নতুন পৃথিবী (২)

ইঞ্জা ১২ এপ্রিল ২০২০, রবিবার, ০৯:২৮:৪৬অপরাহ্ন সমসাময়িক ৪৭ মন্তব্য

গতবার লিখেছিলাম করোনার প্রভাবে বিশ্বের কি কি চেইঞ্জ আসছে, এইবারও তেমন কিছু নিয়ে শুরু করছি, আমরা সবাই জানি পুরা বিশ্ব এখন মরণব্যাধি করোনার সাথে যুদ্ধ করে চলেছে, কোথাও লকডাউন তো কোথাও কারফিউ, এ পর্যন্ত এই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এক লক্ষ পনেরো হাজারের অধিক মানুষ আর আক্রান্ত দশ লক্ষাধিক https://www.worldometers.info/coronavirus/?utm_campaign=homeAdUOA? ,

চারিদিকে এখন হাহাকার চলছে, গবেষকরা প্রাণান্ত চেষ্টা করে চলেছে কোভিড-১৯ করোনার ঔষধ বানানোর জন্য, আশা করা যাচ্ছে এই বছরের মধ্যে ঔষধ হাতে চলে আসবে।

এদিকে পুরা বিশ্বের পরিবেশে বিপুল পরিবর্তন এসেছে যার কিছু অংশ এইখানে তুলে ধরছি।

বাংলাদেশঃ

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন এসেছে, যেইখানে বায়ু দূষণে ঢাকা এক নম্বরে ছিলো, সেই ঢাকা এখন ২৩তম স্থানে ফিরে গেছে, এর কারণ দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ঢাকা শহরে যানবাহন বন্ধ থাকার কারণে বায়ু দূষণ কমে গেছে, সাথে সাথে ঢাকার গাছপালা গুলো সবুজে সবুজ হয়ে গেছে, আপনি যেদিকেই তাকাবেন সেদিকেই চোখে পড়বে।
এদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর রঙ না বদলালেও দূর্গন্ধ চলে গেছে, হয়ত এইভাবে চলতে থাকলে আরও কিছু বদল আসবে বুড়িগঙ্গায়, তিস্তা সহ প্রায় সব নদীতেই বেশ কিছু বদল এসেছে শুধু মাত্র কলকারখানার দূষিত বর্জ্য নদীতে পড়ছেনা বলেই, পড়বে কোথা থেকে, সবই তো বন্ধ।

বাংলাদেশের বড় বড় শহর গুলোরও তদরূপ অবস্থা, এদিকে কক্সবাজারে সমুদ্রে যেসব ডলফিন খেলছিলো, দুঃখজনক ভাবে জেলেরা তাদের পিটিয়ে মেরে ফেলেছে, কিন্তু কক্সবাজারে এখন জেলেদের সতর্ক করা হয়েছে যেন আর ডলফিন না মারে, কিন্তু ক্ষতি তো হয়েছেই।
সবচেয়ে লক্ষণীয় যে কক্সবাজারের বালিয়াড়িতে হারিয়ে যাওয়া লতা গাছ যাহা বালিয়াড়িরি সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা রাখে, সেই লতা গাছ গুলো আবার জন্মাচ্ছে, তাও বিপুল পরিমানে, এই লতা গাছ গুলো বালি আটকে আটকে ছোটখাটো বালির পাহাড় সৃষ্টি করে যাহা ঝড় জলোচ্ছ্বাসের সময় সৃষ্ট বন্যাকে বাধাগ্রস্ত করে অনেকটা বাঁধের মতোই ধরতে পারেন,উক্ত লতা গাছ রক্ষার্থে সরকারের উচিত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এছাড়া সমুদ্র এলাকা গুলোতে লাল এবং সাদা কাঁকড়ারায় ভরে গেছে, এরা সমুদ এলাকার জীব বৈচিত্র ফিরিয়ে এনেছে, এদের সাথে সাথে ফিরে এসেছে সামুদ্রিক পাখিরা, ফিরে আসছে সামুদ্রিক কচ্ছপরা, এইসবের ফিরে আসা আগে পর্যটকদের কারণেই থমকে গিয়েছিলো।
সাথে সাথে সমুদ্রের পানি তার রঙ ফিরে পাচ্ছে, সমুদ্রের দূষণ মুক্ত হয়ে ফিরে আসছে।

বিশ্বঃ

সারা বিশ্বেই অনেক পরিবর্তন এসেছে লকডাউনের কারণে, দূষণ বন্ধ থাকায়, কলকারখানা স্থবির থাকায় বায়ু দূষণের মাত্রা প্রায় নেই হয়ে গিয়েছে।
আগেই বলেছিলাম ওজোন স্তর এখন বদলাচ্ছে, তার ছিদ্র অনেকটাই ঠিক হয়ে আসছে, মেরুর বরফ গলা বন্ধ হয়ে এসেছে, আগে আমেরিকার আকাশে তারা দেখা যেতোনা, এখন সপ্তর্ষি তারা সহ সকল তারাদের দেখতে সমস্যা হচ্ছেনা, শুধু কি আমেরিকা, বিশ্বের অনেক দেশ থেকেই তারাদের দেখা পাওয়া এখন রীতিতে পরিণত হয়েছে, আর এক বছর যদি এইভাবে চলতে থাকে তাহলে আজ থেকে পাঁচশো বছর আগের পৃথীবি যেমন ছিলো, তেমনই অবস্থায় ফিরে যাবে।
বিশ্বের ফুসফুস খ্যাত আমাজন ফিরে যাচ্ছে তার পুরাতন চেহেরাতে, তদরূপ ভাবে বিশ্বের সকল বন ফিরে পাচ্ছে তার আদি রূপ।

সবচেয়ে মজার বিষয়টা কি জানেন?
আজ থেকে কয়েক সপ্তাহ আগে এই পৃথীবি তীব্র ভাবে কাঁপতো, এই কাঁপাকাঁপি হওয়ার কারণ আমরাই, আমরা তখন প্রচন্ড গতিতে বড় ছোটো গাড়ী ছুটাতাম সারা বিশ্বে, চলতো হাইস্পিড, লোস্পিড ট্রেইন, চলতো উড়ো জাহাজ থেকে শুরু করে বড় বড় পানির জাহাজ, যা এখন বন্ধ, চলতো বড় বড় দানবাকৃতির কলকারখানা, আমরা চলাফেরা করতাম, দানবের বংশধর বলে কথা।
এখন আমাদের এইসব চলাচল বন্ধ প্রায়, ফলশ্রুতিতে পৃথীবিও শান্ত হয়েছে, কাঁপাকাঁপি বন্ধ হয়ে গেছে, এতে লাভ হয়েছে আমাদের, কিভাবে?
খেয়াল করে দেখুন এখন কয়টা বড় ভূমিকম্পের খবর শুনেছেন?
গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন, সকল ধরণের ফল্ট যা ভূমিকম্পের জন্য দায়ী তা এখন অনেকটা থেমে গেছে বা ধীর হয়ে গিয়েছে, কি ভালো না?

করোনার দাপটে দীর্ঘ লকডাউন পৃথিবীর প্রায় অর্ধেকাংশে, যার জেরে দূষণের অভিশাপকে কিছুটা রোধ করা গিয়েছে বলে হাতে-কলমে প্রমাণ মিলছে। কিন্তু সত্যিই কি তাই?
এরই মধ্যে আরেক আশঙ্কার কথা শোনাল পরিবেশ বিজ্ঞানীদের একটি দল। মাসখানেক ধরে সুমেরু অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলের ওজন স্তরে তৈরি হয়েছে একটি বড়সড় ছিদ্র। যার কারণ এখনও স্পষ্ট নয় তাদের কাছে।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ESA) একদল বিজ্ঞানীর মতে, ওজন স্তরে এত বড় মাপের ছিদ্র তৈরি হওয়া ব্যতিক্রমী ঘটনা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়ছে। আর এই ছিদ্র পৃথিবীর স্বাস্থ্যে বড়সড় প্রভাব ফেলবে। ওজন স্তরের কার্যকারিতা সম্পর্কে আমরা সকলেই ওয়াকিবহাল।
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে, তার ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। এখন মাত্রাতিরিক্ত দূষণের জেরে এমনতিই পাতলা হচ্ছে ওজন স্তর। তার উপর আবার এত বড় ছিদ্র তৈরি হওয়ায় অতিবেগুনি রশ্মি বাধাহীনভাবে পড়বে সরাসরি ভূপৃষ্ঠের উপর। তার প্রভাব যে কী মারাত্মক হতে চলেছে, তা নিয়েই চিন্তিত বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু কেন ওজন স্তরে এই ক্ষত? বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, দূষণ কমতে থাকায় মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা এবং বায়ুমণ্ডলে তেমন পরিবর্তন হচ্ছে না। উষ্ণ আর শীতল বায়ুর সংঘাতে মেরু ঘূর্ণাবর্তও কম। এই ঘূর্ণাবর্ত যত হয়, তত ঝঞ্ঝা থেকে বাঁচতে ওজন স্তরের বিস্তারও ঘটে। কিন্তু ঘূর্ণাবর্ত না থাকলে, বায়ুমণ্ডলের নির্দিষ্ট স্তরে ওজন গ্যাস থেকে যায়। ফলে তাকে ভেদ করা সহজ। এখন যা হচ্ছে।
তবে এই ঘটনার রেশ কতটা পড়বে পৃথিবীর আবহাওয়ার উপর কিংবা এই ছিদ্র পরে কীভাবে মেরামত হবে, সেই উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীদের একাংশ। - সূত্রঃ ঢাকা টাইমস/২৪

এরপরেও আশা করছি দ্রুত এই ছিদ্র আপনা আপনিই ভরাট হয়ে যাবে।

আমার মতে সকল দেশের জনগণ এবং তাদের সরকার একত্রিত হয়ে করোনার প্রকোপ বন্ধ হলে পৃ্থীবির এইসব বদলে যাওয়া প্রকৃতিকে এইভাবেই রাখতে তৎপর হওয়া উচিত, বায়ু দূষণ যেন বৃদ্ধি না পাই তার ব্যবস্থা করাটা খুবই জরুরী, আমাদের মনে রাখতে হবে এই প্রকৃতিই পারে আমাদেরকে রক্ষা করতে, পারে আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের সুন্দর এক পৃথীবি উপহার দিতে।
আসুন আমরা সবাই এই সুন্দর প্রকৃতিকে বাড়তে দিই।

সমাপ্ত।।

ছবিঃ গুগল।

জনস্বার্থেঃ

0 Shares

৪৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ