দ্বিপ্রহরের নীল ডানা

রিতু জাহান ২৩ মার্চ ২০১৯, শনিবার, ০৫:২৫:৫৪অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৬ মন্তব্য

 

এখন রাতের কোন প্রহর? ঠিক ঠাহর করতে না পারলেও বুঝতে পারছি, এখন রাতের দ্বি-প্রহর। কারণ, তিনি এসে বসেছেন তার সে চির আপন ডালে। কয়েকদিন থেকেই বুঝতে পারছি এখানে তিনি বসে থাকেন আমার পাহারায়। আজ আর খুলছি না থাই গ্লাস। বলেছিলাম বাঁশি শিখে আসতে। অন্তত কিছু শব্দ ধরে আনতে। আনে নি জানি। তাই তো চুপ করে বসে আছে। জানি একটু পর পর পাতায় সে খসখস শব্দ তুলবে। ডানা ঝাপটাবে।
সেদিন বললাম, চুপ করে বসে থাকো। উল্টা নাক দেখালো আমাকে!! বলেই দিলো মুখের উপর,'প্রাচীন পদ্ধতিতে গার্হস্থ্য জীবনের সাদাসিধে সুখ আমি কেনো উপভোগ করছি না! শিল্পী সত্তা মনের এক আফসোস আছে নাকি। বিজ্ঞান যতো সহজে স্বীকৃতি পায় শিল্প সাহিত্য চর্চা ততো সহজে স্বীকৃতি পায় না নাকি। আবার বিজ্ঞানমনে আবেগ নেই তাই আবেগের জটিলতা নেই!
কি হবে এমন ছাইপাশ লিখে! বই বন্ধ করো। এসো কান পাতো। পাতার এক বাঁশি বানিয়েছি।'
বুঝেছি, যতোক্ষণ এ গ্লাস টেনে খুলব না ততোক্ষণ সে এমন প্রলাপ বকবে।
খুলে দিলাম। কিন্তু জানি আসবে না ও ডাল ছেড়ে। একচুলও এখন নড়বে না।
গান ছাড়লাম।
'কেনো যাও জলের কাছে, কেনো জল এ মন টানে।'
জোরে সে এবার ডানা ঝাপটালো। বুঝেছি মেজাজ খারাপ তার।
জিজ্ঞেস করলাম কোন গান?
'হাম তেরে শহরমে আয়েহে মুসাফির কি তারাহ্?'
মুখ ভাঙ্গালাম। আগের সেই অনুভূতি কি আছে তোমার?
আমাকে পাবার সেই আকুলতা?
দলচ্যুত এক পাখি আমার। আমার রাতের পাখি। আমার নির্জনতার পাখি। এ পাখির কি নাম দিব ভেবে ভেবে সেদিন তার ডানায় লিখে দিলাম তিন অক্ষরের এক শব্দ।
তার জন্য আমার উদ্বেগ। এ উদ্বেগে সে যায় না ছেড়ে এ ডাল। এ সব উদ্বেগের মনস্তত্ব মোটেও সরল নয়। আমার উদ্বেগের কারণ তার জানা আছে। জানে, ভালবাসি। তাই নির্ভয়ে বসে থাকে। তার অপেক্ষায় আমি বসে থাকি জীবন ছন্দের সকল তাল সামলে। কোথায় কোথায় ঘুরে ফিরে উড়ে আসে ক্ষণিক কিছু সময়ের জন্য। এ যেনো 'শ্যামলিয়ার প্রেমাঙ্গনে জিন্দা পাখির বিলাসী প্রেম।'
নিরব অপেক্ষার প্রহর গুনে আমার অভিমান তখন চরমে। আমি করি রাগ সাথে কিছু অভিমান আর সে মুচকি হাসে, দেখে সে তাতে মিষ্টি ভাব। সে জানে তার এ মুচকি হাসিতে আমার প্রাণ জুড়ানো। অভিমান সব গলে তখন একাকার। দুজনেই দৃষ্টির সোহাগ পেতে ব্যাকুল। মৃদু অভিমান প্রকাশের এক লাভ আছে। মিথ্যে হোক কিংবা সত্যি হোক কিছু আবেগ ঝরে পড়ে তাতে। এতে হাজার তারা সামনে ডোবে। চাঁদ হাসে।
স্নায়ুর স্বাস্থ্যনীতি সম্বন্ধে এখনো বিশেষ গবেষণা আমার হয় নি। হলে অনেক লাভ হতো। আমার জন্য তার সকল ভালবাসার প্রকাশ পেতে শরীর মেরে ফেলে মস্তিষ্ক নামক কারিগরকে জীবিত রেখে চোখ বন্ধ করে তার সকল আকুতি জেনে নিতাম।
জীবন যে তিনটি জিনিসের উপর দাঁড়ানো তার একটি মস্তিষ্ক নামক কারিগর।
শুনেছি হৃদয় মরে যায় হৃদপিন্ডের রক্ত সঞ্চালন কমে গেলে সেই সাথে শরীর। মস্তিষ্ক নামক কারিগর তখনও নাকি কিছু অনুভূতি জাগিয়ে রাখে। অন্তত সে সময়টুকু তার আকুলতা দেখার জন্য এমন একটা সুযোগ চাই। সামনে সে বসে থাকুক সে মুহূর্তটায়। হাতটা জোরে চেপে ধরে চিৎকার করে বলুক আবারো, তোমাকে ছাড়া একমুহূর্ত থাকা যায় না গো!'
তার সে ইচ্ছাশক্তির জোরে হৃদপিন্ডে রক্তের গতির বেগ জেগে উঠবেই জানি।
তার আবেগ ঝরে পড়া মুহূর্তগুলোয় রক্তের প্রতিটা কণা আমার স্থির হয়ে থাকে। চোখের পাতা বুজলেই ঝরঝর করে ঝরে পড়ে অশ্রুধারা। ঝাপসা চোখে অপলোক চেয়ে থাকি তার চোখে।
একটু জোরেই ডানা ঝাপটালো মনে হলো। বুঝলাম লাইট অফ করে বারান্দায় বসতে বলল। আকাশে চাঁদের বুড়ি আলো জ্বেলেছে। সুপারি ফুল তার সুবাস ছেড়েছে। কবে যেনো কাঁচা হাতে কিছু কবিতা জুড়েছিলাম। চাঁদের বুড়ির কাছে তা জমা আছে। কতোবার মিনতি করেছি। ফেরত দেয় না সে আর। সে সব শব্দ শুধু
ডেকে বলে,'রিতু এসো জীবনের স্বাদ নেই প্রাণ ভরে।'
আমরা দুজনেই জানি যে মানুষের স্বাদ গ্রহনের ক্ষমতা আছে। সে শতো বিচলিত মুহূর্তেও শান্ত। আর তাতেই জীবনের প্রকৃত সুখ। যার নেই সে অনেক দুর্ভাগা। আমরা শ্রাবনের আকাশের মতো মুখভারি করে রাখি না, ফাল্গুনের আকাশের মতো হাসি ও হাসাই। উপভোগের বস্তু আমাদের সর্বত্র ছড়ানো। অবশ্য গভীর সংকটের সময় যে বিপদের কথা চিন্তা না করেও থাকা যায় এমন কথা আমি বলছি না। তবে সকল ক্ষেত্রেই মানসিক শৃঙ্খলা থাকা আবশ্যক।
তাই তো ভোরের আলো ফুটলেই, জীবনের প্রয়োজনে জীবন নাটিকার বিচিত্র ভূমিকায় অবতীর্ণ হই।
থাই গ্লাস টেনে দেই একলা পাখি আমার উড়ে যায়,,,,,,,
কোথাও যেনো বেজে ওঠে,'বিশ্ব যদি চলে যায় কাঁদিতে কাঁদিতে আমি তবু বসে রব মুক্তি সমাধিতে।'
,,,রিতু,,,,

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ