পান্তাভাত রেসিপি স্পেশাল

তৌহিদুল ইসলাম ১২ এপ্রিল ২০১৯, শুক্রবার, ০৩:৫৪:০৬অপরাহ্ন অন্যান্য ১৯ মন্তব্য

আসছে নতুন বাংলা বর্ষ ১৪২৬।  এই নববর্ষে সোনেলা ব্লগের সকল ব্লগার, শুভানুধ্যায়ী, সোনেলা গ্রুপের সকল সদস্য সহ প্রিয় পাঠকদের জন্য নিয়ে এলাম স্পেশাল পান্তাভাত রেসিপি।

পহেলা বৈশাখে পান্তাভাত না খেলে যাদের মনপ্রাণ আকুপাকু করবে, লজ্জায় অন্যদের মুখ দেখাতে পারবেন না, তাদের জন্য আমার আজকের এই লেখা। চলুন মূল লেখায় আপনাদের ভ্রমন করিয়ে আনি।
-------------------------------------------------------
পান্তাভাত তৈরী করতে হলে যা যা লাগবে অর্থাৎ উপকরনঃ

২৫০ গ্রাম চাল, ১০ কাপ পানি, কাঁচা পেয়াজ - পরিমান মতন , কাঁচা লঙ্কা - স্বাদ বুঝে , লবন - আন্দাজ মতো।

রান্নার প্রনালীঃ

একটি পাত্রে চাল ধুয়ে ২ কাপ পানি দিয়ে চুলার উপর বসিয়ে দিন। দেখুন গ্যাস আছে কি না। গ্যাস থাকলে মনে করে চুলা জ্বালান। তারপর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন ।

কয়েক মিনিট পর হাঁড়ি থেকে চাল তুলে টিপি দিয়ে দেখুন সিদ্ধ হয়েছে কি না। সিদ্ধ হলে বুঝবেন তা "ভাত" হয়ে গেছে। এবার ভাত থেকে বাড়তি পানি ঝরিয়ে নিন। (মাড় গালিয়ে নেয়া যাকে বলে)

ভাত ঠান্ডা হলে তাতে বাকী ৮ কাপ পানি ঢেলে শুকনো, ঠান্ডা জায়গায় ঢেকে রাখুন।
৮ ঘন্টা পর ঢাকনা খুলে দেখুন - তা পান্তাভাতে রুপান্তরিত হয়েছে।

ব্যাস হয়ে গেল পান্তা ভাত রান্না, তবে সাইড ডিস হিসাবে যদি কিছু চান তাহলে প্রমান সাউজের তিনটে আলু নিয়ে সেদ্ধ করবেন, নুন মাখিয়ে পেঁয়াজ কুচিকুচি করে সেদ্ধ আলুর মধ্যে দিয়ে বেশ করে চটকে আলু পেঁয়াজ মাখা বানিয়ে নেবেন...।

বিঃ দ্রঃ- পান্তা খাওয়ার জন্য ইলিশ ভাজি আবশ্যক নয়। তবুও ভাজা মাছের স্বাদ পেতে চাইলে ২০০০ /- কেজি দরে ইলিশ না কিনে মাঝারি সাইজের পুঁটি মাছ কিনে কড়কড়া করে ভেজে খেতে পারেন।

অথবা যদি বাজারে ইলিশ এর ফ্লেভার পাওয়া যায়, তাহলে যে কোন মাছের (রুই বা কাতল) সাথে ইলিশ ফ্লেভার মাখিয়ে ভাজুন।

সবশেষে পেয়াজ, লঙ্কা, লবন দিয়ে মাখিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন - সুস্বাদু মজাদার পান্তা ভাত।

পান্তা ভাতের উপকারীতাঃ

১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে (১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর) ৭৩.৯১ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, যেখানে সম-পরিমাণ গরম ভাতে থাকে মাত্র ৩.৪ মিলিগ্রাম। এছাড়া ১০০ গ্রাম পান্তাভাতে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে হয় ৮৩৯ মিলিগ্রাম এবং ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে হয় ৮৫০ মিলিগ্রাম, যেখানে সম-পরিমাণ গরম ভাতে ক্যালসিয়াম থাকে মাত্র ২১ মিলিগ্রাম। এছাড়া পান্তা ভাতে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে হয় ৩০৩ মিলিগ্রাম যেখানে সম-পরিমাণ গরম ভাতে সোডিয়াম থাকে ৪৭৫ মিলিগ্রাম। পান্তা ভাত ভিটামিন বি-৬ এবং ভিটামিন বি-১২ এর ভালো উৎস। পান্তাভাত শর্করাসমৃদ্ধ জলীয় খাবার।

একজন আমেরিকান পুষ্টিবিদ যিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের খাদ্যাভাস নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি মন্তব্য করেছেন যে দক্ষিণ ভারতের মানুষ আগের দিন রান্না করা ভাত রাতভর পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খায় তা সর্ব্বোত্তম।

বহু ধরে দক্ষিণ ভারতের বহু মানুষের বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত কম আয়ের পরিবারের প্রধান খাদ্য পানিতে ভিজানো ভাত। তবে সেখানেও তথা কথিত আধুনিকতার হাওয়া লেগেছে। এ ব্যবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। পানিতে ভিজানো ভাতের স্থান দখল করছে ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুড।

গবেষণায় দেখা যায় যে, আগের দিন রান্না করা রাতভর পানিতে ভিজিয়ে রাখা ভাতের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি-৬ এবং ভিটামিন বি-১২। এ ভাতের মধ্যে রয়েছে অনেক উপকারি ব্যাকটেরিয়া যা খাদ্য হজম করতে সহায়তা করে এবং বহু রোগ প্রতিরোধ করে। এ ভাতে রয়েছে হাড় ও পেশি শক্তি বৃদ্ধির উপাদান এবং বার্ধক্য প্রতিরোধ ক্ষমতা। পুষ্টিবিদগণ পান্তা ভাতের আরো অনেক গুণাগুনের বিবরণ দিয়েছেন যেমন:

১. পান্তা ভাত খেলে শরীর হালকা থাকে এবং কাজে বেশি শক্তি পাওয়া যায়।

২. মানব দেহের জন্য উপকারি বহু ব্যাকটেরিয়া পান্তা ভাতের মধ্যে বেড়ে যায়।

৩. পেটের পীড়া ভাল হয় এবং শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায় রাখে।

৪. কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয় এবং শরীরে সজিবতা বিরাজ করে।

৫. রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।

৬. অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সবল হয় এবং মেজাজ ভাল থাকে।

৭. এলার্জি জনিত সমস্যা প্রশমিত হয় এবং ত্বক ভাল থাকে।

৮. সব রকম আলসার দূরীভূত হয়।

৯. শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

১০. মন মেজাজ ভাল রাখে।

কাজেই পান্তাভাত খান, সুস্থ্য থাকুন। এতক্ষন আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

// সংগৃহীত লেখাটি কিছুটা পরিমার্জিত করে প্রকাশ করার জন্য আমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করুন।

// পোষ্টটি শেয়ার করে অন্যদেরকেও পান্তাভাত খেতে সহায়তা করুন।

(ছবি সংগৃহীত)

তথ্য লিংকঃ 

https://m.facebook.com/vaat.bd/photos/a.484861331582642/484861338249308/?type=3

http://www.amritabazar.com/health/news/51153/পান্তা-ভাতের-উপকারিতা

 

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ