দৃশ্য- ১
পড়ন্ত বিকেল। প্রায় বিশ মিনিট ধরে রিকশায় বসে আছে হাসান। রিকশার সামনে-পিছনে বিশাল জ্যাম। বলতে গেলে রিকশাটি একদমই অনড় অবস্থায় রয়েছে। রিকশাওয়ালা তার আসনে বসেই এদিকওদিক তাকাচ্ছে। জ্যাম ছাড়ার অপেক্ষায় আছে। তবে তার অবয়বে বিরক্তির কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এমন জ্যাম তাদের হরহামেশাই সহ্য করতে হয়। পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের তির্যক আলোর তেজটি ভীষণ। গরম আর জ্যামের কারনে হাসান বেশ বিরক্ত এবং বিচলিত। ঘামে ভিজে টি-শার্টটি গায়ের সাথে লেপটে আছে। প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে হাসানের। আজ বিকেলে পুষ্পিতার সাথে ওর দেখা করার কথা। জ্যামের যে অবস্থা তাতে সময় মত পৌঁছতে পারবে কিনা ভাবছে। বড়ই বিরক্তিকর এ জ্যাম। কখন যে জ্যাম ছুটবে!!!
দৃশ্য- ২
হাসান আর পুষ্পিতা একে অন্যের হাত ধরে রিকশায় বসে আছে। জ্যামের কারনে রিকশাটি নিশ্চল। রিকশাওয়ালার দৃষ্টি সামনের দিকে। উদাস হয়ে তাকিয়ে আছে আর একটু পরপর গামছা দিয়ে মুখমণ্ডলের ঘাম মুছছে। হাসানের মধ্যে এবার বিরক্ত কিংবা বিচলিত হবার ভাব প্রতীয়মান নয়। বরং বেশ প্রাণবন্তই
লাগছে ওকে। দীর্ঘদিন পর আজ পুষ্পিতার সাথে ওর দেখা হল। হাসান মনে মনে ভাবছে, আরও কিছু সময় যদি এভাবে পাশাপাশি থাকা যেত! এই জ্যাম যদি আরও দীর্ঘ হত!!!
(মূলকথাঃ জ্যাম শুধুমাত্র বিরক্তির উদ্রেক করেনা বরং কখনও কখনও অতি আনন্দও প্রদান করে থাকে)
২৩টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রথম পর্ব পড়ে মনে মনে এটাই ভাবছিলাম। পুষ্পিতা পাশে থাকলে হাসান মনে-প্রানে জ্যাম আরো দীর্ঘ হওয়ার জন্যে দোয়া করতো,,,,, আর আপনি পরের পর্বেই সেটা করে দেখালেন 🙂
আমার একটা ছোট প্রশ্ন ছিলো,,,
রিক্সায় কাপল থাকলে আর রাস্তায় জ্যাম হলে রিক্সাওয়ালারা উদাস হয়ে যায় কেন!!?
রুমন আশরাফ
জ্যাম থাকলে উদাস তো হবেই। কুড়ি টাকায় ভাড়ায় জ্যামের কারণে যদি দীর্ঘসময় বসে থাকতে হয় তাহলে রিকশাওয়ালার উদাস না হয়ে উপায় আছে? জ্যামের কারণে ৫ মিনিটের জায়গায় কুড়ি মিনিট সময় লাগলে কি করার থাকে এমন নিম্নবিত্ত মানুষের? উদাস হয়ে তাই তাকিয়ে থাকে কখন জ্যামটা ছুটবে। ধন্যবাদ সাবিনা আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
তাতো ঠিক। কিন্তু হাসান যখন একা বসে ছিলো তখন উদাস না হয়ে, পুষ্পিতা সাথে বসার পর উদাস হলো কেন?
রুমন আশরাফ
প্রথম রিকশাওয়ালা এবং দ্বিতীয় রিকশাওয়ালা দুজন ভিন্ন মানুষ। মনের ব্যাপার এবং আবেগ গুলোও ভিন্ন থাকবে তাদের। প্রথম রিকশাওয়ালা যখন হাসানকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল তখন সময়টি ছিল বিকেল। রিকশাওয়ালার হয়তো খুব একটা তাড়া ছিল না রিকশাটি মালিকের কাছে জমা দিতে। এদিকে হাসানও ছিল একা। হাসানকে নিয়ে বহন করাও খুব একটা কষ্টসাধ্য ছিল না। কিন্তু সন্ধ্যায় হাসান এবং পুষ্পিতাকে নিয়ে যে রিকশাওয়ালাটি বহন করছিল তার হয়তো তাড়া ছিল রিকশা জমা দেবার। আর এদিকে গরমের দিকে দুজনকে বহন করতে গিয়ে হয়তো রিকশাওয়ালা বেশী পরিশ্রান্ত ছিল। তাই হয়তো উদাস হয়ে তাকিয়ে ছিল।
আসলে যে যেভাবে যার মতো ভেবে নিতে পারে।
সুরাইয়া পারভিন
জ্যাম শুধুমাত্র বিরক্তির উদ্রেক করেনা বরং কখনও কখনও অতি আনন্দও প্রদান করে থাকে,,,যা বলেছেন। প্রিয় মানুষ, ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে শুধু বৃষ্টিতে কেনো চামড়া জ্বালানো বিদঘুটে গরমেও রিক্সা ভ্রমণকে প্লেন ভ্রমণ মনে হবে।
রুমন আশরাফ
একদম ঠিক কথা বলেছেন পারভিন আপু।
সঞ্জয় মালাকার
জ্যাম শুধুমাত্র বিরক্তির উদ্রেক করেনা বরং কখনও কখনও অতি আনন্দও প্রদান করে থাকে।
ভালো লাগলো দাদা।
রুমন আশরাফ
ধন্যবাদ দাদা
শাহরিন
সব কিছুরই ভালো মন্দ দুই দিকই আছে। পজিটিভ থাকা উত্তম।
রুমন আশরাফ
ঠিক তাই
কামাল উদ্দিন
দারুণ লিখেছেন, প্রত্যেক মন্দেরই একটা ভালো দিকও আছে 😀
রুমন আশরাফ
ধন্যবাদ ভাই
এস.জেড বাবু
হা হা হা
চমৎকার দুই উদাহরণ দিয়ে বুঝালেন-
ভাল লাগল ভাই।
শুভকামনা
রুমন আশরাফ
ধন্যবাদ ভাই
এস.জেড বাবু
শুভেচ্ছা ভাই
তৌহিদ
ট্রাফিকজ্যামে কিছু ভালোবাসাবাসি হলে জ্যামই ভালো কিন্তু!! এমন জ্যামে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে চাই তার হাত ধরে।
ভালো লাগলো লেখা।
রুমন আশরাফ
সত্যিই, জ্যামে প্রিয়জনের হাত ধরে দীর্ঘ সময় বসে থাকা যায়।
ছাইরাছ হেলাল
ট্রাফিক জ্যাম ও বৃষ্টিতে হুডি-রিক্সা!
কোথায় যেন সাযুজ্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
রুমন আশরাফ
ট্রাফিক জ্যাম এবং বৃষ্টিতে রিকশার হুডির নীচে প্রেম নিহিত থাকে। হা হা হা।
মনির হোসেন মমি
খুব ভাল লাগছ।
হা হা হা কারো সর্বোনাস কারো পৌষ মাস। প্রেম করার মোক্ষম সময়।
রুমন আশরাফ
হা হা হা।
জিসান শা ইকরাম
এই জ্যাম যদি না শেষ হয়,
তবে কেমন হতো তুমি বলতো? 🙂
জ্যাম সব সময় বিরক্তিকর নয়,
ভাল্লাগছে।
শুভ কামনা।
রুমন আশরাফ
ধন্যবাদ ভাই। আপনার কমেন্টটাও খুব ভাল লাগলো।