ছেলে সন্তান এবং মেয়ে সন্তান কে সমান চোখে না দেখা কিংবা সমাজে নারীকে অবমূল্যায়ন ও অসন্মান করা একটি সুস্থ সমাজের পরিচয় নয় 

 

অনিকা আর মনা পিঠাপিঠি ভাইবোন । এক সাথেই তারা বড়ো হচ্ছে। আজ তারা খুব খুশি কারন বাবার সাথে তারা যাচ্ছে দাদা বাড়ি।

নুতুন পোশাক  আর বাজার থেকে আনা  নুতুন জুতো পায়ে দিয়ে তারা  খুশিতে আত্মহারা। ঘোড়া গাড়িতে উঠে তারা যাচ্ছে। গাড়ি যাচ্ছে দ্রুত গতিতে । মাঝ পথে কোথায় যেন মনার পায়ের জুতো খুলে পড়ে যায়। পেছনে  আর যাওয়া সম্ভব নয়। গাড়ি থেকে নামার সময় দেখা গেল মনার এক পায়ের জুতো নাই  । এ ভাবে  তো পুত্র সন্তানকে নামানো যায় না। পুত্র বলে কথা । বাবা অনিকার পা থেকে জুতো খুলে নিয়ে মনার পায়ে দিয়ে দায়। অনিকা এতোই ছোটো প্রতিবাদ করতে পারেনা । সে মেয়ে তাই তাকে বঞ্চিত হতেই হবে এবং পুত্রকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাই অনিকাকে খালি পায়েই বাড়িতে  প্রবেশ করতে হলো  ।

অনিকা এবং মনা এক সঙ্গে বড়ো হতে থাকলেও নানান আচরণে এবং সুযোগ সুবিধা দিয়ে পরিবারে বোঝানো হতে থাকে তারা ডিফারেন্স । মনা বাবার বেশি যত্ন পায়  পড়ার ক্ষেত্রে ।   আর অনিকাকে বাজার করতে যেতে হয় মনাকে  পড়ার সুযোগ দিয়ে। মনার পাতে পড়ে মুরগির রান আর অনিকার পাতে মুরগির গলা।

মনার জন্য প্রাইভেট টিচার, বাবার সার্বক্ষণিক দেখভাল, ভালো স্কুলে হোস্টেল খরচ পড়ার ব্যাবস্থা করা তখন কিন্তু বাবামায়ের কোন কার্পণ্য থাকেনা। কিন্তু মেয়ের সময় দেখা যায় অন্য রকম ক্যা লকুলেসান বা হিসেব নিকেশ । বাবামার কিন্তু  আর্থিক অবস্থা মোটেও খারাপ নয়।

মেয়ে মানে লোকসানের খাতা আর ছেলে মানে লাভের খাতা । বৃদ্ধ বয়েসে ছেলে দেখভাল করবে এবং মেয়ে তো বিয়ে হয়ে চলে যাবে । এই ফরমুলায় ফেলে ছেলে মেয়েকে পৃথক ভাবে দেখা হয়। কিন্তু আজ কাল মেয়েরাও ইনকাম করে বাবামাকে সাহায্য করে । কিন্তু সমাজের এই নিয়ম বদলায় না।

অনিকা ক্লাসে প্রথম হয় ,তার আগে যে ফার্স্ট বয় ছিল সে হয় দ্বিতীয় । স্কুল টা  ছিল অনিকার নুতুন। ক্লাসের অন্যান্য ছেলে রা এতে অপমান বোধ করে কারন মেয়ে কেন প্রথম হবে প্রথম হবে একজন ছেলে। এটাই হলো  ছেলে প্রাধ্যান্য  সমাজের আশা ।

একটা মেয়ে অংকে ভালো হবে বা ব্রেন সার্জন হবে তা  দেখে অভ্যস্ত নয় এবং তা মেনে নিতেও পারেনা আমাদের সমাজ ।মানুষর মন মগজে এটাই থাকে ছেলে মানে বেশি বুদ্ধি মেয়েদের চেয়ে তাই ব্রেন সার্জন মেয়ে হয় কি করে?

অনিকা বাবামার  বাড়িতে এইভাবে দুই রকম আচরণে বড় হয় এবং বিয়ের পর  দেখা যায় শ্বশুর বাড়িতেও পুরুষ প্রাধান্য আচরণ। অথচ সেও তাদের ছেলের মতো শিক্ষিত এবং উপার্জনকারী। কিন্তু তাদের ছেলের যেমন গুরুত্ব দেয়া হয় কিন্তু তার প্রতি তা দেয়া হয় না। একটা ছেলে যখন জামাই হিসেবে শ্বশুর শাশুড়ির     আদর পাই  যাকে বলে 'জামাই আদর' একটা মেয়ে বউ হয়ে শ্বশুর বাড়িতে তা পায়না। অনেক সময় মেয়েকে সন্মান করা তো  হয়ই না তার বাবা মাকেও নিচু করার চেষ্টা করা হয় নানা ভাবে।কারন তারা তো মেয়ের বাবামা।

পরিবারে সমাজে একটা ছেলের যেমন গুরুত্ব থাকে মেয়ের তা থাকেনা। এই গুরুত্ব পূর্ণ মনোভাব নিয়ে একটা ছেলে বড় হতে হতে নিজেকে 'some thing special' ভাবতে শিখে। অনিকা কলেজ লেভেলে খুব ভালো রেজাল্ট করে এবং স্কলারশীপ পায়। মনা এটা ভাবতেই পারেনা কেমন করে তা সম্ভব ,  ভালো রেজাল্ট তো তারেই প্রাপ্য বোনের কেন হবে?

মনা যখন উচ্চ শিক্ষা নিতে যায় তখন স্কলারশিপ এবং বাবার পাঠানো টাকা দুটোই পায়। আর অনিকা বেচার স্কলারশিপ পাওয়ার দরুন বাবার টাকা পাঠানো বন্ধ হয় এবং দারুণ কষ্টে হোস্টেল জীবন কাটাতে হয়। আবার চাকুরী পাওয়ার পর পরিবারের প্রতি কর্তব্য পালনের জন্য অনিকাদের টাকা দিয়ে সাহায্য করতে  হয় কিন্তু বাবার সম্পত্তি ভাগা ভাগি করার সময় তারা বঞ্চিত হয় ধর্মের দোহাই  দিয়ে।

এই ভাবে অনিতার মতো মেয়েরা নিজ পরিবার,সমাজ,  শ্বশুর বাড়ি এবং বাইরের জগতে নারী বলে পুরুষের সমকক্ষ হতে পারেনা বা সমাজ সমকক্ষ হতে দিতে চায়না।

যতো দিন পর্যন্ত না একটি দেশে বা সমাজে নারী পুরুষকে সমান চোখে দেখা না হবে ততদিন পর্যন্ত আমরা একটা সুন্দর দেশ গোড়তে পারবোনা। আর এটা আরম্ভ করতে হবে নিজ পরিবার থেকে। কারন পরিবারই হোল একটা দেশের প্রথম ভিত্তি ।

যতদিন পর্যন্ত একজন নারী একজন পুরুষের মতো সমান অধিকার ভোগ করতে পারবেনা ততদিন এই  "সমান ভাবে না দেখা" ব্যাপারটি পুরো সমাজের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।

নারী পুরুষকে সমান বিবেচনা করার জন্য ইন্টারন্যাসানাল আইন পাস করানো হয়েছে। এই আইনই হল 'The convention on the elimination of all forms of discrimination against women". 1979.

"Protecting women's right makes the world a better place".    নারী পুরুষে সমতা এবং তাদের অধিকার রক্ষা পৃথিবীকে একটি বসবাসের জন্য সুন্দর স্থানে পরিণত করে।

ইউনাইটেড ন্যাসানের মতে "Gender equality and the empowerment of women and girls is not just a goal in itself ,but a key to sustainable development ,economic growth and peace and security."

অর্থাৎ 'একজন নারী এবং মেয়ে যখন সমান ভাবে পুরুষের মতো অধিকার ভোগ করবে এবং নারী বা মেয়ে শক্তিশালী হবে তখন সেই সমাজের অর্থনৈতিক অগ্রগতী বৃদ্ধি পাবে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরে আসবে ' ।

জেন্ডার ইকুলিটিঃ

নারীর ইতিহাস জানতে পারলে আমরা বুঝতে পারবো  নারী পুরুষে সমতা কতদিন আগে বা কি ভাবে আরম্ভ হয়েছে।

জেন্ডার ইকুইলিটি বা নারী পুরুষে সমতা কি? নারী পুরুষে সমতা হল একটা দেশে যতো রকমের সুযোগ সুবিধা আর রিসোর্স  আছে তা নারী পুরুষ নির্দ্বিধায় ভোগ করতে পারবে । তা ছাড়া অর্থনৈতিক কর্ম কাণ্ড এবং সিধান্ত গ্রহণ,   নিজ পরিবার বা বাবার পরিবার সব জায়গায় নারী পুরুষের সমান বিচরণ থাকতে হবে। পৃথক করা চলবে না ।

নারী পুরুষে সমতা, নারী অধিকারের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। আর এটার একটা ফলপ্রসূ ভালো আউটকাম দেখার জন্য একটা দেশের পলিসির পরিবর্তন দরকার। তার সাথে দীর্ঘ দিন ধরে চলিত এবং পালিত মানুষের চিন্তা চেতনা এবং মন মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।

UNICEF এর  মতে ছেলে মেয়ের মধ্যে সমতা মানে 'একটা দেশে যতো রকমের প্রথিস্টান আছে বা অর্থনৈতিক কর্ম কাণ্ড আছে তাতে এই দুই লিঙ্গের সমান অধিকার এবং সমান বিচরণ থাকতে হবে। তার মানে এই না যে নারীকে পুরুষ হতে হবে। নারী নারী হিসেবেই বিচরণ করবে।'

চাকরীর অভিজ্ঞতা শিক্ষার সুযোগ এবং স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার সব ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকার থাকতে হবে।

কিন্তু দেখা যায় বিভিন্ন দেশে কিত্রিম ভাবে সাংস্কৃতিক দৃষ্টি ভঙ্গি এবং ধর্ম ব্যাবহার করে রীতি নীতি চালু করে এবং সেসব ব্যাবহার করে নারী পুরুষকে পৃথক করে। এবং যার ফলস্বরূপ নারী ভুক্তভোগী হয়।

এই রীতি নীতি দ্বারা যাতে নারী পুরুষকে ভেদাভেদ না করা হয় এবং নারী ভুক্তভোগী না হয় তাই রাষ্ট্রকে  নীতি নির্ধারণ করতে হবে যাতে তারা সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারে এবং ছেলে মেয়ের ভেদাভেদ ছাড়া  বড় হতে পারে। আর এই রীতি নীতি গুলো দিয়ে সাফল্য পাওয়ার জন্য  বিশেষ প্রণোদনা বা সুবিধার ব্যাবস্থা করে দিতে হবে।

আজকের পৃথিবীতে লিঙ্গ বৈষম্য নারী অধিকারের সাথে ঘনিস্ট ভাবে জড়িত। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়  ১) যৌন পাচার ২) যুদ্ধ কালীন রেপ ৩) এবং অন্যান্য নিপীড়ন মূলক কৌশল ।

অনেক ক্ষেত্র গুলয় নারীর প্রবেশ অধিকার কম । বিশেষ করে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আর পারিবারিক সহিংসতার  শিকার  হওয়ার সম্ভবাবনা তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি।

জাতিসংহের টেকসই উন্নয়নঃ

জাতিসংহের টেকসই উন্নয়নে ১৭ টি লক্ষ স্থির করা হয়েছে। তার  মধ্যে  নারী পুরুষে সমতা ৫ম স্থানে দেয়া হয়েছে।

অনেক দেশেই নারীকে "Lebelled"  করে দেয়া হয়েছে এই ভাবে যে নারীর ভূমিকা গৃহস্থালি দেখাশুনা এবং পুরুষের ভূমিকা ইনকাম করে আনা। এই ভূমিকা ভাগ করে দেয়ার ফলে একজন নারী যখন ইনকাম করতে যেতে চায় তার সন্তান বা গৃহস্থালি অন্যান্য কাজের সেবা  দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন আনতে হবে।

বৃদ্ধ বয়েসে বাবামাকে দেখার দায়িত্ব ছেলেদের এই জন্য তারা দ্বিগুণ সম্পত্তি পায় এই এক্সকিউজের শেষ হওয়া এখন সময়ের দাবী ।কারন অনেক মেয়ে এখন উপার্জন করে এবং বাবা মাকে দায়। তুরস্ক সহ অনেক দেশে মেয়েরা দাবী তুলতে সক্ষম হয়েছে 'আল্লাহ্‌ ফেয়ার মাইন্ডের' ( Allah is feyar).

নারী সমতার উৎভব  (Women History)ঃ

সমাজ সভ্যতার বিবর্তনের সাথে সাথে দার্শনিক আলোচনার বিষয় বস্তু এবং প্রকৃতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়।

মধ্য যুগের দর্শনঃ

মধ্য যুগের দর্শন চর্চায় ছিল 'স্বাধীন চিন্তার'  অনুপস্থিতিতি। গির্জার প্রাধ্যান্ন ছিল বেশি । এবং মানুষ অন্ধ বিশ্বাস নির্ভর ছিল। তারা অন্ধ বিশ্বাস , আত্মা, পরকাল, মঙ্গল অমঙ্গল যা ধর্মে থাকে তা নিয়েই আলোচনাই প্রাধান্য পেত।

সপ্তদশ এবং অষ্টদশ শতকের বুদ্ধিবৃক্তিক দর্শন যা সমাজের কুসংস্কার দূর করতে সাহায্য করেঃ

সপ্তদশ   শতকে পশ্চিম  ইউরোপের একটি বুদ্ধি বৃত্তিক ও সংস্কৃতিক আন্দোলন আরম্ভ হয়। যার বিষয় ছিল ব্যাক্তি স্বকীয়তা,মানব স্বাধীনতা এবং যুক্তি বাদের প্রতিস্টা ।

এরা হলেন ১) জন লক(John Locke) ব্রিটেন  ২) রুশো (Rousseau) সুইজারল্যান্ড  ৩) কার্ল মার্ক্স (Karl Marx) জার্মান ৪ ) টমাস হবস ( Thomas Hobbes) ৫) মেকিয়াভেলি,ফ্রান্স ৬) Mary Wollstoneerati ব্রিটেন

তাঁদের আধুনিক রাজনৈতিক থিওরি গুলো  স্বাধীনতা, অধিকার, সবায় কে সমান ভাবে দেখা, সামাজিক ন্যায়বিচার, রাষ্ট্রের দায়ভার, sovereignty, সমাজ থেকে শ্রেণি বিভক্তি  তুলে ফেলা, কিছু মানুষ সুবিধা ভোগ করবে এটা সরিয়ে ফেলা, ধর্ম কে দেশ চালানোর ব্যাবস্থা থেকে সরিয়ে দেয়া এবং মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি সাধন।

মেরী Wollstoneerati এর  'মার্ক্সীয়  নারীবাদী' নিয়ে গবেষণায় উঠে এসেছে নারী পরিশ্রম করছেন কিন্তু সম্পত্তি করছেন নিজের নামে। নারী তার মালিক নয়। গৃহসস্থলীর সব কাজ নারী দ্বারা করানো হয় যাতে  পুরুষ এসন থেকে মুক্ত থেকে উৎপাদনশীল কাজ করতে পারে। এই ভাবে উৎপাদন শীল শ্রম থেকে নারীকে বঞ্চিত করে কোন রকম মজুরী ছাড়াই ব্যাবহার করে নারীকে শোষণ করা হয়। গৃহকর্ম এবং বাচ্চা উৎপাদন কে কোন মূল্য দেয়া হয়না এবং তার কোন স্বীকৃতি নাই।

কালচারাল  বিপ্লবের উদ্দেশ্য ছিল বিজ্ঞান এবং সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে মানুষের জ্ঞান বিকাস করা। এবং প্রথাগত বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে মানুষকে মুক্ত করা। সমাজকে মানবিকের পথে পরিচালিত করা। এসময়ের দার্শনিক গন সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারের বিপক্ষে ছিল।

তাদের নেয়া এই চর্চা এবং পদক্ষেপ পরে  সমাজে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে। এই চিন্তা গুলোই পাশচাত্বের জ্ঞান বিজ্ঞান,  সভ্যতা  এবং রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

১৭ এবং ১৮ শতকে ইউরোপে বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপে বুদ্ধি ব্রিত্তিক মুভমেন্টের আভ্যুথান হয়। যাকে বলা হয় 'Age Of Reason' । যার উদ্দেশ্য হল মুক্ত চিন্তার বিকাশ এবং যার পেছনে থাকে যুক্তি পুর্ন চিন্তা ভাবনা ।

স্বাধীন ভাবে চিন্তা ভাবনা মানেই উন্নয়ন, মুক্তচিন্তা এবং  যুক্তি পুর্ন চর্চা।রাষ্ট্রে থাকতে হবে একটি সংবিধান এবং রাষ্ট্র পলিসি থেকে চার্চকে পৃথক করা এই মুভমেন্টের উদ্দেশ্য।

তারপর সমাজ সংস্কার এবং মানব  উন্নয়ন সংবিধানে আনা হয়। তারই অংশ হল নারীকে মূল্যায়ন এবং এই মূল্যায়নের অংশ হিসেবে নারীর শিক্ষা স্বাস্থ্য, সিঙ্গেল মা দের কল্যাণ ,তাদের চাকুরীর সুযোগ করে দেয়া।

একটা দেশের অর্ধেক যদি নারী হয় তারাকে মানব উন্নয়নের অংশে পরিণত না করলে সমাজ উন্নতি সম্ভব নয়।

ইতিহাস লেখা হয় পুরুষ দ্বারা এবং সেখানে থাকতো শুধুমাত্র পুরুষের ভূমিকা। নারী ইনভল্বমেন্ট সম্বন্ধে সেখানে কিছু লেখা থাকতনা এবং যখন উল্লেখ করা হতো তখন থাকতো স্ত্রী, মা, কন্যা এবং উপপত্নী বা মিস্ট্রেস নিয়ে।

'পিতৃতন্ত্র' সমাজ বিনাশের যুক্তিঃ

অনেক নারী বাদী এবং নারী আন্দোলনকারী পিতৃতন্ত্র বিনাশে জন্য ডাক দায়। কারন পিতৃতান্ত্রিক সমাজে একজন পুরুষেই নারীর শোষক হিসেবে কাজ করে।

পিতৃতন্ত্রের  কারণে একজন নারী সম্পূর্ণ ভাবে হয়েছে প্ররোচনা, নির্যাতন, এবং অধিনস্ততার শিকার । পিতৃতান্ত্রিক সমাজে একজন পুরুষ বাড়ির বাইরে গিয়ে বিভিন্ন যোগ্যতা গত পূর্ণতা লাভ করতে সক্ষম সেখানে একজন নারী কেন ঘরের মধ্যে আটকে থাকবে।

'হোম মেকার' 'গৃহিণী' 'হাউস ওয়াইফ' স্টোরি টাইপড ভাবে একটি গৃহপালিত চরিত্র হিসেবে একজন নারীকে চিন্তা করা হয় এই পিতৃ তান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থায়।

এই বিষয়ে প্রচুর গবেষণা হয় এবং দেখা যায় পিতৃতান্ত্রিক কাঠামো ঐতিহাসিক ভাবে নারীকে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে একজন পুরুষ নিজের সুবিধা প্রতিস্টা করে। নারীর জীবন হয় সীমাবদ্ধ ।

এই বৈষম্যপুর্ন অবস্থানের ফলে পুরুষ বাড়ির বাইরে বের হবার সুযোগ পেয়ে নারীর উপর কত্রিত্ব করার সুযোগ পায় । এই কারনেই নারী সম্পুর্ন ভাবে হয়েছে প্ররোচণা,নির্জাতন এবং অধিনস্ততার শিকার ।

এই ভাবে 'পিতৃতান্তিক  ব্যাবস্থ্যা' ব্যাবহার করে নারীকে 'গৃহপালিত' করে রাখার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। নারী পুরুষে সমতা না থাকা এবং গৃহপালিত হয়ে থাকার দরুন নারীর খুব কম চয়েস ছিল নিজেকে বিকাশ করা এবং  তার সাথে ব্যাবসা বাণিজ্য বা চাকুরী পাওয়ার ক্ষেত্রে ।

ব্রিটেনে বিধবাদের অধিকার বৃদ্ধি পায় ১২ শতকের শেষ দিকে এবং আইন দিয়ে জোর  পূর্বক বিয়ে বন্ধ করা হয়  এবং সম্পত্তি ভোগের সুযোগ বাড়ে । ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় ব্রিটেনে আপার ক্লাস বা উচ্চবিত্ত নারী দের মধ্যে শিক্ষিত বেশি ছিল।তাঁদের হাত ধরেই এই আন্দোলন গুলো পরিচালিত হয়।

নারী মুক্তি আন্দোলন (ওমেন লিবারেশন মুভমেন্টঃ)

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর নারী মুক্তি আন্দোলন জোরালো ভূমিকা রাখে। নারী মুক্তি ব্যাপারটি তারা সমস্ত পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে দিতে জোরালো ভূমিকা রাখে ।

নারী অধিকার এবং নারী পুরুষ সমতা ব্যাপারটি ইউনাইটেড ন্যাস্যান এর অন্তর্ভুক্তি করা হয়।এই বিষয় গুলো এগিয়ে নিতে 'জাতী সংঘ টেকসই উন্নয়ন' অনেক গুলো কনভেনসান  আইন পাশ করে। যেমনঃ

১) শিক্ষা ক্ষেত্রে সমতা ,যা ১৯৬০ সালে গ্রহণ যোগ্যতা পায় এবং ১৯৬২ -৬৮ জোরালো ভাবে প্রয়োগ হয় ২) ১৯৭৯ সালে আইন পাশ হয় নারীর বিরুদ্ধে সব রকমের ডিসক্রিমিনেসান বা ভেদাভেদ  বন্ধের ৩) ১৯৯৩ সালে মানব অধিকার তার সাথে নারী অধিকার পাশ হয় ৪) ১৯৯৪ সালে Inter Amirican Conventions On The Prevention ১৯৯৪ এ আইন  পাশ হয় নারীর সাথে সহিংসতা বন্ধের ৫) ইন্টার ন্যাসান্যাল কনফারেন্স অন পপুলেসান, কাইরো,  মিশরে  অনুষ্ঠিত  মিটিং এ  ঘোষিত হয় পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের নারীর অধিকার এবং  সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি ৬) কর্ম ক্ষেত্রে নারী পুরুষে যৌন হয়রানী বন্ধের আইন পাশ হয় ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০২ সালে EU Directive দ্বারা ৭) নারীর উপরে পুরুষের সহিংসতা বন্ধের ঘোষণা আসে কাউন্সিল অব ইউরোপ থেকে।

এই ভাবে ইউনাইটেড ন্যাসান আইন পাশ এবং প্রত্যেক রাষ্ট্রকে তা মেনে চলা ,আইন পাশ , নানা রকমের প্রচার  পরিচালনা, লিফলেট বিতরণ, মিডিয়াতে প্রচার, স্কুল কলেজে ,হসপিটাল এবং হেলথ সেন্টারে বহু মুখি প্রচার দ্বারা মানুষকে শেখানো এবং তার চর্চা করা তার সাথে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে।

লেখক ও গবেষকঃ হুসনুন নাহার নার্গিস, নারী ও শিশু অধিকার কর্মি ,লন্ডন

 

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ