নদী (৯ম পর্ব)

ইঞ্জা ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:৪৪:৩২অপরাহ্ন গল্প ২৪ মন্তব্য

images

ঘরের দরজায় করাঘাত শুনে নদী দরজা খুলে দিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পালাতে চাইলো কিন্তু রনি ওকে ধরে গলা টিপে ধরে বললো, তোর এতো সাহস, তুই কি মনে করিস আমার থেকে বেঁচে থাকতে পারবি?
রনি গলায় চাপ দিতে লাগলো আর নদী বাতাসের খোঁজে খাবি খেতে খেতে বাধা দিতে লাগলো আর এই সময়েই ঘুম ভেঙ্গে গেল ওর, কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো, ক্ষণিকের মাঝেই বুঝতে পারলো ও জীবনের ঘরে আর দুঃসপ্ন দেখছিলো ও, এখনো বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে ও।
কিছুক্ষণ ওই ভাবে থেকে নদী আসতে করে উঠে বসলো, খাট থেকে কষ্ট করে পাটা নামিয়ে এনে ক্রাচটা হাত বাড়িয়ে নিলো, ক্রাচে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ হাফালো এরপর বাথরুমের উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেল।
বাথরুম থেকে বেড়িয়ে দেখিলো নাবিলা উঠে বসেছে, নাবিলা নদীকে দেখে বললো, গুড মর্নিং।
ভেরি গুড মর্নিং সুইটি, রাতে ঘুমের কোন সমস্যা হয়নি তো তোমার?
না কাল রাতে খুব ভালো ঘুম হয়েছে কিন্তু অন্যান্য রাতে ঘুমাতে গেলে ঘুম আসতো না।
কেন কেন?
তুমি গোষ্ট চিনো?
হুম।
গোষ্টের ভয়ে ঘুম আসতে চাইনা কিন্তু কাল রাতে তুমি থাকাতে ভয় পাইনি, মিষ্টি হাসি দিলো নাবিলা।
ওলে ওলে মা আমার রাতে ভয় পায় বলেই নদী ক্রাচে ভর দিয়ে নাবিলার বেডে গিয়ে বসলো আর নাবিলাকে জড়িয়ে ধরলো, সাথে সাথে নাবিলাও জড়িয়ে ধরলো।

জীবন কিচেনে এসে ব্রেকফাস্ট রেডি করছিলো এর মাঝে নাবিলাকে দেখলো নদীকে ধরে নামছে আসতে আসতে, খেয়াল রাখছে নদী যেন পড়ে না যায়, জীবন এগিয়ে গিয়ে সিঁড়ির নিচে দাঁড়ালো, নদী আর নাবিলা নেমে এলে নদীকে ধরে নিয়ে এলো ডাইনিং টেবিলে, টেবিলের পাশে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো আর নিজে গেল ব্রেকফাস্ট আনতে।
বেবি আজকে তোমার জন্য স্পেশাল ব্রেকফাস্ট আছে, নাবিলার দিকে তাকিয়ে বললো জীবন।
রিয়েলি ড্যাড, কি রেডি করেছো?
লটপটি এন্ড পারাটা (পরোটা)।
ওয়াও ড্যাড।
জীবনে টেবিলে প্লেট দিয়ে বাটিতে করে গরম লটপটি আর হটপটে পরোটা এনে দিলো সাথে নিজেও বসে পড়লো।
নদী এক টুকরো পরটা দিয়ে মুরগির লটপটি আয়েশ করে মুখে দিলো, চাবাতে চাবাতে নদী বললো, সেই ঢাকা থাকতে খেতাম আর আজ খেলাম।
কেমন হয়েছে, জীবন জিজ্ঞেস করলো।
অনেক মজা, এক সাথে বলে উঠলো নদী আর নাবিলা আর তা খেয়াল করে দুজনেই খিলখিল করে হেসে দিলো।
আসলেই খুব ভালো রান্না করেছেন আপনি, তা এই রান্না শিখেছেন কার থেকে, নদী জিজ্ঞেস করলো।
আমার এক বন্ধুর ওয়াইফের কাছ থেকে, উনি অবশ্য আজকে আসবেন আপনার সাথে দেখা করার জন্য, পরিচিত হয়ে নেবেন।
জি অবশ্যই।

বেবি আর ইউ রেডি?
ইয়েস ড্যাড, জানো আজ নদী আন্টি আমাকে রেডি করে দিয়েছে, দেখো চুল গুলো কতো সুন্দর করে বেঁধে দিয়েছে আর তুমি উল্টাপাল্টা বাঁধতে, তুমি কিছুই জানোনা।
আসলেই সুইট হার্ট, আমি কিছুই জানিনা।
ঘরের কলিং বেল বেজে উঠাই জীবন গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
ভাবী আসুন আসুন, আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি।
ভাই নদী কই?
এই যে আসুন ড্রয়িংরুমেই আছে, জীবন সোহেলের ওয়াইফকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে নদীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
হাই নদী তোমার অনেক কথা শুনেছি জীবন ভাইয়ের কাছ থেকে, সরি আমি তুমি করেই বলছি কারণ তুমি আমার বোনের বয়সি।
অসুবিধা নেই আপা, নদী উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো।
আপা নয় সোফিয়া, যদিও আসল নাম সুফিয়া কিন্তু এখানকার মানুষ সুফিয়া বলতে পারেনা বলে সোফিয়া, আমিও বিরক্ত হয়ে সোফিয়াই হয়ে গেছি, হাসতে হাসতে বললেন সোফিয়া।
ভাবী আমি মেয়েকে নিয়ে বেরুচ্ছি, নাবিলার স্কুল ছুটি হলে স্কুলের গাড়ী বাসার সামনে দিয়ে যাবে।
ঠিক আছে ভাই, আপনারা যান আমরা দুবোন মিলে গল্প করি।
আচ্ছা আসি ভাবী, নদী ভাবীকে দিয়ে গেলাম, আমরা আসি।
জি আল্লাহ্‌ হাফেজ।
আল্লাহ্‌ হাফেজ।

জীবন সন্ধ্যায় যখন ফিরলো তখন দুই হাত ভর্তি বড় বড় পেকেট নিয়ে প্রবেশ করলো ঘরে, সব নিয়ে কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ খুলে পেকেট থেকে গরুর মাংস, মুরগি, দুধ, জুস সহ দরকারি সব কিছু এনে ফ্রিজে রাখলো।
তিনটা আইস্ক্রিম বাটিতে আইস্ক্রিম নিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে বললো, হাই কেমন আছেন আজ, একটা আইস্ক্রিম মেয়েকে দিয়ে আরেকটা নদীকে দিলো।
জি ভালো, আজ খুব ভালো সময় কেটেছে সোফিয়া ভাবী আর সুইটির সাথে।
জীবন নিজেরটা নিয়ে বসে পড়লো সিঙ্গেল এক সোফায় আর বললো, তাই, খুব ভালো।
জীবন।
জি বলুন।
ধন্যবাদ আপনাকে এতো কিছু করার জন্য।
আবার বলছি নদী, আপনি এক অজানা অচেনা মানুষকে সেদিন বাঁচিয়ে ছিলেন আর আপনি আমার অচেনা নন, ধন্যবাদ আপনাকে আমার নতুন জীবন দেওয়ার জন্য।
আরে কি যে বলেন না, নদী মিষ্টি হেসে বললো।
আসলে জানেন, ওইদিন আমি তো হাসপাতালে আর আমার মেয়েটা সারা রাত একা শুধু ছটফট করে কেঁদেছে একা একা, পরদিন সকালে সোফিয়া ভাবী ল্যান্ড ফোনে ফোন করে জানতে পারে আমি সারা রাত আসিনি আর মেয়ে একা আর উনি দেরি না করে নিজে চলে আসেন মেয়ের কাছে সাথে সোহেলকে পাঠায় আমার খবর নিতে, সোহেল আমাকে খুঁজে পায় দুপুরের পরে।
নদীর চোখ দিয়ে পানি ছলছল করে উঠে।

আচ্ছা এখন বলুন রাতে কি খাবেন, জীবন জিজ্ঞেস করলো?
সোফিয়া ভাবী রান্না করে দিয়ে গেছেন, নদী বললো।
তাই, আচ্ছা তাহলে রাইস খাবেন নাকি রুটি?
রাইস।
ওকে, বেবি ইউ ওয়ান্ট রাইস অর টরটিলা?
রাইস, নাবিলা জবাব দিলো।
জীবন কিচেনে গিয়ে চাল ধুয়ে নিয়ে চুলায় চড়িয়ে দিয়ে চলে এলো ড্রয়িং রুমে।
কি দেখছেন, নদীকে জিজ্ঞেস করলো।
বাংলা একাত্তর নিউজ চ্যানেল।
নদীর ফোন বেজে উঠায় নদী ফোন টেবিল থেকে নিয়ে ডায়ালে দেখে বললো, বাড়ী থেকে এরপর রিসিভ করলো, হ্যালো।
তুই এখন কেমন আছিস?
মা আছি ভালো, ক্রাচ নিয়ে হাটছি, বুকের ব্যান্ডেজ এখনো খুলে নাই আগামী সপ্তাহে খুলবে?
কেন মিথ্যে বলছিস, দুই চারটা থাপড়ে এইসব হয়ে গেল?
কি বলছো তুমি এইসব মা, নদী বললো।
জীবন মেয়েকে ইশারা করলো সরে যেতে আর নাবিলাও উঠে চলে গেল ড্রয়িংরুম থেকে।
নদীর মা বললেন, রনি এসেছিলো আজ।
ওর এতো বড় সাহস হলো কিভাবে বাসায় যায়, নদী পাল্টা প্রশ্ন করলো?
আমিই ওকে ডেকেছিলাম, ও দেশে এসে ফোন দিয়েছিলো।
মা তোমার বিশ্বাস হয়না আমি যে হসপিটালে ছিলাম?
ও তো বললো তুই হসপিটালে নয়, তোর যে বন্ধুর কারণে মেরেছে, সেই বন্ধুর বাসায় ছিলি আর আছিস।
আর তোমার বিশ্বাস হয়েছে ওর কথাগুলি, তুমি কি মা?
আমি কি মানে?
তুমি কি আমার মা নাকি সৎমা?
কি তোর এতো বড় সাহস, তুই আমাকে সৎমা বলিস?
বলেছি, তুমি যদি সত্যি আমার মা হতে, আমাকে পেটে ধরতে, তাহলে আমার সম্পর্কে এইসব চিন্তা করতে না, আমি আহত, মরেই যেতে বসেছিলাম আর তোমার মনে আমার জন্য কোন আফসোস পর্যন্ত নেই, দুঃখ হচ্ছে আমার।
নদী শুন, নরম হয়ে উঠলেন নদীর মা, শুন নদী দুনিয়াদারী তুই এখনো চিনিসনা, রনি কিন্তু ভালো ছেলে, রেগে গিয়ে এমন করে ফেলেছে।

মা তোমার বিশ্বাস হোক আর না হোক তবুও বলছি, আমি এইখানে আসার পর দুই মাস পর থেকেই ও আমাকে মারধোর শুরু করেছে, আমি শুধু বাবার কথা তোমাদের কথা চিন্তা করে তোমাদের এইসব বলিনি কিন্তু এইবার তো সে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টায় করেছে আর তোমার বিশ্বাস না হয় তাহলে আমার হসপিটালের সব কাগজপত্র তোমাকে ইমেইলে পাঠাচ্ছি, তোমরা নিজ চোখে দেখো কি হয়েছিলো আমার।
শুন নদী, জামাইরা অনেক সময় ভুল করে আর আমাদের এইসব সহ্য কর‍তে হয়, নদীর মা বললেন।
মা আমি রাখছি, আমার ভালো লাগছেনা।
না রাখিস না শুন।
মা তুমি যা বলছো সেগুলো শুনার মতো মন মানুষিকতা আমার নেই, কোর্ট যদি আমাকে নিষেধ না করতো তাহলে আমি দেশেই চলে আসতাম, তাহলে দেখতে নিজ চোখে আমার কি অবস্থা কিন্তু আমিমি যেতে না পারার সুযোগে সে গিয়ে তোমাকে গিয়ে ধরেছে।
নদী ছেলেটা খুব আফসোস করছে, এইখানে কান্নাকাটি করছিলো সারাক্ষণ।
আর তুমি ওর মায়া কান্না দেখে গলে গিয়েছো, ছিঃ মানুষ চিনোনা, রাখি বলেই নদী ফোন কেটে দিলো কিন্তু নদী জানেনা ওই মুহুর্তে রনি ওর মার সামনেই বসে আছে।

.................. চলবে।
ছবিঃ Google.

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ