74b15b245f84bf823ab5b3fa10bbc58f-29.1সময়ের স্রোতে ছুটে চলা তরী
যুদ্ধের নিশাণা লাগিয়ে গায়
ভয় কি বন্ধু
মরন যদি হয়
স্বদেশকে ভালবেশে।
সমরের পাশে এখন সবাই আছে।যাকে কখনো ভাবেননি আসবেন সেই স্বর্নার রাগভারী পিতা সেও হাসপাতালে তার পাশে শিয়রে সিটে বসা।চোখ মেলে সমর অবাক হন,তার সন্মানার্থে শুয়া থেকে কিছুটা উঠবার চেষ্টায় তাতে স্বর্নার পিতা স্নেভাজন সূরে তাকে বিশ্রাম নিতে বলেন।
-থাক থাক তুমি শুয়ে থাকো...বেশী নড়াচড়া করো না।
তার চার দিকে দাড়িয়ে আছেন তার বন্ধু সহ কলিগরা।স্বর্না সেই যে হাসপাতালে দুদিন আগে সমরকে নিয়ে হাসপাতালে ঢুকেছেন আজও স্থির ঠায় দাড়িয়ে।তার বাবার অনেক বাধা সত্তেও সে নড়েনি তার কথা থেকে।অবশেষে মেয়ের ভালবাসার নিকট তাকে হার মেনে আসতে হল।এ যেন হার নয় এ হলো দুটি হৃদয়কে দুটি জীবনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া।সন্তানের ভাল মন্দ দেখার দায়ীত্ত্ব যেমন পিতা মাতার তেমনি সন্তানদের মন মানষিকতার দাম দেয়াও এক জন আদর্শ পিতা মাতার সঠিক সিদ্ধান্ত।

সমরের মা তার শিয়রেই বসেছিলেন।মায়ের পরিচয় পেতে স্বর্নার পিতা স্বর্নাকে প্রশ্ন করে জানতে পেরে তার নিকটে এগিয়ে হঠাৎ বিয়াইন সাহেবা বলাতে সবাই সবার মুখোমুখি নজর ঢালেন।সমরের মায়েরও তার উত্তর দিতে দেরী করলেন না।
-বিয়াইন সাহেব আপনার শরিরটা ভালতো?
-জি ভগবানের কৃপায় আছি আর কি।
-যাক যা হবারতো হয়েই গেছে এখন সামনের দিকে এগুবার সময়।
-হ্যা আমিও তাই ভাবছিলাম।
-তাহলে আর দেরী করে কি লাভ,ভাল একটি দিনক্ষন ঠিক করে আসুন না... এক দিন।
-ঠিক আছে আসব।
-আজ তাহলে যেতে হয় আমার একটু জরুরী কাজ ছিল।
-ঠিক আছে,,,,স্বর্নাকে নিয়ে যান, 'ও আজ দুদিন হলো ঘুমায়নি কিছু খায়ওনি।
-না মা আমি যাব না...আব্বু তুমি যাও আমি ওর এখানে আরো একটি থেকে বসে যাবো।
-ঠিক আছে তোমার যেমন ইচ্ছে....আসি তাহলে।আসি সমর তুমি কোন চিন্তা করো না।তোমার সাথে আবার দেখা হবে।

স্বর্নার বাবা চলে গেলেন।চলে যাচ্ছেন এক এক করে তার বন্ধুরাও।মা এবং স্বর্না তার পাশে বসেন।সমরের মাথায় হাত বুলান তার মা স্বর্না শরবতের গ্লাসে চামচে নাড়াচাড়া করছেন।
-হ্যারে সমর তুই না বলেছিলে স্বর্নার বাবা খুব রাগী....কই?সে তো অনেক ভাল মানুষ দেখছি।
-বাবা ওরকমেই যতটা রাগী ততটাই মায়াময়।
-শোন ভগবান চাহেতো এখান থেকে রিলিজের পর আর কোন ঝামেলায় যাবি না।যতই দেশ দেশ বলে গলা ফাটাস এ দেশ আমাদের কখনোই আপন করে নিবে না।
-ঠিক আছে মা,./....ওরা কেউ আসেনি?
-এসেছিল শুধু সূর্য আসেনি।
-ও এখন কোথায়?
...................................................
সূর্য অভি এবং আরো বেশ কয়েক জন বন্ধু যেখানে সমরকে টুপিওয়ালারা আটক করে যা তা বলেছিল সেখানে প্রায় ঘন্টা খানেক সময় ধরে অপেক্ষা করছেন তা ছাড়া আজ সেখানে তাদের পূর্বো নির্ধারিত সমাবেশও আছে।তাদের সমাবেশে মোটামোটি লোক জন আসতে শুরুও করেছেন।
সেই দিক দিয়ে কিছু টুপিওয়ালা ইয়াং যুবক হেটে এসে পাশে একটি চায়ের দোকানে জমিদারী কায়দায় চায়ের অর্ডার দিয়ে চা পান করে বিল না দিয়েই হেটে চলে যাচ্ছে,যাবার পথে চা দোকানদার ডাক দেন।
-এই যে হুজুরেরা চায়ের বিল দিলেন না......।
ওরা আবার পিছনে  ফিরে তাকায় কিন্তু সামনের দিকে এগুতে থাকে।এরই মধ্যে চাওয়ালা ওদের একটু কটুক্তি করেন যার ফলে ওরা দৌড়ে ফিরে এসে চায়ের কেটলিতে লাথি মারে বিস্কুট রাখা কাচেরঁ প্লাষ্টিকের বোয়ামগুলোকে আচড়ে ভেঙ্গে ফেলে।চা দোকানদার অনেক আকুতি মিনতি করছিল।
-বাবারা আমি গরীব মানুষ আমার ক্ষতি কইরেন না....।
সাথে সাথে এক যুবক তার গলা চিপ দিয়ে শাসাতে থাকে।
-সালারপো....অহন কান্দছ কেন?একে বারে শ্মষানে জ্যান্ত পুড়ে ফেলব।
বেশ কিছুক্ষন সময় সূর্য্য এবং অভি এ রকম ঘটনা লক্ষ্য করছিলেন।ভেবেছিল নরমাল কিন্তু এভাবে ওরা ভাংচুড় করবে ভাবতে পারেননি।ওরা টুপিওয়ালা যুবকদের সামনে এগিয়ে গেল।তাদের একজন সূর্যকে চিনেন সে তার সাথীদের ফিস ফিস করে বলল।ওরা চুপ হয়ে চলে যাচ্ছিল কেননা আজ সূর্য্যের জন বলের পাল্লা ভারি।সূর্য্য তাদের অত্যান্ত মোলায়েম সূরে ডাক দেন।তবুও ওরা দাড়ায়নি অবশেষে দৌড়ে ওদের সামনে গিয়ে দাড়ায় সূর্য্য।
-কি ব্যাপার বড় ভাইয়েরা ডাকছিলাম শুনতেই পাননি বলে মনে হয়।
-কেনো?
-এইতো এবার লাইনে আইছেন,,,,ও বেচারার সব কিছু তছনছ করে ওর পেটে লাথি দিয়ে চলে যাচ্ছেন ঘটনা কি?লেবাসে তো দেখছি পাক্কা মুসলমান তা ব্যাক্তির হক এর হাদিসটি কি পড়েননি?
তাদের মধ্য হতে একজন
-আপনি কি মুসলমান?
-এ কথার সাথে মুসলমান হওয়া না হওয়ার কারন কি?
এরই মধ্যে সূর্য্যের অন্য সব বন্ধুরা চা দোকানদারকে সাথে নিয়ে তাদের তর্কের মাঝে এসে দাড়ায়।
-আপনি মুসলমান হলে আমরা যা করেছি তার সাপোর্ট দিবেন।
-মানে একটু খুলে বলুনতো?
-ওরা মালুর জাত মুসলমানদের শত্রু....।ওদের জন্য আমরা এ দেশে ইসলাম কায়েম করতে পারছি না।....
-বলুন বলুন আর কি কি .....হুম থামলেন কেনো বলুন।
-ঠিক আছে,আপনাদের বলা শেষ,এবার কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর সঠিক ভাবে দিবে নতুবা এখান থেকে একটারেও জীবিত যেতে দেবো না।বলেনতো ইসলাম ধর্মে কোথায় আছে ওরা আমাদের ধর্মের শত্রু?বিনা অন্যায়ে কাউকে ক্ষতি করার পারমিসন ইসলামের কোথায় আছে।আর কোথায় আছে খাওয়া দাওয়া শেষে বিল না দিয়ে চলে যাওয়া?ইসলামের মূল মন্ত্র কি জানেনতো?শান্তি, এখন যা দেখছি তার বিপরীতে আপনাদের অবস্থান.... তো আপনারা ইসলাম রাষ্ট্র কায়েম করবেন কি ভাবে,বলেন।
তাদের মাঝে একজন কথার উত্তর দিতেই পাশে দাড়ানো অভি তার পাঞ্জাবীর কলার চেপে ধরেন।
-আবে ঐ জানোয়ারের বাচ্চা আর একটা কথা বলবি না....এক্ষুনি এই বেচারীর ক্ষতি পূরণ দিবি নতুবা......।
বলার সাথে সাথে ওদের পকেটগুলো হাতিয়ে কোন টাকা পয়সা না পাওয়াতে ক্ষেপে গেলেন এবং ফকিন্নির বাচ্চারা একটা পয়সাও পকেটে রাখে না ইত্যাদি বলে গালাগাল দিতে থাকেন।
এর মধ্যে মানুষের ঝটলা দেখে পুলিশ আসে।পুলিশের কাছে সব খুলে বলে বিচারের ভার দিয়ে সূর্য্যরা চলে আসেন তাদের স্ব-স্থানে তাদের নির্ধারিত প্রোগ্রামে।তাদের আশে পাশে আরো অনেক প্রতিবাদী সংঘটন সভা করছেন করবে বলে  প্রস্তুতি নিচ্ছেন কেউ নারী-শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কেউ বা মায়ানমারে মানব পাচারকারী মানবতা সাগরে ডুবল ইত্যাদি  প্রতিবাদ সভাটি ছিল ভয়ংকর হেফাজত ইসলামের আবারো জেগে উঠার পায়তারা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা লতিফ সিদ্দিকীর ইসলাম বিদ্বেষী কথপো কথনের মামলায় আদালতে জামিন দেয়ার প্রতিবাদে গত তিশরা জুলাই'১৫ নগরে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রতিবাদ করে।

রাজাকার হাসান আলীর জন্য ফাসি অথবা ফায়ারিং স্কোয়ার্ড    এর দাবীকে সচল রাখতে জন সচেনতা বাড়াতে নতুন প্রজন্ম আজ ঐক্যবদ্ধ।তাদের আলোচনায় উঠে আসে রাষ্ট্রের কিছু অপ্রীতিকর কার্যকলাপ যা মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করার সামিল। মহেশখালীতে যুদ্ধাপরাধীর নামে সড়ক  ....ভাবায়াই যায় না, ত্রিশ লক্ষ প্রানের বিনিময়ে এই স্বাধীন দেশে যুগে যুগে রাজাকার-আল বদররা কি  ভাবে  প্রতিষ্টিত হচ্ছে।এক টপ রাজাকার যার কুকর্মে খোদার আরশ কেপে উঠত সেই রাজাকার মুজাহিদী রিভিউর আবেদন করার সুযোগ  পায়।আমি লজ্জিত দেশের কর্তাদের এহেন অবস্থান দেখে।

-মনে রাখতে হবে আমরা এখন মিশ্র জাতি আমাদের রক্তের শিরা উপশিরায়ও মিশে আছে দেশের শত্রুদের বীজ।যারা এখন আমাদের নতুনদের প্রতিদ্বন্দী।প্রকাশ্যে রাজাকার মুজাহিদীর কু-পুত্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বাজে মন্তব্য করেও সে স্থির স্ব-স্থানে তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা হওয়া উচিত ছিল কিন্তু কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতায় সে আজও সহি সালামতেই আছে।মুক্তি যুদ্ধের সন্তানদের শত্রু, মুক্তিযুদ্ধের অপমান কারীদের প্রতি আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
-আমরা আরো লজ্জিত করে আজ অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেলো রায়ের পূণবিবেচনায় ভারত সরকার আবারো ফেলানী হত্যার আসামীকে বেকসুর খালাস দিল।কাটাঁ তারে ঝুলে থাকা এ যেন শুধুই ফেলানী নয় সারা বাংলাদেশটটিকে ঝুলিয়ে রেখেছেন বন্ধু রাষ্ট্রটি।ভারত আরো এক বার এই বিচার নিয়ে তামাশা দেখালেন পৃথিবীকে।আমরা অবাক হই  যখন আমাদের দেশের কিছু হর্তা কর্তা বিরোধী দল বি এন পি জামাতকে নিয়ে সৌদি আরবে যুদ্ধাপরাধীর বিচার বানচালে সক্রিয় তেমনি এক চানচল্যকর রিপোর্ট দিলো উইকিপিয়া সংস্থাটি। এবার চিন্তা করুন আমাদের শত্রু আমাদের ঘরেই।

সূর্য্যের বক্তৃতা শেষ না হতেই তার মোবাইলে কয়েক বার রিং আসে যে,অবশেষে রিংটি দেখে সূর্য্য তার বক্তিতা ছোট করে হঠাৎ বিদায় চেয়ে রিংটি রিসিভ করেন সভা হতে কিছুটা দূরত্ত্বে চলে আসেন।অভি সমাবেশ চালিয়ে যেতে থাকেন।
-হে লো....হ্যা বলছি...কি হয়েছে....মা কোথায়?আর আপনি কে?কে দিলো আপনাকে আমার মায়ের ফোন নাম্বার।
চলবে...
প্রজন্মের ঋণ শোধ ২৪তম

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ