রচনাকালঃ ১লা বৈশাখ, ১৪২৬
একদিন যাকে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যেত
আজ তাকে এক ঝলক দেখাও কত কঠিন!
মানুষের-ও পাখা আছে, উড়ে যায় চিহ্নহীন।
এভাবেই দিন, মাস, বছরগুলো ক্ষয়ে যায়-
ঝরে যায় শুকনো পাতার মতো দিনদিন।
হাতের ভেতরে ঘাম জমে ওঠে আরেকটি হাতের অপেক্ষায়!
চৈত্র সংক্রান্তি ঘুরে বৈশাখ আসে, বৈশাখ চলে যায় বারবার
প্রতিবার আগুনের অমিতাভ ডালি সাজায় পলাশ আর শিমুল-
প্রতিবার কালবৈশাখী শেষে ঝরে যায় সেই আগুনের ফুল
প্রিয় নারীর কোলের উষ্নতার প্রতীক্ষায়-
বয়স বাড়ে হুতুম প্যাঁচা আর শংখচিলের।
যেই পথে তুমি হেঁটে চলে গেছ একদিন
সেই পথে তোমার শরীরের রমণীয় ঘ্রাণ
খুঁজে ফেরে দিশেহারা বিষণ্ণ কোকিল।
যেই লালসাদা শাড়ি বহ্নিশিখার মত জড়িয়ে ছিল
তোমার অলৌকিক নারকোল শাঁস তনুলতা-
যেই রক্তিম ব্লাউসে ঢাকা ছিল তোমার উদ্ধত স্তন-
সেই শাড়ীতে, রক্তিম ব্লাউসে জমা হয় যুগান্তের ধূলো
মাকড়সার জাল, ন্যাপথালিনের কড়া গন্ধের ভেতরে
তারা পড়ে থাকে তোমার শরীর থেকে ঝরে পড়া
শুকিয়ে যাওয়া স্বেদবিন্দুর স্মৃতির লবণ বুকে নিয়ে।
এদিকে সোনা, ডলার, আইফোন আর জাগুয়ারের
প্লাস্টিক উত্তাপে, গুচ্চির চাকচিক্যে তুমি গলে যাও
তুমি তুষারিত হয়ে রও- উত্তর অক্ষাংশে।
আগুনের দিন ছেড়ে দিয়ে, ঠোঁটের ওপর গড়িয়ে আসা
এক বিস্তীর্ণ দগ্ধ দুপুরের ঘামের লবনাক্ত স্বাদ ছেড়ে দিয়ে
নিউ মার্কেটের খাবার দোকান, পলাশীর মোড়, মধুর ক্যান্টিন,
দক্ষিণ সমুদ্রের ঢেউ, বেলাভুমির অলোকসামান্য আলোক ছেড়ে গিয়ে-
ভৌতিক মেরুপ্রভার সবুজ আলোর দিকে বিস্ফারিত চেয়ে থেকে
নিঃসঙ্গ মৎস্য কুমারীর মতো দুগ্ধসরণির শরীরে তোমার
স্তরে স্তরে জমে ওঠে বোকা এপ্রিল দিনের বরফ আর তুষার।
১৬টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
প্রেমও আজ বরফ,বোকা! রোমান্টিক কবি!!
আসিফ ইকবাল
আরজু মুক্তা, অনেক ধন্যবাদ।
প্রহেলিকা
“হাতের ভেতরে ঘাম জমে ওঠে আরেকটি হাতের অপেক্ষায়!”
ভালো লাগসে!
আসিফ ইকবাল
প্রহেলিকা, অনেক ধন্যবাদ। অনুপ্রাণিত হলাম।
সাবিনা ইয়াসমিন
কিভাবে লেখেন ! কারো অপেক্ষায় থেকে যদি এমন লেখা চলে আসে, তবে অপেক্ষাই উত্তম। নিজের যা হয় হোক, পাঠক বিদগ্ধ কবিতার স্বাদ পেয়ে নড়েচড়ে বসবে।
আসিফ, সত্যি বলতে আপনাকে কবিতাতেই চেনা যায়। কবিতায় আপনি নিজেকে সবটুকু উজাড় করে দেন। তারপরেও কবিতায় কেন যে কম থাকেন, বুঝিনা।
সবটুকুই ভালো লেগেছে, তাই কোনো লাইন আলাদা করলাম না। থাকুক, লাইনগুলো একসাথে এক অনন্য কবিতা হয়ে। শুভ কামনা। 🌹🌹
আসিফ ইকবাল
সাবিনা, দীর্ঘ মন্তব্যটির জন্যে অনেক ধন্যবাদ। প্রাণিত হলাম। এটা ঠিক বলেছেন, কবিতাতেই নিজেকে মেলে ধরতে পারি অসংকোচে। কবিতাই আমার আত্মপ্রকাশের সত্যিকার মাধ্যম। কিন্তু, আসলে সবসময় হয়ে ওঠে না, কাব্যলক্ষী মাঝে মাঝে কানামাছি খেলেন- হয়ত পূজার যে ফুল তাঁর প্রাপ্য সবসময় সে ফুল দেয়া হয়ে ওঠেনা, তাই তিনি অভিমান করেন। তবে আন্তরিক ভালবাসায় তিনি ধরা দেন, একান্ত আপন হয়ে।
ভাল থাকবেন। এই রকম মন্তব্য পেলে মনটা ভাল হয়ে যায়। লেখার উৎসাহ আসে।
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনিও ভালো থাকবেন। লিখবেন, লেখা একবার বন্ধ করে রাখলে আর ধরা দেয়না।
আসিফ ইকবাল
সাবিনা, খুব সত্য কথা।
জিসান শা ইকরাম
এ যেন আমারই মনের কথা,
অনেক ভালো লাগলো আসিফ।
আমি বাদেও অনেক লেখক কিন্তু এখানে আছে, আপনার মন্তব্যে পেলে তারা লেখায় উৎসাহিত হবে নিশ্চিত।
শুভ কামনা।
আসিফ ইকবাল
জিসান ভাই, অনেক ধন্যবাদ। অবশ্যই চেষ্টা থাকবে আরো বেশী করে লেখা পড়ার।
শামীম চৌধুরী
তারা পড়ে থাকে তোমার শরীর থেকে ঝরে পড়া
শুকিয়ে যাওয়া স্বেদবিন্দুর স্মৃতির লবণ বুকে নিয়ে।
বাহ। চমৎকার কথা।
আসিফ ইকবাল
শামীম চৌধুরী, অনেক ধন্যবাদ 🙂
রাফি আরাফাত
কথা গুলো একটু বেশি ভালো লেগেছে। আচ্ছা এই জন্য মজলিস ডাকিয়েন না আবার। প্রেম হয়ে গেছে! কি আর করার বলেন। হাহাহা।।ভাল লেগেছে ভাই।
আসিফ ইকবাল
ভাই রাফি, অনেক ধন্যবাদ।
বন্যা লিপি
চমৎকার লেখা, খুব ভালো লাগলো।
আরো পড়তে চাই। বেশি করে লিখুন। নিরন্তর শুভ কামনা।
আসিফ ইকবাল
বন্যা লিপি, অনেক ধন্যবাদ। প্রাণিত হলাম। ভাল থাকবেন। নিশ্চয়ই লিখবো।