নদী (৬ষ্ট পর্ব)

ইঞ্জা ২৩ জানুয়ারি ২০১৭, সোমবার, ১০:৩৩:৫০অপরাহ্ন গল্প ৩৭ মন্তব্য

images-12

 

 

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, নদী ধন্যবাদ দিলো জীবনকে।
ধন্যবাদ কেন?
এই যে আমার জীবনটা বাঁচালেন।
আপনি নিজেই তো আমাকে বাঁচিয়ে ছিলেন।
নদী মিষ্টি একটা হাসি দিলো, দরজায় নক শুনে মুখ তুলে চাইলো, দেখলো চার পাঁচ জনের একটা দল এসে প্রবেশ করলো আর সবাই বাঙ্গালি।
সালাম ভাবি, আমি রাশেদ রনির বন্ধু আর আমার ওয়াইফ সুমনা।
নদী অবাক হয়ে গেল।
রাশেদ আবার বললো, ভাবি বাকিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই, এ হলো করিম ভাই আর ভাবি, ও হলো সোয়েব, আমরা সবাই এইখানেই থাকি, আপনার খবর পেয়ে দেখতে এলাম।
আমি তো আপনাদের চিনিনা?
আসলে রনি আমাদের দাওয়াত না দেওয়ায় আমরা বাসায় যায়নি কিন্তু রনির সাথে প্রতি সপ্তাহেই আমাদের দেখা হয়, আড্ডা হয়।
জীবন একটু দূরে সরে গিয়ে দেখতে লাগলো আগুন্তকদের।
তা আপনাদের কে পাঠিয়েছে?
কে আবার আপনার হাসবেন্ড পাঠিয়েছে, সোয়েব বললো।
আর সে কই, নদী পাল্টা প্রশ্ন করলো।
আসলে রাগের মাথায় এমন কান্ড করেছে যে সে খুব লজ্জিত হয়েছে আর ওকে তো পুলিশ এরেস্ট করেছে।
নদী চুপ করে রইল।
ভাবী আসলে রনি ভাই খুব ভালো মনের মানুষ কিন্তু মেজাজ হয়তো ঠিক রাখতে পারেনি তাই এমন কাজ করে ফেলেছে, রাশেদের ওয়াইফ সুমনা নদীর বিছানার পাশে এসে বললো।

নদী চুপ করে রইল দেখে সুমনা বললো, ভাবী কিছু বলছেন না যে?
কি বলবো বলুন, আপনাদেরকে তো আমি চিনিনা, আপনাদের কি বলার আছে?
বলবেন অবশ্যই বলবেন, করিমের ওয়াইফ এগিয়ে এলো বলতে বলতে।
তা এখন কি করতে বলেন আমাকে, নদী জিজ্ঞেস করলো।
ভাবী রনি কিন্তু খুব ভালো ছেলে, সে কখনোই কারো সাথে তর্ক পর্যন্ত করেনা কিন্তু সে এমন কাজ করে ফেলবে ভাবতেই পারছিনা, শোয়েব বললো।
ভাবী আপনি রনি ভাইকে মাফ করে দিন প্লিজ, রাশেদ বললো।
ছিঃ ছিঃ আপনাদের লজ্জা লাগলোনা এমন কথা বলতে, নদী ক্ষেপে গেল?
না না ভাবী আপনি এমন কথা কেন বলছেন, রনি আপনার হাসবেন্ড, রাশেদের ওয়াইফ বললো।
দেখুন আপনাদের লজ্জা শরম বলতে কিচ্ছু নেই, সে আমাকে কিভাবে মেরেছে আপনারা নিজেরাই দেখছেন, আমি মরেই যেতাম যদি আমাকে উদ্ধার করা না হতো আর আপনারা লজ্জার মাথা খেয়ে বলছেন ওকে মাফ করে দিতে।
ভাবী আপনি শান্ত হোন, সুমনা বললো।
শান্ত হওয়ার কি আছে, সে মানুষ খুন করবে, বউকে প্রতিদিন মারধর করবে, পিটিয়ে মরার জন্য ফেলে রেখে যাবে আর আপনারা আসছেন ওকে মাফ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করার জন্য?
আপনিও তো দোষ করেছেন আর দোষ করলে হাসবেন্ড কি মাথা ঠিক রাখতে পারে, রাশেদ গলা চড়ালো।
এই গলা চড়াবেন না এইটা হসপিটাল, নদী উত্তেজিত হয়ে বললো।
ভাবী আপনি তো ওকে ছাড়া অচল এইখানে, একা হয়ে পড়বেন, রাশেদ গলা নামিয়ে বললো।
আমি শিক্ষিত মেয়ে, আমি যে কোন ভাবে থাকতে পারবো কিন্তু ওকে মাফ করবোনা।
আপনি মাফ না করলে কি হবে, ও কি বেরুতে পারবেনা মনে করেন, আমরাই ওকে বের করে নিয়ে আসবো এরপর কি সে আপনাকে ঘরে নিয়ে যাবেনা, নাকি নিতে পারবেনা, রাশেদ বললো।
সেইটাই সময় বলে দেবে, আপনারা দয়া করে চলে যান আমি রেস্ট করবো আর প্লিজ আপনারা আর আসবেন না এইখানে।
ঠিক আছে এখন যাচ্ছি কিন্তু ভাবী যেহেতু এইখানে আমাদেরও আসতে হবে প্রতিদিন, বলেই রাশেদ সবাইকে নিয়ে বেড়িয়ে গেল গজগজ করতে করতে।

দেখলেন দেখলেন কি তাদের সাহস আমাকে ম্যানেজ করতে আসছে, নদী জীবনের উদ্দেশ্যে বললো।
জীবন এগিয়ে এসে বললো, আপনি শান্ত হোন, প্লিজ শান্ত হোন।
ওরা নাকি আবার আসবে, ব্যাথাতুর চোখে তাকালো জীবনের দিকে।
ওরা আসবে বললে তো আসতে পারবেনা এই দেশের আইন কিন্তু কঠিন।
কিভাবে?
আমি পুলিশকে ইনফরম করছি যেন ওরা বিরক্ত করতে না পারে তেমন ব্যবস্থা করার জন্য।
পারবেন, নদী প্রশ্ন করলো।
অবশ্যই, এইটাই নিয়ম এইখানে।
আর রনি?
উনাকে যদি বন্ড দিয়ে রিলিজ করে নেয় উনারা তাহলে কেইস চলা পর্যন্ত সে আপনার আসে পাশে আসতে পারবেনা কারন এই কেইসটা এট্যেম টু মার্ডার কেইস।
আপনাকে কষ্ট দিচ্ছি, নদী বললো।
জীবন মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো, যে আমার জীবন রক্ষা করেছে তার জন্য এইসব করা কোন বিষয় না, আপনি রেস্ট করুন আমি আসছি।
চলে যাচ্ছেন?
নাহ আপনার সিকিউরিটির ব্যবস্থা করেই ফিরে আসবো।
ওকে ধন্যবাদ।
ধন্যবাদের কিছুই নেই, আসছি।

পনেরো মিনিট পর জীবন ফিরে এলো ওর মেয়ে নাবিলাকে নিয়ে।
নাবিলাকে দেখে নদী খুব খুশি হলো, বললো হ্যালো সুইটি তুমি কেমন আছো?
নাবিলা দৌড়ে নদীর বেডের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো আর বললো, নদী আন্টি আমি শুনেছি তুমি অসুস্থ তাই তোমাকে দেখতে এসেছি।
রিয়েলি হাউ সুইট বলে নদী নাবিলার গাল ছুঁয়ে নিজ মুখে চুমু খেলো আর জীবনকে জিজ্ঞেস করলো, কার সাথে এসেছে, আপনিই নিয়ে এসেছেন?
না আমার বন্ধু ওকে স্কুল থেকে পিক করে দিয়ে গিয়েছে।
আচ্ছা।
শুনুন, পুলিশ আসতেছে আপনার কাছ থেকে ডিটেল শুনে ওরা ব্যবস্থা নেবে, জীবন জানালো।
ঠিক আছে।
সুইট হার্ট এইখানে একটা থিম পার্ক আছে, তুমি যদি চাও আমি ওখানে তোমাকে এক ঘন্টার জন্য দিয়ে আসি পরে এসে নিয়ে আসবো, ওকে?
ওকে ড্যাড ল্যাটস গো, নাবিলা খুশি হয়ে বললো।
আমি আসছি বলে জীবন মেয়েকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।
পুলিশ এলে জীবন নদীকে সহায়তা করলো, পুলিশের সার্জেন্ট নদীকে ইংরেজিতে বললো, কেউ আপনাকে দেখতে আসলে আমরা বাধা দেবোনা কিন্তু এখন থেকে আপনার সাথে যেই দেখা করতে আসুক, তারা আপনার পারমিশন ছাড়া আপনার রুমে আসতে পারবেনা।
আর আমার হাসবেন্ড?
বিষয়টা কোর্ট বুঝবে আমরা নয়।
ঠিক আছে, ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।

পরদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় জীবন মেয়েকে বন্ধুর বাসায় রেখে চলে এলো হসপিটালে, রুমের কাছাকাছি এলে দেখলো এক বিদেশি মহিলা নদীর রুম থেকে বেড়িয়ে গেল, জীবন রুমের মধ্যে প্রবেশ করলে নদী মিষ্টি হেসে বললো, কেমন আছেন?
জি ভালো আর আপনি?
যেমন দেখছেন, পেইন একেবারেই যাইনা।
এতো তাড়াতাড়ি যাবেনা, অবশ্য ওরা আপনাকে আর সপ্তাহ খানেক পর রিলিজ দেবে।
রিয়েলি?
হুম তাই বললো, আচ্ছা এক মহিলাকে দেখলাম বেরুতে?
আমার শপ ওনার, আমি ফোন দিয়ে ইনফর করায় দেখতে এসেছিলেন।
হুম।
কিন্তু উনি বাধ্য হয়ে নতুন কাউকে রাখবেন বলেছেন আমার জায়গাতে।
ওহ সরি।
উনার বা কি করার আছে, নদী মন খারাপ করে বললো।
আপনি কি আপনার বাড়ীতে জানিয়েছেন, জীবন জিজ্ঞেস করলো।
না না বাড়ীতে বলবোনা, আৎকে উঠলো নদী।
জীবন নরম সুরে বললো, উনারা আপনার প্যারেন্টস, উনাদের না জানালে অসুবিধা হবে, দেখুন এইসময় আপনার পাশে উনাদের দরকার।
আমার বাবা হার্টের রুগী, আমার কথা শুনলে উনি মারাই যাবেন।
তাহলে আপনার মাকে বলুন।
মা যদি বাবাকে বলে দেয়?
আপনি উনাকে বলবেন যেন না বলেন।

নদীকে বুঝিয়ে বাড়ীতে ফোন করালো জীবন।
নদী ফোন দিলো বাড়ীতে, অপর পাশে ওর বাবার কণ্ঠ শোনা গেল।
বাবা কেমন আছো, নদী জিজ্ঞেস করলো।
আছি মা ভালো আছি, তুই কেমন আছিস?
ভালো বাবা, কি করছো?
এই খেতে বসবো এখন।
তাহলে তুমি খেতে বসে যাও, তোমার সাথে পরে কথা হবে, তুমি মাকে দাও।
কি কোন সমস্যা মা?
না বাবা কি সমস্যা, তুমি যাও খেতে।
ঠিক আছে তাহলে তোর মার সাথে কথা বল, বলেই ফোনটা নদীর মাকে দিলেন।
হ্যালো নদী কেমন আছিস তুই, নদীর মা জিজ্ঞেস করলেন।
মা বাবা কি খেতে গেছেন?
এইতো খেতে বসলো।
তুমি বাবার পাশ থেকে সরে গিয়ে রুমে যাও, আমার কিছু কথা আছে।
একটু পর ওর মা বললো, হাঁ চলে এসেছি তুই বল।
মা আমি যা বলবো তাতে তুমি রিয়েক্ট করবেনা, জানো তো বাবার হার্টের অবস্থা।
নদীর মা গলা নামিয়ে বললেন, কি হয়েছে বল তো।
মা আমি আজ এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে?
কি কি বলছিস তুই, আতংকিত হলেন নদীর মা।
মা তুমি এমন করলে কেমনে চলবে বলো?
কেন কি হয়েছে তোর?
নদী সব খুলে বলতে লাগলো।

..................... চলবে।
ছবিঃ Google.

 

৫ম পর্বের লিংকঃ http://www.sonelablog.com/%e0%a6%a8%e0%a6%a6%e0%a7%80-%e0%a7%ab%e0%a6%ae-%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac/#comment-145809

0 Shares

৩৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ