জীবন চিতা-পর্ব৭খ

আবু জাকারিয়া ৩ মার্চ ২০১৫, মঙ্গলবার, ১০:২৬:৫২পূর্বাহ্ন সাহিত্য ৪ মন্তব্য

ঘরের সামনে, বারান্দায়, এখানে সেখানে অনেক মানুষ এসে জড় হয়েছে। সবাই অবাক হয়ে দেখতে লাগল কালাচান কবিরাজের কেরামতি, আর জামিলার অদ্ভুত আচরন।
মুহাম্মদ ঘর থেকে একটা পুরানো ঝাটা আনল।
কালাচান কবিরাজ ঝাটাটি জামিলার মুখের সামনে ধরে বলল, এই ধর তোর ঝাটা, নিয়ে এখান থেকে তারাতারি কেটে পর।
এই মুহুর্তটি ছিল সবার জন্য সবচেয়ে বেশি উত্তেজনাপূর্ণ। সবাই অবাক হয়ে দেখল, জামিলা পুরানো-ময়লা ঝাটাটি কামড়ে ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে দৌড়াতে শুরু করল।
সবাই জামিলার পিছু পিছু দৌড়ে গেল। জামিলা ধপ করে মাটিতে পরে বেহুশ হয়ে গেল।
কালাচান কবিরাজ এক গ্লাস পানি পরে মুহাম্মদের হাতে দিয়ে জামিলার নাকে মুখে ছিয়িয়ে দিতে বলল।
মুহাম্মাদ জানিলার নাকে মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়ার পর জামিলার জ্ঞান ফিরল।
জামিলা সবার দিকে একনজর তাকিয়ে বলল, আমার কি হয়েছে, আমি এখানে পড়ে আছি কেন?
জামিলা একেবারে দুর্বল হয়ে গিয়েছে, বসা থেকে উঠে দাড়াবার শক্তিও নেই ওর। মুহাম্মাদ জামিলাকে আড় কোলে তুলে নিয়ে ঘরে আসল।
জামিলার মা খাবার নিয়ে আসল জামিলার জন্য। খাওয়ার পরে জামিলা ঘুমিয়ে পরল। ক্লান্ত শরীরে ওর ঘুমটা ভালই হচ্ছে।

দুপুর হয়ে গেছে। সবাই ভাত খেতে বসেছে। কালাচান কবিরাজ মুহাম্মদের দিকে তাকিয়ে বলল, শ্রিমতি, সোলায়মান, অর্জুন কর্মকার আর রানী দাশকে চিনেন?
মুহাম্মদ কিছুক্ষন ভাবার পরে বলল, এদের চিনিনা, তবে বৈকান্ত ওঝাকে চিনি।
-বৈকান্ত কে?
-আমরা যে এলাকায় থাকতাম সেই এলাকায় বাড়ি।
-কি কাজ করে লোকটা?
-সাপ ধরে খেলা দেখায়, লোকটা ওঝা।
-লোকটা অনেক খারাপ, মানুষের ক্ষতি করে বেড়ায়, খারাপ অনেক কিছু জানে।
মুহাম্মদ কালাচান কবিরাজের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল, তাহলে ওই বৈকান্ত ওঝাই জামিলাকে জাদুটোনা করেছে?
কালাচান কবিরাজ ডক ডক করে এক গ্লাস পানি পান করে বলল, হ্যা।

সানি আর মনি কয়েকদিন ক্লাসে যায়নি ঠিক মত। মুহাম্মদ ওদের স্কুলে এগিয়ে দিয়ে আসল। মায়ের এমন অবস্থা দেখে ওদের মন খারাপ হয়, মুহাম্মদ তা বুঝতে পারে।

জামিলার সাথে ৪ টা প্রেত ছিল। তার মধ্যে শ্রীমতি প্রেতটি ছেড়ে গিয়েছে জামিলাকে। এখনও বাকি আছে তিনজন। কালাচান কবিরাজ অন্যকোন দিন এসে ওদের ছাড়িয়ে দেবে।

কিছুদিন জামিলা স্বাভাবিক আচরন করল। কোন প্রকার পাগলামি করল না। ঠিকমত খেয়েছে, ঠিকমত ঘুমিয়েছে, কোন অস্বাভাবিক আচারন করেনি। এই অবস্থায় সবাই ভাবল, জামিলা ভাল হয়ে গিয়েছে, আর কোনদিন পাগলামি করবে না।

মুহাম্মদ সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে চলে যাবে বলে। কিছুদিন ধরে কোন কাজ করতে পারেনি। শহরে অনেক কাজ পড়ে আছে।

জামিলার মা বলল, আর কটা দিন থাকো জামাই বাবাজ্বি।
-আর থাকার সময় নেই আম্মা। আমাকে আজকেই যেতে হবে। কোন সমস্যা হলে চিঠি লিখে জানাবেন।
-আশা করি আর কোন সমস্যা হবে না।
-হতেও পারে, বলা যায় না।

বাইরে কয়েকটা ছেলেমেয়ে কালাচান কবিরাজের মত সুর করে গান গাইছে আর উঠোনে দৌড়াদৌড়ি করছে।
"তোরা কালার কাছে আয়, তোরা কালার কাছে আয়রে তোরা কালার কাছে আয়......"
মুহাম্মদ জালানা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল, এসব কি হচ্ছে আম্মা?
জামিলার মা চোখে মুখে বিরক্তি ভাব করে বলল, আর বলনা বাবাজ্বি, এই বাড়ির ছেলেফেলেগুলো একদন বাদরের হাড্ডি।

মুহাম্মদকে অনেকদুর এগিয়ে দিয়ে আসল জামিলা। সাথে সাথে সানি আর মনিও গেল। জামিলাকে দেখে মনেই হয়না ও কিছুদিন পাগলামি করেছিল।

চলবে>>>

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ