চিন্তার সীমা পরিসীমা

আজিজুল ইসলাম ৪ মে ২০১৪, রবিবার, ০৯:৩৭:০২অপরাহ্ন বিবিধ ৬ মন্তব্য

 

 

দেশের প্রেক্ষিতে “প্রেশারগ্রুপ”-র ভাবনা সঠিক কি-না, অথবা মানুষ এগিয়ে আসবে কি-না, সময় সময় মানুষের কাছ থেকে আমি জানতে চেষ্টা করি, যদিও এবিষয়ে আমি নিশ্চিত । দু’জন ব্যক্তির সামনে বিষয়টা একদিন জানতে চাইলাম । দু’জনই সরাসরি বললেন, না মানুষ আন্দোলনে এগিয়ে আসবেনা । বললাম, কেন, মানুষের জন্যইতো কাজগুলো । চাকুরীর নিয়োগে ঘুষগ্রহনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলে সফল হওয়া যাবেনা কেন ? যেমন “প্রেশারগ্রুপ” অথবা অন্যকোন নামীয় সারাদেশব্যাপী বিস্তৃত কোন সংগঠন থাকলে, যে সংগঠনের সদস্য চরিত্রবান ছাড়া কেউ হতে পারবেনা, পৌণেতিনলাখ সরকারী শুন্যপদের এ-দেশে কেন এ-বিষয়ক আন্দোলন দানা বেধে উঠবেনা ?

একজন বলেন, এজন্য আন্দোলন সফল হবেনা যে, মানুষ সবাই নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত । কার খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই আন্দোলন করতে আসবে ? আর কাদের কথাতে আন্দোলনে নামবে মানুষ, সেরকম লোক তো নাই এদেশে ।

আমি ডক্টর ইউনুসের কথা বলতেই ইঞ্জিনিয়ার একজন তার সুদের ব্যবসার কথা অভদ্রভাবে বলে ওঠেন । আগেও একদিন দু’জন সাংবাদিককে একই ধরনের কথা বলতে তারাও ডক্টর ইউনুসের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের খুব সমালোচনা করেছিলেন । ঋণ একবার যে নেয়, আর সারাজীবন সেই ঋণের চক্রাকার থেকে মুক্ত হতে পারেনা সে, ইত্যাদি অঙ্ক কথা আরা বলেছিলেন ।

আমি বলি, কিছু লোকের অভাব অতি প্রকট থাকে, আবার কিছু লোকের ঋণ পরিশোধ করার মানসিকতা একটু কম থাকে, এজন্য একটু চাপ না দিলে কিভাবে আদায় হবে ? আর ডক্টর ইউনুসের গ্রামীন ব্যাংকে সুদের হার সর্বনিম্ন । আর ডক্টর ইউনুসই তো একমাত্র ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করেননা এবং ক্ষুদ্রঋণ তো এ-রকমই । দারিদ্রতা কিছুটা যে দূর হচ্ছেনা ক্ষুদ্রঋণের কারনে, তা বলা যাবেনা বলে আমার মনে হয় । সবচেয়ে বড় কথা আমি বলি যে, ডক্টর ইউনুসের আর্থিক কোন দুর্নাম নেই ।

কথায় কথা বাড়ে । উপস্থিত বয়স্ক ব্যক্তিটিও জুনিয়রের এসমস্ত কথা এতোক্ষন শুনেই যাচ্ছিলেন । কিছুটা উত্তেজিত স্বরে তিনি বললেন, দেখেন গ্রামীন ব্যাংকের ৮৪ হাজার দরিদ্র সদস্যের আমানতের টাকা দিয়ে তিনি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গড়েছেন, সেসকল প্রতিষ্ঠানে প্রফিট হয়েছে, কিন্তু সেই লভ্যাংশ অথবা এর আংশিক, কিছুই দরিদ্র এই চুরাশি হাজার সদস্যের মধ্যে বিতরণ করা হয়নি । কেন ?

ক্ষীণ কন্ঠে বলি, তিনি অবশ্য সামাজিক ব্যাবসার প্রবর্তক । সারা বিশ্ব তার এই মডেল অনূসরণ করছে । হয়তো প্রতিষ্ঠাণগুলির লভ্যাংশ সামাজিক ব্যাবসার সূত্রমতে ব্যবসা বাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হয়, ঠিক জানিনা । মনে মনে ভাবি, মিডিয়াতেও এগুলি নিয়ে লিখালিখি হয়েছে, কিন্তু গ্রামীন ব্যাংক অথবা ডক্টর ইউনুসের পক্ষ থেকে কোন প্রতিবাদ এবং ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি । আমারও মনে হয়েছিল তখনও এবং এখনও, কেন ? তিনি নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশী, দেশের তরুনসমাজকে সুশাসনের জন্য আহবান তিনিই সবচেয়ে ভালভাবে করতে পারতেন । কিন্তু উল্লেখিত বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা না দেয়াটা অস্বচ্ছতার-ই লক্ষণ ।

যা দেখা গেল তা হল, মানুষ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবেনা ।

কিছুদুর হাটার পরে রাস্তার পাশের এক দোকানের সামনে ফিল্টারের পানি খাওয়ার জন্য দাড়িয়েছি । এক ছেলে ফিল্টারের পানি হাতে করে নিয়ে নিজের গেঞ্জি ধুচ্ছে, নববর্ষের দিন ছিল সেটা, কে যেন কি একটা ভরিয়ে দিয়েছে তার গেঞ্জিতে । আমার দিকে তাকিয়ে অনেকটা আনমনে বলে চলেছে ছেলেটা , ভরিয়ে দিয়েছে, দেখেননা! মানুষ কতো শয়তান হয় । বলি, ইচ্ছে করে লাগিয়ে দিয়েছে না-কি এসব ?

ও বলে, হা, ইচ্ছে করেই তো । মানুষ কি মানুষের ভাল দেখতে পারে ! কথায় কথা বাড়ে ।

কেন দিলো, হিংসা ?

ও বলে, হা, অবশ্যই, কেউ একজন ভালো কাজ করলে মানুষের হিংসা লাগে ।

দুঃখ পাই মনে । এদেশের হবেটা কী, সেটা ভেবে । কেউ ভাল কোন কাজ করলে মানুষের হিংসা লাগে, অথচ কাজটা নিজে করতে পারেনা সে ।  এ-কেমন দেশে আমরা বাস করছি ?

কিছুদিন ধরে নিয়মিত লিখছি । শাহবাগ-সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও যাতায়াত করি সময় সময় । একসময় মনে হোল, প্রেম-ভালবাসা নিয়ে তো অনেক নাটক হয়, একটা নাটক বানালে কেমন হয় ! একটা চায়ের দোকানে ২/৩ জন লোকের নাটক সম্পর্কিত আলাপ শুনে আমার ইচ্ছের কথাটা পাড়লাম । দীর্ঘদিন এ-লাইনে থাকা সত্ত্বেও পরিচালক হিসেবে সেরকম উন্নতি করতে পারেননি, এরকম একজনের সাথেই কথা হচ্ছিল বেশী । আমার দু’তিনটি গল্পের সংক্ষিপ্ত প্লট শুনে উনি বললেন, এসমস্ত চলবেনা । চলবে আধুনিক যে নাটকগুলি দেখেন, সেগুলি । বলি, এগুলি যে আমাকে দিয়ে হবেনা ভাই, আমার কলম হতে এসব বের হয়না । উনি বলেন, তাহলে আর কি !

জিদ চেপে যায় আমারও । বলি, দেখেন ভাই, আমি ভবিষ্যতে এদেশে রাজনীতি করবো, সেরকমও একটা প্লট আমার মধ্যে রয়েছে । তিনি শুনতে চাইলে বলি, আমার গল্পের শেষটা এরকম যে, “দেশের যুবসমাজ এদেশের আজকালকার রাজনীতির বৃদ্ধ নেতাদের সামনে থেকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলছে, যান আপনাদের দিন শেষ, আপনাদেরকে তো আমরা অনেক দেখলাম, মারামারি-কাটাকাটি-হানাহানি ছাড়া কোন ভাল কিছুতো দিতে পারলেননা আপনারা । আমরা দেশে সকল পর্য্যায়ে এখন থেকে সুশাসন-শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন শুরু করবো” ।কি বুঝলেন তিনি জানিনা । উঠে চলে গেলেন ।

প্রিয় পাঠক, মনে হতে পারে এবং আপনারাও অনেকে এরকমই ভাববেন যে, তরুনদের সুশাসন-শুদ্ধাচারের জন্য লড়াই এদেশে হবেনা । আমি তা মনে করিনা । আমি যদি তা মনে করি, তবে এগুলোর ব্যাখ্যা কি হবে, যখন রাজধানী-পর্য্যায়ে মধ্যমের উপরের মানের এক সাংবাদিক এই পরিকল্পনা শুনে আপ্লুত হয়ে পড়েন, যখন বড় এক পাবলিক ইউনিভার্সিটির বাম একটা ছাত্রসংগঠনের সভানেত্রী এই পরিকল্পনা শুনে প্রথম পরিচয়েই বক্তার সেলফোন নম্বর চান ?

আর তাই হতাশ হবেননা যদি সুশাসন চান, যদি চান দেশ শুদ্ধভাবে চলুক, সকল পর্য্যায় হতে ঘুষ-দুর্নীতি বন্দ হোক । হতাশ না হয়ে এক্ষেত্রের চিন্তা জিইয়ে রাখুন, লালন করুন এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটা বাংলাদেশ রেখে যেতে চাইলে নিজে কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে পারবেন, এবং এমনকি জীবনটাও উতসর্গ করতে পারবেন কি-না, এ-সমস্তই চিন্তার মধ্যে রাখুন ।

দেশের প্রেক্ষিতে এটাই আমাদের সবার করনীয় মনে করে বললাম, উপদেশ হিসেবে বললাম, বিবেক স্বাক্ষী রেখে বলছি, তা কিন্তু আসনেই নয় ।

 

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ