নেমকহারাম

আনন্দধারা বহিছে ভুবনে ২৯ জুলাই ২০১৫, বুধবার, ১১:০৩:০৮অপরাহ্ন রম্য ৫৫ মন্তব্য

2013-01-24-18-53-12-510183183c03f-untitled-21

নেমকহারাম শব্দটির সাথে সবাই আমরা পরিচিত।কিন্তু এই শব্দটি কিভাবে প্রচলিত হয়েছিল তা আমরা অনেকেই অবগত নই।

শব্দের উৎপত্তি ও প্রসারঃ 
আজ হতে ঠিক ২২৭ বছর পুর্বে যখন এই দেশে আয়োডিন যুক্ত লবণের প্রসার ছিলনা। মহেশখালীর লবণ চাষিরা বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ তীরে লবণ চাষ করতো,জমিতে মাটি দিয়ে ছোট ছোট আল দিয়ে রাখত,জোয়ারের পানি এসে সে জমিতে উঠত।আবার ভাটায় শুকিয়ে যাবার পরে দেখা যেত লবণের হালকা একটি স্তর পরেছে।এমনি ভাবে অনেক বার জোয়ারের পানি জমিতে ওঠা নামার ফলে এক সময় বড় একটি  স্তর হত লবণের। ঐ লবণ বস্তায় ভরে গরুর গাড়ি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হত।ক্রেতারা বাজার হতে এই লবণ ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে মাটির হাড়িতে আচ্ছা মত ধুয়ে নিত।কারন এতে মাটি থাকতো।ধোয়ার পরে এটি একটু কাঠের ঢোল মত পাত্রে নিয়ে অন্য একটি কাঠের মুগুর দিয়ে দ্রুম দ্রুম করে আঘাত করে চুর্ন করে খাবার উপযোগী করা হত। রান্নার কাজে ব্যবহার করা হত এবং খাবার টেবিলেও কাচা লবণ হিসেবে বিভিন্ন লবণ দানিতেও পরিবেশন করা হত। লবণ দানীর ডিজাইন এবং সৌন্দর্য দিয়ে পরিবারের বনেদী পনাও বুঝা যেত।

দুইশত সাতাশ পছর পুর্বে আমাদের লীলাবতী আপুর দাদির দাদি আর শুন্য শুন্যালয় আপুর নানীর নানী ছিলেন সই। যোগাই মাধব নামের এক লোক ছিলেন লীলাবতী আপুর দাদির দাদি বাড়ির কর্মচারী।একসাথে এক কেজি চালের ভাত লাগতো তার।মাছ,তরিতকারী,ডাল দিয়ে বেশ আয়েশ করে ভাত খেত এই জগাই।ভাতের সাথে কাচা লবণ নিত একগাদা। কিন্তু এত খেলে কি হবে,সে বিভিন্ন লোকের কাছে তাকে খেতে দেয়না,আধা প্লেট ভাত দেয়, অথচ কাজ করতে করতে সে জীবন শেষ করে দিচ্ছে এমন কথা বলে বেড়াত।বলতে বলতে একদিন সে শুন্য শুন্যালয় আপুর নানীর নানীর কাছেও বলে ফেললো। আর যায় কোথায়, সই এর নামে দুর্নাম? নিজের চোখে দেখেছেন তিনি কতদিন একবাটি লবণ লাগে প্রায় জগাইর খাবার সময়।
* তুই এত্তবড় নেমকহারাম হয়েছিস,দাড়া আজ তোর চাকরীই শেষ করে দিচ্ছি।
= কাকী মা আপনার পায়ে পরি,আমার সব্বোনাস কইর‍্যেন না  🙁
* তোর মত নেমকহারাম এর কোন ক্ষমা নেই
সই এর বাড়ি গিয়ে
* ওলো সই গেলা কই,আজ শুনো এক নেমকহারাম এর কথা কই
- নেমকহারাম আবার কি জিনিস সই
* তোমার জগা রোজ লবণ খায় এক বাটি, আর আজ বলে তুমি নাকি খাবারে দাও ফাকি। [পাঠক শুন্য শুন্যালয় আপুর সাহিত্য চর্চা বংশ গত ]
নেমক খেয়ে যে লোক স্বীকার করে না সেই তো নেমকহারাম।
-তোমার কত বুদ্ধি,আজ আবার একটা নতুন শব্দ বানালে। মাঝে মাঝে টাসকি খাই তোমার বুদ্ধি দেখে।
এরপরের কাহিনী তো ইতিহাস।ধীরে ধীরে এই শব্দটি অকৃতজ্ঞ,বেইমান শব্দের পরিবর্তেও ব্যবহৃত হয়ে গেলো। এই ইতিহাসের তথ্য সুত্রঃ সজীবপিডিয়া ডট কম। 

এত সমৃদ্ধ ইতিহাস থাকতেও এই নেমকহারাম শব্দটি আজ হুমকির মুখে। এটি গোয়ালে আছে বাস্তবে নেই এমন হতে চলেছে। মানুষ উচ্চ রক্তচাপ এড়াতে আজকাল কাচা লবণ খাওয়া প্রায় বাদ দিয়ে দিচ্ছে। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বাজারে লবনদানী বিক্রির পরিমাণ গত দশ বছরে ৮০% কমে গিয়েছে। বুঝুন অবস্থা।একদিন হয়ত টেবিলে আর কাচা লবণ স্থানই পাবেনা। তখন নেমকহারাম শব্দটির কি হবে?বলতে পারেন তরকারীতে,মাছ মাংসে লবণ তো দেয়া হয়। দেয়া হলেও তা সবজী,মাছ,মাংশ,ভর্তা হিসেবে পরিবেশন করা হয়,লবন হিসেবে নয়। সেদিন বেশী দূরে নয় যখন লবণ না খেয়েও মানুষকে নেমকহারাম বলা হবে,কিন্তু তা হবে অত্যন্ত ভুল।

পাঠকরা চাইলে নেমক নিয়ে আরো পোষ্ট দিতে পারি 🙂

0 Shares

৫৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ