জীবন চিতা-পর্ব৬

আবু জাকারিয়া ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, শনিবার, ১১:৩৮:২০পূর্বাহ্ন সাহিত্য ২ মন্তব্য

পর্ব৬

হঠাৎ একদিন মুহাম্মদ এসে উপস্থিত হল। এসেই দেখল জামিলা অবিস্বাশ্য ভাবে পাগলামি করছে। চেচিয়ে চেচিয়ে খারাপ ভাষায় গালাগালি করছে, অদ্ভুত সুরে গান গাইছে।
জামিলার মা বলল, আসতে এত দেরি হল কেন, চিঠিতো দিয়েছি অনেক দিন হল?
মুহাম্মদ বলল, চিঠি হাতে এসে পৌছাতে দেরি হয়েছিল।
জামিলার মা বলল, এখন কি করবা, বুঝাইয়া দেখ পাগলামী ছাড়ে কিনা, মান সম্মান আর থাকল না!

মুহাম্মদ জামিলার কাছে গেল। জামিলা আংগুল তুলে সাসিয়ে বলল, খবরদার, কাছে আসবিনা, কইয়াদিলাম। বলেই একটা কাঁচের বোতল ছুড়ে মারল মুহাম্মদের দিকে। অল্পের জন্য মুহাম্মদের গায়ে লাগেনি।
স্বামীর সাথে এমন বেয়াদবি দেখে সবাই অবাক হল।
মুহাম্মদ বলল, মনে হচ্ছে ডাক্তার কবিরাজ দেখাতে হবে।
জামিলার মা বলল, একজন কবিরাজ দেখিয়েছিলাম, তাতে কোন কাজ হয়নি। কবিরাজ তাবিজ কবজও দিয়েছিল, কিন্তু জামিলা তা ফেলে দিয়েছে।
-ছোট খাট কোন কবিরাজ দেখালে কাজ হবেনা, বড় কবিরাজ দেখাতে হবে।
-কিন্তু বড় কবিরাজ কোথায় পাওয়া যাবে?
-খোজ করলে অবশ্যই পাওয়া যাইবে।

সকাল বেলা মুহাম্মদ জামিলার মায়ের কাছে কিছু টাকা দিয়ে বলল, এই টাকা দিয়ে জামিলারে কবিরাজ দেখানর ব্যবস্থা করবেন। আমি চলে যাব, শহরে অনেক কাজ পড়ে আছে।
মুহাম্মদ সকাল বেলা সূর্য তেতে ওঠার আগেই চলে গেল।
জানিলার মা চিন্তায় পড়ে গেল, এখন কোথায় পাওয়া যাবে ভাল কবিরাজ, যে জামিলাকে পুরোপুরি ভাল করে তুলতে পারবে। জামিলা অসুস্থ থাকার কারনে সানি আর মনিকে জামিলার মায়ের দেখাশুনা করতে হচ্ছে। এতে তার কষ্ট দিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে, হয়ত রক্ত চাপও বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু অনুভব করতে পারছেনা। বড় ব্যাথার কারনে ছোট ব্যাথা অনুভুতি শক্তি হারিয়ে ফেলে, এটাই স্বাভাবিক।

বাড়িতে দুইজন জাযাবর মহিলা আসল। সুরে বলতে লাগল, এই শিংগা লাগবে শিংগা.. দাতের পোকা তুলি...বাত ব্যাথা ঝেড়ে দিই... এই সিংগা লাগবে সিংগা...
জামিলার মা শুনেছে, এই সব মহিলাদের মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা থাকে, অনেক মারাত্বক রোগ ভাল হয়ে যায় তাদের চিকিৎসায়।
জামিলার মা ওই দুজন জাযাবর মহিলাকে ডেকে ঘরে আনল। বলল, আমার মেয়েটা পাগলামী করে, তোমরা ভাল করতে পারবে?
মহিলা দুজন বলল, পাগেল ছাগেল ভাল করাইতো আমগে কাজ..বুজলা মাগো...
জামিলা খাটের উপর শুয়ে আছে। ঘরের ভীতরে জাজাবর মহিলারা আসায় বিরক্ত হচ্ছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না।
মহিলা দুটি জামিলার দিকে এক নজর তাকাল। তারপর বাম হাতের রেখাগুলো ভাল করে পর্যবেক্ষন করে বলল, কি আর কইব মাগো...এত দেখতাছি নিমসয়তানের আচড়।
জামিলার মা বলল, তাহলে এখন কি হবে?
মহিলা দুটি তাদের থলে থেকে একটা ছোট হাড় বের করে কি সব মন্ত্র পড়ল মনে মনে। তারপর জামিলার মায়ের কাছে দিয়ে বলল, এটা ঘরের সামনে বেধে রাখবেন, তিন দিনের মধ্যে আপনার মেয়ে ভাল হয়ে উঠবে।
জামিলার মা বলল, কয়টাকা দেব?
মহিলা দুটি বলল, ৫১ টাকা দিতে হবে মাগো।
জামিলার মা মাথায় হাত দিল, এইটুকু কাজের জন্য ৫১ টাকা!
মহিলা দুজন বলল, এইটুকু কাজ কোথায়, আপনার মেয়ে পুরো ভাল হয়ে যাবে... মাগো।
জামিলার মায়ের কাছে ৫০ টাকার একটা নতুন নোট ছিল, সেটা বের করে মহিলা দুজনকে দিয়ে দিল।
মহিলা দুজন বলল, আরো এক টাকা লাগবে মাগো... জোড় টাকা লওয়া নিশেধ আছে।
জামিলার মা মোট ৫১ টাকা দিয়ে বিদায় জানালো মহিলা দুটিয়ে।
জামিলার মা হাড়টা একটা কাগজে পেঁচিয়ে ঘরের সামনে ঝুলিয়ে রাখল।
মরিয়াম বলল, এটা কিশের হাড় মা?
-জানিনা, হতে পারে গরুর গাড়, শুনেছি গরুর হাড় অনেক কাজে লাগে।
-মানুষের হাড়ও হতে পারে।
-তা হতে পারেনা।
-কিভাবে বুঝলে?
-৫১ টাকা নিয়েছে, মানুষের হাড় হলে আরো বেশি নিত, তুই এখন আজে বাজে কথা বলতে আসিস না।
জামিলার মা কিছুটা বিরক্ত হল।

ঘরের সামনে টিনের চালের সাথে কাগজে পেচান হাড়টি তিন দিন ধরে ঝুলে আছে। কিন্তু তাতে জামিলার পাগলামি বিন্দু মাত্র কমল না। অথচ ঔ মহিলারা বলেছিল, তিন দিনের মধ্যেই জানিলা ভাল হয়ে যাবে। চার দিনের মাথায়ও যখন কোন সুফল পাওয়া গেল না, জামিলার মা বুঝতে পারল, আসলে ওই মহিলা দুটি তার সাথে প্রতারনা করে ৫১ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
জামিলার মা একজন কবিরাজের সন্ধান পেল। কবিরাজের নাম আতাউর পাগলা। জীবনে অনেক পাগল ভাল বানিয়েছে সে। কঠিন কঠিন রোগের চিকিৎসা করেছে। আতাউর পাগলা দুরের একটা গ্রামে থাকে। জামিলার মা তাকে ডেকে আনার জন্য লোক পাঠিয়ে দিল।
দুপুরের পরেই আতাউর পাগলা এসে হাজির। আতাউর পাগলার শরীরটা কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা, মাথার চুলগুলো এলোমেলো, গা থেকে মারাত্বক দুর্গন্ধ আসে। লোকে বলে, আতাউর পাগলা গত ৩০ বছর ধরে গোসল করেনা। কেন গোসল করেনা, তা সবার কাছে রহস্যময়।

জামিলাকে ওর মা আর মরিয়াম ধরে এনে বারান্দায় আতাউর পাগলার সামনে বসালো। অনেকগুলো কৌতুহলী চোখ এসে হাজির হল জামিলাদের ঘরের সামনে। কেউ কথা বলছেনা, কারন আতাউর পাগলা আগেই সবাইকে কথা বলতে নিষেধ করে দিয়েছে।

আতাউর পাগলা জামিলাকে কেন্দ্র করে মাটিতে আচর কেটে একটা বৃত্ত আকল। তারপর অনেক্ষন ধরে ধেয়ানে বসে রইল। মনে মনে কি সব মন্ত্র পড়তে লাগল আতাউর পাগলা। একটা লম্বা হাড় কয়েকপাক ঘুরিয়ে আনল জামিলার মুখের চারপাশে। তারপর চোখ খুলল।

চোখ খুলে আতাউর পাগলা বলল, আমি একে ভাল করতে পারব না।
জামিলার মা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, কেন পারবেন না?
আতাউর পাগলা বলল, আপনার মেয়ের সাথে চারটা মারাত্বক বদজ্বীন আছে, ছাড়াতে হলে আমার থেকেও ভাল কবিরাজের কাছে যেতে হবে।
আতাউর পাগলা চলে গেল।
জামিলার মা আরো চিন্তায় পড়ে গেল জামিলাকে নিয়ে। রাতে ঠিকমত ঘুম হল না তার।
প্রতিদিনের মত খুব ভোরে উঠে নামাজ পড়ল জামিলা। তারপর একটানা কোরয়ান পড়ল। কোরয়ান পড়া শেষ করে গুন গুন করে গান গাইতে লাগল। জামিলার গুন গুনানি শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গেল জামিলার মা। জামিলার মা জামিলার হাত চেপে ধরে বলল, এখন থাম, তোর পাগলামি আর সইতে পারিনা।
জামিলা ততক্ষনাক রেগে গিয়ে বলল, আমি পাগলামী করছি, তোমার কি মনে হয় আমি পাগলামি করছি.. কোরান পড়লে পাগলামি করা হয়, না?
বলেই হাড়ি পাতিল বাইরে ছুড়ে মারতে লাগল জামিলা। আর চেচিয়ে চেচিয়ে বলতে লাগল, ওরে আতাউর পাগলার বাচ্চা...ওরে আলি আকবরের বাচ্চা...তোরা আমাকে ভাল বানাতে এসেছিলি..তোদের মত সয়তানেরা আমায় ভাল বানাতে পারবিনা।
আসে পাশের যত লোক আছে, সবাই এসে জামিলাদের ঘরের সামনে জড় হল। সবাই তামাসা দেখতে লাগল। ছোট ছেলেমেয়েদের কেঊ কেউ হাতে তালি দিতে লাগল।
এখন মান সম্মানের প্রশ্ন নয়, এখন জামিলার জীবন মরনের প্রশ্ন। জামিলা যদি এরকম পাগলামি করতে থাকে, তাহলে যে কোন সময় মারা যেতে পারে ও। দুপুরের আগে কিছুটা স্বাভাবিক হল জামিলা। কিন্তু ভাত খেতে চাচ্ছিলনা কিছুতেই। ঠিকমত না খাওয়ার কারনে জামিলার সুন্দর চেহারা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছে।
জামিলাকে অনেক কষ্টে ভাত খাওয়ালো জামিলার মা, ছোট বেলায় যেমন খাওয়াতো।
জামিলার মা ঠিক মত বিশ্রাম নিতে পারেনা। সানি আর মনির দিকেও খেয়াল রাখতে হয় তার। ওরা ঠিক মত খেতে চায় না, ছোট ছেলে মনি মায়ের পাগলামী দেখে প্রায়ই কেদে ফেলে।

জামিলার মা মুহাম্মদের কাছে আবার চিঠি লিখল।

প্রিয় জামাই বাবাজ্বি,
আশা করি তুমি ভাল আছ। কিন্তু আমরা একটুও ভাল নেই। জামিলার পাগলামী অনেক বেড়ে গেছে। কবিরাজ দেখিয়েছি, কিন্তু তারা জামিলার চিকিৎসা করতে ব্যার্থ হয়েছে। এখন আমি কি করব, কিছুই বুঝতে পারছিনা। তুমি যত তারাতারি পার, চলে এসো।
ইতি তোমার শাশুড়ি আম্মা।

সানি বড়সি পেতে রেখে খালের পাড়ে বসে আছে। একটা পুটি মাছও আসছেনা বড়শির কাছে। তবু ভাল, বাড়ির ভীতর থেকে মায়ের এমন পাগলামি দেখলে মন খারাপ হয় ওর। তাই বাড়ি না থেকে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ান ভাল।
দুই দিন ধরে সানি মাদ্রাসায় যাচ্ছেনা। পরের দিন যাওয়ার কথা ভাবল ও।

অনেকক্ষন পর একটা বড় টাল পড়ল বড়শিতে। কি মাছ হতে পারে। ছানি শুনেছে, খালে অনেক বোয়াল মাছ। বড় বড় বোয়ালগুলো পানির তলদেশে ঘুরে বেড়ায়।
সানি বড়শিটা কশে টান মারল। একটা ছোট রুইমাছ উঠে এসেছে।
জামিলার মা মাছটা কুটে রেখে দিল। রাতে রান্না করার ইচ্ছা আছে তার।
জামিলা ঘুমিয়ে আছে, ছোট ছেলে মনি জামিলার পাশে ঘুমিয়ে আছে।
মনি দিনের বেলা সহজে ঘুমাতে চায় না, কিন্তু আজ কেন ঘুমালো, জামিলার মা বুঝতে পারল না।

বিকেল বেলা কোথা থেকে যেন একটা লোক আসল জামিলাদের ঘরে। লোকটার বয়স ৫০ বছরের কাছাকাছি হবে। লোকটা জামিলার মাকে বলল, শুনেছি আপনার মেয়ে নাকি পাগলামি করে?
জামিলার মা বলল, হ্যা কিন্তু আপনি কে?
-আমি পাশের গ্রামের একজনের আত্মীয় হই, বেড়াতে এসেছিলা। আজ চলে যাবো।
-আপনি কিভাবে জানলেন আমার মেয়ে পাগলামি করে।
-লোকজনকে বলাবলি করতে শুনেছি।
জামিলার মা বুঝতে পারল, জামিলার পাগলামির খবর অনেক যায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে।
লোকটা বলল, আমার খোজে ভাল একজন কবিরাজ আছে।
-ভাল কবিরাজ দেখিয়েছি, তারা কিছুই করতে পারেনি।
-এই কবিরাজ তাদের মত না। খুব ভাল কবিরাজ, আমি নিশ্চিত সে আপনার মেয়েকে ভাল করতে পারবে।
-কবিরাজের নাম কি?
-কালা চান কবিরাজ।
লোকটা কালা চান কবিরাজের ঠিকানা লিখে দিয়ে চলে গেল।

জামিলার পাগলামিতে উন্নতি ঘটল। আগে জামিলা ঘরে বসে পাগলামি করত। এখন সে উঠোনে ঘুরে ঘুরে পাগলামি করে। দুর্বোধ্য ভাষায় গান গায় আর মাঝে মধ্যে নেচে ওঠে। অনেক লোকজন এসে তামাসা দেখে। ছোট ছেলেমেয়েরা মজা পেয়ে তামাসা দেখে আর ছোট ছোট ইট পাথর ছুড়ে মারে। মান সম্মানের আর কান্দাও থাকল না জামিলার মায়ের।
জামিলার মা আর মরিয়াম জামিলাকে টেনে ঘরে তুলতে চাইল। কিন্তু জামিলার সাথে শক্তিতে পারা গেল না।
এখন জামিলাকে জাত পাগল বলা যায়। অনেকে জামিলাকে ঘরে আটকে দড়ি দিয়ে বেধে রাখতে বলল। ফাও কথা বলার অনেক লোক আছে। তারা অনেকে অনেক কিছু বলে। কেউ কেউ বলে জামিলা শেয়ান পাগল হয়েছে, পাগলামির ভান করছে ও।
জামিলা অনেক্ষন ধরে পাগলামি করার পর কিছুটা শান্ত হল।

জামিলার মায়ের চিঠি পাওয়ার পর মুহাম্মদ চলে আসল। দুই দিন থেকে জামিলার পাগলামি নিজের চোখে দেখেছে। এখন আর বসে থাকার সময় নেই। যেভাবে হোক জামিলাকে ভাল বানাতে হবে।

জামিলার মা বলল, শুনেছি কালা চান নামে একজন কবিরাজ আছে, সে নাকি জামিলাকে ভাল করে তুলতে পারবে।
মুহাম্মদ ঠিকানা নিয়ে কালাচান কবিরাজের খোজে চলে গেল।
কয়েক মুল্লুক খোঁজাখুঁজির পর কালাচান কবিরাজকে পেয়ে গেল মুহাম্মদ। এবং কবিরাজ সাথে নিয়েই বাড়ি চলে আসল।

কালাচান কবিরাজ দেখতে অদ্ভুত, গায়ের রং কালো, মাথায় লম্বা লম্বা ঝাকড়া চুল, কিন্তু মুখের দাড়িগুলো কামানো। হাতে পায়ে কয়েক পট্টি তাবিজ বাধা। গায়ের জামাকাপড় স্বাধাসিধে। চলা চলতি গম্ভির, উদাস উদাস ভাব।
কালাচান কবিরাজের নির্দেশে একটা রুম ফাকা করে দেয়া হল তার জন্য। সেখানে দরজা বন্ধ করে সারারাত ধেয়ানে বসে রইল সে। ধেয়ানের সময় বিরক্ত করতে করতে নিশেধ করে দিয়েছে। তাই ঘরের সবাই চুপচাপ, কেউ কোন কথা বলছেনা। কালাচান কবিরাজ আসার পরে জামিলাও কোন কথা বলছে না, এমনকি তার মধ্যে পাগলামির ভাবটাও লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা।

সকালে আতরের গন্ধ পাওয়া গেল। সবাই বুঝতে পারল, কালাচান কবিরাজ গায়ে আতর মেখে নিচ্ছে। এটা হয়ত তার অভ্যাস।

একটু বেলা হতেই কালাচান বারান্দায় এসে বসল এবং সবাইকে নির্দেশ দিল জামিলাকে ধরে আনতে।
জামিলা কিছুতে আসতে চাচ্ছিলনা, চার পাচ জন মিলে ধরে এনে কালাচান কবিরাজের সামনে বসালো।
কালাচান কবিরাজ জামিলাকে ঘিরে মাটির উপরে একটা বৃত্ত আকল এবং সবাইকে বৃত্ত থেকে দুরে থাকতে বলা হল।
জামিলা মাথা নিচু করে বসে আছে, ওর চুলগুলো এলোমেলো অবস্থায় কপালের উপর পড়ে আছে। চুলের কারনে জামিলার মুখটা স্পস্ট দেখা যাচ্ছেনা।
কিছু কৌতুহলী লোকজন এসে জড় হল জামিলাদের ঘরের সামনে।
কালাচান কিছু আগর বাতি নিয়ে আসতে বলল। ঘরে কোন আগোর বাতি ছিল না। তাই মুহাম্মদ দ্রুত হেটে চলে গেল দোকানের উদ্দেশ্য। দোকান থেকে কয়েক প্যাকেট আগোর বাতি কিনে এনে কালাচানের হাতে দিল।
মুহাম্মদ যখন হাত বাড়িয়ে আগরবাতিগুলো কালাচানকে দিতে গেল, দেখল কালাচানের ডান হাতের প্রতিটা আংগুলে ২ টা করে ধাতব আংটি এবং হাতে কয়েকটা মহিলাদের চুড়ি।
অথচ বাম হাতের আংগুলে কোন আংটি নেই তবে কয়েকটা মহিলাদের চুড়ি আছে। কিন্তু হাতের চুড়িগুলো হঠাৎ কারো চোখে পড়বে না, কারন ওগুলো হাতের তাবিজ কবজের কারনে ঢাকা পড়েছে।

কালাচান কয়েকটা আগোরবাতি জালিয়ে ঘরের এক কোনায় রেখে দিল। সেখান থেকে জলন্ত আগোর বাতির ধোয়া জালানা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে।
কালাচান কবিরাজ চোখ বন্ধ করে উচ্চ শব্দে গলা ফাটিয়ে গান গাইতে শুরু করল। অদ্ভুত আর অপরিচিত গানের সেই সুর। এটাকে গান না বলে অন্য কিছুও বলা যেতে পারে। কেউ কেউ বলবে রয়ানি। রয়ানি হল ভাটিয়ালী গানের মত শুনতে গ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মুখে মুখে রচিত এক ধরনের গান। অনেকে মিলে যখন একটা বড় গাছকে দড়িতে বেধে টেনে নিয়ে যায়, তখন এরকম গান গাইতে শোনা যায়। তবে এটা রয়ানির মত শুনতে লাগলেও, রয়ানি না এটা। এটা একদম আলাদা ধরনের।
কালাচানের চোখ বন্ধ। একভাবে গান গেয়ে চলছে সে।
"কালার কাছে আয়রে তোরা কালার কাছে আয়...কালা তোদের ডাকছেরে তোরা কালার কাছে...তোদের জান আমি রাখব না..তোরা কালার কাছে আয়...তোরা কালার কাছে আয়...মহাসমুদ্র পাড়ি দিয়ে...বন জংগল ছেড়ে দিয়ে তোরা কালার কাছে আয়...তোরা কালার কাছে আয়..তোদের মাথা খাব..তোদের কলিজা খাব..তোরা কালার কাছে আয়...তোরা কালার কাছে আয়...তোদের বাপের নামে..তোদের মায়ের নামে...কইছি তোরা কালার কাছে আয়...তোরা কালার কাছে আয়...."

গানের শব্দ চলে যাচ্ছে গ্রাম ছাড়িয়ে অনেকদুর। দিনে দুপুরেও ছোট ছেলেমেয়েদের ভয়ে জড়সড় হওয়ার মত অবস্থা।
কালাচান কবিরাজ গলা ফাটিয়ে গান গাইছে আর মাথায় লম্বা চুলগুলো ঝাকি মারছে ঘন ঘন।
চলবে..

0 Shares

২টি মন্তব্য

  • লীলাবতী

    অনেক ভালো লেখেন আপনি।সময় নিয়ে সব পর্ব গুলো পড়লাম আবার।

    একটু অনুরোধ ভাইয়া,অন্য ব্লগারের লেখা পড়ুন।এত বড় পোষ্ট একদিন পর একদিন দিন।আপনার লেখা পড়ার সুযোগ দিন একজন পাঠককে।প্রতিদিন এত বড় লেখা দিলে পাঠক আপনার লেখা এড়িয়ে যাবে।কারন একজন পাঠককে অন্য লেখাও পড়তে হয়।আমার এই কথা পজিটিভ ভাবে নিবেন বলে আশাকরি।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ