বাবা,
তুমি কেমন আছো বাবা? সেই যে গেলে আর আসার নাম নেই! দীর্ঘ দুই মাস পার হয়ে গেল। এখন শরৎ কাল। তোমার নিজ হাতে লাগানো গাছগুলোতে ফুল এসেছে। শিউলির / শেফালীর ডালে ডালে মৌ মৌ গন্ধ। বাড়ির চারপাশের গাছগুলো এখন ফুল-ফলে টইটুম্বুর। তুমি তো জানোই পাড়ার সবাই এখন তোমার বাড়িটাকে ডাক্তারবাড়ি নামে চেনে। চারদিকে এ বাড়ির কত সন্মান! এটাই তো তোমার চাওয়া ছিল বাবা? তাহলে কোন অভিমানে এবার ফিরে আসতে এত দেরি! তোমার মনে আছে বাবা, আলনায় ঝুলিয়ে রাখা শার্ট থেকে তোমার গন্ধ নিতে গিয়ে একবার মায়ের চোখে ধরা পড়ে গিয়েছিলাম? তা নিয়ে বাড়িশুদ্ধ সবার কি হাসাহাসি! কিন্তু তোমার চোখে জল নেমে এসেছিল। তুমি লুকাতে চাইলেও আমি কিন্তু ঠিক ধরে ফেলেছিলাম। অনেকদিন পর আজ আমার আবারও তোমার গন্ধ নিতে ইচ্ছে করছে। অথচ তোমার কোন খোঁজ নেই! আচ্ছা সত্যি করে বলতো তুমি কি ভাল আছ বাবা? এখন তোমার পায়ে কোন ব্যথা নেই তো বাবা? কতদিন তোমার গালে চুমু খাওয়া হয়নি। তুমি বলতে আমি চুমু খেলে নাকি তোমার সব অসুখ উধাও হয়ে যায়। বাস্তবেও দেখেছি আমি তোমাকে চুমু খেলে তুমি সত্যি সত্যিই তরতর করে সুস্থ হয়ে উঠতে। যদিও বিষয়টি ছিল অনেকটা সংক্রামক। ছোটবেলায় আমি যখন দূরারোগ্য ব্যধিতে ভূগতাম, তুমি খুলনা থেকে ছুটে আসতে আমার কাছে। আমাকে পাঁজাকোলা করে কোলে নিয়ে তোমার সে কি আদর! তোমার চুমোয় চুমোয় আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতাম। তারপর কত পথ পাড়ি দিয়েছি। কিন্তু তোমার আর আমার আদর -খুঁনসুটি শেষ হয়নি। মা আমাদের পাগলামি দেখে কত হেসে কুটি কুটি হয়েছে। আহ! কতদিন তোমার গালে চুমু খাওয়া হয়নি বাবা! আজ খুব চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। তুমি কবে ফিরবে বাবা? আমার যে আর সহ্য হচ্ছে না। এত দীর্ঘ সময় খোঁজ না নিয়ে তুমি আগে তো কখনো থাকতে পারোনি বাবা! আর কটা দিন অপেক্ষা করব? সামনে ঈদ প্রায় চলে এল। আমি নতুন জামা-জুতোর জন্য পথ চেয়ে বসে থাকব কিন্তু। সত্যি বলছি প্রতিবারের মতো এবারও ভিন গাঁয়ের মাঠের সেই তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকব। আমার সাথে মিয়া ভাই, শেফালী, শিউলিকেও সাথে নেব?
নাকি ওদেরকে ফাঁকি দিয়ে আমি একাই মাঠের চোরাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকব বাবা? তুমি কিন্তু চুপিচুপি এসো বাবা। কাউকে বলো না প্লিজ। সরি বাবা, আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি একদম ভুলে গিয়েছিলাম তুমি যে দেশে গিয়েছ সেখান থেকে আর কখনো ফিরে আসতে পারবে না। তুমি না থাকাতে ইদানিং আমার খালি ভুল হয়ে যায়। আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা। যেখানেই থাকো ভাল থেকো, শান্তিতে থেকো বাবা।
ইতি
তোমার অবুঝ ছেলে
হালিম নজরুল।
১২টি মন্তব্য
রোকসানা খন্দকার রুকু
প্রিয় মানুষরা চলে যায় কেন যে! এরপর কোনভাবেই আর ফিরে আসে না। স্মৃতি আঁকড়ে আমাদের বাঁচতে হয়।
হালিম নজরুল
ঠিক বলেছেন আপু। স্মৃতিরা হাসায়, স্মৃতিরা কাঁদায়।
নিতাই বাবু
বাবার কাছে ছেলের চিঠি। চিঠি পড়ে আমার বাবার কথাই মনে হচ্ছিল।
হালিম নজরুল
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রিয় দাদা।
হালিমা আক্তার
যারা চলে যায়, তাঁরা আর আসে না ফিরে। স্মৃতি শুধু রয়ে মনের গহীনে। শুভ কামনা রইলো।
হালিম নজরুল
ধন্যবাদ ও শুভকামনা আপনার জন্য।
রুপাই
ভাল থাকুক পৃথিবীর সকল বাবারা।
হালিম নজরুল
আপনিও ভাল থাকুন। শুভকামনা রইল।
নার্গিস রশিদ
মৃত্যু এমন এক স্থান একবার কেউ গেলে আর ফিরে আসেনা। অনেক শুভ কামনা।
হালিম নজরুল
ধন্যবাদ ও শুভকামনা আপা।
মনির হোসেন মমি
বাবাকে ভুলা যায়না ভুলা সম্ভব নয়।ওপারে সকল বাবারা ভাল থাকুক।আমীন।।
চিঠি পড়ে মন কেদে উঠলো।
হালিম নজরুল
ভাল থাকুন ভাই সবসময়।