প্রজম্মের ঋণ শোধ০৯

মনির হোসেন মমি ২৮ আগস্ট ২০১৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:৫১:২২অপরাহ্ন গল্প, মুক্তিযুদ্ধ ২৭ মন্তব্য

ক্ষমতাসীন আওয়ামিলীগের শাসন কাল বঙ্গবন্ধুর কন্যা এবার মন্ত্রী পরিষদ সাজিয়েছেনঁ প্রায় নতুন সাংসদদের দিয়ে পুরাতন ডাক সাইডের নেতাদের রেখেছেন আরামে কেদারায় বসিয়ে অনেক কষ্ট করেছেন দাদারা জীবনের শেষ বয়সে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে মন্ত্রীপরিষদ ডিজিটাল সাংসদ দিয়ে সাজিয়েছেন সাথে নিয়েছেন জাতীয় পাটির একটি অংশকে।ঘর গোছানো আর প্রতিহিংসার রাজনিতীর হিসাব কষতে কষতে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতার প্রায় দুই তিন বছর চলে যাচ্ছে সফলতার মাঝে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার কার্য কিঞ্চিৎ সমাপ্ত করেছিলেন মাত্র।

২৫শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯ সালে  বাংলাদেশ রাইফেলস এর সদস্যরা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা পিলখানা এলাকায় অবস্থিত বিডিআর সদরদপ্তরে বিডিআর থেকে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের কর্তৃত্বের অবসান, রেশন ও বেতনবৈষম্য দূর করাসহ বেশ কিছু দাবিতে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে।এ রকম বৈসম্যের আগুন বহু কাল হতেই বিডিআর দের হৃদয়ে জ্বলছিল তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে।বিডিআর এর ১৫,০০০ সদস্য তাদের উর্ধ্বস্থানীয় কর্মকর্তাদের কয়েকজনকে হত্যা এবং আরোও অনেকজনকে জিম্মি করে। বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ৫৭ জনের মৃত্যু হয়।বিডিআর এর গুলিতে কয়েকজন পথচারী ও ছাত্র নিহত হয়।বিডিআর সদর দপ্তরের ভিতরে প্রায় ৫০ কর্মকর্তা নিহত হন।তবে ভিতরে আটকে পড়া শিশু ও মহিলাদের বিডিআর সদরদপ্তরের ভিতর থেকে বের করে আনা হয়।

২৫শে ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে বিডিআর এর সদস্যদের একাংশ আত্মসমর্পণ করে। ২৬শে ফেব্রুয়ারি সকালে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত বিডিআর ক্যাম্পে উত্তেজনার খবর পাওয়া যায়। ঐদিন প্রধানমন্ত্রী জাতীর উদ্দেশ্যে ভাষণে, বিডিআরকে আবারও তাদের দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। ২৬শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিদ্রোহী বিডিআর এর সকল সদস্যগণ তাদের অস্ত্র জমা দেন এবং বাংলাদেশ পুলিশ বিডিআর সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।সেই বিচারের রায়ও সমাপ্ত করেন।এ ক্ষেত্রে বলা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যান্ত সাহসিকতার সহিত সমস্যার মোকাবেলা করে বিডিআরকে বিজিবি নতুন নামে আর্বিভাব ঘটান।আমাদের রাষ্ট্রীয় সবচেয়ে পরিশ্রমী জীবনকে মৃত্যুর কাছে বন্ধক রেখে দেশ সেবা করে যাচ্ছেন অকাতরে অথচ ভাবতে অবাক লাগে তাদেরকে নিয়েও আমরা রাজনিতী করি।আজ এই যে চৌকোষ অফিসার গুলোকে সামান্য একটি কারনে রাজনৈতিক বিদদের কোন্দলে ক্ষমতা প্রসারের লক্ষ্যে তরতাজা প্রানগুলোকে দিতে হলো আমাদের হাতেই জীবন এর দায় ভার কে নিবে...এই অপুরণীয় ক্ষতিতো কোন কিছুর বিনিময়ে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।

সূর্য্য টিভিতে লাইভ দেখছেন সাথে মা।মায়ের প্রশ্ন ক্ষমতার শুরুতেই এমন বিপর্যয় দেশ রক্ষকদের মানতে কষ্ট হচ্ছে।সূর্য্যের টেলিফোন আসে টেলিফোন পেয়ে সূর্য্য টিভি সেটের সামনে থেকে বারান্দায় দাড়ায়।

-কি বলবে বলো আমি ব্যাস্ত আছি।

-জানি,তুমি খুব ব্যাস্ত তবে যা বলব তা শুনে স্হির থাকতে পারবে তো?

-কি আর বলবে তোমার বাবা অন্যত্র তোমার বিয়ে ঠিক করেছে......যাই বলো আমি কোন রাজাকারের মেয়েকে ভালবাসতে পারি না।আমার রক্তে মুক্তি বাহিনীর রক্ত বহমান।

কথাগুলো বলার সঙ্গে সঙ্গে ঐ পাশ থেকে মোবাইলের লাইনটি কেটে দেয় তামান্না।রাজ্যের বিরহ এসে নামে সূর্য্যের অন্তরে।মা পাশে দাড়িয়ে কথাগুলো শুনছিলেন।

-কি রে সূর্য্য তামান্নার সাথে কি হয়েছে।

-কিছু না।

-কিছুই না বললেই হলো আমি মা...আর মায়েরা সন্তানের চেহারা চলার মতি গতি দেখলেই বুঝতে পারে ছেলে সন্তান কোন একটা বিপদে আছে।

সূর্য্য বিরহে আর লুকিয়ে রাখতে পারলেন না।ছোট শিশুর মতন কান্নায় মাকে জড়িয়ে কাদো কাদো কন্ঠে কথা বলছেন।

-তামান্নাকে আর মনে হয় দেখতে পাবে না।

-কেনো?কি হয়েছে তামান্নার?

-ওর কিছুই হয়নি যা হয়েছে আমার ভাগ্য।ভাগ্য আমার সাথে বিটট্রে করেছে।

-তোদের তত্ত্ব কথা রাখ খুলে বল।

-তামান্নার বাবা এক জন রাজাকার।তাদের গ্রামে পাকিদের সাথে মূল সহযোগিদার সেই ছিল।সে এক জন চিহৃিত যুদ্ধাপরাধী।

সূর্য্যে মা রোজীর মাথায় যেন আকাশেরঁ বাজঁ পড়ল তৎক্ষনাত সে ফিরে গেল একাত্তোরে বিভীষিকাময় রাজাকারদের সীমাহীন অত্যাচারের দৃশ্যে,দেশীয় এসব কুলাঙ্গারদের জন্য স্বাধীনতার সূর্যোদয়ে বিলম্ভ ঘটেছিল কিন্তু বাবার দোষে মেয়ে দোষী তা মানতে পারছেন না মা রোজী।নিজেকে কন্ট্রোল করে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে মায়ের অনিচ্ছাকৃত সিদ্ধান্তটা অবশেষে নিতে হলো।

-বুঝলাম কিন্তু এ ক্ষেত্রে তামান্নার দোষ কোথায় সেতো কোন অপরাধ করেনি বাবার দোষে সে কেনো শাস্তি পাবে।

-তুমিও একই কথা বলছ?যুদ্ধে সব চেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রহস্হ হয়েছিলে তুমি...স্বামীর ঘরটিও করতে পারোনি,পারোনি রক্ষা করতে নানুকেও এমন কি নিজেও এক জন নারী মুক্তি যোদ্ধা ছিলে।

-হ্যা,ক্ষতি যা হবারতো হয়েই গেছে এত ত্যাগ তিতিক্ষার পর যখন দেখি আমি আমার লাল সবুজের পতাকার নীচে স্বাধীন ভাবে বস বাস করছি তখন অতীতকে আর মনে করতে মন চায় অতীত কেবলই মনকে ভারাক্রান্ত করে জীবনকে ব্যার্থতার দিকে নিয়ে যায় এখন শুধু বেচে আছি তোদের জন্য তোদের নতুন প্রজম্মের উপর পুরো বিস্বাস তোরা আমাদের ঋণ শোধের দিকে ধাপিত হবি তাই নতুন প্রজম্মকে ঐক্যতায় চলতে হবে এখানে জম্ম পরিচয় ধরে এগুতে গেলে হোচট খেতে হবে পদে পদে কারন ওরাও এদেশের জম্মগত নাগরিক সংখ্যায়ও কম নয় আর যদি ওরা যারা রাজাকার আলবদরের বংশধর দেশের চেয়ে নিজেকে নিজের যুদ্ধাপরাধী জম্মদাতাদের বেশী ভালবাসে তাদের বাচাতে সহযোগিতায় থাকে তবে তাদেরকে ঐ রাজাকারের কাতারে ফেলে কোণ ঠাসা করে দিতে হবে প্রয়োজনে জ্যান্ত কবর দিতে হবে।

মা রোজী কথাগুলো বলতে বলতে হাফিয়ে উঠেন উত্তেজনায় সমস্ত শরীলে কাপন ধরে একটু সময় নিয়ে মা রোজী ছেলেকে তামান্নাকে ফিরিয়ে আনতে পরামর্শ দেন।

-শোন,আমার মনে হয় তামান্না আমাদের দলেই..... যা হবার তা হয়েছে এক্ষুনি তামান্নাকে ফোন কর..... হয়তো বেচারাও টেনশনে আছে।

সূর্য্য তামান্নার মোবাইলে তৎক্ষনাত ফোন দেন উত্তরে ওপাশ থেকে "এই মুহুর্তে আপনার কাঙ্খিত নম্ভরটি বন্ধ আছে,দয়া করে একটু পড়ে আবার কল করুন ধন্যবাদ"।রাত হয়ে গেলো অনেক সকাল হলেই তামান্নার সাথে দেখা করবেন। সে মাকে নিয়ে ভয়ে ছিল হয়তো সে মেনে নিবে না কিন্তু না মা সেকালের হলেও একালের আবেগকে বুঝতে পারেন।

পর দিনও সূর্য্য যায়নি তামান্নার কাছে যদিও মায়ের হুকুম ছিল তবুও কেনো যেন তার মনের ভিতরে রাজাকারদের প্রতি তীব্র ঘৃণায় সব কিছু ত্যাগে প্রস্তুত সে।তবুও মন কাদে ভালবাসার মানুষটির জন্য।প্রায় প্রতি রাতেই মনের সাথে বিরহের যুদ্ধ করতে হয় তাকে। মাকে মিথ্যে তথ্য দেন তামান্নার সাথে কথা হয় দেখা হয় তার প্রতি দিন।ভালবাসা মানে না জাতী-কূল ন্যায় অন্যায় এ কথাটি সূর্য্যের বুঝতে সময় চলে গেল প্রায় মাস ছয়েক এর মাঝে তামান্নার সাথে সূর্য্যের কোন চাক্ষুস সাক্ষাত হয়নি।পরাজিত ভালবাসার সৈনিক নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না অবশেষে সে অভিকে সাথে নিয়ে তামান্নাদের বাসামূখী রওয়ানা দেন।

মধ্য বিত্তদের যাতায়াতের এক মাত্র বাহন পাবলিক বাস।বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশের বাসগুলো একে বারে নাজেহাল এত ভঙ্গুর আর কালো ধূম্র নির্গত গাড়ী চলাচলে বিশ্বে আর কোথায় অনুমতি পাবে না কখনই সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশই তা সম্ভব।

সূর্য্য এবং ভির ঠেলে বাসে উঠে বাস চলছে গন্তব্যের দিকে হঠাৎ কোথা হতে যেন বৃষ্টির মতন বাসের জানালায় ঢিল এসে ঠাস ঠাস জানালার কাচ গুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে চলন্ত বাসের যাত্রীরা জীবন বাচাতে দিশেহারা হয়ে বাস থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে ভঙ্গুর জানালা দিয়েই নামছেন।আক্রমানাক্ত চলন্ত বাসে সূর্য্য এবং অভি দিশেহারা কিংকর্তব্যভিমুর অভি কখন যে জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে মাঝ রাস্তায় পড়ে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে আর উঠে দাড়াতে পারছে না শুয়ে আছেন রোডে বাস ড্রাইভার বাস থামিয়ে দ্রুত দৌড়ে চলে যান নিরাপদে সূর্য্য অভিকে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে বাস থেকে নেমে পিছনে তাকিয়ে দেখেন অভি রাজপথে মৃত দেহের মতন পড়ে আছেন।বাসে থাকা অবস্হায় একটি কাচ ছিটকে এসে সূর্য্যের বা হাতকে রক্তাক্ত করে আহত সূর্য্য রক্ত মাখা হাতটি অন্য হাতে চেপে ধরে দৌড়ে অভিকে কূলে তুলে নেন এরই মাঝে বাংলার বীর সৈনিক পুলিশ যারা সাধারণতঃ ঘটনার পরই আসেন এবারও তাদের আসার সময়ের কোন পরিবর্তন ঘটেনি।পুলিশের ভ্যানে করে অভি সহ আরো অনেক আহত পাবলিককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে অ্যামারজেন্সিতে ভর্তি করান।পরক্ষণেই বাসটি পেট্রোল বোমার আঘাতে দাউ দাউ করে আগুনে জ্বলতে থাকে।সূর্য্যের আর দেখা হলো না তামান্নার সাথে।ভালবাসার কবর রচিত হলো রক্তাক্ত রাজপথে।

প্রজম্মের ঋণ শোধ০৮

সহযোগিতায়:উইকিপিয়া এবং অনলাইন

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ