জয়াকে লেখা অভ্রর শেষ চিঠি

মনিরুজ্জামান অনিক ২৬ মার্চ ২০২১, শুক্রবার, ০১:২৩:১০পূর্বাহ্ন চিঠি ১১ মন্তব্য

 

 

বুকপকেটে ভেজা চিঠি বৃষ্টিতে নয় বুলেট রক্তে।

চিঠিটা খুলে কাঁপা কাঁপা হাতে জোড় গলায় পড়ার লোক নেই, কে পড়বে যার পড়ার কথা ছিলো সে তো নেই।

 

পথচারী চিঠিটা খুললো__

 

প্রিয় জয়া,

 

কেমন আছো?

এবারের অপারেশন শেষে বাড়ি ফিরবো।

কথা দিলাম এবার কথা রাখবোই।

আমাদের লালন খুব বড় হয়ে গেছে! তাইনা?

ও কে দেখিনা কতোদিন! ছেলেটা জন্মের পর থেকেই বাবাকে পায়নি এই কষ্টে আমার বুকে যে কি পরিমান ঝড় উঠে সেটা আমিই জানি। ওর স্পর্শ পাবার জান্য এই বাবার হৃদয় যে কতোটা ব্যাকুল হয়ে থাকে সে কথা শুধু আমিই জানি।

 

তোমাকে মনে পড়ে প্রতিটি ফায়ারিং স্কোয়াডে বন্দুকের নল হতে বেরিয়ে যাওয়া বুলেটের মতো।

তোমার ছবি আমার বুকপকেটে থাকে। কতোবার যে তা পানিতে ভিজিয়ে ফেলেছি কাপড় ধুতে গিয়ে।

শুনলে তুমি হাসবা। বলবা আমি ভীষণ মনভোলা মানুষ।

 

আচ্ছা আমাদের আমগাছটাতে কি মুকুল এসেছে। জোড়া শালিকের সংসার কেমন কাটছে?

তোমার উত্তরের জানালা, ইজি চেয়ার কেমন আছে ওরা। আচ্ছা ছাঁদ বাগানে লাগানো তোমার রক্তজবা গাছে কি ফুল ফুটেছে। কতো রাত আমি আর তুমি সারারাত জেগে ছাঁদে কবিতা পড়েছি, জোৎস্নার সাথে কথা বলেছি।

তোমার কি মনে আছে সেই দিনের কথা তুমি যখন সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা মানুষের হাত ধরে এ সংসারে পদার্পন করলে। সেদিনের সে কথা আমি আজও ভুলতে পারিনি। তোমার মুখ কেমন জানি লাজুকতা আর উৎকন্ঠায় ভরা ছিলো।

 

আহা! এ সবকিছু খুব মনে পড়ে। যখনই তোমার কথা খুব মনে পড়ে তখনই মন চায় ছুটে চলে আসি তোমার কাছে।

 

প্রতিদিন সকালে যখন দেশ মাতৃকার পতাকা ছুঁয়ে শপথ করি, যতক্ষণ প্রাণ আছে লড়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। তখন আমি শক্ত পাথরের মূর্তি হয়ে যাই, তোমার মুখখানা, লালনের মুখখানা হয়ে যায় লাল সবুজের পতাকা।

 

এবার আমরা জিতবই জয়া, দেখে নিয়ো।

আর তো মাত্র ক'টা দিন। তুমি একটু মানিয়ে নিও।

ভালোবাসা জানিয়ো। লালনকে দেখে রেখো।

 

ইতি

তোমার অভ্র।

 

চিঠিটা পোস্ট হলো জয়ার নামে। অপরিচিত কেউ একজন পোস্ট করলো। অভ্র আর ফেরেননি।

সেদিন এক অপারেশনে অভ্র শহীদ হন। দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য অভ্র নিজের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দেন।

 

জয়া আর লালন  কেমন আছে কেউ জানেনা।

0 Shares

১১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ