পৃথিবীর পথে পথেঃ সুইজারল্যান্ড , কঘ হুইল রেল ওয়ে , সাল ২০১০,  প্রথম পর্ব ,ভ্রমণ কাহিনী 

"Switzerland is a place where they don't like to fight, so they get people to do their fighting for them while they ski and eat chocolate"

 

সুইজারল্যান্ড,ব্রিটেন থেকে দুই ঘণ্টার পথ প্লেনে।

তিন  দিনের ছুটিতে চললাম সেখানে। দেখেই আসি আল্পস পর্বত মালার দেশ টি।

পুরো দেশটি পাহাড় পর্বত,লেক আর ভ্যালি দিয়ে বেষ্টিত। যেহেতু ইউরোপের একটি দেশ তাই সেরকম কোরেই  রাখা হয়েছে যোগাযোগ ব্যাবস্থা। নিয়ম শৃঙ্খলা,  আইন কানুন  সবই ইউরোপের মতো। তাই ব্রিটেন থেকে ডিফারেন্স নাই ।

কি কি দেখা যায় তা মোটামুটি ঠিক করায় ছিল। প্রথমে লেক লুসারনে (lake Lucerne) তে ফেরি যোগে ২/৩ ঘণ্টার মতো ঘুরলাম। বেশ বড়ো এই লেকটি।

তারপরের দিন সকালে 'মাউন্টেন পিলাটাস' এর চূড়ায় রেল যোগে যাওয়ার জন্য 'আল্পনাস্টাড '   স্টেশনে গেলাম।

অনেকটা সময় মোটামুটি সমতল থাকার পর ট্রেন উঠতে শুরু করলো উপরে। রেল লাইনটি এমন ভাবে করা হয়েছে যাতে ট্রেনের বগি নিচে পিছলে যেতে না পারে। লাইনে খাঁজ কাটা কাটা করে রাখা আছে আর ট্রেনের চাকা সেখানে আটকে আটকে একটু একটু করে এগুচ্ছে। আমরা দুই ধার দেখতে দেখতে যাচ্ছি। নিচের দিকে ঘাস থাকলেও উপরে বরফ পড়ে ছিল । যত উপরে উঠছি বরফের পরিমাণ ততই বেশি। এই রেল লাইনটিকে তাই 'কগহুইল রেলওয়ে'বলা হয়। যা কিনা সব চেয়ে খাড়া । তারপরে আমরা সামিট বা চুড়াতে উঠলাম। যা কিনা ২,০৭৩ মিটার এবং চুড়ার নাম 'ইসেল সামিট পিলাটাস' ।

সেখান থেকে চারদিক অপরূপ লাগছিল।  উঁচু নিচু পাহাড়ের ঢাল   বরফে ঢাকা । কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আবার সেই একই ট্রেনে  নিচে নেমে আসলাম।

পরের দিন ক্যাবেল কার উঠার দিন। খুঁজে খুঁজে চলে আসলাম কাবেল কার উঠার স্পটে । টিকিট করে চেপে বসলাম উঠতে শুরু করলো খাড়া পর্বতের ঢাল বেয়ে। উপরে চা খাওয়ার ব্যাবস্থা আছে। একটু ঘুরে ফিরে নামার পালা। একেবারে ভারটিক্যাল ভাবে অনেক উঁচু থেকে নিচে নামা । গা  শিহরন অনুভূতি। এই মাউন্টেন টির নাম মাউন্ট টিটলিস ।

তারপর একটা বাসে উঠে শহর ঘুরেফিরে বেড়ানো । পাহাড়ের গায়ে গায়ে  লাগানো সুন্দর পাথর দিয়ে তৈরি বাংলো বাড়ি । সবুজ ঘাসে ভরা ভ্যালি সেখানে চরে বেড়াচ্ছে গরু।

সুইজারল্যান্ড খুব ছোটো একটি দেশ ।স্কটল্যান্ড এর চেয়েও ছোটো । আল্পস পর্বত মালার উত্তরে এই দেশটির  দক্ষিণে ইটালি পশ্চিমে ফ্রান্স, উত্তরে জার্মান, পূর্বে অস্ট্রীয়া এবং দক্ষিণে ইটালি। মানুষ জন মডেস্ট বলে খ্যাতি আছে।  একটি শান্তি প্রিয় দেশ।যারা বাইরে থেকে এসে বসবাস করে তারা সন্মানের সাথে ভেদাভেদ না রেখে মিলে মিশে আছে।

সবচেয়ে বড়ো কথা এখানে অন্যান্য পশ্চিম ইউরোপিয়ান দেশ গুলোর মতো সোশাল সিকুইরিটির সিস্টেম  থাকা । যার ফলে যখন  মানুষ  দুর্ভোগে পড়ে তখন  অসুবিধা হয় না ।   যেমন একজন নারী  বাচ্চা সহ ডিভোর্স হলে ,  বৃদ্ধ কালে দেখাশুনা কে দেখবে তার চিন্তা থাকে না কারন নার্সিং হোম আছে।  সবার জন্য পেনসন, ফ্রী চিকিৎসা এবং চাকুরী না থাকলে ভাতা পাওয়া এগুলো থাকাতে মানুষ সুখে আছে।সবার জন্য বাড়ি ঘরের ব্যাবস্থা এবং ফ্রী শিক্ষা তার সাথে নারী পুরুষে সমতা এসব তো আছেই । মানুষ আছে  টেনশন ছাড়া।

যেহেতু আমরা হিমালয় রেঞ্জ দেখেছি নেপালে যেয়ে তাই নেপালের ন্যাচারাল বিউটি  এবং বিশালত্বের কাছে সুইজারল্যান্ড তেমন দাগ কাটতে পারিনি আমাদের কাছে।

লেখকঃ হুসনুন নাহার নার্গিস

0 Shares

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ