নীলিমার প্রেম! (পর্ব-২)

মারজানা ফেরদৌস রুবা ১ এপ্রিল ২০১৯, সোমবার, ০৯:৫০:৩৯পূর্বাহ্ন গল্প ২ মন্তব্য

পর্ব দুই..

এদিকে মা-মেয়ে দু'য়ের সংসার যখন নীলিমা-ফরহাদ যুগলের সংসারে রুপ নেয়, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই দু'য়ের যৌথ উদ্যোগে এর আরেকটু ব্যাপ্তি ঘটে। পুরোনো বাড়ি ছেড়ে তারা নতুন বাড়িতে উঠে। নীলিমাও যেনো নতুন করে আবার হারিয়ে যাওয়া সংসারের স্বাদ খুঁজে পায়। ভালোই চলতে থাকে দুজনের যৌথ জীবন। ফরহাদ মাঝেমধ্যেই ছুটিতে দেশে যায়, আসে। দেখতে দেখতে শীলাও এস এস সি পরীক্ষার্থী। মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ততা বেড়ে যায় নীলিমার। একটা সময় দেখা যায়, ফরহাদ কলকাতা গেলে পনেরো-বিশ দিন, কখনোকখনো এক দু' মাস পরেও ফিরে এবং কিছুদিন থেকেই আবার ফিরে যায়। নীলিমা ধরে নেয়, হয়তো বড় বউয়ের অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় এরকমটা ঘটছে। হয়তোবা এ কারণেই টানা অনেকদিন সেখানে অবস্থানও করতে হচ্ছে ফরহাদকে। মূলত ফরহাদ তেমনটাই ধারণা দিয়েছে নীলিমাকে। নীলিমাও ভাবে, দিদির এমন শারীরিক পরিস্থিতিতে তাঁকে সময় দেয়াটাই এ মুহূর্তে ফরহাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মনেমনে তাই সিদ্ধান্ত নেয় মেয়ের পরীক্ষা শেষ হলে একবার গিয়ে দেখে আসবে তাঁকে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, ফরহাদ তাহলে অফিস কিভাবে ম্যানেজ করছে? ফরহাদ ফোন করলে তাঁকে জিজ্ঞাসাও করে অফিসের ব্যাপারটা। সে জানায় অফিস ব্যাপারটা জানে, তাই কনসিডার করছে।

সম্প্রতি খেয়াল করছে, ফরহাদ তেমন ফোন করছে না আবার ফোন দিলে কখনো ধরছে, কখনো ধরছেও না। এমনকি পরে কলব্যাকও করছে না। জিজ্ঞেস করলে নানা ছুঁতোনাতায় এড়িয়ে যায়। আজ মেয়ের পরীক্ষা শেষ। মনেমনে ভাবে এবার ফরহাদ ফোন দিলেই দিদিকে দেখাতে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার কথা বলবে। একসময় বলেও কিন্তু ফরহাদ তেমন গুরুত্ব দেয় না বা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে যায়।

প্রায় তিনমাস পর ফরহাদ ফিরে আসে কিন্তু সপ্তাহখানেক থাকার পর হঠাৎই আবার চলে যায়, তাও না বলে। দুদিন পর কলকাতা থেকে ফোনে জানায় জরুরী খবর পেয়েই সে চলে গিয়েছিলো। দুদিন লাপাত্তা থেকে জানানোয় ব্যাপারটা নীলিমার কাছে ভালো টেকেনি। এদিকে যৌথ উদ্যোগে নেয়া বাড়ির ভাড়াও গত তিনমাস নীলিমা একাই বহন করেছে। তার মনে সন্দেহ ঘনীভূত হতে থাকে। এবার যাবার পর ফোন করে চলে যাওয়ার খবরটা যে জানিয়েছিলো, এরপর অনেকদিন হয় আর ফোন দিচ্ছে না। এতোদিন নীলিমা অভিমান করে থাকলেও আর পারছে না। ফোনটা তাই করেই বসে কিন্তু অপাশ থেকে বলছে, 'নট রিচেবল'। কিছু সময় বিরতি দিয়ে দিয়ে করছে আর বারবার 'নট রিচেবল'ই বলছে। নীলিমার মনে একবার টেনশন, আরেকবার সন্দেহ ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে।

উপায়ন্তর না দেখে ড্রয়ার, আলমারি হাতড়ে ফরহাদের একখানা ভিজিটিং কার্ড খুঁজে বের করলো। ভিজিটিং কার্ড দেখে অফিসের নম্বরে ফোন দেয়। দুটো রিং হতেই অপাশ থেকে কেউজন বলে, "হ্যালো?"
-হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
-জ্বী, আমি নীলিমা। শরাফত ফরহাদের ওয়াইফ।
-জ্বী, বলুন।
-আচ্ছা, আপনাদের এখানে কর্মরত ফরহাদ সাহেবের ব্যাপারে আমি কার সাথে কথা বলতে পারি?
- হ্যাঁ, আপনি আমাকে বলতে পারেন।
-আচ্ছা, ফরহাদ সাহেবের কোন খবর জানেন? উনার কোন ফোন নম্বর?
আগের নম্বরে তো পাওয়া যাচ্ছে না।
-জ্বী, আপনি কোথা থেকে বলছেন?
-আমি মগবাজার থেকে বলছি।
-আপনি বোধহয় ভুল করছেন। এখানে যিনি চাকুরী করতেন সেই ফরহাদ সাহেবের বাড়ি কলকাতা।
-হ্যাঁ, আমি জানি।
-তাইলে যে বললেন মগবাজার?
-হ্যাঁ, আমি বাংলাদেশি। গত আড়াইবছর আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে।
-তাই নাকি? জানতাম না তো!
-হ্যাঁ।
-কিন্তু ফরহাদ সাহেবের তো গত চারমাস আগেই চাকুরীর মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে।
-কি বলছেন?
-জ্বী ম্যাডাম। আপনি জানতেন না?
-না মানে..
-এই ক'দিন আগেই উনি একবার এসেছিলেন, কোম্পানীতে উনার কিছু পাওনা আছে তার খবর নিতে।
-আচ্ছা আমি কি আপনার সাথে দেখা করতে পারি।
-অবশ্যই।
-ধন্যাবাদ।
-অকে
-আচ্ছা শুনুন।
-জ্বী, বলুন।
-আমি খুব শীঘ্রই আপনার সাথে দেখা করবো কিন্তু ব্যাপারটা যেন কোনভাবেই ফরহাদ সাহেব না জানেন।
-আচ্ছা ম্যাডাম।
ফোনটা রেখেই নীলিমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। ফরহাদ রীতিমতো নীলিমার সাথে ছিট করেছে! কি করে এরকম করলো সে? আরে, বিয়েটা তো সবকিছু জেনেবুঝে দু'জনের সিদ্ধান্তেই হয়েছিলো, তবে কেনো এই লুকোচুরি? তবে কি ফরহাদ চাকুরীর মেয়াদকালীন পর্যন্ত এ সম্পর্কে জড়িয়ে থাকবে, এই চিন্তা থেকেই বিয়েটা করেছিলো? ভিন্নদিক থেকে ভিন্নভিন্ন ভাবনা এসে নীলিমাকে আলোড়িত করতে থাকে। এক ধরণের অপমানবোধ তাকে বিপর্যস্ত করে তোলে। একা চলে অভ্যস্ত নীলিমার কাছে অন্য কোন সমস্যা থেকে মান-অপমানবোধটাই মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।

সকালবেলাই নীলিমা জোসেফের সাথে দেখা করতে বেরিয়ে পড়ে। পরিবারের অন্য সদস্যদের কাউকে কিছু না জানিয়ে রাতেই লালবাগ থানার ওসি চাচাতো ভাই জোসেফের সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করে। প্রচণ্ড অপমানবোধ থেকে এক ধরণের জেদ চেপে বসে নীলিমার মধ্যে। জোসেফের সাথে পরামর্শ করে আজ ওকে নিয়েই ফরহাদের অফিসে যাবে। জোসেফও আগে থেকেই তৈরি ছিলো। দুজনে মিলে ফরহাদের অফিস থেকে পুরো বিষয়টা জেনে নিয়ে জোসেফের সহযোগিতায় নীলিমা থানায় একটা অভিযোগ দায়ের করে। প্রতারণার অভিযোগ।

চলমান...

0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ