয়।এর মধ্যে হয়ে যায় টুকটাক কিছু ঘটন অঘটন যা আমাদের কাম্য ছিল না।দেশটাকে একটা অস্হিতিশীল রাষ্ট্রে পরিনতি করতে ব্যাস্ত ছিল সমগ্র রাজনৈতিক দলগুলো।বি এন পি কি আওয়ামিলীগ কেহই সে সময়ের জন্য শান্ত ছিল না ব্যাস্ত ছিল কার জিৎ হয়।দেশ জাহান্নামে যাক ক্ষমতা পেতে আর ক্ষমতা ধরে রাখাই ছিল মূখ্য।পুলিশের বিপক্ষে জনগণ হাতিয়ার কেড়ে পুলিশকেই জখম করেন।

-নাহ্ আর মনে হয় না দেশটা ভালোর দিকে যাবে যা হচ্ছে তা অতিরিক্ত।অন্য এক জনের কথার জের টানেন।

-তাই বলে তেতুল হুজুরের তের দফা এ দেশের মানুষ মেনে নেবেন যেখানে দেশের অধিকাংশ নারীই এখন কর্মমুখী,আধুনিক চিন্তা ধারায় স্ব-শিক্ষিত তাদেরকে ঘরে বন্দী করে রাখতে পারবেন?

দুর থেকেই দেখা যাচ্ছে এক জন লোককে কিছু টুপি দাড়িওয়ালা বেদম মারছেন।সূর্য্য অভিরা সমচ্চোরে দৌড়ে কাছে যেতেই টুপিওলারা পালিয়ে যায়।অভি লক্ষ্য করে তাকিয়ে দেখে আহত ছেলেটি আর কেউ নয় তাদের বন্ধু বান্ধব।ধরা ধরি করে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যেতে পথে বাধা আসে হুজুরদের বাধাকে উপেক্ষা করে কমান্ডু স্টাইলে পুলিশের সহায়তায় শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে পৌছান কিন্তু ততক্ষণে তার আত্ত্বা চলে গেছেন পরপারে।

সারাটা দিন পাল্টাপাল্টি আন্দোলনেও হেফাজতের কর্ণধার সফী সাহেব আসতে পারেননি মতিঝিলের সমাবেশে আইনশৃংখলার কড়া নজর দারীতে তাকে ফেরত যেতে হয়েছিল আট হাজারিতে এবং জুনায়েদ সাহেবকে গ্রেফতার করেন।মতিঝিলে অন্য যে সব হেফাজতি নেতারা ছিলেন রাতের গভীরতার সহিত তারাও পালাতে শুরু করল।শেষ পর্যন্ত কোমমতি মাদ্রাসার ছাত্রগুলোকে বিপদের মাঝে রেখে নেতারা লেজ গুছিয়ে পালালো এ কোন ইসলাম কায়েম করতে তারা এসেছিলেন আমার জানা নেই।অবশেষে মাঝ রাতে চলে সরকারের রণ কৌশল যে করে হউক রাতের মধ্যে শাপলা চত্ত্বর পরিষ্কার করতে হবে নতুবা ভোর হলেই সরকার হটানোর হয়তো আরো ভয়ংকর কোন নতুন দৃশ্যের জম্ম নিতে পারে।তাই এক মিনিটেই শাপলা চত্ত্বর পরিষ্কার করল সরকার।পুলিশর‌্যাব ও বিজিবিরসদস্যরা এতে অংশগ্রহণ করে

এক প্রত্যুষে মা রোজীর কাছে তামান্না আসে মা অবাক হন এ সময় তামান্না এলো কি ভাবে আর এলোই বা কেনো।সব ভাব না রেখে তামান্নাকে গ্রহন করেন মা।

-কি হয়েছে তোমার?

তামান্না অঝোর নয়নে কেদেঁ দিয়ে মায়ের কোলে মুখ লোকায়।

-বাবাকে এ্যারেষ্ট করেছেন পুলিশ,আমি যে একা হয়ে গেলাম।

-তাতো জানাই ছিল তবে তোমাকে আরো শক্ত হতে হবে, যে যার পাপের শাস্তি পাবেন এটাই স্বাভাবিক।

সূর্য্য সদ্য ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে মায়ের সামনে আসেন।

-কে মা সাত সকালে কান্নায় আমার ঘুমটা ভাঙ্গল।ও তুমি তা কি মনে করে।

-বাবা গ্রেফতার হয়েছেন।

-হুম!তা তো ঠিকই আছে।আর ভালইতো হলো তোমার আমিরিকান বিয়েটাও ভেঙ্গে গেল।

-মা শুনেছ গতকাল খবরে দেখলাম দিগন্ত আর ইসলামিক  টিভি-চ্যানেল বন্ধ দিয়েছে সরকার।

-ভালো হয়েছে ওরা একটু বাড়া বাড়ি রিপোর্ট দেখাচ্ছিল যা দেশের কল্যানে হুমকি।

-এ ভাবে মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়াতো গণতন্ত্রের পরিপন্থি।

-এই আজ তামান্নার বাবাকে গ্রেফতার করল দেখবি কত সাংবাদিক আছেন তার পক্ষে মানে একজন রাজাকারের পক্ষে সাফাই গাইবে।এটা কি ঠিক বল।

-ঠিক নয়, তবে ওরাওতো এ দেশের নাগরিক।

-এ রকম নাগরিকদের জিন্দা দাফন করা উচিত।

মায়ের রাগটা একটু বেশী হয়ে গেছিল বলে সূর্য্য কথার মোড় ঘুড়িয়ে দেন।

-ঘুমটা খুব ভাল হয়েছিল মা তোমাদের চিল্লাচিল্লিতে শেষ দৃশ্যটা শেষ না হতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল।

-কিসের শেষ দৃশ্য?

-আমাকে নিয়ে বুঝি স্বপ্ন দেখছিলে?

তামান্নার কথার উত্তরে সূর্য্যের এমন উত্তর তামান্না আশা করেননি।

-তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন!যদি রাজাকারের মেয়ে না হতে তবে হয়তো স্বপ্নে আসতে।

মন খারাপ করে বসে থাকেন তামান্না।

-স্বপ্ন দেখছিলাম এই দেশটাকে নিয়ে.....হেফাজতের কি ধকোল যে গেলো দেশের রাজধানীর উপর দিয়ে।মনে হচ্ছি দেশের এমন পরস্হিতিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়তো আর সম্ভব হবে না।দেশের সাধারন জনগণ এখনও আধুনিক যুগে গ্রেফতারকৃত সাঈদীকে চাদেঁ দেখেন সে দেশে আর কি ভাবে ধর্মান্ধদের বুঝাবো.... এরা জাতির চিরশত্রু ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে ইসলামকে নিয়ে ব্যাবসা করেন। এ সব ভাবতে ভাবতেই চোখে নিদ্রাদেবী এসে চোখকে কয়েকটি মুহুর্তের জন্য অন্য জগতে নিয়ে যায়।

আমরা কয়েক জন উঠতি তরুন পণ করলাম স্বাধীনের তেতাল্লিশটি বছর পরও যখন দেশে যু্দ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে এত বাধা এত হরতাল আর বিশৃংখলা সৃষ্টি করে আমার স্বাধীন দেশের ধর্মান্ধ লোকেরাই,থাকে আন্তজার্তিক চাপও... এমন কি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ ট্রাইব্যুনালের কাজের বিরোধীতা করে বলেছে, Bangladesh: Death Sentence Violates Fair Trial Standardsতদুপরি যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ডস সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়কে প্রত্যাখ্যান করেছে। ১৯৬৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আইনজীবী ব্রিটিশ লর্ড কার্লাইল এ রায় প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দেন।

মাঝ খানে মা এবং তামান্না দু'জনেই সমান তালে কথা বলেন।

-মার্চে ২০১৩ সালে দ্য ইকোনমিস্ট সাপ্তাহিক এই বিচার ব্যবস্থায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের হস্তক্ষেপ,

-প্রতিরক্ষার জন্য যথেষ্ঠ সময় না দেওয়া, প্রতিরক্ষার সাক্ষী পাচার এবং নিরপেক্ষতা বিতর্কে বিচারকদের পদত্যগ উল্লেখ করে সমালোচনা করে। এ বার তোমার তোমাদের নতুন প্রজম্মদের ঋণ শোধের স্বপ্নের কাহিনীটি বলো দেখি কোন ক্লু খোজেঁ পাই কি না।

-শুনবে...তাহলে বলছি শোন.................................................................।।।।।।।।।।

চলবে....

প্রজম্মের ঋণ শোধ১২তম

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ